হ্যালো বন্ধুরা
সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।
মা পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র শব্দ। এটি একজন নারীকে বোঝায় যিনি একজন সন্তানের জন্ম দেন এবং তাকে লালন-পালন করেন। মায়ের ভালবাসা সীমাহীন এবং নিঃশর্ত। তিনি তার সন্তানের জন্য সবকিছু করবেন। মা তার সন্তানের জন্য একজন সেরা বন্ধু, একজন শিক্ষক এবং একজন পরামর্শদাতা।পৃথিবীতে যার মা আছেন সে সবচেয়ে সুখী মানুষ আর যার মা নেই সে সবচেয়ে দুঃখী মানুষ। শুধু যার মা নেই সেই বোঝে মায়ের অভাব কি জিনিস।আগে যখন মা ছিলো তখন মা বার বার ফোন করলে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতাম এবং মায়ের সাথে রাগ করতাম,আর বলতাম তুমি বার বার ফোন কেনো দাও! আমি যখন ফ্রী থাকবো তখন তোমাকে কল করে কথা বলবো।আর এখন দিনের পর দিন মাসের পর বছরের পর বছর অপেক্ষা করলেও আর মায়ের সাথে একটি বার কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে আর তখন নিজেকে খুবই অসহায় লাগে।আজ যদি মা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো জীবন টা অনেক সজহ হতো। অনেক সমস্যায় মাকে পাশে পেতাম তখন আর কিছু না হোক মানসিকভাবে ভরসা পেতাম। এগুলো খুব মনে হয় আর তখন নিজেকে খুবই দুঃখী মানুষ বলে মনে করি।
আমাদের তিনতলায় একজন মহিলা পুলিশ বসবাস করেন নাম সপ্তমী সুলতানা ডাক নাম ময়না। স্বামী স্ত্রী দুজনেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত আছেন।ময়না ভাবী চাকরি করেন তার দুটো জমজ সন্তান হয়েছে নাম হাসান-হোসাইন ওদের দেখাশোনা করার জন্য ময়না ভাবীর মা আন্টি এখানেই থাকতেন।ভাবী সকালে অফিসে চলে যান।রান্না বান্না বাচ্চাদের দেখাশোনা সব আন্টিই করতেন।কাজের জন্য একজন হেল্পিংহ্যান্ড আছে কিন্তু সংসারের বেশিরভাগ ভালো মন্দ সবকিছু আন্টিই দেখতেন।আন্টি কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার বাসায় যাতায়াত করতেন আর এভাবেই আন্টির সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।
দিনে একবার হলেও আন্টি আমার সাথে দেখা করতে আসবেন এবং তার মনের যতো কথা আমার সাথে শেয়ার করবেন।তার মেয়ে যদি একটু বকাবকি করতো সেটাও আন্টি আমাকে না বললে শান্তি পেতো না।আন্টি আসলে আমার যতোই কাজ থাকতো তারপরও আমি আন্টির কষ্টের কথাগুলো খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনতাম আর তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে সে জেনো এগুলো নিয়ে মন খারাপ না করে।আর্টি আমাকে খুবই ভরসা করতো আমিও আন্টির বিশ্বাসের মর্যাদা সবসময়ই অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করেছি।
হঠাৎ একদিন আন্টি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন তারপর তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল এ নিয়ে যায় এবং সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর একটু সুস্থ হন।সব ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষার পর আন্টির হার্ট এ ব্লক ধরা পড়ে।আন্টির মোটামুটি বয়স হয়েছে এই বয়সে হার্টের অপারেশন করাটা একটু ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায় তাই ডাক্তার এবং তার ছেলেমেয়েরা সাহস করে উঠতে পারেনি।একটু সুস্থ হলে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।তারপর থেকেই আন্টি ঔষধের মাধ্যমে যতোটুকু ভালো থাকা যায় ততোটুকু ভালো ছিলো।মাঝে মধ্যেই আন্টি অসুস্থ হয় পড়ছিলো তাই ময়না ভাবীর এখানে আর তার আসা হয়নি।তার ছেলেরা বাড়িতেই রাখার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানেই তাকে সেবাযত্নের মাধ্যমে ভালো রাখার চেষ্টা করতেন।
আন্টি মাঝে মাঝে আমাকে কল করতো এবং তার মনের কথা গুলো শেয়ার করতো আমিও কয়েকবার কল করে আন্টির সাথে কথা বলেছি।কিন্তু ইদানীং কেনো জানি আন্টি আমাকে কল দিতেন না আমিও বিভিন্ন কারণে আন্টির সাথে কথা বলতে পারিনি।কিছুদিন আগে আন্টির বড় মেয়ে হঠাৎ করেই মারা যায় আর সেই শোক সামলানোর মতো ক্ষমতা একজন মায়ের থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই আন্টি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন ময়না ভাবী প্রায়ই তার মাকে দেখার জন্য বাড়িতে যেতেন,ওনার কাছেই আন্টির ভালো মন্দ খবর শুনতাম।কিন্তু আমার কি হয়েছিলো কেনো জানি আন্টিকে আর কখনোই ফোন করা হয়নি।
গতকাল থেকে মাথার প্রচন্ড যন্ত্রণা তাই সকালে উঠতেই পারিনি অনেক বেলা পর্যন্ত শুয়েই ছিলাম।১১.৩০ টায় উঠে ফ্রেশ হয়ে চা বানিয়ে বসেছি খাওয়ার জন্য,এরমধ্যেই রিতু ভাবি খুব জোরে জোরে আমার মেয়েদের নাম ধরে ডাকছে আর বলছে দেখো তো তোমার ময়না আন্টি কান্না করছে কেনো?আমি শানিত কে রেখে যেতে পারছি না।ভাবীর কথা শুনে আমি যে অবস্থায় ছিলাম দৌঁড়ে তিনতলায় উঠে যাই, তখন আমার মনেই ছিলো না যে আমি অসুস্থ বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না।গিয়ে দেখি ময়না ভাবী খুবই কান্নাকাটি করছে,তখন ওনার হাসবেন্ড এর মুখে আন্টির মৃত্যুর কথা টা শুনে এক নিমেষেই মনে হলো বুকের ভিতর টা চাপ ধরে আসলো আর কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু তারপরও নিজেকে সামলিয়ে ভাবীর কাছে গেলাম আমাকে দেখে ভাবী জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঙ্গে পড়লো।আমি রিতু ভাবী দুজনে ধরে তাকে বিছানায় নিয়ে গেলাম এবং আমরা তাকে শান্তনা দিতে লাগলাম।
এই সময় যে যাই বলি না কেনো কোনো কথায় বোঝার মতো ক্ষমতা থাকে না। মা হারানোর কি যে কষ্ট তা তো আমি বুঝি।কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ী আসলো যাওয়ার জন্য সব মাহমুদ ভাই সবকিছু গুছিয়ে নিলেন।ভাবীর মাথায় জল দিয়ে তাকে একটু ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই খেতে পারলো না, একবার মুখে দেওয়ার সাথে সাথে বমি করতে লাগলো তাই আর জোর করলাম না।পরে লেবু চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে একটু খাওয়ালাম।তারপর সবাই মিলে তাকে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গাড়ীতে তুলে দিয়ে বাসায় আসলাম।
পৌঁছানোর পর কি অবস্থা হয়েছে এটা ভেবেই খুব খারাপ লাগছে। নিজেকে যদি ঠিক রাখতে না পারে তাহলে ছোট ছোট বাচ্চা দুটোকে কি করে সামলাবে এগুলো নিয়ে টেনশন হচ্ছে।কাছে হলে অবশ্যই সাথে যেতাম এবং আন্টির মুখ টা শেষবারের মতো হলেও দেখে আসতাম।যে মানুষ টা আমাকে এত্তো ভালোবাসতো তাকে একনজর দেখার জন্য মন টা ছটফট করছে কিন্তু উপায় নেই বাচ্চাদের নিয়ে দূরে কোথাও যাওয়াটা সবসময় হয়ে উঠে না খুবই কষ্ট লাগছে একটা দেখাশোনা মানুষ হুট করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো কিন্তু তার সাথে একবার কথা বলতে পারলাম না তার মুখ টা দেখতেও পারলাম না।
আন্টির জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই।ঈশ্বর আন্টিকে যেনো স্বর্গবাসী করেন।আপনারা সবাই আন্টির জন্য প্রার্থনা,দোয়া করবেন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দিদি, আপনার ময়না ভাবির মায়ের মৃত্যুর কথা পড়তে গিয়ে আমারও খুবই খারাপ লেগেছে। আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম ময়না ভাবীর মায়ের সাথে আপনার খুবই সুসম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে ময়না ভাবীর মায়ের মৃত্যুতে আপনার খুবই খারাপ লেগেছে। একজন মানুষ প্রতিনিয়ত কাছে আসলে, তার সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করলে, এমনিতেই তার প্রতি মায়া জন্মে যায়। আর তাই আপনার সাথে ময়না ভাবীর মায়ের সাথে ভালবাসার বন্ধন তৈরি হয়েছিল। যাইহোক দিদি, পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়, ময়না ভাবির মা যেন পরপারে গিয়ে বেহেশত নসিব করেন এই প্রত্যাশা করছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জ্বি ভাইয়া,আন্টির মায়ের সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো তাই তাঁর মৃত্যুতে খুবই কষ্ট পেয়েছি।ধন্যবাদ ভাইয়া
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনজন হারানোর কষ্ট মেনে নেওয়া খুব কঠিন। ময়না ভাবীর মা আন্টি সঙ্গে আমারও দেখা হয়েছিল আপনার বাসায়। অনেক সহজ সরল একজন মহিলা অল্প সময়েই তার সাথে পরিচিত হয়ে বুঝতে পেরেছিলাম। নিজের অসুখ নিয়েও সে অনেক চিন্তিত ছিলেন। সৃষ্টিকর্তা তাকে স্বর্গবাসী করুক এই কামনা করছি ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য পোস্টটি শেয়ার না করলে হয়তো জানতে পারতাম না আন্টির মৃত্যুর সংবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছো নিজের অসুস্থতা নিয়ে সে খুবই চিন্তিত ছিলো।ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit