সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।আমি @bristychaki "আমার বাংলা ব্লগ"এর আমি একজন নিয়মিত ইউজার। আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।
ভালো কাজ বলতে সাধারণত সমাজের সে সকল কাজকে বোঝায় যে কাজগুলোই সমাজের সকল উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে সেগুলো হচ্ছে মূলত ভালো কাজ। অর্থাৎ মানব কল্যাণে যে সকল কাজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে থাকে সেগুলো হচ্ছে ভালো কাজ। তৃপ্তি হলো সন্তুষ্টি এবং পরিপূর্ণতার একটি অবস্থা যা আমরা সকলেই আমাদের জীবনে অর্জন করার জন্য চেষ্টা করি। এটি বাহ্যিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে নিজেদের মধ্যে আনন্দ এবং শান্তি খুঁজে পাওয়া থেকে আসে।প্রতিটি মানুষকে তাদের ভালো কাজগুলো অনুপ্রাণিত করে থাকে এবং তারা সকলের কাছে সম্মান পেয়ে থাকেন এবং শ্রদ্ধা লাভ করেন। তাই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি মানুষের উচিত ভালো কাজের মাধ্যমে জীবনকে অতিবাহিত করা।ভালো কিছু করার মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় তা হয়তো আর অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব নয়।
যদিওবা এটা খুবই সামান্য একটি ঘটনা কিন্তু তারপরও আপনাদের সাথে শেয়ার করছি তার কারন হলো এই ছোট্ট একটি কাজ করার পর থেকে নিজের ভিতরে অন্য রকমের একটা ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে।
কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা
তখন আমি ঢাকার ধানমন্ডি জিগাতলায় বসবাস করতাম।একদিন দুপুর বেলা ভাত খেতে বসবো তার জন্য সবকিছু রেডি করে নিয়ে বসেছি।তার মধ্যে হঠাৎ একজন বৃদ্ধ মানুষের চিৎকার শুনতে পেলাম।সে খুব জোরে জোরে বলছে আমাকে কেউ একটু খেতে দিন আমি খুবই ক্ষুধার্ত বলতে বলতে একপর্যায়ে বৃদ্ধ টি কান্না করতে লাগলো।আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকি তাই সবসময়ই খুব অল্প রান্না করতাম যাতে একবারেই শেষ হয়ে যায়।আমার কাছে বাড়তি কোনো খাবার ছিলো না তাকে দেওয়ার মতো কিন্তু তার কান্না দেখে খুবই খারাপ লাগলো তখন আমি আমার খাবার গুলো তাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি বাইরে গিয়ে ওনাকে বসার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিলাম এবং ভাতের প্লেট ও জলের গ্লাস নিয়ে যেই ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম তখন উনি আমাকে খুব ভালো করে দেখলেন এবং অনেক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন আপনি তো হিন্দু আমি হিন্দু মানুষের দেওয়া খাবার খাবো না।কথাটা শোনার পর আমি পুরাই হতভম্ব হয়ে গেলাম,তাকে কি বলবো বুঝতে পারছি না!শুধু একটা কথায় বলেছিলাম আপনি খেতে না চাইলে আমি আপনাকে জোর করবো না বলেই আমি রুমের ভিতরে চলে আসলাম এবং মনের কষ্টে চোখ দিয়ে আমার জল চলে আসলো সেদিন সারাদিন আমি আর খাবার খেতে পারিনি।সেদিনের পর থেকে আমি কাউকে কোনোকিছু দেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে দেখি আমি যাকে দিচ্ছি সে আমার দেওয়া জিনিস টা কিভাবে গ্রহণ করছে তার উপর নির্ভর করবে আমি তাকে দিবো কি না!
আজকের ঘটনা
আজ সকাল ১১ টার দিকে দরজায় কেউ একজন নক করলো,আমি কাজ করছিলাম শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে?তখন দরজার ওপাশ থেকে একটা অল্প বয়সের ছেলের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম তারপর জিজ্ঞেস করলাম কি চাই! তখন ছেলেটি বললো আমরা এতিমখানা থেকে এসেছি।আমি দরজা খুলে দেখি দু'জন ১৫-১৬ বছর বয়সের হুজুর দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম কি চাই তখন ওরা বললো আমরা এতিমখানা থেকে আসছি কিছু যদি সাহায্য করতেন!তখন আমি ভিতরে এসে ১'শ টাকা নিয়ে ওদের হাতে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিচ্ছিলাম তখন ছেলেটি আমাকে বলে আন্টি আপনাকে একটা কথা বলি!আমি বললাম বলো, তখন বলে আমরা তো এতিম বাচ্চা আমাদের তো বাবা-মা নেই এতিমখানায় থাকি।আপনি যদি আমাকে একটা বই কেনার টাকা দিতেন!বাচ্চাটার কথা শুনে খুব মায়া হলো,তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার বই এর দাম কতো?তখন ও বললো ৩'শ টাকা দিলেই হবে।মাসের শেষ আমার কাছেও খুব একটা টাকা নেই মেয়ের টেস্টপেপার কিনতে হবে তার জন্যও অনেক গুলো টাকা দরকার। এসব ভাবছিলাম কিন্তু বাচ্চা দুটোকে দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো,তাই আর বেশিকিছু না ভেবে মেয়ের বই কেনার টাকা থেকে ৩শ টাকা বাচ্চাটির হাতে ধরিয়ে দিলাম।
৩'শ টাকা পেয়ে বাচ্চাটা কি যে খুশি হয়েছে তা ওর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো।যাওয়ার সময় বলে আন্টি আপনি কি কিছু মনে করলেন!তখন আমি বললাম না বাবা তোমার মতো তো আমার সন্তান আছে মনে করার কি আছে।ছেলেটা কত যে দোয়া করলো আমার জন্য তখন আনন্দে আমার চোখে জল চলে আসলো এবং খারাপও লাগলো ওদের জন্য বাবা-মা ছাড়া পৃথিবীতে বড় হওয়া কতটা যে কঠিন তা শুধু ওরাই বুঝতে পারে যাদের বাবা-মা নেই।যদি আমার কাছে অনেক টাকা থাকতো তাহলে হয়তো আরও বেশিকিছু দিয়ে ওদের খুশি করতে পারতাম এরকম মনে হচ্ছিলো।এটা খুবই সামান্য একটা বিষয় কিন্তু আমার কাছে অনেক বেশি আনন্দের ছিলো তার কারন একদিন হিন্দু বলে আমি ভালো কিছু করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম আর আসে সেই আমি হিন্দু হয়ে হুজুর কে মাদ্রাসার বই কেনার জন্য সামান্য কিছু টাকা হলেও দিতে পেরেছি তাই নিজের কাছে খুবই আত্মতৃপ্তি পাওয়ার অনুভূতি হচ্ছে আর তাই আপনাদের সাথে সেই ভালো লাগার অনুভূতি টুকু শেয়ার করলাম।
আমাদের উইটনেস কে সাপোর্ট করুন।
টুইটার লিংক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এই জগতে মানুষের মধ্যে কত ধরনের চিন্তাভাবনা ও মানসিকতার বিষয়টি উপলব্ধি করা যায় । ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে ধর্মের বিষয়টি একদমই আলাদা। এই ঘটনাটি পড়ে আমারও খারাপ লেগেছে হিন্দু মুসলিম যেখানে ভেদাভেদ করা ঠিক নয়। সর্বশেষ যে ঘটনাটি শেয়ার করলেন যেটা আপনার সহযোগিতায় ছেলেটি অনেক খুশি। এই হাসিটুকু এই সুন্দর জীবন যাপনের চেয়েও অনেক বড়। বর্তমান সময়ে অনেক ছেলেমেয়ে আছে যাদের অর্থৈর অভাবে লেখাপড়া হয় না। একটু হাত বাড়িয়ে দিলেই তারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। অনেক ভালো লাগলো ঘটনাগুলো পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো কাজে ছোট বড় নেই আপু।ভালো কাজ করলে নিজের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।যেমনটা আপনি পেয়েছেন।আপনার ঘটনা দুটো পড়ে খারাপ ও ভালো লাগা মনের মাঝে তৈরি হলো।যাক আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ জানাই আপনাকে অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মানবতার কাছে হিন্দু মুসলমান হয়না আপু। এখানে তো আপনি মুসলমান না দেখে আপনি দেখেছেন আপনার সামনে এতিম একজন বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে। এরকম পরিস্থিতিতে কাউকে সাহায্য করতে পারলেও নিজের কাছেও খুব ভালো লাগে। বাচ্চাগুলো যে খুব খুশি হয়েছিল তা আপনার লেখা পড়েই বুঝতে পারছি। এমনি চোখের সামনে এরকম কাউকে অল্প সাহায্য করে খুশি হতে দেখলেও খুব ভালো লাগে। খুব ভালো কাজ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো কাজ করলে মনের মধ্যে এমনিতে আলাদা একটি শান্তি কাজ করতে থাকে। এই তৃপ্তি মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না৷ আপনি যেভাবে এই ছোট্ট বাচ্চাদেরকে সাহায্য করেছেন তা দেখে খুব ভালো লাগলো৷ আসলে ছোট বাচ্চাদেরকে দেখলে এমনিতেই মনের মধ্যে মায়া কাজ করতে থাকে। এই বাচ্চা গুলো এতিম হওয়াতে আপনার মায়া আরো একটু বেশি কাজ করল এবং আপনি এদেরকে সাহায্য করলেন৷ খুব ভালো লাগলো আপনার অনুভূতি পড়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বড়দি কিছু কিছু নিচু মন মানসিকতার মানুষ আছেন, যারা ধর্ম নিয়ে একটা দেওয়াল তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন সব সময়। আর যার জন্যই পৃথিবী তে এত দ্বন্দ্ব , সংঘাত। দিন শেষে আমরা যদি মানুষ হয়ে সবাই সবার পাশে দাড়াতাম তাহলে হয়তো জীবনের অর্থ টাই বদলে যেত। খুব ভালো লাগলো আপনার মহানুভবতা দেখে বড়দি। ঈশ্বর সব সময় আপনার সহায় হোন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভালো কাজের আলাদা একটা গুরুত্ব ও সম্মান রয়েছে।তাই ভালো কাজ করলে মন থেকে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়।প্রথম ঘটনাটি আসলেই খারাপ লাগার।এমনিই খাবার জোটে না তার উপরে জাত পাত বিচার করা মানুষ উনি তাই ভবিষ্যতে এই ধরনের মানুষকে সাহায্য না করাই ভালো।আর দ্বিতীয় ঘটনাটি পড়ে চোখে কখন জল চলে আসলো বুঝতে পারলাম না।সত্যিই আজব দুনিয়া আর আপনি সেই ভিন্ন জাতিকে সাহায্য করতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আন্টি💝.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে কোন ধর্মেই নেই যে ভিন্ন ধর্মের লোকদের দেয়া জিনিস খাওয়া যাবে না। খাবার হালাল হলে খেতে কোথাও নিষেধ নাই।এরকম পরিস্থিতিতে পরলে আসলে কি আর বলি।কান্না করাটা স্বাভাবিক। তবে বাচ্চাদের জন্য বই কেনার টাকা দিয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো।আমিও আমার সাধ্যমত গরিব অসহায় মানুষ কে দেই।আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় ছোট কিছু করতে পারলেও।আসলে প্রকৃত ধার্মিক ব্যাক্তিরা কখনোই হিন্দু মুসলিম নিয়ে কথা তোলে না।কারণ আপনি তো জানেন আমাদের বাড়িতে এসেও হুজুরেরা মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানার জন্য এসে টাকা নিয়ে যায়।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit