সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আশাকরি আমার আজকের ব্লগ টি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমার বাবার ৯ম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
বাবা-ভালোবাসা ও ভালো লাগার শব্দ। দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের শব্দ। স্নেহের শীতল ছায়াতলের বটবৃক্ষের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো শব্দ 'বাবা'। জীবন বহমান। সকল হারানো কিংবা শোক-তাপের ঊর্ধেও জীবন স্বীয় গতিতে চলবে। এটাই চিরন্তন সত্য। স্মৃতি শুধুই স্মৃতি। কিছু স্মৃতি বড়ই বেদনাদায়ক। কিন্তু স্মৃতিকে যেমন ভূলে থাকা যায় না তেমনি অস্বীকারও করা যায় না।জীবন প্রবহমান এক গতিধারা। কখনো তরঙ্গময়, কখনো নিস্তরঙ্গ। ক্ষণিকের যাত্রা হয়তো আর কিছু না। বাবাকে আমি বাবু বলে ডাকতাম, আমার কাছে মনে হতো এই সম্বোধনটাই বেশি কোমল এবং বেশি কাছের।
আমার বাবা মানব কুমার বক্সী,আমার দেখা সাধারণে অসাধারণ মানুষদের একজন। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা সৎ ও ভালো মানুষ।আমরা ছোট থেকে বাবাকে কাছে পাইনি আমার বাবা বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন।আর চাকরিসূত্রে তাঁর বাহিরে থাকতে হতো আর আমরা গ্রামে থাকতাম।ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি আমার বাবা প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে আসতো আর শনিবার তার কর্মস্থলে ফিরতো।মাঝে মাঝে তার ব্যতিক্রমও হতো তখন হয়তো পনেরো দিন বা তারও অধিক সময় পর আসতো।বাবার সাথে না থাকার কারণে তাঁর সাথে খুব একটা সক্ষতা ছিলো না আমাদের।আমরা বাবাকে ওভাবে কাছে পাইনি যে তার সাথে বন্ধুর মতো মিশবো!তাই বাবা যখন আসতো এমনিতে কথাবার্তা ভালো মন্দ প্রয়োজন এগুলো নিয়েই কথা হতো।
আমার মা ছিলেন বাড়ির বড় বউ।তাই তাঁর দায়িত্ব ছিলো অনেক,সবার ভালোমন্দ দেখাই যেনো তাঁর জীবনের ব্রত ছিলো।স্বামীর প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়া বা তাঁর সাথে ভালো সময় কাটানোর মতো সময় তাঁর ছিলো না।তবে আমার বাবা-মায়ের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না দুজন দুজনকে প্রচুর ভালোবাসতো।আমরা কখনোই তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া অশান্তি দেখিনি।যদি কখনো দুই এক কথা হতো তাহলে সেটা তখনই শেষ হয়ে যেতো,সেটা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আর কিছুই থাকতো না।আগে হয়তো বুঝিনি তবে এখন বুঝতে পারি আমার মায়ের কিছু ভুল ছিলো,যার কারণে আমার বাবা খুব ভালো একজন মানুষ হয়েও খুব ভালো স্বামী বা খুব ভালো বাবা হয়ে উঠতে পারেননি!সে তাঁর সর্বোচ্চ দিয়ে সবাইকে ভালো রাখতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের কারো ছিলো না,তাই হয়তো তাঁর গুরুত্ব টা আমারা বুঝে উঠতে পারিনি।আর আমার বাবা সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে সে তার দায়িত্ব পালন করেছে ঠিকই কিন্তু সেটা শুধুমাত্র কর্তব্যের খাতিরে।আমার মা কখনোই স্বামীর ভালো চিন্তা করেনি যে তাঁকে আলাদা ভাবে ট্রিট করতে হবে সংসারের প্রতি আসক্ত করতে হবে এরকম চিন্তা কখনোই করেননি।আমার বাবা প্রতি সপ্তাহে বড় বড় ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করে নিয়ে আসতো আর ভালো ভালো রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোই ছিলো আমার মায়ের একমাত্র কাজ,এই ছিলো আমার বাবা-মায়ের সংসার।
আমরা ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত এগুলো দেখে দেখে বড় হয়েছি তাই আমরাও সেভাবেই তৈরি হয়েছি।বাবা-মা নিজের দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত আর আমরা আমাদেরকে নিয়ে ব্যস্ত।কারো প্রতি ভালোবাসা যত্ন এগুলো বোঝানো হয়নি আর আমরাও বুঝে উঠতে পারিনি।আর এভাবেই আমাদের বাবার সাথে একটা বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়।বাবার প্রতি ভালোবাসা অগাধ ছিলো কিন্তু বন্ধুসুলভ আচরণ আমরা কখনোই করিনি যা এখন খুবই অনুভব করি।যখন আমাদের বাচ্চারা তাদের বাবার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করে তখন খুবই আফসোস হয় আমরা কেনো আমার বাবাকে এমন করে ভালোবাসতে পারিনি!কেনো আমরা বাবার দুঃখ কষ্ট গুলো অনুভব করিনি!আমরা সবাই শুধু তাঁকে টাকা কামানোর মেশিন মনে করেছি তাঁরও যে কিছু প্রাপ্য ছিলো সেটা আমরা সন্তান হিসেবে পূরণ করতে পারিনি।
প্রতিটি সন্তানের বুক জুড়ে থাকে বাবার প্রতি চির অম্লান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এই ভালোবাসা জগতের সকল কিছুর তুলনার ঊর্ধে। আর সেই ভালোবাসা যদি সঠিক সময়ে সঠিক প্রয়োগ না হয়, তাহলে জীবনের প্রতিটি পদে,প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে নিজের কাছে-ই অপরাধী করে তুলতে পারে,আর ঠিক তাই আমার হয় আমি প্রতিনিয়ত নিজেকে অপরাধী বলে মনে করি।সন্তান হিসেবে আমি ব্যর্থ!আমি আমার বাবাকে তার প্রাপ্য ভালোবাসা টুকু কখনোই দিতে পারিনি।আর এই অপরাধ বোধ আমাকে সবসময়ই কুঁড়ে কুঁড়ে খায় এখন শুধুই আফসোস হয় এছাড়া আর কিছুই করার নাই।আজ বাবুর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে বাবার কথা মনে পড়লেই। এলোমেলো ভীড় করে অজস্র স্মৃতি।তিনি ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।দেখতে দেখতে নয়টা বছর হয়ে গেলো।আজকের দিনে বাবার জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।ঈশ্বরের কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা আমার বাবাকে যেনো স্বর্গবাসী করেন।🙏
বাবা তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো,আর এটা জেনে রাখো তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি যা কখনোই তোমাকে বলা হয়নি।পারলে ক্ষমা করে দিও।🙏❤️
Promotion link
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গতকাল মৃত্যুবাষিকীর জন্য যখন খরচ করতে গেছি এবং শুনেছে মৃতুবার্ষিকীর কথা আবেগে আপ্লূত হয়ে গেছে দোকানী। বাড়িতে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো সবাইকে ভালো মন্দ খাওয়ানোর আর শ্বশুড়ি রান্না করতে ও সবাইকে খাওয়াইয়ে তৃপ্তি পেতেন।সত্যি মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলো দু'জনার। আত্মার শান্তি কামনা করছি।এখনো এক বাক্যে সবাই প্রসংশা করে শুনে বেশ ভালো লাগে।ধন্যবাদ পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ দুজন মানুষ সারাজীবন ভর শুধু মানুষের কথায় ভেবে গেছে নিজেদের জন্য একটুও ভাবেনি।ভালো মানুষেরা পৃথিবীতে বেশিদিন থাকে না তারই প্রমাণ হলো আমাদের বাবা-মা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে বাবা না থাকলে পৃথিবীটা ভালো ভাবে চেনা যায়। আপনি আপনার বাবা কে দীর্ঘ দিন আগে হারিয়েছেন, জেনে বেশ খারাপ লাগলো। আপনার বাবার জন্য আশির্বাদ রইলো আপু। আসলে বাবার স্মৃতি গুলো কখনো ভোলার মতো নয়। সারাজীবন মনের মধ্যে গেঁথে রয়ে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ ভাইয়া বাবার স্মৃতি গুলো কখনোই ভোলা সম্ভব নয়।দোয়া করবেন,ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাবার কথা লিখলে, কত কি বুঝেছ একবার ভেবে দেখ। বাবা থাকতে এতো পর্যালোচনা করনি হয়তো।
যাইহোক মৃত্যু মানে মুক্তি। বাবা মুক্তি পেয়েছেন এটা আনন্দেরই৷ তুমি কষ্ট পেয়ো না৷ বাবা ভালোই আছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই তাই বাবা থাকতে একটুও বুঝিনি যে তাঁর পর্যালোচনা করা দরকার ছিলো।তোমার কথায় যেনো সত্যি হয় বাবা যেনো ভালো থাকেন।🙏🙏
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit