অনলাইনে আমার প্রথম ইনকামের অনুভূতি। steemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  last year 

হ্যালো বন্ধুরা

সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও ভালো আছি।

আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-৪৩ শেয়ার করো তোমার প্রথম অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা।

সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য ফাউন্ডার দাদা এবং কমিউনিটির সকল এডমিন মডারেটর ভাইয়া আপুদের জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ।

প্রথম সব কিছুর অনুভূতিই আলাদা। প্রথম আয় বা উপার্জনের কথা আমরা অনেকে মনে রাখি। একজন মানুষ এক জীবনে নানা সময়ে বিভিন্নভাবে অর্থ উপার্জন করেন। এ উপার্জন কখনো কখনো বিচিত্রও হয়। প্রথম ইনকামটা কারো কারো জীবনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবেও কাজ করে এবং জীবনকে বদলে দেয়।টাকা জীবনে বিভিন্ন ভাবে অনেক বার হাতে পেয়েছি যার কোন হিসেবে নেই কিন্তু সেটাকে ইনকাম বলে না,ইনকাম হচ্ছে পরিশ্রম করে ও কাজ করার বিনিময়ে যে টাকাটা পাওয়া যায়।কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা হাতে পাওয়ার অন্য রকমের এক অনুভূতি যা বলে শেষ করা যাবে না।

IMG_20230907_003550.jpg

আমি ছোটবেলা থেকেই কাজে খুব পারদর্শী না হলেও নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিলো অনেক। কিন্তু সুযোগের অভাবে সেরকম কিছু শেখা হয়ে উঠেনি।বিয়ের পর প্রথম যখন ঢাকায় যাই তখন একা একা বাসায় একদম সময় কাটতো না।এখনকার দিনে যেমন ইন্টারনেট ফোন সোশ্যাল মিডিয়া এসব নিয়ে কখন দিন পার হয়ে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না।সময় কাটানোর মতো সেরকম কোনো মাধ্যম খুঁজে পাচ্ছিলাম না।হাসবেন্ড কে বললাম সারাদিন তো বসেই থাকি যদি ধারেকাছে কোথাও যদি টেইলারিং এর কেউ কাজ শেখায় তাহলে আমি শিখতাম।হাসবেন্ড আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে তোমার এই ইচ্ছে আমি পূরণ করবো।আমার হাসবেন্ড এর পোস্টিং ঢাকা ডেমরা শারুলিয়া বাজার নামে এক স্থানে ছিলো,সেখানে একজন মহিলার সাথে কোনো এক কারনে তার সাথে পরিচয় হয়।

হঠাৎ আমার হাসবেন্ড সেই মহিলা কে আমার বাসায় নিয়ে আসলো আমি তো দেখেই অবাক কে এই মহিলা!আমার হাসবেন্ড বললেন যে উনি একজন গার্মেন্টস এর কাটিং মাস্টার এখন থেকে তোমাকে বাসায় এসে কাটিং শেখাবে।উনি কাঁচপুর সিনা গার্মেন্টস এর সিনিয়র কাটিং মাস্টার ছিলেন।প্রতিদিন কাজ শেষে রাত দশটার দিকে এসে আমাকে কাজ শেখানো শুরু করলেন।কিছুদিন মোটামুটি ভালোই কাজ শিখলাম,তারপর হঠাৎ করেই আমার হাসবেন্ড এর অন্যত্র পোস্টিং হয়ে গেলো তাই আর কাজ টা পুরোপুরি শিখতে পারলাম না।

IMG_20230907_011835.jpg

আমরা যখন ঢাকা কেরানীগঞ্জে যাই তারপর থেকে বেশ কয়েক বছর ওখানে থাকি।অনেক বছর থাকার কারনে ওখানকার সবকিছুই মোটামুটি চেনাজানা হয়ে গিয়েছিলো।হঠাৎ একদিন জানতে পারি ফ্রীতে টেইলারিং এর কাজ শেখানো হয় এবং কাজ শেখানো শেষ হলে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।সার্টিফিকেট টা আমার কাছে কোনো বিষয় ছিলো না, কাজ শেখাটাই মোক্ষ বিষয় ছিলো।কাজে ভর্তি হলাম কাজ শিখলাম পরীক্ষা দিলাম এ+ পেলাম।বাসায় মেয়েদের জামাকাপড় সেলাই শুরু করলাম নিজেদের কাজ গুলো করে খুবই আত্মতৃপ্তি পেলাম সেই সাথে কিছু টাকাও সেইভ হয়।২০১৯ সালে আবারও আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ শেখানো হচ্ছিলো জানতে পারলাম।তারপর সেখানেও ভর্তি হলাম নতুন নতুন কিছু ডিজাইন শেখার জন্য শিখলাম পরীক্ষা দিলাম সার্টিফিকেট পেলাম।

IMG_20230907_011855.jpg

২০২০ সালে যখন নিজ এলাকায় চলে আসলাম তখন দেশে মহামারী করোনার ভয়াবহ অবস্থা। তখন ঘরে বসে থেকে কি করা যায় ভাবতেছিলাম জাস্ট সময় কাটানোর জন্য।একদিন বাড়িওয়ালার ছেলে সাম্যর সাথে এসব বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম ও আমাকে অনেক রকমের আইডিয়া দিচ্ছিলো আন্টি আপনি এটা করেন,ওটা করেন কিন্তু একটাও পছন্দ হচ্ছিলো না আমার।তারপর ও আমাকে বললো আন্টি আপনি কোন কাজ টা বেশি ভালো পারেন?তখন আমি বললাম সেলাই এর কাজ পারি পাশাপাশি রান্নাবান্না এগুলো।ও তখন বললো আন্টি আপনি ছোট বাচ্চাদের জামাকাপড় বানিয়ে অনলাইনে সেল করতে পারেন।এই বিষয় টা আমার খুব ভালো লাগলো।তারপর ও আমাকে একটা ফেসবুক পেইজ খুলে দিলো এবং কিভাবে কি করতে হবে সব বিষয় গুলো খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলো।

মার্কেটে গেলাম পছন্দমতো কিছু ভালো মানের কাপড় কিনে আনলাম।তারপর শুরু হয়ে গেলো ছোট ছোট জামাকাপড় বানানো।প্রথমে পাঁচটা এক বছরের বাচ্চার বেবিফ্রক বানালাম,সেগুলোর ছবি পেইজে আপলোড দিলাম।তারপর বিভিন্ন ডিজাইনের ফ্রক,নিমা প্যান্ট বানিয়ে ছবি দিলাম।আর সেই জামাকাপড় গুলো আশেপাশে পরিচিত দের কাছে একটু কম দামে সেল করে দিতাম।তারপর হঠাৎ করেই একদিন দেখি একটি মেসেজ আসলো আমি আপনার কাছ থেকে কয়েকটি বেবিফ্রক বানিয়ে নিতে চাই!তারপর সাথে সাথে উত্তর দিলাম এবং কিরকম কাপড়ের নিবেন সেগুলো বিস্তারিত জেনে নিলাম এবং বয়স কত? সবকিছু বিস্তারিত জানার পর অর্ডার টি কনফার্ম করলাম।

IMG_20230907_011923.jpg

পছন্দসই কাপড় দিয়ে চার রকমের চারটি বেবিফ্রক বানিয়ে ঠিকানা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিলাম।টাকা আগেই বিকাশে পাঠিয়ে দিয়েছেন তখন ক্যাশঅন ডেলিভারি ছিলো না তাই আগেই টাকা বিকাশ করতে হতো।১৪৫০ টাকা এটাই ছিলো আমার অনলাইনে প্রথম ইনকাম যা আমার জন্য খুবই আনন্দের একটি বিষয় ছিলো।সর্বপ্রথম আমি সাম্য কে বিষয় টি জানাই ও শুনে খুবই খুশি হয়েছিলো এবং আমাকে আরও উৎসাহিত করেছিলো।এভাবে বেশ কয়েকটি অর্ডার পেয়েছিলাম।আমি প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে মা কালির মন্দিরে পুজো দিয়েছিলাম।নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে মায়ের পুজো দেওয়াটা আমার কাছে খুবই সৌভাগ্যের বিষয় ছিলো। এই আনন্দ অনুভূতি আমি কিছুতেই বলে শেষ করতে পারবো না।১৪৫০ টাকা আমার কাছে লক্ষ্য টাকার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান ছিলো।

IMG_20230907_003550.jpg

তারপর হঠাৎ একদিন একটি দূর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার পা ভেঙ্গে যায় তখন তিন মাস ফুল বেডরেস্টে ছিলাম।তারপর পা স্বাভাবিক হতে আরও অনেক টা সময় লেগে গেছে।পা ভালো হওয়ার পর আর কখনো সেলাই মেশিনে বসা হয়নি।তার কারন ছিলো আমার হাসবেন্ড না করে দিয়েছেন,তার কথা সামান্য কিছু টাকা উপার্জনের জন্য আমি কষ্ট করি বা আবারও আমার পায়ে কোনো সমস্যা হোক সে সেটা চান না।তাই বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ টি বন্ধ করে দিতে হয়।প্রথম প্রথম খুবই খারাপ লেগেছিলো কাজ টা বন্ধ হওয়াতে। পরে অনেক ভেবেচিন্তে নিজের মন কে শান্তনা দিয়েছি। কিন্তু তখন থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনোদিন সেলাই মেশিনে বসিনি হয়তোবা মনের আক্ষেপ থেকেই বসি না।

এই ছিলো আমার অনলাইনে প্রথম ইনকামের অনুভূতি।আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে।সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

আমাদের উইটনেস কে সাপোর্ট করুন।

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzLdXDsNijBKWNGJn5ogmozSiA7cyReMsKwomyC79dv8nHgZj3RKbXhPtULzHvi...hMHPzmtXdqcE25kuBukgtAciNVXSHonSRqmAmfHf9YgyuYwwZo1Nd9dUCogeVvSsKh3MRCxw1Khi2NyeZh4Rt4J9n7wTsZvJ1tiUMafwrMjZ5AQz2ERchsjjJv.png

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Break3.jpg
Banner User.png
Break3.jpg

আমি অতসী চাকী (বৃষ্টি) । নতুন নতুন রেসিপি বানিয়ে সবাইকে খাওয়াতে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে। আমি "ভাল কাজের, ভাল ফল কথাটাতে" মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এবং মেনে চলার চেষ্টা করি।

Break3.jpg

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPgAaeHkUbVYHQygf4BziFrEyhjgH4bQJyLmky9bKBwALZ2h9iBsdB7ytyweg4...aUXLeYe3s5prEk6GNwc17FeYqYT61YgbrF4xidNoAoEJhMKPeQJMDqHd9ToQgL6ro2brbL83MdGQyafZvcEdJXdrtv7CKUsoEdfmN1RF8QMxbbsys62BizFDwT.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার অনলাইন থেকে ইনকামের গল্পটা পুরোটাই ভিন্ন। ফেব্রিক তৈরি করে সেটা অনলাইনে সেল দিতেন তবে দুর্ঘটনার কারণে এই কাজটি বন্ধ করতে হয়েছে জেনে কষ্ট লাগলো। তাতে সমস্যা কি এখন তো আমাদের সাথে যুক্ত আছেন আর এখানে শুধু মেধা দিয়েই কাজ করতে হয়। আপনার গল্পটা শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।

Posted using SteemPro Mobile

জ্বি ভাইয়া তখন কাজ টা ছেড়ে দিতে খুবই খারাপ লেগেছিলো। কিন্তু এখন আপনাদের সাথে যুক্ত হতে পেরে সেই কষ্ট কবেই ভুলে গেছি।ধন্যবাদ ভাইয়া।

প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য। এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে দেখছি বেশ সুন্দর করে পোস্টটা লিখেছেন। আসলে প্রথম ইনকামটা আমাদের জন্য থেকে অন্যরকম হয়। আপনি ছোটদের বিভিন্ন রকম জামা কাপড় তৈরি করে অনলাইনে সেল করতেন এটা জেনে সত্যি অনেক ভালো লেগেছিল। তবে এক্সিডেন্ট এর কারনে আর এই কাজটা করা হয় না এটা জেনে খারাপ লাগলো। অনেক সুন্দর করে সম্পূর্ণটা লিখেছেন দেখে ভালোভাবে বুঝতে পারলাম।

ঠিক বলেছেন আপু প্রথম ইনকামের অনুভূতি গুলো সবার জন্যই অনেক আনন্দের অনুভূতি।ধন্যবাদ আপু।

আপনার অনুভূতির এই পোস্টটা পড়ে আমার তো অনেক ভালো লেগেছে। আপনি কিন্তু অনেক সুন্দর ভাবে জামা কাপড় গুলো তৈরি করে সেল করতেন। আসলে নিজের ইনকামের টাকা আমাদের জন্য খুবই ভিন্ন রকমের ছিল। আর প্রথম ইনকামের টাকা দিয়ে যদি কিছু একটা করা হয় এটা সারা জীবন মনে থাকে। আপনি এই টাকা দিয়ে আপনাদের মায়ের পূজো দিয়েছিলেন এটা জেনে খুব ভালো লাগলো।

প্রথমেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে জানাই আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। সবার থেকে আপনার প্রথম অনলাইনের ইনকাম করার অভিজ্ঞতা একটু আলাদা আপু পড়ে বেশ ভালো লাগলো। আপনি ফেব্রিক তৈরি করে অনলাইনে বিক্রয় করতেন জেনে বেশ ভালো লাগলো কিন্তু দুর্ঘটনা বসত সেই কাজটি বন্ধ করতে হয় জানতে পেরে একটু খারাপ লেগেছে আপু। তারপর থেকে আপনি আমাদের সাথে যুক্ত আছেন জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। সমস্যা নেই আপু এখন তো আরো ভালো জায়গায় যুক্ত হয়েছেন আশা করি আরো ভালো কিছু হবে।

আপু কাঁচপুর আমার বাসা থেকে ১০ মিনিটের দুরত্ব। যাইহোক আপনি তো বেশ ভালোই ক্রিয়েটিভ। অবসর সময়ে জামা কাপড় বানানোর কাজ শিখেছিলেন। ফেসবুক পেইজের আইডিয়াটা দারুণ ছিলো। হয়তোবা পা ভেঙে না গেলে ভালো কিছু হতে পারতো। আপনার প্রথম অনলাইন ইনকামের অভিজ্ঞতা পড়ে খুব ভালো লাগলো আপু। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।