মুক্তাগাছার মন্ডা(muktagacha monda)
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে মুক্তাগাছার মন্ডা। প্রায় আড়াই শত বছর ধরে চলে আসা এই মন্ডার স্বাদ এখনো অপরিবর্তিত। দেশ বা বিদেশ থেকে ময়মনসিংহ কেউ বেড়াতে এসে মুক্তাগাছার মন্ডা খেয়ে যাননি, এমন ঘটনা বিরল।
মন্ডার জন্য মুক্তাগাছাও সুপ্রসিদ্ধ। দুধ আর চিনি দিয়ে বানানো হয় এই মন্ডা। তবে দেশের আর কোথাও এমন সুস্বাদু মন্ডা পাওয়া যায় না। এই মন্ডা প্রথম তৈরি হয়েছিল ১৮২৪ সালে মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর সময়। গোপালচন্দ্র পাল নামে এক ব্যক্তি মন্ডা তৈরির প্রথম কারিগর। এরপর থেকে তার উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে চলে আসছে এই মন্ডা তৈরি। বর্তমানে তার পঞ্চম পুরুষ রবীন্দ্রনাথ পাল তৈরি করছেন এই মন্ডা।
রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, এক রাতে তার পূর্বপুরুষ গোপালচন্দ্র পাল স্বপ্ন দেখেন, এক সন্ন্যাসী তাকে মন্ডা তৈরি করতে আদেশ দিচ্ছেন। টানা কয়েক রাতে স্বপ্নযোগে সন্ন্যাসী তাকে মন্ডা বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। এরপর গোপাল তার বানানো নতুন মিষ্টি পরিবেশন করেন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরীকে। মন্ডার অতুলনীয় স্বাদে জমিদার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। এখবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেই দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠে গোপাল পালের মন্ডা।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তাগাছার এক সভায় মন্ডা খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। মন্ডার দোকানের মালিক কেদারনাথ পালকে বলেছিলেন, ‘পাল মশাই দেশ ছেড়ে যাবেন না, দেশ ভালো হবে।’ শুধু বঙ্গবন্ধুই নয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী আলাউদ্দিন খাঁ, রাশিয়ার কমরেড জোসেফ স্টালিন, চীনের কমরেড মাও সে তুং সহ অনেকেই মুক্তাগাছার মন্ডার স্বাদ উপভোগ করেছেন বলে জানা যায়।
রবীন্দ্রনাথ পাল জানান, মন্ডা তৈরির মূল পদ্ধতি আমাদের পারিবারিক। গোপনীয় এই পদ্ধতি শুধু আমরাই জানি। আর এ কারণেই মন্ডার নামে দেশের নানা স্থানে যা বিক্রি হয়, তা আমাদের মন্ডা থেকে আলাদা। ময়মনসিংহ, ঢাকা কিংবা দেশের কোথাও আমাদের কোনো শাখা, এজেন্ট, শোরুম, বিক্রয়কেন্দ্র বা বিক্রয় প্রতিনিধি নেই। তাই আসল মন্ডার স্বাদ পেতে হলে আসতে হবে মুক্তাগাছায় আমাদের এই দোকানে।
মন্ডার আদি ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত এক বই থেকে জানা যায়, মন্ডা মূলত এক প্রকারের সন্দেশ। শুধু দুধ ছানা ও চিনি দিয়ে এটি বানানো হয়। তবে স্বাদের রহস্যটা গোপনীয়। তা মন্ডা তৈরির মধ্যে লুকিয়ে আছে, যা বছরের পর বছর ধরে গোপন রেখেছেন গোপাল পালের বংশধররা। আরো জানা যায়, মন্ডা তৈরির পদ্ধতি গোপাল পাল স্বপ্নযোগে পেলেও এর প্রসারের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মুক্তাগাছার জমিদাররা। কারণ, গোপাল পালের উদ্ভাবিত মন্ডায় মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী মুগ্ধ হবার পর থেকে এটি জমিদারবাড়ির দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় জায়গা করে নেয়। শুধু তা-ই নয়, জমিদারবাড়ির অতিথিদের মন্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা নিয়মিত ঘটনা ছিল। সেই সঙ্গে জমিদাররা উপহার হিসেবে বিশিষ্টজনদের কাছে পাঠাতেন এই মন্ডা। এভাবেই মুক্তাগাছার ছোট্ট গন্ডি পেরিয়ে এ মন্ডার খ্যাতি ছড়িয়েছে বিশে^র নানাপ্রান্তে।
আরো জানা যায়, মন্ডা তৈরির কারিগর গোপালচন্দ্র পাল ১৭৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করে প্রথমে আসেন রাজশাহীতে। এরপর ১৮২৩ সাল থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তাগাছায় বসবাস শুরু করে ১০৮ বছর বয়সে মারা যান ১৯০৭ সালে। তার মৃত্যুর পর মন্ডার হাল ধরেন তার ছেলে রাধানাথ পাল। এভাবেই কেদারনাথ পাল, দ্বারিকানাথ পাল, রমেন্দ্রনাথ পালের পর বর্তমানে পঞ্চম বংশধর রবীন্দ্রনাথ পাল মুক্তাগাছা শহরের ৭১ জগৎ কিশোর রোডে এই মন্ডার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
বর্তমানে মন্ডা প্রতি কেজির মূল্য ৬শত টাকা। প্রতি পিসের মূল্য ৩০ টাকা। আর এক কেজিতে মন্ডা হয় ২০ পিস। যুগ যুগ ধরে আগের মতই চলছে এই মন্ডার দোকান। আগে দেশি গরুর দুধের ছানা থেকে এই মন্ডা তৈরি হলেও এখন ফার্মের গরু থেকে সংগ্রহ হয় দুধ। তবে মন্ডার স্বাদের কোনো প্রার্থক্য নেই।
মুক্তাগাছা শহরের এই মন্ডার দোকানে যেতে হলে ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মোড় থেকে সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনায় যেতে হয়। এতে ভাড়া হবে ৩০ বা ৪০ টাকা। এরপর মুক্তাগাছা পৌর শহরে প্রবেশ করে যেতে হবে ৭১ জগৎ কিশোর রোডে গোপাল পালের মন্ডা দোকানে। যেতে রিকশা ভাড়া ১০ বা ১৫ টাকা।
@naijaboost.
@onyemacourage.
@utomobong.
@prosperfresh.
@juniel.
@uwemedimo.
@gnomicrules.
@sleekman.
টাইপ: চৌর্যবৃত্তি।
এ ধরনের পোস্ট আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি Allow করে না। নতুন ইউজার হওয়ার কারণে শুধুমাত্র আপনার পোস্ট Mute করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আবার একই ধরনের কাজ করলে আপনার একাউন্ট কমিউনিটি থেকে ব্যান করা হবে।
কমিউনিটির নিয়মাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22
যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।
Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493
Source:
https://dailyinqilab.com/index.php/special/article/581089
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit