সবেমাত্র বিএস সি-তে ভর্তি হয়েছি। ফার্স্ট ইয়ার। হাতখরচ চালানোর জন্য টিউশনি শুরু করলাম। ক্লাস টেনের একটা মেয়েকে ইংরেজি,গনিত,বিজ্ঞান পড়াতাম। বড়লোকের মেয়ে। শহরে ওর বাবার বিভিন্ন জায়গায় দোকান আছে। তার বাবা চাচা-রা মালোশিয়া, ওখানেও দুইটা দোকান। তার মধ্যে তার বাবার দোকান একটা। মেয়ে তার বাবা মায়ের বড়ো সন্তান।তারা দুই বোন, আর একটা ছোট্ট ভাই আছে । আমি দুষ্টমি করে ভাবতাম তাদের দুই মেয়ে থাকার পরেও তৃতীয় সন্তান কেন? দশ টাকার চিপসের মধ্যের স্ক্রাচ কার্ডেও লেখা থাকে, দুটো সন্তানের বেশি নয়। আর এই দম্পতি তিনটি বাচ্চা, আসলে তাঁরা যদি দুই বোন থাকতো তাহলে সব সম্পত্তি গুলো সমান ভাবে ভাগ করে বেকার ছেলেগুলোর ফিউচার হয়ে যেতো।
এতো টাকাপয়সা খাবে কে? হয়তো তাদের এই ভাবনাটাই আরেকটা চান্স নেওয়ার কথা মাথায় ডুকিয়েছে। আন্টিকে দেখলে আমার ভলোই লাগে,তবে বন্ধুদের নাকি মাথা ঠিক থাকতো না। যেরকম সুন্দরী, সেইরকম মিষ্টি ব্যবহার। আমার বন্ধুরা বলতো,তারা নাকি ওনার সৌন্দর্যে বিমোহিত। তারা এই মহিলার স্বামি হলে তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলের মাঠে দুই দলে ভাগ হয়ে ফুটবল খেলতে পারতো। বাইরে থেকে কোনো প্লেয়ার আনার দরকার পড়তো না।
তবে সমস্যা আন্টিকে নিয়ে না।
বিষয় টা সম্পুর্ন উল্টো! ওনার বড়ো মেয়ে অর্থ্যাৎ আমার ছাত্রীকে নিয়ে৷ মেয়ের নাম"বর্ষা"! সে তার মায়ের থেকে তেমন সুন্দরী না হলেও তার চেহারা টা মন ভালো করার মতো,তার চিকন চিকন দুধের মতো সাদা দাঁতগুলো যেনো এক-একটা ডায়মন্ড। আসলে তার একটা বিষয়ের জন্য সে সুন্দরী না, তার মায়াবী চেহারা, ব্লাক মার্বেলের ন্যায় টানা টানা কালো চোখ জোরা কতটা সুন্দরী কিভাবে উদাহরণ দেই৷ টিউশন মাস্টার এর নজর খারাপ হলে নাকি ছাত্রীর দিকে উল্টাপাল্টা ভাবে তাকায়। কিন্তু যথেষ্ট যৌবনের চাহিদা (কামবাসনা) থাকা সত্বেও কখনো ওর বুকের বা অন্য কিছুর দিকে দিকে তাকাইনি।ওর চেহারার সাথে চোখের এ-তো সুন্দর কম্বিনেশন ছিলো যে মুখের দিক থেকে চোখই সরাতে পারিনা। অন্যদিকে তাকাবো কিভাবে৷ টিউশন শুরু করলাম,পড়ানোর ভাব নিয়ে ওকে শুধু দেখতাম।ওকে দেখার জন্য একটা দিন টিউশনি অফ দেইনি। একঘন্টা পড়ানোর কথা থাকলেও দেড় ঘন্টা বা দুই ঘন্টা সময় কিভাবে কেটে যেতো টেরই পাইনি । মাঝে মাঝে শুক্রবারে গিয়েও বলি, 'আন্টি আজকে একটা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এসেছি, সারা সপ্তায় যা পড়াইছি তার ওপরে।'আসলে তাঁকে দেখা টা-ই যেনো আমার প্রধান দ্বায়িত্ব হয়ে দাড়িয়েছে।
আন্টি কাছে আমি বিশাল প্রশংসা পাওয়া শুরু করলাম,তবে সেটা লোকমুখে শুনতাম। আন্টি ওনার কাছের লোকদের সাথে বলতো,এতো ভালো আর সিরিয়াস টিচার নাকি আজকাল পাওয়াই যায় না। উনার দেবরের ছেলের টিউশন মাস্টার নাকি সপ্তায় তিনদিন আসে তো চারদিন আসে না। নানান অজুহাত দেয়৷ প্রায়ই আধাঘন্টা পড়িয়েই চলে যায়।
তবে আমার এর আগে ঠিকমতো না যাওয়ার জন্য আমার দুইটা টিউশনি চলে গিয়েছিলো। দুইটাই ছেলে ছিলো। তবে "বর্ষা" মানব চুম্বক। আমার মাথার ভিতর অলটাইম গেঁথে আছে।
.
তারপর ঠিক দুইমাস পর একটা ঘটনা ঘটলো। আমাকে মাস শেষে বেতনের যে "খাম"দেয়া হয় সেই খাম খুলে দেখি টাকার সাথে সাথে ছোট একটা চিরকুট৷ তাতে লেখা, 'এই যে স্যার, এভাবে তাকিয়ে থেকে তো আমার মনের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দিলেন। তো এখন আমি ক্লিয়ার করে জানতে চাই ডু ইউ লাভ মি?'
আমার হার্টের ভিতর যেনো ডাক ডোল এর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মাথা যেনো সৌরজগতের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুরতেছে। তবে থেকেও বেশি যেটা হলো সেটা কনফিউশান। আসলে আমাকে প্রপোজ কে করেছে? বর্ষা নাকি তার মা?
কনফিউশনের কারণ টাকার খামটা আমার হাতে দিয়েছে স্বয়ং বর্ষার মা। কিন্তু আমি যতদূর দেখেছি খাম টা বর্ষা তার মায়ের কাছে ভেতরের ঘরে গিয়ে দিয়েছিলো। তাহলে কে হতে পারে।তবে বিষয়টা মোটামুটি ক্লিয়ার ছিলো,কারন আমি তো বর্ষার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম।
.
চিঠিটা টাকার খামে আসার কারণে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম হয়তো আন্টি আমার বিষয়টা সম্পর্কে যেনেগেছে, তাই হয়তো আন্টি এখন আমাকে এভাবে পরিক্ষা নিচ্ছে। তাই মনে মনে ভাবলাম আন্টির সাথে একটু ভাব জমিয়ে দেখি। একদিন সুযোগ আসলো। আন্টি নাস্তা দিতে এসে প্রতিদিনই দুই তিন মিনিট বসে কথা বলেন। ঐইদিন আন্টি আসার পর বর্ষা ভেতরে গেলো পানি খাওয়ার জন্য৷ আমার ছোট্ট একটা অভিজ্ঞতা, পানি খেতে অন্তত তার সাত আট মিনিট লাগে৷ কারণ সে পানি খাওয়ার কথা বললেও যায় আসলে ওয়াসরুমে।
লজ্জাসরমে এখন আন্টিকে সরাসরি তো বলতে পারি না৷ তাই হিন্টস দিলাম৷ছোট করে বললাম, 'আন্টি আপনি কিন্তু খুব সুন্দর!
আন্টি মুচকি হেসে দিয়ে বললো,তাই নাকি?যাক অবশেষে কেউ বললো, তোমার আমাকে ভালো লাগে?
আমিও মুচকি হাসলাম,আপনাকে কারো খারাপ লাগতে পারে আমি তা বিশ্বাস করি না।তবে আমার ধারণা যেকোনো ছেলের জন্যই আপনি স্বপ্নের মত!
- আহা, তোমার জন্যেও নাকি?
- আমি মুচকি হাসলাম!!!
- অথচ দেখ, তোমার আঙ্কেল ফিরেও দেখার কথা ভাবে না। প্রবাসেই কাজ নিয়ে বিজি।
- আমি আঙ্কেলের জায়গায় থাকলে কোথাও যাওয়ার কথা মাথায় আনতাম না। কাজ শেষ করে ঘরে থাকতাম আপনার কাছে।
- সত্যিই!!! 'আসলে এই লাইফ আমারো আর ভাল্লাগছেনা৷
-আর তাছাড়া ? - তাছাড়া কি?
- যতটুকু জানি তুমি ছেলে হিসাবে খারাপ না। আসলে কিভাবে যে বলি!!
- সমস্যা নেই বলেন আন্টি, অবশ্য আমি টের পেয়ে গেছি দেখেই।
- সত্যি কিছু টের পেয়েছ?
আরো কিছু বলতে যাব তার আগেই বর্ষার চলে আসা সব কথা স্টপ। আন্টি কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
এর পরদিন থেকে আন্টির আমার প্রতি বেশিই যত্ন নেয়া শুরু করলেন।
নাস্তায় মোটামুটি ভালো মানের দামী দামী খাবার আসতে লাগলো। আমি যখন প্রায় শিওর যে আন্টি প্রপোজ করার জন্য প্রস্তুত। তখনই একটা ঘটনা ঘটলো। বর্ষা অংক করতে করতে হুট করে বললো, 'স্যার আমি কি দেখতে খারাপ?'
- না তো! তুমি অনেক অনেক সুন্দরী।
- তাহলে মনে হয় আপনার চোখে সমস্যা?
- তা হবে কেন?
- আপনি কি তাহলে বোকাটাইপের? কিছুই বুঝেন না স্যার?
- কি বুঝবো?
- আপনি আসলে বোকা না,গাধা।
- এই তুমি কি ঠিক আছো? যা বলার ক্লিয়ার করে বলো।
- আমি কেনো বলব? আর কি বলবো? আমার কিছুই বলার নাই। আমার ভাগ্যই খারাপ।
- ভাগ্য খারাপ কেন?
- আমার সব বান্ধবীরই ২/১ বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর আমার নাই। এমনকি আমি যাকে পছন্দ করি সে কিছুই বুঝেনা। আস্ত একটা গাধা!
.
আমি বুঝলাম সে কি বলতে চাচ্ছে। কিন্তু এমন ভান করলাম যে কিছুই বুঝিনি৷ তবে এটা কনফার্ম হলাম ঐ চিরকুট বর্ষার ছিলো। তাহলে কি এই কিউট মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে?
.
খুব কনফিউশনে পরে গেলাম।
পরের মাসের বেতনের খাম আসলো।
সেদিন খাম হাতে পেয়ে যেন তর সইছে না । দ্রুত ওদের বাসা থেকে বের হয়েই খুলে ফেললাম। হ্যা, চিরকুট আছে খামে৷ লেখা, 'গত খামের দেয়া প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তবে আগামী শুক্রবার বিকেলে আমি বাসায় আসবা,অপেক্ষা করবো। ঐদিন আমি ছাড়া কেউ থাকবে না বাসায়।
.
ইয়েস, শুক্রবারেই বোঝা যাবে ওটা কে? আমিও মুচকি হাসলাম। যেই হোক আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা ছিলোনা। .
শুক্রবার বিকাল রেডি হয়ে ভালো জামাকাপড় পরে চলে গেলাম তাদের বাসায়। কলিংবেল টিপলাম,বাট দরজা লক করা ছিলো না। হঠাৎ করে একটা মোটা নরম হাত আমাকে টেনে ঘরে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে দিলো। ভয়ে হার্ট এটাক হচ্ছিলো আরেকটু হলে। কোনোমতে নিজেকে কন্ট্রোল করলাম।
-ভয় পেয়েছো?
- মোটামুটি!
- তোমাকে তো বলেছিই। এখন আমার চিঠির জবাব তোমার মুখে শুনতে চাই!
- লজ্জা পাওয়ার দরকার নাই৷ বর্ষা বাসায় নেই।
- আবার কি হলো?
- বাইকের চাবি ভুলে রেখে এসেছি, এখনি আসতেছি।
আমি বাহানা করে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসলাম।কারণ বর্ষাকেই আমার লাগবে।তাঁর কাছে
একবার ইজ্জত হারালে আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না। কোনোদিন না!...
এই গল্পটি কি সম্পূর্ণ আপনার মৌলিক লেখা ?
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাই, এটা আমার ২০১৮ সালের টিউশনি নিয়ে লিখা গল্প। টিচার্স প্রফেসন হওয়ায় এখন সেই বাড়িতে এখনো টিউশনি করে যাচ্ছি, যদিও গল্পের ব্যাক্তিটির বিয়ে হয়ে গেছে। ধন্যবাদ!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit