"খুমের রানি দেবতাখুম"প্রকৃতির এক ভয়ানক সৌন্দর্য

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা এ যেন সবার মনের একটা অজানা আকাঙ্ক্ষা।

FB_IMG_1666119358981.jpgনিঃস্তব্ধ দেবতাখুম

ভ্রমণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, ভ্রমণের তীব্র ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষাগুলো আমার সাথে শেয়ার করা হচ্ছিলো

বয়স মোটামুটি চব্বিশ হয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত আমাদের চাঁদপুরের বাহিরে কোথাও বের হতে পারলাম না! কি আফসোস তাইনা!!!

!

সারাদিন কাজের শেষে বিকেলের সময়টা ফুটবল নিয়ে মাঠে শুধু ছোটাছুটি, এর বাইরে অন্য কোন আনন্দই আমি উপভোগ করতে পারলাম না।

আমি চুপচাপ উনার কথাগুলো শুনতে ছিলাম আর ভাবতেছ, হাতে তো সময় শুধু বিকেলের সময়টাই। এই অল্প সময় নিয়ে তো চাঁদপুরের বাহিরে কোথাও বেরোনো মুস্কিল হয়ে পড়বে, কারণ পরের দিন সকাল নয়টায় তো আবার অফিসে আসতে হয়।

আমাদের সাথে আরেক কলিক সেও বিষয়টা নিয়ে খুবই উৎসাহ দিতে লাগলো

খুব সহজেই একটা সুন্দর বুদ্ধি বের করলো, আমরা বৃহস্পতিবার রাতে রওনা দিব এবং সারা রাতে আমরা আমাদের কাঙ্খিত স্পোর্টে পৌঁছাব,তারপরদিন ঘুরবো, আনন্দ করবো আবার রাতে রওনা দিবো,শনিবারে অফিসে জয়েন দিব।

দুই থেকে তিনজন তো দূরে কোথাও গেলে আনন্দ পাওয়া যাবে না।আমাদের একটা টিমের সাপোর্টে প্রয়োজন।আমরা প্ল্যান করলাম কোথায় যাওয়া যায়, আমাদের সবারই একটা চাওয়া ছিল আমরা যেখানে যাব মোটামুটি রোমাঞ্চকর হতে হবে, কিছু ভয় কিছু আনন্দ কিছু পরিশ্রম যেনো অবশ্যই থাকে। আমরা আমাদের ম্যানেজার সাহেবকে বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসলাম , উনি আমাদেরকে কিছু বুদ্ধি পরামর্শ দিলেন উনি বললেন যে, চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য। ওখানে বিশাল পাহাড় আছে আমরা চাইলে সেখানে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি।

আমরা ভেবে দেখলাম এটাই আমাদের জন্য খুবই রোমাঞ্চকর হবে। অজানা একটা পরিবেশে তাই আমরা আমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা শুরু করলাম। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হবে,আবার উঠতে হবে, তাই এংলেট নিলাম,এনার্জি বুস্টার হিসেবে কিছু হাল্কা খাবার নিলাম, কারন আমরা এই পর্যন্ত জানতাম আমরা তিন থেকে চারজন যাচ্ছি।

তবে একটা সুন্দর পরিস্থিতি আমাদের সাথে যোগ করলো। আমরা অনলাইনে ট্রাভেলিং গ্রুপের সাথে কমিউনিকেশন শুরু করলাম এবং আমরা শিউর হলাম "স্বপ্ন ডানা" ট্রাভেলিং নামে একটা গ্রুপ চট্টগ্রাম দেবতাখুম পাহাড়ে যাচ্ছে, তাদের সাথে আমরা আলাপ করলাম তারা আমাদেরকে খুব সাদরে গ্রহণ করলো।
তাদের সাথে আমাদের লাস্ট কমিউনিকেশন এটি ছিল, আমরা কুমিল্লা পর্যন্ত চলে যাব ,ওখানে গিয়ে তাদের টিমে আমরা এড হব এবং ওই টিমের সাথে আমরা " দেবতা খুম"এর উদ্দেশ্য রওনা হবো।

যেই কথা সেই কাজ!!!
আমরা আমাদের এখান থেকে রওনা দিলাম তবে মনে একটা ভয় ছিলো। কারন কখনোই পরিচয় ছিল
এইরকম কারো সাথে ভিন্ন একটা প্রকৃতির স্বাদ নিতে যাচ্ছি।

আমরা চট্টগ্রাম গিয়ে বাসে উঠলাম ওখান থেকে রওনা করলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্পটে।

বাসে করে বান্দরবান পৌঁছাতে প্রায় ভোর হয়ে যায়,আমরা স্থানীয় একটা হোটেল থেকে সকালের নাস্তা করলাম, নাস্তা খাওয়া শেষ করেই পাহাড়ি ওয়েদার দেখার জন্য চান্দের গাড়ি নিয়ে রওনা করলাম

IMG_20211001_085502.jpg
বান্দরবান এর বিখ্যাত চান্দের গাড়ি

চান্দের গাড়িতে অনেক আনন্দ করলাম, তবে মজার কাহিনি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে এবং নামতে টের পেলাম। প্রচুর রৌদ্র আর ক্লান্তি যেনো ধুঁকে ধুঁকে মরার অবস্থা।

IMG_20211001_092419.jpg
দেবতাখুম পাহাড়ে যাওয়ার আগে এই পাহাড়ের উপরে উঠতে হয়েছে

এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও পাহাড়িদের জীবনযাত্রা তা স্বাভাবিক ছিলো, কারণ আমাদের সাথে দুইজন গাইড ছিলো, এনারা অনায়সে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

IMG_20211001_093155.jpgদুটো পাহাড়ের মাঝে একটু রেস্ট

আমরা একটা পাহাড় বেয়ে ভেবে পাচ্ছি না সামনে আগাবো কি-না!!!!!
IMG_20211001_104553.jpg
ক্লান্তি আর রৌদ্র যেনো চোখে অন্ধকার

গরমের তাপমাত্রা শরীর টা কুল করার জন্য কিছু সময় পাহাড় বেয়ে আসা পানিতে শরীলটা ঠান্ডা করে নিলাম

IMG_20211001_104522.jpg
সান্ত্বনা

FB_IMG_1664895073449.jpg

আমরা আরো কিছুদূর হাঁটলাম,দুই-টা পাহাড় পেরিয়ে পাহাড়িদের একটা বাড়িতে দেখতে পেলাম।
FB_IMG_1666117774251.jpgএখানে রেস্ট নিয়ে একটু মনোবল চাঙা করে নিলাম

বাড়ির অপর পাশে কিছুটা পথ হাঁটার পরে আমরা দেবতাখুমে যাওয়ার জন্য দিক-নির্দেশনা পেতে থাকলাম।

IMG_20211001_102416.jpg
মরীচিকার সান্ত্বনা
মনে হলো কিছুটা পথ বাকি,কিন্তু বাঙালির পক্ষে পাহাড়ের দূরত্ব মাপা কঠিন কাজ তা আরেক বার প্রমাণিত হলো।

FB_IMG_1666117805340.jpg
আমরা দেবতাখুমের মুল পয়েন্টে এগিয়ে যাচ্ছি মনের জোরে

যতটা সামনে আগাচ্ছে সরিল, ততটাই পাহাড়ি ঝরনার কূল
ওয়েদার ফিল হচ্ছিল।
IMG_20211001_101259.jpg
পাথরের পর পাথর

IMG_20211001_101313.jpg

কিছুদূর গিয়ে আমরা নৌকা ভারা করলাম।

FB_IMG_1666117789344.jpgআমরা সবাই পরিবেশ টা খুব এনজয় করলাম
দেবতাখুমের দিকে যতটা এগুচ্ছি ভয়ে সরিল ততটা হীম হয়ে আসতেছে, কারণ দুপাশে এতো বড়ো পাহাড়, চূড়া দেখা যাচ্ছে না।

FB_IMG_1666117744384.jpg
✌️

FB_IMG_1666117766473.jpgগা ছমছম করা পরিবেশ

আমরা খুমের দিকে আগাচ্ছি।

FB_IMG_1666117762376.jpg
রোমাঞ্চকর পরিবেশ

FB_IMG_1666117758937.jpg
সবুজ সুন্দর পরিবেশ

FB_IMG_1664895070409.jpgদেবতাখুম

IMG20211001125609.jpg
মারাত্মক স্রোতের সাথে টিকে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি

IMG_20211001_122329.jpg
খুমের রানি দেবতাখুম

IMG_20211001_122328.jpg
প্রকৃতিকে ধন্যবাদ এত সুন্দর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার উপহার দেওয়ার জন্য

দেবতাখুেম প্রবেশ করার পরেই আমাদের সাথে ঘটেছে এক অমানবিক ঘটনা।
আমাদের সাথে যে দুইজন গাইড গিয়েছিল তারা আমাদেরকে নৌকায় করে ওই পারে নামিয়ে দিয়ে বাসের বেলাতে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসছিল। তারা অন্যদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ায় আমাদেরকে আর সহযোগিতা করার কেউ ছিল না। দেবতাখুম পাহাড়ের যে অংশে খুব বেশি বড়ো পাথর আর পানির স্রোত ছিলো ওই অংশের প্রায় 30 জনের মতো আটকে গেছিলাম। এর মধ্যে আমাদের সাথে একজন ভাই ছিল উনি সাঁতার জানে না।দেবতাখুম এর মূল পয়েন্টে আমরা প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর খুব আতঙ্কে পরে যা-ই। যে অংশটা আমরা ভেলা আর নৌকা দিয়ে পার হয়ে ছিলাম ওই পথটা প্রায় এক কিলোমিটারের মতো ছিলো,পরিস্থিতি খারাপ পর্যায়ে যাওয়ার উপক্রম। আমি এবং আমাদের সাথে আরও তিনজন মিলে সাঁতার কেটে অপর প্রান্তে গিয়ে সবার জন্য নৌকা এবং বাঁশের ভেলা জোগাড় করি, আমাদের আগেই এখানে আরেকটা টিম গিয়েছিল ওখানে ছয় জন মেয়ে ছিলো, আমাদের আনন্দের যাত্রাটা সবশেষে একটা বেদনাদায়ক মুহূর্ত কাটলো।ভয়ার্ত চেহারা এবং কান্না করার দৃশ্যটা এখনো আমার চোখে ভাসে, এ যেন সত্যিই এক প্রকৃতির ভয়ানক সৌন্দর্য।

deviceclickClick
one plus,SamsungBabu vahime

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আমরাও বন্ধুরা মিলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।আপনার অভিজ্ঞতা গুলো আমাদের কাজে লাগবে। আর সর্বশেষ এর ঘটনা পড়ে অনেক খারাপ লাগল।আপনাদের আন্দন্দের যাত্রা পরিণত হল বিষাদে।গাইড দের এরকম করা ঠিক হয়নি,অন্তত সতর্ক করা দরকার ছিল।আপনার সুস্থ ভাবে ফিরে আসতে পেরেছেন এজন্য ঈশ্বর কে ধন্যবাদ।

স্থানীয় গাইড গুলো একটু উল্টো পাল্টা করে, তাদের মধ্যে ৮০% লোক আছে অনেক ভালো। আমাদের হয়তো নসিবে ছিলো, তাই এমনটা হয়েছে ভাই, তবে আপনারা যখন ভ্রমণে যাবেন অবশ্যই টিমের সাথে যাবেন। বান্দরবান ঢুকে সেনাক্যাম্পে আগে নিজেদের নাম লিস্ট করে নেবেন তারপর গাইড নিবেন।সেনা ক্যাম্পে নাম থাকলে গাইড আপনাদেরকে রেখে আসবেনা কারণ তারা সন্ধ্যায় আপনাদের এই সবার উপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর কাছে জবাবদিহিতা করে। কেউ যদি মিসিং হয় সেনাবাহিনী তাদের টিম নিয়ে খুজতে বেরিয়ে যায়।

অনেক মূল্যবান পরামর্শ দিলেন ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

দেবতাখুম এর ছবি ভিডিও অনেক দেখেছি। এইরকম নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য খুব কম আছে। এককথায় বলতে গেলে অসাধারণ। জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে এইরকম ট‍্যুরের দরকার আছে। আপনি তো বিকেলে তাও ফুটবল নিয়ে মাঠে ছুটেন আমার সে উপায়ও নেই। যাইহোক ফটোগ্রাফি গুলো দারুণ ছিল। এবং সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখেছেন।

ভালোবাসা অবিরাম ভাই। তবে এখন আর আগের মতো সময় পাই না,খুব মিছ করি, মুহুর্ত গুলো।

  ·  2 years ago (edited)

বান্দরবান আমি গিয়েছি ২ বার, অনেক সুন্দর জায়গা। কিন্তু দেবতাকুম যাওয়া হয়নি। সত্যিই জব করে ঘুরার সময় বের করা অনেক ঝামেলার। তারপরও আপনি সময় বের করে ঘুরে এসেছেন। আসলে একটু ঘুরাঘুরি না করলে জব বলেন আর যেকোন কাজ কোথাও মন বসে না। আপনি ভ্রমনে খুব উপভোগ করেছেন আপনার ছবিগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চান্দের গাড়ি করে এই উচু নিচু রাস্তায় অনেক মজা লাগে। পাহাড়ের মাঝে পানির স্রোত দেখতে ভাল লাগছে। প্রতিটি ছবি খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভ্রমন টা এরকম বিষাদে পরিনত হয়ে যাবে সেটা খুব খারাপ লেগেছে। দেখি এই শীতে যাওয়া যায় কিনা। ধন্যবাদ ভাইয়া।

ভালোবাসা অবিরাম ভাই। আসলে ওরা টাকার নেশায় পইরা গেছে তো যার কারণে এই কাজটা করছে। আপনারা যদি কখনো ওখানে যান, তবে বি কেয়ারফুল গাইডকে কখনো হাতছাড়া করবেন না। গাইড এর সাথে যাওয়ার আগে অবশ্যই সেনাক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে নিবেন । তাহলে ওর একটা চাপে থাকবে, সন্ধ্যার আগে যদি জায়গামতো পৌছে না দেয় সেনাবাহিনী তাদেরকে এই বিষয়ে তলব করবে এবং তারা টিম নিয়ে বের হবে আপনাদেরকে খুঁজতে।

জায়গাটি সম্পর্কে ইদানিং অনেক শুনেছি । ইচ্ছা আছে আগামী বছর ওখানে যাবার তবে এত দূর্গম এলাকায় মেয়েরা কিভাবে যায় ভাবতে অবাক লাগে। যাদের সাথেই আপনার গিয়ে থাকেন তারা এমন একটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজ কিভাবে করল বুঝতে পারলাম না। তবে ছবিগুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। ইচ্ছে হচ্ছে এখনি বের হয়ে যাই।

প্রকৃতির প্রেমে পড়ার মতো আনন্দ আর নেই। তবে সঠিকভাবে পরিচালিত না হলেই বিপদের শেষ নেই ভাই

আমি ২০১৮ সালের দেবতা খুম সম্পর্কে জেনেছিলামইউটিউব থেকে দেখেছিলাম অসাধারন এক প্রাকৃতিক দান।আমার অনেক শখ সেখানে যাবার হয়তো খুব দ্রুতই যাব।অনেক দারুন কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন আপনি শুভ কামনা রইল।

ইনশাল্লাহ, আল্লাহ আপনার আশা পূরন করবে। অবশ্যই টিম নিয়ে যাবেন।

পোস্ট সম্পর্কিত ট্যাগ সর্বপ্রথমে দিবেন।আর ট্রাভেল ব্লগে ট্রাভেল ট্যাগ নেই কেনো?এসব দিকে আরো যত্নশীল হবেন।

ধন্যবাদ, ইনশাআল্লাহ বিষয়টি নিয়ে সচেতন থাকবো