বিড়াল নিয়ে লেখা " স্মৃতি" ১০%বেনিফিসিয়ারী @shy-fox,৫%বেনিফিসিয়ারী @abb-school

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম আল্লাহর রহমতে আপনারা নিশ্চয়ই সুস্থ আছেন।
আজকে হঠাৎ করে মনটা খুব মিস করতেছে ছোট একটা "পোষা বিড়াল প্রাণীকে "।
প্রথমত আমি ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করি "আমার বাংলা ব্লগকে"।
কারণ এখানে আমি আমার অনুভূতি এবং স্মৃতি শেয়ার করার সুযোগ পেয়েছি।

যাই হোক মূল গল্পে ফিরে আসি….
কতদিন হয়ে গেল তাকে দেখিনি,খুজিনি আসলে, সময়ের বেড়াজালে পড়ে থেকে রাখেনি তার সন্ধান । শেষ কবে মন থেকে কাউকে কোনো কিছু শেয়ার করেছি আমার মনে নেই। আবেগটা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি কারণ আমি তো বড় হয়ে গেছি!!! আগে ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে বন্ধুবান্ধবের কাছে শেয়ার করতাম। সময়ের বেড়াজালে আটকিয়ে সবাই দূরে সরে গেছে। তাই না বলা কিছু স্মৃতি আমাকেই বহন করে চলতে হয়।

স্মৃতি .jpg

ক্লান্ত দুপুরে যখন আমি কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসতাম,বাইক থেকে নামার আগেই আমি দেখতাম একটা প্রাণী খুব ছুটে আসছে! ওহ! তার একটা ছোট নাম ছিলো, "সুন্দরী"। কোলে তুলে নেওয়ার আগপর্যন্ত সে পায়ের সাথে তার শরীর টা ঘষাঘষি করতেই থাকতো। যখন বাড়িতে কেউ থাকতো না তার উপস্থিতি বুঝতে দিত না বাড়িটা জনশূন্য। সন্ধেবেলা যখন আমি আবার অফিস থেকে আসতাম, আমার অফিসের পোশাক টা খুলে রাখা পর্যন্ত তার অস্থিরতা থাকতো সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে তো অফিসের পোশাক পরা অবস্থাতেই তাকে কোলে নিয়ে একটু আদর করে শান্ত করতে হতো। তার খাবারের তালিকা টা একটু আলাদাই ছিল, কারণ তাকে আমি খুব ভালোবাসতাম করতাম। বাড়িতে যখন মেহমান আসতো, সবার পায়চারি তাকে খুব বিরক্ত করতো।খুব সহজে কারো কাছে যেতো না।সবাই যদি আমার আশেপাশে অবস্থান করতো, সে দূর থেকে খুব মন খারাপের সুরে ডাকতো।

received_200070448945002.jpeg

আমি তাঁকে নিয়ে টিবি দেখতে বসলে আমার কোলের উপরে আলতো করে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকতো। যখন মোবাইল নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতাম তাকে সময় দিতাম না অভিমান করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বসে বসে ডাকাডাকি করত, কাছে আসতো না। তার রাগটা যেন শুধু আমাকে ঘিরে। তাই তাকে আদর করে আমাকেই খাওয়াতে হতো। যখন বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরতাম, সবাই ঘুমে মগ্ন থাকলেও তার চোখে ঘুম দেখতাম না।সে আমার জন্যই অপেক্ষায় থাকত। আমার প্রতি তার বিশ্বাস এবং তার প্রতি আমার ভালোবাসা কোনোটাই কমতি ছিল না!!!

received_941026399859910.jpeg

ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমার নতুন আরেকটা জব হয় কলেজে" কম্পিউটার ট্রেইনার & লেকচারার" হিসেবে। এই চাকরীর পাশাপাশি আমি আমার আগের চাকরিটাও চালিয়ে যাচ্ছিলাম।আর আমার আগের চাকরিটা ছিল মার্কেটিংয়ে।একত্রে দুটো জব কন্টিনিউ করার কারণে আমি শুধুমাত্র রাতেই বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করতাম। যার কারণে বাড়ি ফিরে আমি খুব ক্লান্ত থাকতাম, মোটামুটি খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পরতাম কারন রাতের সময় টাই যেহেতু আমি বিশ্রামের জন্য পেতাম,
কিছুদিন এভাবেই কাটতে থাকে, প্রকৃতিও হঠাৎ বিপক্ষে চলে যায়। বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই। বৃষ্টি প্লাস দুটো জব। সবমিলিয়ে অসম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে নিজের প্রতি খেয়াল রাখা।
দুইবেলা যেহেতু আমি বাহিরে খাবার খেতাম, দু'বেলায় না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষায় থাকতো,এভাবে অজান্তেই চলতে থাকে তাঁর প্রতি আমার অজন্ত আর হেঁয়ালিপনা। খাবারের জন্য না শুধু একটুখানি আদর আর ভালোবাসার জন্য আমার জন্য তার প্রতিনিয়ত অপেক্ষা। চুপচাপ পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে থাকতো, আগের মতো পায়ের সাথে শরীর টা ঘষাঘষি করতো না,সে হয়তো বুঝতে পারতো,আমি খুব ক্লান্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম কোল ঘেঁসে শুয়ে আছে। আমি সময়ের সাথে সাথে নিষ্ঠুর হয়ে যা-ই।

received_605661114008826.jpeg
তারপ্রতি আমার কোনো দ্বায়িত্ব ছিলো না, তারপর কলেজে থেকে সাত দিনের ট্রেনিংয়ে (ব্যানবেইচ শাখা মতলব) চলে যাই।সেখান থেকে ফিরে এসে আগের নিয়মে ব্যাস্ত হয়ে পরি। তার অনুপস্থিতি প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব দিতাম না, ভাবতাম হয়তো বাবা-মা এর সাথে আছে। এভাবেই কিছু দিন চলতে থাকে কিন্তু তার কোনো উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম না। ব্যাস্থতার কারনে আমি তাকে খুজতে পারিনি, তাই হয়তো সে-ও আমাকে খুঁজেনি। হারিয়ে গেছে অথবা চলে গেছে, কিছু স্মৃতি আমাকেই দিয়ে গেছে,সে নিয়ে গেছে অসংখ্য অভিযোগ আর অভিমান। তার নিষ্পাপ অভিমান এখন আমার চোখের জল হয়ে ঝরে পড়ে। আর লিখতে পারছিলাম না,কিবোর্ডের উপর কিছু একটা পরতেছে,হ্যা এটা আমার "সুন্দরী"র অভিমানে চলে যাওয়ার স্মৃতি, দুফোঁটা চোখের জলের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার করুন স্মৃতি!!!

camera : Samsung m01s
Click : me.

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!