"আমার বাংলা ব্লগ" 👉 প্রতিযোগিতা -২২ // আমার প্রথম মোবাইল ফোন 📱 হাতে পাওয়ার অনুভূতি।😀

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
সম্মানিত আমার বাংলা ব্লগের, সর্বস্তরের ব্লগার ভাই ও বোনদেরকে, আজকের এই ছোট্ট এবং নানা স্মৃতি বিজড়িত আয়োজনের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।🤳

20220829_235320.jpg

হ্

দেখতে দেখতে প্রায় ১৯ বছর পেরিয়ে গেল। আসলে এই প্লাটফর্মে আসার পর থেকে অনেকগুলো প্রতিযোগীতা হয়ে গেল, কিন্তু কখনো সাহস হয়নি কিছু লিখার। তবে, এবারের আয়োজন এবং আমাদের এই প্রতিযোগিতার স্পন্সার আমার বাংলা ব্লগের এ্যাডমিন এবং মডারেটরবৃন্দের চমৎকার চিন্তাধারার আলোকে, সুন্দর এবং স্মৃতি বিজড়িত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হলাম।

যাই হোক আমার বাবা একজন সরকারি কর্মচারী যিনি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কারিগরি কুটির শিল্পে, মৌমাছির মধু সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিতেন। সেই সুবাদে আমার বাবাকে সে সময়ে, সবাই সম্মান করতো এবং উনার জানা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করত।

২০০৩ সাল, আমার বাবার বস মোবাইল কিনেছেন, নকিয়া ১১০০ মডেলের।👇

IMG_20220829_220639.jpg
Source

সে সময়টা সম্পর্কে, আসলে অনেকেই অনেক রকম ভাবে অবগত রয়েছেন। সে সময়, যার কাছে এই মোবাইল ছিল তাকে মনে করা হতো, সে অনেক সৌখিন এবং অনেক ধনী ব্যক্তি। তবে সত্য কথা বলতে কি, সে সময় সাধারণ ফ্যামিলির ছেলেপেলেদের মোবাইল নেওয়ার অনেক ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকার পরেও এই মোবাইলটিকে হাতের নাগালে পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব ও অলৌকিক ঘটনা।

সে সময় আমি খুব ছোট এবং ক্লাস ফাইভে পড়ি । সেই সময়ে আমাদের এলাকার এক বড় ভাই । নিজের আবাদি জমি বিক্রি করে একটি মোবাইল নিয়েছিলেন। আমি স্কুল থেকে আসার সময় আমাদের এলাকার ওই ভাইটির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম মোবাইলটি দেখার জন্য। যদিও শহরের মানুষের কাছে অনেক আগেই এই মোবাইল, অনেকজনের হাতে দেখা মিলতো। তবে গ্রামের মানুষের কাছে, খুব একটা বেশি আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল না, বিধায় গুটিকয়েক মানুষের হাতে এই মোবাইল গুলো দেখতে পাওয়া যেত। তবে এই মোবাইল, যার হাতেই থাকুক না কেন, এই মোবাইলকে পেতে হলে সাধারণ ফ্যামিলির ছেলেপেলেদের অনেক রকমের ত্যগ শিখার এবং বড় বিসর্জনও দিতে হতো। তারপরেও এই মোবাইল হাতে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।

আমার বাবা যেহেতু চাকরি করতেন, আমরা দুই ভাই বাবাকে একটি মোবাইল কেনার কথা বলতাম। তবে আমার বড় ভাই মোবাইল কেনার ব্যাপারে বাবাকে তেমন কিছুই বলতো না। যাই হোক একদিন রাতের বেলায় ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছিল এবং সে সময়ে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দেখি বাবার মুখে লাইট জ্বলছে। তবে একটু ভালোভাবে দেখলাম সেটি লাইটের আলো মনে হচ্ছে না। দেখে অবাক হয়ে গেলাম এটি তো মোবাইল 🤔। মোবাইলের মডেল ছিল নকিয়া ১১০০। দৌড়ে গিয়ে মেজ ভাইকে খবর দিলাম। নিমেষের মধ্যে দুই ভাই বাবার সামনে উপস্থিত। বাবা আমাদেরকে দেখে একশ হাত দূরে থাকতে বলল। কারণ বাবা মনে করত মোবাইলে হাত দিলেই তা নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়াও আমরা তো মোবাইলের কোন কিছুই বুঝিনা। কি চাপতে কি করে ফেলবো, শেষে বাবার মোবাইলে অফিস থেকে ফোন আশাই বন্ধ হয়ে যায় কিনা এই ভয়ে আমাদেরকে একশো হাত দূরে থাকার নির্দেশ দিলেন। তবে আমার মেজ ভাই আমার থেকে একটু বড় ছিল, তাই বাবা তাকে একটু মোবাইলটি ধরতে দিতেন।

আমার মেজো ভাই খুব সাবধানে একটি করে ফাংশন ওপেন করতেছে এবং আমার বাবা আমি ও আমার ভাই দেখে বিস্মিত হচ্ছি।

এমতাবস্থায় রিংটোন এর অপশন পেয়ে গেলাম। বাটনে চাপ দেওয়ার সাথে সাথেই বেজে উঠলো রিংটোন, সেই সাথে অসাধারণ অনুভূতি হতে লাগলো এবং মনের মধ্যে মোবাইলটি হাতে নিয়ে, এর মধ্যে, কি কি রয়েছে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার অনেক ইচ্ছা জাগলো। কিন্তু বাবার হাতে মোবাইল! খুঁটিয়ে দেখার ইচ্ছা মনে হয় না পূরণ হবে।🥺

আমার বাবা মোবাইলটিকে প্রায় এক বছর কাউকে ভালোমতো ধরতে দেয়নি। শুধু নিজের হাতে ধরে হালকা-পাতলা দেখাইতো ও মোবাইলের রিংটোন গুলো শোনাই তো। এতেই আমরা অনেক শান্তি পেতাম।

বাবা মোবাইলটাকে অনেক সাবধানে ও যত্নে রাখতেন। শুধু অফিস থেকে ফোন এলে রিসিভ করে কথা বলতেন। আমরা দুই ভাই বাবাকে ফাঁকি দিয়ে মোবাইলটিকে হাতে নিতাম। ‌‌ মোটামুটি মোবাইলের ফাংশনগুলো আমরা জেনেও গেছিলাম। তাই যেভাবেই ফাংশনগুলো রয়েছে সেভাবেই থাকতো আমরা কোন চেঞ্জ করতাম না। তবে আমি শুধু মোবাইলে হাত দিতাম গেম খেলার জন্য। নকিয়া ১১০০ মডেলের মোবাইলে একটি সুন্দর গেম রয়েছে। তবে এই গেমটি খেলানোর খুব বেশি সুযোগ পেতাম না।

এভাবে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে একটি মোবাইল নিজের হাতে পাওয়ার স্বপ্ন মনের মধ্যে গেঁথে যায়। অবশেষে আমাকে আমার দুলাভাই সেই স্বপ্ন পূরণ করার আশ্বাস দেয়, কারণ তিনি দেশের বাইরে থাকেন। তার পক্ষে মোটামুটি একটা ভালো মোবাইল কিনে দেওয়া কোন ব্যাপারই না। তবে শর্ত একটাই মোবাইল পাব এস,এস,সি পরীক্ষা দেওয়ার পর। এ তো ৪-৫ বছরের ধাক্কা। তবে এতটা দীর্ঘ সময় একটি মোবাইল হাতে পাওয়ার স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন পালন করে বড় করলাম। এর মধ্যেই মোবাইল নিয়ে অনেক ঘটনানাই ঘটেছে, যা ছিল হৃদয়বিদারক ও যন্ত্রণাময়। অবশেষে, এসএসসি পরীক্ষা দিলাম ২০০৮ সালে। ‌‌পরীক্ষা দেওয়ার পরেও মনের আশা পূর্ণ হলো না। কারণ পরীক্ষায় পাশ করতে হবে তারপরে হয়তোবা মোবাইল হাতে পেতে পারি। আরো চার মাস অপেক্ষার পর ভালো রেজাল্ট নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করলাম। পাস করার পরে মোবাইল হাতে আসার কথা বলতেই পারছি না। এভাবে আরো দুই মাস অতিবাহিত হল। আমি পড়ালেখার জন্য শহরে আসলাম। সেখানে মেচে জীবনযাপন শুরু করলাম। তখনকার দিনেও হোস্টেলের অনেক ছেলেপেলেদের হাতে মোবাইল ছিল। আমি তাদের সাথে কথা বলতাম, তবে তাদের হাতে মোবাইল থাকার কারণে তারা নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা মনে করত।

সময়ের ক্রমান্বয়ে চলার সাথে সাথে, একদিন হঠাৎ আমার সেই দুলাভাই বাইরের দেশ থেকে nokia n70

18yn.jpg
source

মোবাইলটি দেশে পাঠিয়ে দেন। সেটা আমার বড় আপুর কাছ থেকে আমি হাতে পাই। আসলে মোবাইলটি হাতে পাওয়ার সাথে সাথে চোখে পানি এসে যায়। এত দামি মোবাইল তাও আবার আমার হাতে। সে সময়ের অনুভূতিটা এতটাই স্পর্শকাতর ও অদ্ভুত ধরনের আনন্দ মনের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

nokia n70 আমার জীবনের প্রথম হাতে পাওয়া এবং সম্পূর্ণ নিজের মোবাইল, আমি যেমন-খুশি, তেমনভাবেই মোবাইলটি নাড়াচাড়া করতে পারব। এবং মোবাইলের মধ্যে হাজারো ফাংশন তা আমি নিজের হাতে পর্যবেক্ষণ করতে পারব। সে সময় মোবাইলটি আমি হাতে পাওয়ার পর মনে হয় তিন দিন রাতে ঠিকমতো ঘুমায়নি। সারাক্ষণ মোবাইলটির মধ্যে পড়ে থাকতাম। তবে এই মোবাইলের গেম গুলো ছিল খুব চমৎকার। আবার সেই মোবাইলে গেম ঢোকা যেত। সে মোবাইলে বড় একটা মেমোরি কার্ড ছিল এবং সেই মেমোরি কার্ডটিতে গান সব ধরনের কম্পিউটারের দোকানে ঢোকা যেত না। শহরের বড় এবং ভালো কম্পিউটার দোকানে এই মোবাইলে গান ঢোকানো যেত।

তবে যাই হোক মোবাইলটি বেশ চমৎকার ছিল। মোবাইলটি দেখতে সে সময় অনেক আকর্ষণীয় লাগতো। পিছনের ক্যামেরা স্লাইড সিস্টেম। যা স্লাইড এর মাধ্যমে হাত দিয়ে ওপেন করতে হতো। আমি যখন, ওই ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতাম তখন, অনেকেই দেখে অবাক হয়ে যেত। সে সময় মোবাইলটি আমার জীবনের থেকেও বড় ছিল। তেমনটিই মনে হতো। আমি সারাক্ষণ মোবাইলটিকে চোখের সামনে রাখতাম। মোবাইলটি আজও আমাদের গ্রামের বাসায় সংরক্ষিত রয়েছে। বাসা থেকে বহুদূরে অবস্থান করছি তাই মোবাইলের ছবি দিতে পারিনি।
এই ছিল আমার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি, 📱 যা আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করে আমার আজকের অনুভূতি এখানেই শেষ করছি।

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn9T8yR8xAxr6yYTx.png

20220828_214204.png
20220828_230433.png

আমি মোঃ মেহেরবান আলী বাসাঃ দিনাজপুর। বর্তমানে থাকি- সৈয়দপুর, নীলফামারী।
বাংলা আমার মায়ের শেখানো ভাষা। সেই মা আর নেই, কিন্তু তার শেখানো ভাষা আমি ব্যবহার করে আমার দেশ বাংলাদেশের মাটিতে বিচরণ করছি ও এই ভাষার মাধ্যমে আমার মনের ভাব সবার মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছি। তাই এই ভাষা আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষা। আমার কাছে আমার দেশ ও আমার বাংলা ভাষা এটি হচ্ছে আমার বেঁচে থাকার চালিকাশক্তি এবং আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমি আমার দেশ ও আমার মায়ের ভাষাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।

WhatsApp Image 2022-08-24 at 1.30.17 PM.jpeg

271482999_4679632658785881_1215684256941730929_n.gif

294693058_579947456903579_8904683423567108283_n.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাই, আপনার প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতিটুকু পড়ে খুবই ভালো লাগলো। সব বাবারাই বুঝি এরকম হয় একটু খুটখুটে স্বভাবের। যার কারণে তার মোবাইল ফোনটি থেকে 100 হাত দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাইহোক ভাই, অবশেষে আপনার দুলাভাই আপনাকে দারুন মডেলের মোবাইল গিফট করেছিল। আর সেই মোবাইল পেয়ে আপনার চোখে পানিও চলে এসেছিল। এই চোখের পানি হচ্ছে আনন্দের। প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে আপনার যতটুকু ভালো লেগেছিল আশাকরি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পর, সফলতা অর্জন করে ঠিক ততটুকুই আনন্দ উপভোগ করুন। ধন্যবাদ

ভাইয়া আসলে আপনার মন্তব্য এতটাই প্রাণবন্ত এবং আন্তরিকতায় ভরা, যা পড়া মাত্রই আমার অন্তর প্রশান্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেল। আপনি আমার মোবাইল পাওয়ার অনুভূতির গল্পটি নিখুঁতভাবে পড়েছেন এবং আমার উপলব্ধির সারমর্ম অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তুলে ধরেছেন। যা আমাকে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল, এভাবেই পাশে থাকবেন এবং অবশ্যই আমাকেও পাশে পাবেন। ধন্যবাদ আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ❤️

@dmaherban

10% shy-fox]

এটা টাইটেলে লেখার দরকার নেই।

ধন্যবাদ আপু, এডিট করে কেটে দিয়েছি।