বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতি || প্রতিযোগিতা-০৬ এ অংশগ্রহণ || তাবুর মেলা || লেখক-@doctorstrips

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

আজ || ২৪ ভাদ্র,১৪২৮ বঙ্গাব্দ || ৩০ মুহাররম,১৪৪৩ হিজরী || ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ইংরেজি || রোজঃবুধবার ||

the-kremlin-3872941_640.jpgSource

আউল বাউল লালনের দেশে, মাইকেল জ্যাকশন আইলো রে ,,,,,, সারিন্দা কাঁন্দে রে।

Old is Gold

আসসালামু আলাইকুম

সকল স্টিমিয়ান বন্ধুদের শারদীয় শুভেচ্ছা রইল।

সেই সঙ্গে শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সুপ্রিয় বাংলাদেশী এডমিন জনাব @moh.arif ভাইকে, তাঁর সুচিন্তিত এই প্রতিযোগিতাটি প্রকাশ ও আমাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য।

বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদের মাঝে ভাগ করে নেবো

বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতি || প্রতিযোগিতা-০৬ এ অংশগ্রহণ || তাবুর মেলা || লেখক-@doctorstrips||

তাহলে বিলম্ব না করে শুরু করি।

সূচনা

বাংলাদেশ গ্রামীন সংস্কৃতির দেশ।গ্রামীন সংস্কৃতির সঙ্গে এদেশের মানুষরা অতপ্রতভাবে জড়িত।আর এসব সংস্কৃতি তাদের মানসিক বিনোদন যোগিয়ে চলে দিনের পর দিন।

কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল ও অনলাইনের যুগে ঐসব পুরানো সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়।

এই রকম বিলুপ্ত ও আমার স্মৃতিচারণ একটি মেলার চমৎকার কাহিনী আজকের প্রতিযোগিতায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

মেলাটির নাম ছিল-

তাবুর মেলা

তাবুর মেলার স্থান ও তারিখ

আমাদের গ্রামের বাড়ীর পাশ্বে ৫০ থেকে ৬০ মিটার দুরে প্রতি বছর ১০ ফাল্গুন একদিনের জন্য এই তাবুর মেলাটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতো।
প্রায় ১০০ /১১০ একর জমির অঞ্চল জুড়ে এই মেলার অবস্থান।

আমন ধান কাটার পর ক্ষেতের জমিগুলো অলস সময় কাটায় তিনটি মাস ধরে।তার মধ্যে ফাল্গুন মাসও রয়েছে।আর এই সময় তাবুর মেলা অনুষ্ঠিত হতো।
মেলার ঠিক মাঝখানে ২০ থেকে ২৫ ফুট লম্বা বা উঁচু ও ৩৬ বর্গফুুটের একটি কাপড়ের তাবুু বানিয়ে রাখতো মেলার একজন মালিক।

tent-1514387_640.pngSource

তাবু তৈরির উপকরণ

১০ থেকে ১৫ গজ বিভিন্ন রঙের কাপড়।
৪ টি ২০/২৫ লম্বা বাঁশের খুঁটি।
বাঁশের কিছু বাতা বা বাতি।
২৫০ গ্রাম চিকন সুতলি।
১,২ ও ৫ ইঞ্চি তারকাঁটা।
কিছু সেফটিপিন।
হ্যাস্কো ব্লেব
দা ও চাকু
প্লাস
স্টিল টেপ বা স্কেল ইত্যাদি।

উপরোক্ত উপকরণ গুলো ব্যবহার করে ডেকোরেটরদের মতো সুন্দর করে তাবুটি তৈরি করতো।

IMG_20210904_152914.jpgক্যাপশন বাই-সিম্ফোনি জেড২৫। ক্যামেরা-১৩এমপি।what3words Location

IMG_20210908_093028.jpgক্যাপশন বাই-সিম্ফোনি জেড২৫। ক্যামেরা-১৩এমপি।what3words Location

IMG_20210908_092901.jpgক্যাপশন বাই-সিম্ফোনি জেড২৫। ক্যামেরা-১৩এমপি।what3words Location

IMG_20210908_092910.jpgক্যাপশন বাই-সিম্ফোনি জেড২৫। ক্যামেরা-১৩এমপি।what3words Location

তাবুর মেলার মালিক ও উদ্দেশ্য

আমাদের গ্রামের পাশ্ববর্তী কুটিরপাড়া গ্রামে নজম উদ্দিন মন্ডল নামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকের সন্তান হতো না। তাই তিনি তাবু বানিয়ে মেলা করতো নিজ খরচে। কয়েক বছর পর আল্লাহ তাকে একটি ছেলে সন্তান দান করে। সেই ছেলেটির নাম রাখা হয় আব্দুল মজিদ মন্ডল।

তার পরবর্তীতে উনি দুই ছেলে তিন মেয়ের জনক হয়ে যায়। নজম উদ্দিন মন্ডল আজীবন তাবুর মেলাটি করতো এবং উনি মারা যাবার পরে ওনার ছেলেরা মেলাটি করতো।

মেলার নামকরণের স্বার্থকতা

যেহেতু তাবুর তৈরির উদ্দেশ্য মেলা করা। তাই তাবুর নাম অনুযায়ী মেলার নামকরণের নামকরণ করেন
তাবুর মেলা

camelot-4007018_640.pngSource

মেলায় যা যা ছিল

একদিনের মেলা হিসাবে মানুষের বিনোদনের জন্য অনেক কিছু জিনিস আসতো।
যেমন-

সার্কাস,
ছায়াবাজি,
পুতুল নাচ,
লাঠিখেলা,
লটারি খেলা,
হাউজি খেলা,
সাইকেল ও মোটরসাইকেল খেলা,
আলম সাধুর গান নামে একটি মঞ্চ নাট্যশালা ছিল।
এগুলো আমাদের বিনোদনের জন্য মেলায় আসতো।

ferris-wheel-690988_640.jpgSource

gypsy-tent-4006373_640.pngSource

আরো ছিল

তাছাড়া মেলায় মিষ্টি, জিলাপী,নিমকি,ঝালমুড়ি,চটপটি,মিষ্টি আলু,খিরা,ফুটি,তরমুজ খাওয়ার সামগ্রী পাওয়া যেত।
ছোট বাচ্চাদের খেলনা, বেলুন, হারমোনিয়াম, বাশি,খুড়ি,পটকা,ইত্যাদি বাচ্চারা কিনতো তাবুর মেলায়।
বাচ্চাদের জন্য মাটি ও চীনা মাটির তৈরি বাসন কোসন,পুতুল,হাঁড়ি,পাতিল,হাতি ঘোড়া ইত্যাদি।

সার্কাস ও আলম সাধুর গান আমাকে সবচেয়ে ভালো লাগতো।

খেলার মধ্যে হাউজি খেলা খুব খেলতাম।আমার প্রিয় খেলা।

তাবুর মেলার দিনের আগের রাতটাই কাটতো না আমার। কবে যে রাতটা শেষ হয়, কবে যে মেলা শুরু হয়। মেলায় দোকান আসা,দোকান দেয়া এগুলো মেলার আগের দিনে আমরা দেখতাম আনন্দে।

sparklers-828570_640.jpgSource

তাবুর মেলা বিলুপ্ত

১৯৮৭ সাল যখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম।সেই মেলাই শেষ মেলা তাবুর মেলা।তারপর থেকে আর মেলা হয় না।নিঃশেষ হয়ে যায় সেই মেলা।

কবির ভাষায় বলতে হয়-

দিন যায়

ক্ষণ যায়,
সময় কাহারো নয়,
বেগে ধায়
নাহি রহে স্থির;
সহায় সম্পদ বল
সকলি ঘুচায় কাল,
আয়ু যেন পদ্মপত্রে নীর।।

তাবুর মেলার বিলুপ্তির কারণ

মেলার মালিক মারা যাবার পর ছেলেরা কিছু বছর মেলাটি চালালো।
তারপর ওনার ছেলেরা অভাবে পড়ে আর মেলাটি চালানো সম্ভব হয়নি তাদের,বিলুপ্ত হয়ে যায় মেলাটি।
কারণ একটি মেলা চালানো ও তাবুু তৈরি অনেক টাকা খরচ হতো, সেটা আর তার ছেলেরা বহন পারছিল না।তাই মেলাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

তাছাড়া বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসব মেলা এমনিতেই বিলুপ্ত হতো। ডিজিটাল যুগে ঐসব মেলা এখন আর চলতো না। তবুও বলতে হয় যে "Old is Gold"
কারন সেইদিনগুলোই অনেক ভালো ছিল,ছিল অবিরাম আনন্দের। যা জীবনে কখনো ভোলার নয়।

পরিশিষ্ট

ভুলতে পারিনা সেই তাবুর মেলার আনন্দঘন দিনগুলো, আবেগময় সময়গুলো ও স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো। আসলে ছোটবেলার মেলার স্মৃতি গুলো আজও হৃদয়ে নাড়া দেয়।বিলুপ্ত হওয়া জিনিসগুলোর কথা আজো মনে পড়ে।
তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই রইল।দেখা হবে পরবর্তী আর্টিকেলে সেই প্রত্যাশায় সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ও সুন্দর থাকবেন।।

বন্ধুরা পোস্টটি ভালো লাগলে আপভোট দিতে পারেন।না হলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন, কেমন?

ধন্যবাদান্ত-

@doctorstrips

আমি মোঃ নায়েব আলী,
হাইস্কুল শিক্ষক।
এলএমএএফ ডাক্তার।
একজন ইউটিউবার।
ওয়েব ডিজাইনার ও ব্লগার।
ছাদবাগান, ফটোগ্রাফ, ভিডিও,জনসেবা ও ভ্রমণ আমার প্রিয় শখ।

এই প্রতিযোগিতার আর্টিকেলটি সম্পুর্ণ আমার নিজস্ব ও কোথায় থেকে কোন কপি করা হয়নি। কোথাও হতে কোন তথ্য বা আলোকচিত্র নিয়ে থাকলে তার সোর্স এবং ক্যাপশনকৃত ছবির বর্ণনাসহ লোকেশন দেয়া আছে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনার উপস্থাপনা অনেক সুন্দর।ছবি গুলো অসাধারণ ছিল। পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।ছোট বেলায় মেলায় যেতে বেশি আনন্দবোধ করতাম।এখন আগের মতো আর মেলা হয় না।আপনার পোস্ট এর মাধ্যমে মেলা দেখা স্মৃতিচারিত হয়েছে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি সম্পুর্ণ পড়ার জন্য। আসলে এ সব স্মৃতি এখন ছায়া হয়ে পাশ্বে থাকবে। যুগের আপডেট।
ভালো থাকবেন।শুভকামনা রইল।

অনেক যত্নসহকারে আপনার পোষ্টটি আমাদের সামনে উপস্থাপনা করেছেন, আর পোস্টটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। পরিশেষে আপনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
আসলে আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতে পারেন বা লিখতে পারেন।
আবারো ধন্যবাদ ও শুভ কামণা রইল।

চমৎকার করে আপনাদের তাবুর মেলাটির বর্ণনা দিয়েছেন। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছিলো আমি নিজেও এই মেলায় উপস্থিত ছিলাম। সুন্দর করে সমস্ত খুঁটিনাটি উল্লেখ করেছেন। আপনার লেখার হাত ভালো। পোস্টটি খুব সুন্দর হয়েছে। তবে আমাদের দেশ থেকে এই ধরনের মেলা এখন উঠে যাচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে ঠিক কথাই বলেছেন ভাই।পরবর্তী প্রজন্ম মেলা শব্দটা শুনলে জানতে চাইবে যে এটা আবার কি? মেলা তো দুরের কথা মেলা শব্দটিকে তাঁরা চিনবে না।
যাই হোক আমার পোস্টে অতি সুন্দর ও উত্তম মতামত দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইল।

খুব সুন্দরভাবে পোস্ট টা সাজিয়েছেন। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে মেলার বিষয়টি। আগে অনেক মেলা হতো কিন্তু এখন খুব একটা হয়না। পোস্ট টা খুবই সুন্দর।

বি:দ্র: আপনি আপনার ছবিগুলোর সঠিক লিংক দেননি। লিংক অপেন করলে pixabay র পেজের ছবি আসছে। দয়া করে ছবি গুলোর সঠিক সোর্স দেন।

সুন্দর মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ আপনাকেও।

ধন্যবাদ আমাদের কমিউনিটির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য। ভালোই ছিল আপনার উপস্থাপনা । শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

ভাই অনেকদিন পর আপনার সাক্ষাৎ পেয়ে অনেক ভালো লাগলো।
পোস্টটিতে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল আপনি ও আপনার সহধর্মিণী এবং আপনার নবজাতক ফুটফুটে বাচ্চাটির জন্য।সবাই ভালো থাকবেন।

  ·  3 years ago (edited)

অনেক ভালো লিখছেন মেলা সম্পর্কে।অনেক সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন।অনেক গুলো ছবি যুক্ত করেছেন।সব গুলো ছবি যদি নিজের তোলা হতো তাহলে আরো ভাল হতো।

আপনি @emon42 এর বিষয়টা ক্লিয়ার করুন।সোর্স গুলো ঠিক করে দেন।

ধন্যবাদ আপনাকে।

ঠিক বলেছেন ভাই, ছবিগুলো যদি নিজের হতো? আসলে ১৯৮৭ সালের ঘটনা।ঐ সময় মোবাইল ক্যামেরা ছিলই না।আর এনালগ সাদাকালো ক্যামেরা ছিল শুধু পেশাদারি ক্যামেরাম্যানদের হাতে।
তখন মোবাইল থাকলে তো সংরক্ষণ করা যেত।
যাইহোক অনেক সুন্দর, গঠনমূলক ও পরামর্শ মুলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পোস্টটি দয়াকরে আর একবার দেখে জানালে ভালো হতো।
শুভকামনা ও অভিনন্দন রইল।

🙂🙂

পড়ে যেটা বুঝলাম ,অনেক ইন্টারেস্টিং ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন । আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান । আপনি আরও অনেক ভালো করতে পারবেন ।আর ফটোর দিকে একটু ভালভাবে নজর রাখবেন ।সঠিক সোর্স ব্যবহার করা জরুরি ।


স্টিমিটে একমাত্র মাতৃভাষা লেখার যোগ্যতম কমিউনিটি

আমার বাংলা ব্লগ -এর

সুযোগ্য এডমিন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার জনাব@rex-sumon ভাই অতি সুন্দর মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই পোস্টে সোর্সগুলো ঠিক আছে কি না, তা জানাবেন।
শুভকামনা রইল।

এখন ঠিক আছে।

ধন্যবাদ ভাই