সবাই কেমন আছেন ? আশা করি অবশ্যই ভালো আছেন । প্রথমবার এই কমিউনিটিতে লেখালেখি করছি, তাই ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
প্রথমেই আমি আমার নিজের পরিচয়টা দিয়ে নিই,
আমি দিবাকর সরকার, পেশায় একজন শিল্পী। আমার বাড়ি রাজবাড়ি জেলায়, তবে কাজের জন্য ঢাকায় বসবাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা আনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে আনার্স শেষ করেছি ২০২১ সালে।
গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে পড়াশুনা করলেও আমি কিন্তু পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার নই। সবার কাছে আমি নিজেকে শিল্পী হিসেবেই পরিচয় দিই। কেন দিব না বলুন ? পড়াশুনা শেষ করে এখনো অব্দি শিল্পকর্ম তৈরী করেই বেচে আছি। এইজন্য পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের কথা শুনতে শুনতেও ক্লান্ত। তারপরও নিজের প্যাশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি এবং দিব্বি চলে যাচ্ছে ।
এবার মুলকথায় আসা যাক। টাইটেল পড়ে হয়ত আপনারা কিছুটা বুঝতে পারছেন আমি কি ধরনের শিল্পকর্ম তৈরী করি । আমি যে আর্ট ফর্ম নিয়ে কাজ করি সেটা হচ্ছে মোজাইক । মোজাইক অনেক ভাবে করা যায় সিরামিক টাইলস,পাথর, গ্লাস ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশে সিরামিক টাইলস দিয়ে মোজাইক তৈরীটাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের পলি।
বাংলাদেশ তিন বছর ধরে মোজাইক করার অভিজ্ঞতা থেকে আজ আপনাদেরকে জানাব এদেশে শিল্পের এই মিডিয়ার অবস্থান এবং আপনাদের সামনে তুলে ধরব কিছুদিন আগে আমার তৈরীকরা আমার একটি শিল্পকর্ম।
ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেল
মাপঃ ৩ফিট / ৫ ফিট
আমার এই কাজটি কিছুদিন আগের করা। কাজটি করতে সময় লেগেছে প্রায় ১৫ দিন। বাংলাদেশে মোজাইক করার সময় আমি প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা হচ্ছে সিরামিক টাইলসের রঙের গ্রেড। কাজটি করার সময় ৫-৬ দিন সময় লেগেছে শুধু রঙের গ্রেড মিলাতে। বাংলাদেশে যে ধরনের সিরামিক টাইলস বানানো হয় তার সবই কন্সট্রাকশন কাজের জন্য। তাই সবসময় স্কিনের জন্য সঠিক গ্রেডটি খুজে পাওয়া সম্ভব হয় না।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হচ্ছে বাংলাদেশে মোজাইক শিল্পটা খুবি আন্ডাররেটেড। সংখ্যায় প্রচুর পরিমানে তৈরি করা হলেও তা এখনো মানুষের মনে ভালো যায়গা গড়ে তুলেতে পারেনি। এর প্রাধান কারণ হচ্ছে ভালো মানের কাজ। এবার ভালো মানের কাজের কথা বলতে চাইলে আবার প্রথম সমস্যায় ফেরত আসতে হবে । আমরা শিল্পীরা ভালো মানের শিল্পকর্ম তৈরি করতে চাইলেও আমরা তা পারছিনা শুধুমাত্র ভালো ম্যাটেরিইয়ালের অভাবে।
এইবার আসি সর্বশেষ পয়েন্টে, বাংলাদেশের মোজাইক শিল্পের এত নিম্ন অবস্থানের পেছেনে সবচেয়ে প্রধান কারন হচ্ছে কিছু মানুষের রুচির অভাব। আমি রুচি চানাচুরের কথা বলছি না, আমি বলছি সেই রুচির কথা যা মানুষের জীবনযাত্রাকে শৈল্পিক করে তুলে। খুবই অল্প কিছু মানুষের মধ্যে এই রুচির অভাবের কারনে বাংলাদেশ শিল্পের দিকে পিছিয়ে পড়ছে। যদি শুধু মোজাইকের কথাই বলি, তাহলে সিরামিক টাইল যারা তৈরী করছে তাদের রুচির অভাবে ভালো মানের টাইলস তৈরী হচ্ছে না। শিল্পীরা ভালো রঙের গ্রেড পাচ্ছে না। মোজাইক ছাড়াও যখন একজন সাধারন ব্যাক্তি তার বাড়ি বানানোর জন্য সিরামিক টাইলসের সন্ধান করে তারাও তাদের মন মত টাইলসের রঙ খুজে পাচ্ছে না। টাইলসের দোকানে আসা যাওয়ার ফলে এই ঘটনা আমার নিজের দেখা। আর দোকান মালিকের তো একটাই কথা, " ভাই ,কম্পানী না বানাইলে আমারা কি করমু ? "
কি পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যা গুলো সমাধান হবে???
প্রথমত, ইন্ডাস্ট্রিতে যারা শুধু আঙুল নাড়িয়ে যারা এই নিম্ন মানের প্রোডাক্টস তৈরী করছে তাদেরকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, উন্নতমানের রুচির অনুশীলন করতে হবে। যা আপনি স্কুল-কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখতে পারবেন না। শিক্ষাটা পুরোটাই পারিবারিক শিক্ষা।
#artonsteemit
ᴀʀᴛ & ᴀʀᴛɪꜱᴛꜱ Community
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit