শুভ জন্মদিন "তিমির হননের কবি"!!

নিজের জীবনে প্রায় ৩৫০০ এর মতো কবিতা লিখেছেন। তবে তার স্বভাব ছিল তিনি কবিতা লিখেই প্রকাশ করতেন না। রেখে দিতেন নিজের কাছে। তবে তার কাব‍্যগ্রন্থ গুলোতে তার ১৬৯ টা কবিতা উঠে এসেছে। অনেকের কাছেই পছন্দের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হতে পারে কাজী নজরুল ইসলাম হতে পারে। কিন্তু আমার সবচাইতে পছন্দের কবি এই ব‍্যক্তি। উনার লেখার মধ্যে যে দর্শন রয়েছে যে জীবনবোধ রয়েছে সেটা আমি অন্য কারো কবিতার মধ্যে খুঁজে পাই না। আর ঠিক এইজন্যই আমি এই মানুষ টার অনেক বড় এক ফ‍্যান। আমি প্রায় প্রতিনিয়ত উনার কবিতা পড়ি। বলছি প্রকৃতির কবি খ‍্যাত জীবনানন্দ দাশের কথা। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বতর্মান বাংলাদেশের বরিশালে উনি জন্মগ্রহণ করেন। জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাশ একজন কবি ছিল। এইজন্যই হয়তো লেখার প্রভাব টা জন্ম থেকেই উনার মধ্যে ছিল।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং জীবনানন্দ একই বছরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জীবনানন্দ পুরোপুরি কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবমুক্ত কবিতা লেখেন। বলতে গেলে উনিই প্রথম বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কবিতা লিখেন। উনার কবিতা শুধু আধুনিক না অতি আধুনিক বলতে হয়। বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য কবি রয়েছে। এবং সবারই রোমান্টিক কবিতা রয়েছে। কিন্তু এখন পযর্ন্ত জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতা কে কেউ টপকাতে পারেনি। সবাই বনলতা সেন এর প্রথম লাইনেই হেরে যায়।

হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

শুধুমাত্র একবার এই লাইনটা ভালোভাবে পড়ে দেখুন। একটা আশ্চর্যের মধ্যে চলে যাবেন আপনি। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে। এইরকম চিন্তা ঐসময় অন্য কোন কবি করতেই পারেনি।

---

---

আবার উনি উনার বিখ‍্যাত সেই কবিতায় যখন বলছেন

সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে

উনি যেন সমস্ত বাঙালি প্রেমিকের আকুতি প্রকাশ করেছেন ঐ প্রথম লাইনেই। সুরঞ্জনা ঐখানে যেওনাকো তুমি। ফিরে এসো নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে। নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাত একবার কল্পনা করুন। কী অসাধারণ একটা কথা। এভাবেই উনি লিখে গিয়েছেন একের পর এক কবিতা। সত্যি বলতে আমি উনার কবিতা পড়ি ভাবি এবং আবার পড়ি। উনার প্রতিটা কবিতা আমাকে রীতিমতো মুগ্ধ করে ভাবতে বাধ‍্য করে। উনার কবিতার মধ্যে যে জীবনবোধ রয়েছে সেটা আমি অন্য কারো কবিতায় পাই না।

শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে— ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’লো তার সাধ;

এটা জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন কবিতার বিখ‍্যাত লাইন। শুধুমাত্র একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কী গভীর কথা। লাশকাটা ঘর নিয়ে গেছে তারে। এভাবে উনার প্রতিটা কবিতার লাইন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আপনাকে ভাবাবে।

জীবনানন্দের ৭ টা কাব‍্যগন্থ রয়েছে। এবং উনার এই ৭ টা কাব‍্যগ্রন্থে ১৬৯ টা কবিতা স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে ঝরা পালক উনার প্রথম কাব‍্যগ্রন্থ এছাড়া ধূসর পান্ডুলিপি, মহাপৃথিবী, বনলতা সেন, সাতটি তারার তিমির, বেলা অবেলা কালবেলা, এবং রুপসী বাংলা। এরমধ্যে রুপসী বাংলা কাব‍্যগ্রন্থটা প্রকাশিত হয় কবির মৃত্যুর পরে। বাংলা সাহিত্যে অনেক বড় অবদান রয়েছে জীবনানন্দের। নিজের জীবনে অনেক দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন উনি। কিন্তু কখনও উনার কবিতার উপর উনি সেই প্রভাব আসতে দেন নাই। আজকের আপনার জন্মদিনে আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। মৃত্যুর পরে কবি বার বার ফিরে আসতে চেয়েছেন এই বাংলায়। বাংলার রুপ উনি দেখেছিলেন এইজন্যই পৃথিবীর রুপ খুজতে যাননি। হয়তো উনি সত্যি ফিরে এসেছেন এই বাংলায় শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে বা কিশোরীর পায়ের ঘুঙুর হয়ে। আপনাকে শুভ জন্মদিন কবি।

---

---

সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।

---

---

Facebook
Twitter
You Tube

---

---

অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।

---

আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।

---

---

---

---

---

---

---

---