আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
তপু আমার এলাকার ছেলে। আমার থেকে বছর দুই এর ছোট হবে। তবে আমরা বন্ধুর মতোই মেলামেশা করতাম। একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম। তপু বেশ ভালো পেস বোলিং করত। ঐসময়ে সেরকম কেউ ওর মতো ভালো বল করতে পারত না আমাদের এলাকায়। এইজন্য আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ছিল ও। এছাড়া ফুটবল টাও বেশ ভালো খেলত। স্বাস্থ্য টা একটু ভালো হওয়ার জন্য ডিফেন্স লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলে সাধ্য কার তপুকে টপকে গোল দেবে। ও একাই সবগুলোকে সামলে রাখতে পারত। এভাবেই আমাদের দিন কাটছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ শুনতে চাই তপু এবং তার পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যাবে। চাকরির জন্য তপুর বাবা ঢাকায় থাকত কিন্তু তপুর পুরো পরিবার থাকত গ্রামেই। কিন্তু হঠাৎই তপুর বাবার এমন সিদ্ধান্ত। তপুর যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখনই ওরা ঢাকা চলে যায় সেটা প্রায় ২০১৬ সালের কথা।
তপু যাওয়াতে বেশ খারাপ লেগেছিল আমার। যাইহোক আমরা আমাদের দলের সেরা বোলিং এবং ডিফেন্ডার কে হারায়। তার জায়গা পরবর্তীতে আর কেউ নিতে পারেনি। তপু ঢাকাতে গিয়ে থাকতে শুরু করে ওখানেই লেখাপড়া শুরু করে। তারপর তপুর সাথে খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। ঐসময় আমাদের কাছে এইরকম স্মার্টফোন ছিল না। কিশোরদের কাছে স্মার্টফোন তখনও সহজলভ্য হয়নি। তবে ঈদে বাড়ি আসলে তপুর সাথে দেখা হতো। ঈদের কদিন বেশ ভালো কাটত আমাদের মেলামেশা করতাম। এভাবে দুই টা বছর গেল। তারপর বিভিন্ন কারণে তপুর পরিবার ঈদে গ্রামে আসা বাদ দিল। খুব একটা আসত না সেজন্য তপুও আসত না। তখন তপুকে নিয়ে চিন্তা করব এইরকম অবস্থা আর ছিল না। সময়ের পরিক্রমায় সব স্মৃতি আবেগ মিলিয়ে গেছে ততদিনে।
ততদিনে তপু আমার মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর যখন ফোন কিনে একটা ফেসবুক একাউন্ট ক্রিয়েট করলাম। হঠাৎ একদিন রাতে একটা ফেসবুক একাউন্ট চোখে পড়ল। দেখলাম বেশ অনেক পরিচিত মুখের সাথে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম হ্যা এইটা তপু। এটাও প্রায় চার'বছর আগের কথা। কিন্তু এই তপুর কত পরিবর্তন হয়েছে। বেশ বড় হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যটাও বেশ ভালো বেশ লম্বা হয়েছে। প্রথমদিকে কয়েকদিন ম্যাসেনজারে যোগাযোগ হলেও আস্তে আস্তে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে তপুর বাবা মা বাড়িতে মাঝে মাঝে আসত। কিন্তু তপু খুব একটা আসত না। হঠাৎ সে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় গ্রামের দিকে খুব একটা আসতে চাইত না। তারপর আরও চারটা বছর কেটে গেছে। হঠাৎ সেদিন দেখি তপু এবং তার পুরো পরিবার বাড়িতে এসেছে। কিন্তু তপুকে দেখে আমি রীতিমতো চিনতে পারিনি।
একমূহূর্তে মনে হচ্ছিল এটা কী সত্যিই তপু। কী অবস্থা হয়েছে ওর। একেবারে জীর্ণ শীর্ণ দেহ। একেবারে শুকিয়ে গিয়েছে। ওর মধ্যে সেই সতেজতা আর নেই। একটু খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি একপ্রকার বাধ্য হয়েই তপুর বাবা মা তাকে গ্রামে নিয়ে চলে এসেছে। বাবার সরকারি চাকরির ঘুষের টাকায় ছেলে বেশ ভালোভাবে নষ্ট হয়েছে। আদরের ছেলে হওয়াই তার কোন ইচ্ছায় অপূর্ণ রাখত না পরিবার। তারই ধারাবাহিকতায় বন্ধুবান্ধব এবং সঙ্গদোষে ছেলেটা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এবং শেষমেশ ড্রাগ নিতে শুরু করে দেয় তপু। তারপর কী হতে পারে সেটা আপনারাই ভাবুন। যতদিনে তার পরিবার ঠিক পেয়েছে সেটা অনেক দেরি হয়ে গেছে। পরিবার থেকে তাকে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হয়। রিহ্যাবে থাকার পর তাদের কথা ছিল ওকে আপাতত বছরখানেক যেন ঢাকার বাইরে রাখা হয়। এইজন্যই ওদের আবার গ্রামে আগমন। যাইহোক ছেলেটার এমন করুন পরিণতি দেখে নিজেরই খারাপ লাগছে। আবার অঢেল সম্পদ ছেলেটাকে বেশ ভালোভাবে নষ্ট করেছে।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাইয়া অঢেল সম্পদ কখনো কাউকে ভালো করতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা ছোট বেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের অভাব শিখাতে হয়। সম্পদ থাকলেই তাদের সব আবদার পূরণ করতে নাই।কথায় আছে না অতি আদরে বাদর হয়।তপুর ও ঠিক একই অবস্থা হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আমাদের সমাজে যাদের বাবার অনেক সম্পদ আছে এবং অবৈধ পথে ইনকাম আছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের সন্তান তপুর মতো বিপথগামী হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাহোক, সন্তানদের লালন পালন করার ক্ষেত্রে পিতা মাতার আরো বেশি দায়িত্বশীল এবং সচেতন হওয়া উচিত।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাই এমন ঘটনা আমাদের সমাজের প্রায় ঘটে থাকে ৷ বিশেষ করে যেসব পরিবারের অর্থ বা সম্পদ রয়েছে৷ তাদের পরিবারের সন্তানগুলো খুব একটা কষ্টের শিকার কিংবা বাস্তবতার সম্মুখীন হয় না ৷ তারা তাদের সুখের জীবনটাকে উপভোগ করে ৷ কিন্তু এই সুখের জীবনটাই একটা সময় সবচেয়ে বেশি দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ আর সেটা পুরো পরিবারের জন্যই ভয়ংকর হয়৷ যেটা আপনার বন্ধু ত্পুর পরিবারে ঘটেছে ৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই কিছু পরিবারের সন্তান এভাবেই নষ্ট হচ্ছে ৷ পরিবার থেকে টাকা নিচ্ছে আর নিজেকে উড়াচ্ছে ৷ তবে পরিবেশ এবং সঙ্গ এই দু'টো অনেক গুরুত্ব বিষয় ৷ যেই নষ্ট সঙ্গ পেযেছে সেই নষ্ট হয়েছে ৷ যাই হোক , আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷ খুবই সুন্দর একটি বাস্তবিক গল্প শেয়ার করেছেন ৷ তবে তপুর কথা ভেবে একটু খারাপ লাগছে ৷ এতো সুন্দর একটি ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে ৷ সে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেনা
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে সম্পদ থাকা ভালো৷ তবে এই সম্পদের অপব্যবহার করা কখনোই ভালো না৷ কিছু কিছু ছেলেমেয়েরা রয়েছে যাদের অনেক সম্পদ থাকে৷ সেই সম্পদ গুলো তারা ব্যবহার করছে এবং এর ফলে তারা অনেকটা খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তবে যখন তারা এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসবে তখন তাদের জন্য তা মেনে নেওয়া অনেক কষ্টকর হবে৷ কারণ তারা কখনোই কষ্টের সম্মুখীন হয়নি এবং কখনোই সম্পদ ছাড়া কিছু দেখেনি৷ যখন তারা এরকম কিছু সম্মুখীন হয় তখন তার থেকে বড় কষ্টের বিষয় আর কিছু হতে পারে না৷ ধন্যবাদ এই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit