আমার প্রথম ছোটগল্প :- হাসান সাহেবের দুর্দিন। ১০% বেনিফেসিয়ার @shy-fox এর জন্য।

in hive-129948 •  3 years ago 


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ শুক্রবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে



আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগে, আমার নতুন একটি পোস্টে আপনাদের স্বাগতম। আজ আমি আমার লেখা প্রথম ছোটগল্প হাসান সাহেবের দুর্দিনআপনাদের সাথে শেয়ার করব। কোনোরকম ভূল হলে ক্ষমা করবেন এবং অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। চলুন শুরু করা যাক। ১০% বেনিফেসিয়ারি @shy-fox এর জন্য।


sunset-3156176_1920.jpg
ছবিটি Pixabay থেকে নেওয়া হয়েছে।

FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


হাসান সাহেবের দুর্দিন।

হাসান সাহেব অত্যন্ত সাহসী কর্ম প্রাণ এবং বুদ্ধিমান একজন ব্যাক্তি। কিন্তু এখন তার চরম দুর্দিন চলছে। তার পাশে থাকার মত এখন সেরকম কেউ নেই।এখন তার দিন একা একা কাটে। হাসান সাহেবের বয়স 65 বছর। চাকরি থেকে হাসান সাহেব কে অব‍্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মূলত এখন তার আর কাজের দক্ষতা বা ক্ষমতা নেই এবং তার বয়স হয়েছে বলেই তাকে তার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হাসান সাহেব খুবই রাগান্বিত। কারণ তিনি এখনও সুস্থ এবং কাজ করে যাওয়ার জন্য উপযোগী। কিন্তু সরকারি নিয়ম একসময় তো তাকে অবসরে যেতেই হবে। কিন্তু এই অবসর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না হাসান সাহেব।এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে।

হাসান সাহেবের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন।তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে সবাই বাইরে থাকে। বড় ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়া বউ বাচ্চা নিয়ে। ছোট ছেলে থাকে কানাডা সেও বউ বাচ্চা নিয়ে থাকে। এবং তার একমাত্র মেয়ে বিয়ে করে সে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। দেশে এখন হাসান সাহেব একা। তার সহধর্মিণীও নেই।এতদিন চাকরি ছিল হাসান সাহেবের অধিকাংশ সময় অফিসে কাটত। কিন্তু এখন তারা চাকরি নেই অফিসে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। সারাদিন সে তার সময় কিভাবে কাটাবে এটাই ভেবে পাইনা।এজন্য সে চরম বিপদে পড়েছে। এই বিপদ থেকে তাকে মুক্তি দেয়ার মত এই পৃথিবীতে কেউ নেই। এতে করে দিনে দিনে হাসান সাহেবের মেজাজ খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে যাচ্ছে। এবং অল্পতেই তিনি অনেক রেগে যান।

হাসান সাহেব তার সময় কাটাতে ঢাকা শহরের গলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ান। বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এবং শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এইসব জায়গায়।সারাদিন পথে পথে ঘুরেন এবং দিনশেষে বাড়ি ফিরেন। এটাই এখন হাসান সাহেবের দৈনন্দিন রুটিন বলা যায়। তার ছেলেমেয়ে তার কোন খোঁজ নেয় না। হাসান সাহেব ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিলেন। 1952 সালে বাংলাদেশে চলছে ভাষা আন্দোলন। পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার প্রতিবাদে পথে নেমে পড়েছে বাংলার ছাত্র জনতা। সবারই এক দাবী রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই

হাসান সাহেব ছিলেন একজন ছাএনেতা। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন। তিনিই প্রথম স্লোগান দেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। তার সাথে মিছিল করা আন্দোলন করা তার অনেক ছাত্রবন্ধু সহযোগী তার সামনে মৃত্যুবরণ করে পাকিস্তানিদের গুলিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসলেই মর্মান্তিক স্মৃতি তার মনে পড়ে যায় হাসান সাহেবের। প্রতিদিন এভাবে হাঁটতে হাঁটতে এখানে আসলে তিনি তার আবেগ ধরে রাখতে পারেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসলেই তিনি উচ্চস্বরে বলে ওঠেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই*। 1952 সালে এই মেডিকেল কলেজের সামনে থেকেই আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুলি চালায়। এজন্য হয়তো এই জায়গাটা হাসান সাহেব কে বেশি ভাবাই এবং বেশি কাঁদায়।

হাসান সাহেবের এরূপ আচরণে আশপাশের অনেক লোক এবং ছাত্ররা তাকে পাগল ভাবে। বলে এখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এ আবার কোন পাগলের আমদানি। হাসান সাহেব তখন নিজে নিজে বলে কাদের জন্য এনেছিলাম বাংলা ভাষা কাদের জন্য এনেছিলাম স্বাধীনতা। এর জন্য দুঃখ করে হাসান সাহেব। হাসান সাহেবের এইরকম মর্মান্তিক অবস্থা হবে হাসান সাহেব নিজেও ভাবেননি। তার ছেলেমেয়েরা তার কাছে থাকেন না, যাদের জন্য জীবন বাজি রেখে প্রাণের চেয়েও প্রিয় বাংলা ভাষা এবং স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তারাও তার কোন মূল্য দেয় না। এর জন্য চরম দুর্দিনে রয়েছে হাসান সাহেব। হাসান সাহেবের মতো আরো হাজার হাজার মানুষ রয়েছে আমাদের দেশে। যাদের হয়তো একই পরিণতি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ এটা হয়তো শুধুই একটা বইয়ের ইতিহাস মাএ। হাসান সাহেবের মত কত লোকের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই বাংলা ভাষা আমাদের এই স্বাধীনতা।



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



আমি ইমন হোসেন। আমি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায় বসবাস করি। আমি একজন ছাএ। আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করি। আমি খেলাধুলা ভালোবাসি। বিশেষ আমি ফুটবল পছন্দ করি।



7b4bio5hobgt1ToxyJNZ2CBe2hrJJxxFumrTYgdiB16dsHGkxy5u76CUy1NXorPzXaMcRyXict6abfZKwupPgossU5rvzNFrfZu3mixHrTzqWdZpkJ9YsuTNWgaCHKTM7Z8rmrTgLzaeAtSZQApiPzpBJDDQ.png



FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

জ্বী ভাই,এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা বুঝে নাহ "রাষ্টভাষা বাংলা চাই"কী।তখনকার সময়ে হাসান সাহেবের মতো লোকেরা ছিল বোলেই আজ আমরা মাতৃভাষায় সাবলীল ভাবে কথা বলতে পারছি।
এ রকম হাসান সাহেব দেশের মানুষের কাছে যেন মূল‍্যহীণ না হয় সেই আশায় ব‍্যাক্ত করি।

খুব সুন্দর একটি কথা বলেছেন। ধন্যবাদ আপনার মন্তব‍্যের জন্য।

💖💖💖

হাসান সাহেবের মত এমন সংগ্রামী লোকদের জন্য আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে ফিরে পেয়েছি।মাতৃভাষার জন্য লড়াকু সকল ভাষা প্রেমীদের প্রতি আমার অঢেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো।আপনি পোস্টটি খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টা পড়ে সুন্দর এবং সুচিন্তিত মতামত করার জন্য।।

ভাইয়া গল্পটি সুন্দর হয়েছে আর আমিও আপনার সাথে একদম একমত। আজকাল আমরা কোথায় আর আমাদের ইতিহাসের মর্যাদা দিচ্ছি!
আমাদের জন্য কারা রক্ত ঝড়িয়েছে তাও আজকাল আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি,নামগুলো ও হয়তো ঠিকভাবে জানেনা আজকাল কেও। জানলেও গুরুত্বহীনভাবেই থাকে মনের মধ্যে। তবে সকল ভাষাসেনাদের জন্য মনের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসা রইলো।খুব ভালো লিখেছেন ভাইয়া।

আপনি ঠিক বলেছেন আপু। আপনার সুন্দর মন্তব‍্যের জন্য ধন্যবাদ।।

হাসান সাহেবের জীবন কাহিনী পড়ে ভালো লাগলো।উনি খুবই মহৎ কাজ করেছেন দেশের জন্য।ধন্যবাদ ভাইয়া।

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব‍্যের জন্য।।

আপনার আগের একটি গল্প পড়েছিলাম, বেশ ভালো লিখেছিলেন, এই গল্পটিও ভালো লিখেছেন। হাসান সাহেবের কর্মপ্রাণ জীবনী নিয়ে গল্পটি ভালো সাজানো হয়েছে।

ধন্যবাদ দাদা গল্পটি একটি সুন্দর মন্তব‍্যের জন্য।