প্রাণের বিদ‍্যালয় যখন ধ্বংসের মুখে(প্রথম পর্ব)

in hive-129948 •  2 years ago 


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ শনিবার, ৮ ই, অক্টোবর ২০২২।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে



IMG_20210126_105149.jpg

ছবিগুলো আমার নিজের তোলা। এবং ছবিগুলো আমার পূর্বের কোনো ব্লগে ব‍্যবহার হয়ে থাকতে পারে।

আজ কদিন আমার মনটা খুব একটা ভালো নেই। কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না। সেজন্য ঠিকমতো কারো ব্লগ পোস্ট পড়ছি না। ডিসকোর্ডেও আমার এক্টিভিটি আজ দুইদিন নেই। কিন্তু দিনশেষে একটা পোস্ট না দিলে একেবারেই কেমন জানি লাগে। আশাকরি দ্রুতই এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারব । আজ আমি অন্যরকম একটা বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। এই আলোচনা টা আমার কথাগুলো আশাকরি কয়েক পর্ব হবে। কারণ আমি শুরু থেকে সব বলব ধারাবাহিকভাবে। ঘটনাটা আমার প্রিয় মাধ্যমিক বিদ‍্যালয় কুমারখালী এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়। প্রিয় স্কুলটার এই অবস্থা নিজ চোখে দেখে আমার হৃদয় একেবারে ক্ষত বিক্ষত। দিনে দিনে যেন ক্রমেই বিদ‍্যালয়টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছে তার সেই হারানো গৌরব। আমার বিদ‍্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই আমি শুরু করব। চলুন শুরু করা যাক।

সাল ১৮৫৬। কুমারখালী শহরের একজন পন্ডিত ক্ষমতাবান ধর্ণাঢ‍্য ব‍্যক্তি ছিলেন মথুরানাথ। তো তিনি চিন্তা করলেন বাঙালিরা একেবারেই মূর্খ তাদের শিক্ষার প্রয়োজন আছে। নিজ উদ‍্যোগে তৈরি করলেন কুমারখালী এম.এন.(মথুরানাথ) পাইলট মাধ্যমিক বিদ‍্যালয়। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন স্কুলের সূচনা হোক কোনো ক্ষমতাসীন লোক দিয়ে যেন কিছুটা হলেও সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়। তখন চলছে ব্রিটিশ শাসন। স্কুলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গড়াই নদী। তো তৎকালীন ভারতীয় ব্রিটিশ জেনারেল উইলিয়াম রেন্টিক কোনো কারণে ঐ নদী দিয়ে তার বজরা নিয়ে যাচ্ছিল। মথুরানাথ সেটা জানতেন। এক পর্যায়ে মথুরানাথ উইলিয়াম রেন্টিক কে বললেন আমার বিদ‍্যালয়টার সূচনা করে দিয়ে যান। উইলিয়াম রেন্টিক সূচনা করেন এবং পরবর্তীতে লর্ড ক‍্যানিংও এই বিদ‍্যালয় ভ্রমণে আসেন। সূচনা হয়ে গেল। শুরু হয়ে গেল কুমারখালী এম এন পাইলট বিদ‍্যালয়ের যাএা। এই বিদ‍্যালয়ের মাধ্যমে ক্রমেই শিক্ষিত লোকের সংখ‍‍্যা বাড়তে থাকে কুমারখালীতে । এদের মধ্যে সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, সাহিত‍্যিক মীর মোশাররফ হোসেন, বিপ্লবী বাঘা যতীন এরা কিন্তু এই স্কুলে পড়েছেন। একবার ভেবে তাহলে এই স্কুলের কতটা গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে।



IMG_20210126_104340.jpg



কুমারখালী শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়াই নদীর তীরে কুমারখালী এম এন পাইলট মাধ্যমিক বিদ‍্যালয় টা স্থাপিত। আমার বাড়িতে আমার আগে আমার সব ভাইয়েরা এই স্কুলে পড়েছে। এছাড়া আমাদের এলাকার অসংখ্য মানুষ পড়েছে। সেই সুবাদে ছোট থেকেই সবার মুখে শুধু এই স্কুলের নাম শুনতাম। আর হ‍্যা এটা কিন্তু বয়েজ স্কুল ছিল তবে এখন নেই। সাল ২০১৩ আমার পিএসএসি মানে ফাইভ পাস করি। তখন আমি এককথায় বলে দেয় আমি কুমারখালী এম এন স্কুলে পড়ব। কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে বিদ‍্যালয়টা অনেক দূরে সাইকেল নিয়ে যেতে হয়। এবং আমি সাইকেল চালাতে পারতাম না। বাড়ি থেকে শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো সাইকেল চালানো শেখ দ্রুত তাহলে ওখানেই ভর্তি করব। অনেক কষ্টে মাএ দশদিনে সাইকেল চালানো রপ্ত করে নিলাম। আমার আগে এই স্কুলে পড়তো আমার চাচাতো ভাই রোহান। রোহান ভাইয়া আমার বিদ‍্যালয়ের ফর্ম তুলে এনে দেয়। কিন্তু সমস্যা হলো উপজেলা এবং জেলার মধ্যে সেরা একটা বিদ‍্যালয়। অসংখ্য ছেলেমেয়ে ফর্ম সংগ্রহ করে। সেজন্য ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে টিকতে হয়।

আমি যেবার পরীক্ষা দিয়েছিলাম ফর্ম বিতরণ হয়েছিল ৭৫০। এরমধ্যে শুধু ৩০০ জন টিকবে। তো ভর্তি পরীক্ষার চলে গেলাম কুমারখালী এম এন স্কুলে। প্রথমবার গিয়ে নিজের মধ্যে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করেছিল। এতো সুন্দর বিদ‍্যালয়টা বলে বোঝাতে পারব না। যাইহোক ভর্তি পরীক্ষা হলো দুইদিন পর রেজাল্ট দিল। অনেক ভয়ে ছিলাম। আমার চাচাতো দেখে এসো বলল যৌথভাবে ২২ তম স্থান পেয়েছি অর্থাৎ আমি ভর্তি হতে পারব। সেদিন আমার খুশি আর দেখে কে। যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে ভর্তি হয়ে গেলাম ষষ্ঠ শ্রেণির বই নিলাম। শুরু করে দিলাম লেখাপড়া বেশ যাচ্ছিল স্কুলে আমার দিন। কয়েকজন বন্ধুও জুটে গেল। এভাবেই ষষ্ঠ শ্রেণি পার করে ফেললাম। ভালো রেজাল্ট করেছিলাম ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এবং বলে নেওয়া ভালো আমি একদিনও স্কুল মিস করতাম না। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে উঠে আমার লেখাপড়াই কিছুটা ব‍্যাঘাত ঘটে। যদিও পড়ে সেটা ঠিক হয়ে যায়।

চলবে.......




-------------
ফটোগ্রাফার@emon42
ডিভাইসVIVO Y91C
সময়জুলাই ,২০২১


সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG_-akkhy.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কি বলেন পছন্দের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য ১০ দিনের সাইকেল চালানো শিখে নিলেন। তারপর আমার ৭৫০ জনের মধ্যে ২২ তম হয়ে টিকে গেলেন। মনে হচ্ছে আপনি বেশ ভালো একজন স্টুডেন্ট। আপনাদের স্কুলটাও ভীষণ সুন্দর। আপনার স্কুলের দিনের ঘটনা গুলো শুনতে বেশ ভালই লাগছে। কিন্তু এত সুন্দর একটা স্কুলের কি হয়েছে এটা জানার ভীষণ আগ্রহ রইলো।

আপনার বিদ্যালয় অর্থাৎ কুমারখালী এম.এন. পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় তৈরীর ইতিহাসটা কিন্তু আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছে। সর্বোপরি আপনার পুরো পোস্ট টাই আমার কাছে ভালো লাগলো। যদিও বিদ্যালয়ের ধ্বংস হওয়া নিয়ে প্রথম পর্বে তেমন কিছুই লেখা ছিল না। আশা করি আগামী পর্বে এ বিষয়ে জানতে পারব।

জী দাদা প্রথমে ইতিহাস ঐতিহ্য গুলো বললে পরবর্তীতে ধ্বংসের কারণ বললে সহজেই বোধগম্য হবে সবার। সেজন্য এমন করে লিখছি।।