কবিতা আবৃত্তি ( দুই বিঘা জমি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )।।

in hive-129948 •  3 months ago 


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ সোমবার,১ লা জুলাই, ২০২৪।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


1000557777.jpg


আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। বর্ষার এই বিকেলে আপনাদের সবাইকে জানাই বৃষ্টিস্নাত শুভেচ্ছা। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝড়ছে অনেকদিন পরে। বেশ দারুণ লাগছে অনূভুতি টা। তবে আমি অফিসে থাকায় ঠিকমতো উপভোগ করতে পারছি না এই মূহূর্ত টা। কিন্তু ব‍্যাপার না কোন বৃষ্টি তো হচ্ছে। অনেকদিন হয়ে গেল কোন কবিতা আবৃত্তি শেয়ার করা হয় না। এর পেছনে একটা কারণ আছে অবশ‍্য সেটা অন্য একদিন বলব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা গুলোর মধ্যে দুই বিঘা জমি কবিতা আমার সবচাইতে পছন্দের। ইউটিউবে গিয়ে এই কবিতা আবৃত্তি টা প্রায়ই শুনি। বিশেষ করে এই কবিতার একটা লাইন আমার অনেক পছন্দের। "মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে, তাই লিখিয়া দিলেন বিশ্বনিখিল, দু'বিঘার পরিবর্তে।

এই কবিতা টা আবৃত্তি করার শখ আমার অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এই কবিতা টা অনেক বড় হওয়াই সেরকম সাহস করে উঠতে পারিনি। কিন্তু আজকে আমি কবিতা আবৃত্তি টা আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিব আশাকরি আপনাদের বেশ ভালো লাগবে আবৃত্তি টা। কিছু জায়গাই আমি একটু থেমে গিয়েছিলাম সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।



  • দুই বিঘা জমি
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


কবিতা



শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, ‘বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।’
কহিলাম আমি, ‘তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই –
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, ‘বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা –
ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, ‘করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, ‘আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’
পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে –
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য –
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।।
নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি –
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ –
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে –
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি, রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।।
ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার – এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ –
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন –
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ী, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী – হলে দাসী।।
বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি –
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালককালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন –
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।।
হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, ‘আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব –
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।’
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ –
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, ‘মারিয়া করিব খুন।’
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, ‘শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!’
বাবু কহে হেসে, ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!’
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে –তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।।


Source



কবিতা আবৃত্তি






সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG-20231027-WA0008.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতা নিয়ে আমরা ক্লাসের মধ্যে অনেক মজা করেছিলাম। মূলত আমাদের এক ম্যাডাম বাংলা ক্লাস নিয়েছিল তাই একটু মজা হয়েছিল। আপনি দেখছি আজকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর দুই বিঘা জমি কবিতা টি আবৃত্তি করেছেন। আপনার কন্ঠে এই কবিতা টি শুনতে পেরে বেশ ভালো লাগলো আমার কাছে। আপনি বেশ দারুন ভাবে কবিতা টি আবৃত্তি করার চেষ্টা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতাটি অসাধারণ। আপনি খুব সুন্দর একটি টপিকস নির্বাচন করেছেন আবৃত্তি করার জন্য। তবে আপনি তো প্রতিনিয়ত কবিতা আবৃত্তি করতেন। হঠাৎ করে কেন বন্ধ করে দিলেন সেই বিষয় তো জানতে চাই। কবিতা আবৃত্তি শুনে ভীষণ ভালো লেগেছে অনেক ধন্যবাদ।

অনেকদিন পর পছন্দের একটি কবিতার আবৃত্তি শুনলাম। একসময় আমার খুব পছন্দের একটি কবিতা ছিল দুই বিঘা জমি। আপনার আবৃত্তি অনেক সুন্দর হয়েছে ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ দুই বিঘা জমি কবিতাটি সুন্দরভাবে আবৃত্তি করে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

কবিতাটি আমি পড়েছি, আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আজকে আপনার কন্ঠ শুনতে পেয়ে আরো ভালো লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটি অসাধারণ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই বিঘা জমি কবিতাটি আপনি খুব সুন্দর ভাবে আবৃত্তি করেছেন শুনে ভালো লাগলো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটি আমার খুব পছন্দের একটি কবিতা। আজ আপনার কন্ঠে আবৃত্তি শুনে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আসলে অনেকদিন পর এই কবিতাটি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে শুনতে পেলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি করে আমাদের সাথে শেয়ার করে নেয়ার জন্য।

ভাইয়া আপনার কবিতা আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হলাম। আপনি এত ভালো কবিতা আবৃতি করেন আগে জানতাম না। সত্যি ভাইয়া চমৎকার একটি কবিতা আবৃত্তি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দারুন একটি কবিতা আবৃত্তি করে শেয়ার করার জন্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “দুই বিঘা জমি” কবিতাটি আমার কোন পাঠ্য বইতে ছিল না। যার ফলে স্টুডেন্ট লাইফে কবিতাটি পড়া হয়নি। তবে স্টুডেন্ট লাইফ শেষ করার অনেক পরে কবিতাটি একটি বইতে পড়ে অনেক ভালো লেগেছিল। আজকে আপনার পোষ্টের মধ্যে আবার পড়লাম। পৃথিবীর এই কোন নিয়ম জানিনা। যার আছে বিধি তাকেই দেয়। সেটা অনেক উপায়ে আর যার নাই তার কিছুই নাই। তবে সবই উসুল করিবে মরিবার পরে। ধন্যবাদ।