ছেলেবেলার দিনগুলো সত্যিই মধুর আর স্মৃতিময় ছিল। গ্রামের বাড়িতে কাটানোর সময়গুলো মনে পরলে এখনো আপন মনে হাসতে থাকি। যে কদিন থাকতাম সারক্ষণ বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াতাম আর বিভিন্ন দুষ্টুমির ফন্দি ফিকির করতাম। মোটামুটি চেহারা আর শরীর রোদে কালো হয়ে যেতো। মা রাগে গজগজ করতেন কিন্তু এতো মানুষের সামনে কিচ্ছু বলতেন না শুধু একা পেলে বলতেন, করে নাও দুষ্টুমি বাছাধন। শহরে গেলে বুঝতে পারবে 😄 আমি রিতিমত বেশ ভয় পেতাম কারন মায়ের হাতে পেদানি কম খাইনি। যাইহোক কি আর করা আবার সব ভুলে গিয়ে পুকুর আর কাঁদার মধ্যে মাখামাখি সেকি ছাড়া যায় 🤪 অভিযান চলছে আর চলবে।
এদিকে ধীরে ধীরে আমাদের শহরে ফেরার দিন ঘনিয়ে এলো কারন বাবার ছুটি শেষ। মনটা এতোটাই বিষন্ন বলে বোঝাতে পারবো না। মা রিতীমত খুশি কারণ খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শহরের সেই ইট পাথরের দেয়ালে আমাদের দুইভাইকে বন্দি করতে পারবে। কিন্তু আমাদের মনের মাঝে রাজ্যের বিষাদ। মা যখন ব্যাগ গোছানো শুরু করছে তখন আমাদের দুই ভাইয়ের চোখ ছলছল, কিন্তু কি আর করা শহরের আমাদের থাকতে হবে। আর ওটাই আমাদের এখনকার ঠিকানা। মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চারপাশের বন্ধুদের থেকে বিদায় নেয়ার পালা। কেউ উপহার দেয় মাটির পুতুল, কেউ তার একমাত্র গাছের ডালের গুলতি আবার কেউবা তার পছন্দের মার্বেল। উপহার গুলো পেয়ে একটু ভালো লাগলেও গ্রামের সুন্দর কোলাহল পূর্ণ জায়গা আর মাটির মানুষদের ছেড়ে যেতে একদমই ভালো লাগছেনা 😔
এরপর দাদা আর দাদু আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে এলেন বাবা আর মাকে বুঝিয়ে আরো একটা দিন থাকতে বললেন। কিন্তু ওদিকে বাবার ছুটি শেষ, অবশেষে বাবা কাঁচুমাচু করে বললেন ঠিক আছে তাহলে আমরা আগামীকাল যাবো। আমরা দুইভাই একবারে হৈচৈ করে বাড়ির উঠানে নাচতে থাকলাম, কারন দুষ্টুমি আরো একটা দিনের জন্য প্রান ফিরে পেল। দাদুকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ হৈচৈ করে আবার দৌড় দিকবিদিক 😄 সেদিন দাদু বিকেল থেকেই স্বাদের সব পিঠা তৈরি করতে থাকে, চুলার ধারে বসে আমরা পিঠা তৈরি হবার অপেক্ষায় বসে থাকি। আর মাঝে মাঝে লাকড়ির চুলায় জ্বাল দেয়ার চেষ্টা করি, আর একটু পরেই ধোঁয়া দিয়ে চোখ মুখ অন্ধকার। দাদু তো হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যেতেন, তিনি বলতেন উঠে যাও দাদু ভাই এ কাজ তুমি পারবেনা। অথচ সেই দাদু আজ দুনিয়াতে নেই, আল্লাহ পাক নিয়ে গেছেন 🥹 বিশ্বাস করুন উনাদের কথা মনে পরলে এখনো চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
যাইহোক পরদিন সকালে আর রক্ষা নেই তাড়াতাড়ি নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল আর ডাব পারা হলো, আতা ফল, পিঠা আরো কত কি। এগুলো দিয়ে মোটামুটি আরো দুই ব্যাগ বেড়ে গিয়ে বাবার অবস্থা খারাপ। যাইহোক অশ্রু সজল নয়নে সবাই বিদায় আর কদমবুছি করে পা বাড়ালাম ইট পাথরের শহরের দিকে, আর ফেলে এলাম দুরন্তপনা আর আনন্দ।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমেই আপনার দাদুর জন্য দোয়া রইল। সৃষ্টিকর্তা ওনাকে বেহেস্ত নসিব করুক। ছোট বেলায় মধুর স্মৃতি গুলো সত্যি অসাধারণ ছিলো। গ্রামের পরিবেশ আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। ছুটিতে বাড়ীতে বেড়াতে এসে বেশ মজা করতে পোস্ট পড়ে জানতে পেয়ে ভালো লাগলো। আপনার পোস্ট পড়ে আমার ছোট বেলায় স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার স্মৃতির পাতার তৃতীয় পর্ব পড়ে খুবই ভালো লাগলো, স্মৃতির পাতার সোনালী দিনগুলোর কথা খুবই মনে পড়ে এখন। আপনার দাদুর জন্য দুয়া রইল, সৃষ্টিকর্তা তাকে বেহেস্ত নসিব করুক এই কামনাই করি। আপনি দেখছি খুবই দুষ্টু ছিলেন। তাছাড়াও শহরে যাওয়ার আগে বন্ধুদের থেকে বিভিন্ন উপহার সহ মাটির পুতুল পেয়েছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
স্মৃতির পাতা থেকে অতীত অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। খুব চমৎকার ছিল সেই দিন গুলো।চাইলেও আর ফিরে পাব না।বলতে গেলে আগের দিনগুলোই ভালো ছিল।এটা কিন্তু সবার বেলাতেই।ধন্যবাদ ভাইয়া চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে ব্লগ শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit