ঈদের দাদা তুমি কোথায় ? 😕
🕌 ঈদ মোবারক 🕌
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি। নিশ্চয়ই আজকের দিনটি দারুন কেটেছে আপনাদের। ভালো কাটবে না কেন 🤗 পরিবারের সবাই সাথে থাকলে সবকিছু ভীষণ রঙিন এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে ছোট্ট বেলার সেই ঈদের আনন্দ আর এখনকার ঈদের আনন্দের মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক 😕 কেমন যেন আর সেই আনন্দ আর খুঁজে পাইনা। এখন আসলে পরিবারকে শত চেষ্টা করি কিছুটা আনন্দে রাখতে, এটাই এখন আমার বড় আনন্দ। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার একটা আনন্দ কাজ করতো ঈদের আরো বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। গ্রামের বাড়িতে কেন ঈদের এতো আনন্দ ছিল তার একটি কারণ আপনাদের মাঝে ভাগ করে নেবো।
🌙 ঈদের দাদা ✨
হ্যা ঠিক শুনছেন ঈদের দাদা ✨। আমার দাদার সাত ভাইয়ের মধ্যে সবথেকে বড় ভাই এবং তিনি ছিলেন আমাদের ঈদের দাদা 🌙। তিনি আমার দাদার আপন ভাই হলেও কিছুটা পারিবারিক কারনে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে বাড়ি করেছিলেন। উনি প্রতি বছর দুবার গ্রামে আসতেন আর সময়টা হলো দুই ঈদ 🌙। আর তিনি ছিলেন একটি মসজিদে ইমাম এবং আমাদের এলাকায় তিনি ঈদের নামাজ পড়াতেন।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে ঈদের আগেরদিন রাতে হাতে তৈরি দুই ধরনের সেমাই তৈরি হতো। আমার দাদু এবং চাচীরা সেই সেমাই তৈরি করতেন অনেক রাত পর্যন্ত আর আমি পাশে বসে থেকে দেখতাম। কি চমৎকার মেসিনের মতো হাত চলতো আর তারা বলতো আগামীকাল তোমাদের ঈদের দাদা আসবে সেমাই খেতে দিতে হবেনা 🤗 তার মানেই বুঝতে পারছেন দাদাকে ঘিরে কেমন একটা উৎসবের আমেজ কাজ করতো। সেই দিন রাতে তেমন ঘুম হতো না কারন কাল ঈদ আর ঈদের দাদা কিছু না কিছু আমাদের জন্য আনবেন। তিনি অধিকাংশ সময় আমাদের জন্য বাতাসা, খুরমা আর খাজা নিয়ে আসতেন আর আমাদের ছোটদের মাঝে ভাগ করে দিতেন। উফ্ কি কি স্বাদের ছিল খাবারগুলো বলে বোঝাতে পারবো না। ভোর হতে না হতেই কলের পানিতে গোসল সেরে নতুন কাপড় পরে সবাই ঈদের দাদা আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতাম।
দাদা সবসময়ই সাদা জুব্বা আর সাদা পাগরী পরতেন। দূর থেকে মনে হতো কোন একজন মানুষ আলোক বর্তীকা নিয়ে আমাদের মাঝে আসছেন, যেখানে রয়েছে অনাবিল প্রশান্তি আর শুভ্রতা। বিশ্বাস করুন কোন একজন মানুষ যত খারাপই হোক না কেন দাদার সাথে কথা বললে তাকে সম্মান করতে বাধ্য হতো। তাকে কেউ কখনো রাগ করতে দেখেননি।
দূরে গ্রামের মেঠোপথ ধরে একজন সাদা পাগরী আর সাদা জুব্বা পরা মানুষ আসছে। সেটা আর কেউ নয় আমাদের ঈদের দাদা 🌙। আমরা ছোটরা সবাই দৌড়ে গিয়ে তার সাথে হাত মেলাতাম। আর তার শরীরের চমৎকার আতরের গন্ধে সত্যিই মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। দাদা প্রথমেই পকেটে থাকা আতরের শিশি থেকে আতর আমাদের সবার হাতে দিয়ে দিতেন আর আমরা পুরো শরীরে সেই স্বর্গীয় সুবাস মাখতাম। তার হাতে একটি বড় থলে থাকতো কিন্তু সেটা কাউকে দিতেন না কারণ ওটায় থাকতো সেই অমৃত স্বাদের খাবারগুলো 😋
দাদা আমাদের নিয়ে সোজা ঈদগাহ মাঠে চলে যেতেন, যেখানে আগে থেকেই ঈদগাহ মাঠ চমৎকারভাবে সাজানো থাকতো। প্রথমেই তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন এবং এরপর নামাজ শুরু করতেন। তার সেই খাবারের পোটলা থাকতো ঠিক তার নামাজের জায়গার পাশেই । তাই তখনও আমাদের আকর্ষন ওখানেই থাকতো।
নামাজ শেষ হবার পর সরাসরি চলে আসতেন আমাদের বাড়িতে কারন তার সব ভাইদের নাতি পুতি সব আমরা। বড় উঠানের মাঝখানে একটি চেয়ার আর একটা ছোট টেবিলে তাকে সেই সুস্বাদু সেমাই পরিবেশন করা হতো, যা দাদু আর চাচীরা রাতভর কষ্ট করে তৈরি করেছেন। তবে আমরা কিন্তু চারপাশে তখনও ঘুরঘুর করতাম আমাদের অমৃত খাবারের লোভে। দাদা মিষ্টি হেসে আমাদের সবার মাঝে সেই খাবারগুলো পরিবেশন করতেন। আর আমরা মহা আনন্দে সেই খাবারগুলো খেতাম। বিশ্বাস করুন একই জিনিস বাজার থেকে বহুবার কিনে খেয়েছি কিন্তু এতো স্বাদ আর তৃপ্তি কখনো পাইনি। যাবার সময় ঈদের দাদা আমাদের সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিতেন আর পরের ঈদে আবার দেখা হবে বলে বিদায় নিতেন।
🌙 ঈদের দাদা একদিন হারিয়ে গেলেন 😥
তখন আমি কলেজে পড়ি একদিন হঠাৎ খবর পেলাম আমাদের ঈদের দাদা আর নেই 😥। বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কি যে একটা হাহাকার অনুভব করলাম ভেতর থেকে বলে বোঝাতে পারবো না 🥺 আর ভীষণ কেঁদেছিলাম সেদিন। আমরা তখন বাবার কর্মস্থল দিনাজপুরে থাকি। আমাদের শোক সংবাদ জানানো হলো এবং এটাও বলে দেয়া হলো খুব তাড়াতাড়ি মাটি দিয়ে দেয়া হবে 😥 ঈদের দাদার মুখটা শেষবারের মতো আর দেখতে পারলাম না 🥺। প্রতিটি ঈদের সকাল এলেই মনে পরে ঈদের দাদার কথা। "উপর ওয়ালা তুমি তাকে বেহেশত নসিব করো 🤲"
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1546178158688632832?t=CjFVZkvxULJdbaPfVqzKgw&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার দাদার কথা জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া। তবে এই পৃথিবীতে কেউ চিরকাল স্থায়ী থাকেনা। মৃত্যু একদিন ঠিকই এসে ধরা দেয়। আমার দাদা যখন মারা যায় আমিও বাড়িতে থাকতে পারিনি। সেই ফেনীতে ছিলাম। আসাও সম্ভব হয়নি। খুব মিস করি দাদাকে । যায়হোক, আপনার দাদাকে আল্লাহ তায়ালা বেহেশত নসিব করুক এই দোয়াই করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাই আপন মানুষগুলো হঠাৎ করেই হারিয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া যায়না তাদের। আপনার দাদাকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন 🤲
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই শুনে বেশ খারাপ লাগল। আসলেই ভাই মৃত্যু এমন একটা সত্য যেটা আমাদের খুব নিকটে আমাদের মেনে নিতেই হবে। আপনার ঈদের দাদার ঘটনা টা বেশ ভালো লাগল। মনে হলো উনি ভালো মনের মানুষ ছিল। এবং এটাও ঠিক যতই বড় হচ্ছি ঈদের আনন্দগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আপনাকে ঈদ মোবারক ভাই। সবার সাথে ঈদ উৎযাপন করেন।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
একটা সময় পর দেখবেন নিজের আনন্দ বলতে আর কিছুই থাকবে না। শুধুমাত্র পরিবারকে খুশি করার মাধ্যমে আনন্দের হাসি হাসতে হয়। আসলে এটাই জীবন। তবে আমার পরামর্শ হচ্ছে যতটুকু সময় পাচ্ছেন মনভরে আনন্দ উপভোগ করুন 🤗
ভালো থাকুন ঈদ মোবারক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি ঠিকই বলেছেন। ছোট বেলায় ঈদের আনন্দ গুলো আর হয়না। আপনার ঈদের দাদার গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ঠিক আমার দাদার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আমার দাদাকে দেখিনি আমি যখন ছোট আমার দাদা মারা যান। দোয়া করি সকল দাদা ওপারে ভালো থাকুক🤲
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ লিমন।
দোয়া করবে যেন উপর ওয়ালা তাকে বেহেশত নসিব করেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit