একটি দূর্ঘটনার সাক্ষী হলাম। উৎসুক জনতা ফটোগ্রাফী করতে পছন্দ করে।

in hive-129948 •  last year  (edited)
একটি দূর্ঘটনার সাক্ষী হলাম
উৎসুক জনতা ফটোগ্রাফী করতে পছন্দ করে

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

শুভ রাত্রি আমার বাংলা ব্লগ পরিবার। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শুরু করছি আমার আজকের আয়োজন। আমার আজকের দিনটা খুব খারাপ কেটেছে। কারন হিসেবে বলতে পারি একটু দূর্ঘটনার সাক্ষী হলাম। ঘটনাটি হলো আমি আমার অফিসের কিছু কাজ করে ভালুকা বাসস্ট্যান্ডে মাত্র বাস থেকে নেমেছি, ঠিক সাথে সাথে চারিদিকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলাম। সবাই বলাবলি করছে শেষ শেষ, মানুষগুলো শেষ।
উৎসুক জনতা যেদিকে ছুটছে আমিও সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কারন কোন একটা বিপত্তি ঘটেছে সেটা দেখতে হবে। মূল ঘটনা হলো একটি মালবোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনটি অটোরিকশার উপর পরে যায় এবং সেই জায়গায় দুজন মারা যায়। তাছাড়াও আরো তিনজন গুরুতর আহত হয়।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

মূল ঘটনা হলো কেন এই ট্রাক উল্টে এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটলো?
ব্যাপারটা জানতে পারলাম একটু পরেই। মূলত উল্টো রাস্তায় চলা একটি অটোরিকশার কারনে এই দূর্ঘটনা হয়েছে। অটোরিকশা হঠাৎ করেই এমনভাবে সামনে এসে যায় যে মালবোঝাই ট্রাক কিছুতেই তার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। ফলাফল স্বরূপ এই হতাহতের ঘটনা ঘটলো। এর দায় কে নেবে? সবাই কিন্তু সেই ট্রাক ড্রাইভার কিংবা ট্রাকের মালিককে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

এবার আসি আমাদের উৎসুক জনতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। দূর্ঘটনা ঘটার পর চতুর্দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকে। এমনকি দূর্ঘটনায় পতিত সেই ট্রাকটির আশেপাশে এমনভাবে দাঁড়িয়ে যায় যে উদ্ধার করতে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ভীষণ বেগ পেতে হয়। উৎসুক জনতা প্রবল কৌতুহল নিয়ে দেখতে থাকে কতজন আহত বা নিহত হয়েছে। তাছাড়াও ছবি আর ভিডিও করার হিড়িক পড়ে যায়।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

অনেক দূর থেকে জুম করে তোলা আমার ছবিগুলো দেখলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কতজন মানুষ ছবি তোলা নিয়ে ব্যাস্ত? একজন তো যেখানে মানুষ মারা গেছে অটোরিকশার মধ্যে, ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে অবলীলায় ছবি আর ভিডিও করে যাচ্ছে 😥 কি ধরনের বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ এরা, আমার মাথায় ধরে না 😡

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

আর এই ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন একটি মহিলা মানুষ যেখানে অটোরিকশা ভর্তা হয়ে রয়েছে ঠিক সেই জায়গায় উঁকি ঝুঁকি মারার চেষ্টা করছে, যদি কোন কিছু দেখা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলে তিনি কি দেখতে এতোটা আগ্রহী? একজন মানুষের বীভৎস
লাশ নাকি ধুঁকে ধুঁকে নিঃশ্বাস নেয়া মৃত্যু পথযাত্রী একজন মানুষের শরীর। প্রশ্নটা রেখে গেলাম আপনাদের কাছে।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

এই ছবিটিতে খেয়াল করলে দেখবেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একজন মানুষকে বেশ ধমক দিয়ে গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করছে।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

এরসাথে কিছু ভিন্ন চিত্র রয়েছে যেমন একজন পুলিশ অফিসার নিজে বস্তা টেনে সরানোর চেষ্টা করছে যাতে তাড়াতাড়ি মাল সরিয়ে ট্রাক সরিয়ে অটোরিকশাটা নিচ থেকে বের করে আনা যায়। আহলে সব পুলিশ খারাপ না আবার সব পুলিশ মানুষ না।

ছবি তোলার যন্ত্র:- রিয়েলমি সি-২৫
ছবির অবস্থান :- ভালুকা, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।

যাক অবশেষে শ্বাসরুদ্ধকর ত্রিশ মিনিটের অভিযানের পর ট্রাক উঠিয়ে আনা সক্ষম হয়, ততক্ষণে লাশ এবং মারাত্মক আহত লোকদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।

এখন প্রশ্ন হলো কখন থামবে এই মৃত্যুর মিছিল?
আমার মনে হয় এই অস্থির বাঙালির দেশে এটা থামবে না। কারন যারা মাত্র এক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে ইউ টার্নে ঘুরে আসার থেকে পনেরো মিনিট উল্টো পথে গাড়ি চালানো ভীষণ সুখের মনে করে সেখানে এটা বন্ধ হবে না।

আর সোস্যাল মিডিয়া কর্মী হয়ে সবাই যদি ছবি আর ভিডিও করে বেড়ায় তাহলে উদ্ধার করবে কে? এটাই দেখার বিষয়।

বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি


Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

আসলেই ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত ছিল। আমরা শহরের রাস্তাঘাটে দেখতে পাই বিভিন্ন অটো রিক্সা উল্টো পথে ঢুকে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে । যেটা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগলো যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারা গিয়েছে। এইভাবে চারিদিক থেকে উৎসব জনতা মিলে বিশৃঙ্খলা করে একটা বাজে পরিবেশ তৈরি করেছে। মানুষের বিবেক-বুদ্ধির সঠিক পরিচয় কবে দিবে। যাই হোক আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে।

Posted using SteemPro Mobile

যারা মাত্র এক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে ইউ টার্নে ঘুরে আসার থেকে পনেরো মিনিট উল্টো পথে গাড়ি চালানো ভীষণ সুখের মনে করে সেখানে এটা বন্ধ হবে না।

ঠিকই বলেছেন ভাই। যতদিন মানুষ এই বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেনা ততদিন এই মৃত্যু মিছিল যেন থামবেই না।

Posted using SteemPro Mobile

বর্তমান সময়ে এটাই তো মানুষের সব থেকে বড় সমস্যা। যদি কোথাও দুর্ঘটনা হয় সেখানে সাহায্য করার পরিবর্তে ফটোগ্রাফি ধারণ করতে তারা ব্যস্ত সময় পার করে। বিষয়টা আমারও অনেক খারাপ লাগে আমাদের সকলের নিজেদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

আপনার পোস্ট এর টাইটেল পড়ে অবাক হয়েছিলাম। এর পরে যখন পোস্ট টি পড়লাম চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। আসলে আমাদের দেশের বর্তমান সমাজের অবস্থা খুব ভয়াবহ। এক জনের বিপদে কেউ পাশে আসে না। এবং ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অটোরিকশার কারনে দুর্ঘটনাটি হয়েছে। আর এর কারনে সাধারণ মানুষের প্রান চলে গেলো সত্যি খুব খারাপ লাগতেছে। দোয়া রইল সবার জন্য 🤲

এখনকার সময়ে মানুষের ছাড় দেয়ার মানসিকতা নেই মানুষের মধ্যে, তাই প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পরতে হয়। এখানে ভয়াবহ একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে গতকাল। আর মানুষের কৌতূহল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাই মানবিকতা কম।

ঘটনাটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো।মানুষ গুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন এভাবে রাস্তা পার হয় আমি বুঝি না।আর এই উৎসুক জনতার জন্য উদ্ধার কাজে সব সময়ই লেট হয়ে যায়। এতে করে ভালো হওয়ার চাইতে খারাপই হয়।পুলিশ সব খারাপ নয়।ভালো ও আছে বলে দুনিয়া টিকে আছে।সকলের আত্মার শান্তি কামনা করছি। ধন্যবাদ ভাইয়া ঘটনাটি সুন্দর ভাবে তুলে ধরার জন্য।

সত্যিই সব পুলিশ খারাপ নয়, কিছু ভালো মানুষ রয়েছে বিধায় হয়তো পৃথিবীটা টিকে রয়েছে। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

অটোরিকশা চালক যদি উল্টো দিক থেকে না আসতো, তাহলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটতো না। আর এখনকার মানুষের কথা কি বলবো ভাই, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য মানুষের বিবেক বুদ্ধি সব হারিয়ে গেছে। মানুষকে সাহায্য করবে কি, তার থেকে বেশি তারা ফটো তুলতে ব্যস্ত, ভিডিও করতে ব্যস্ত কিংবা উঁকি দিয়ে দেখতে ব্যস্ত যে মানুষটা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। এ ধরনের মানুষগুলোকে আসলে বলার কিছু নেই। তবে ঘটনাটা জেনে অনেক বেশি খারাপ লাগলো, এই আর কি😔।

মানুষ মানুষের এখন মানবিকতা আর বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। তাইতো সহযোগিতার বদলে ফটোগ্রাফী আর উপহাস করতে পছন্দ করে।

Posted using SteemPro Mobile

তাইতো সহযোগিতার বদলে ফটোগ্রাফী আর উপহাস করতে পছন্দ করে।

এই বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও, বর্তমান সমাজের অনেক মানুষের বাস্তব চিত্র এটাই।

কি বলবো ভাই বাকরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম। মানুষের মস্তিষ্ক এতোটাই বিকৃত হয়েছে যে মৃত্যুর মিছিলে ছবি তুলতে ব্যাস্ত।শুধু পুলিশ কেন ভাইয়া সব মানুষের ভিতরেই ভালো মন্দ রয়েছে। একদম ঠিক বলেছেন আপনি যতোদিন আমাদের মানুষের অস্থিরতা কমবে না আমরা জিবনের মূল্য না দিয়ে সময়ের মূল্য বেশি মনে করবো ততদিন মৃত্যুর মিছিল কমবে না।এই দায় ভার কারো নয় আমাদের।