হোস্টেল লাইফ রেগিং (পর্ব -২)|| Hostel life ragging.

in hive-129948 •  11 months ago 
হোস্টেল লাইফ রেগিং
(পর্ব -২)

সংগ্রহশালা

আমি আমার হোস্টেল লাইফ রেগিং নিয়ে প্রথম পর্ব আলোচনা করেছিলাম। আজ তার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। আমি আমার হোস্টেল জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছি এই শিক্ষাগুলো আমার পরবর্তী জীবনে ভীষণ কাজে লেগেছে। তবে রেগিং এর বিষয়গুলো এতোটাই ভয়ানক এবং বেদনাদায়ক ছিল যে বলে শেষ করতে পারবো না। যাইহোক চলুন আজ দ্বিতীয় পর্ব শুরু করি।


রাত ১২.৩০ মিনিট আমাদের নৈশ মিটিং শুরু হয়েছে। প্রথমেই বাইরে থেকে সালাম না দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করায় আমাদের বেশ কড়া তিরষ্কার করা হয় এবং সবাইকে বের করে দিয়ে আবারো সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বলা হলো। যাইহোক আমরা বেশ উচ্চস্বরে সালাম দিয়ে ভেতরে বসলাম। এখানে নিয়ম হলো চারটি চেয়ার সামনে রয়েছে, রুম নাম্বার ধরে ডাকা হবে। প্রথমেই ১০৮ নাম্বার রুমের চারজনকে ডাকা হলো। এমনভাবে ডাকা হলো মনে হচ্ছে যেন ফাঁসির আসামিকে কাঠগড়ায় ডাকা হয়েছে। ছেলেগুলো প্রথমে বেশ স্বাভাবিকভাবে বসার পর শুরু হলো আসল কাহিনী।

১০৮ নাম্বার রুমের একটা ছেলের চুল বেশ লম্বা, তাকে বলা হলো কিরে বাবরি চুলের নায়ক কি খবর তোর? আগে পরিচয়টা বল। সে স্বাভাবিকভাবে তার পরিচয় দিলো। কিরে তোর ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড তো বেশ ভালো কিন্তু তোর চুল এরকম মাস্তানের মতো কেন? এই একটা কাঁচি আন, ওর চুলগুলো কাটতে হবে। যেই বলা সেই কাজ একজন একটা কাঁচি নিয়ে চুলের সামনের দিকে বেশ কিছুটা অংশ কেটে দিল। ছেলেটা কেমন যেন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে হয়তো রাগে। হঠাৎ করেই আবছা আঁধারের মাঝে লাঠি আর স্ট্যামের বাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। না বাড়ি দেয়নি ওরা কিন্তু এমন একটা ভয়ানক অবস্থা মনে হচ্ছে বারি দিলেও এতটা ভয় লাগতো না।

ছেলেটা এবার বেশ ভয় পেয়ে কাঁপতে থাকে, শুধু সে নয়। আমরা সবাই ভয়ে কাঁপতে থাকলাম, মনে হলো আজ হয়তো আমাদের মার খেতে হবে। কেন এই কলেজে পড়তে আসলাম আর কেনইবা হোস্টেলে উঠলাম, সত্যিই আফসোস হতে লাগলো। ছেলেটাকে বলা হলো কাল সকালে চুল স্কিনসাইজ করে চুল কাটবি। যদি চুল হাতে ধরা যায় তাহলে হাতে টেনে তোর চুল ছিড়বো।

যাইহোক এরপরের ছেলেটা বেশ ভদ্র তাকে তেমন কিছু বলা হলো না, শুধুমাত্র সালাম আর নিয়ম মেনে চলতে বললো। এরপর যে ছেলেটা রয়েছে তার কাপড়চোপড় বেশ স্টাইলিশ। নামধাম শোনার পর একজন ছুটে এসে তার স্টাইলিশ জামাটা হাতে টেনে ছিঁড়ে ফেললো। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। জোড়ে একটা ধমক দিয়ে চোখ নামাতে বললো। আমরা চোখ নামিয়ে নিলাম এবং ভয়ে ভয়ে বারবার আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম।

এদিকে এক ছেলেকে সিগারেট খেতে দেখেছে একজনকে তার সামনে একটা সিগারেট ধরানো‌ হয়েছে। এবার বলা হলো দম না ছেড়ে এক টানে পুরো সিগারেট শেষ করতে হবে। ছেলেটার মুখে সিগারেট পুরে দিয়ে জোরে ধমক দেয়া হলো ভয়ে সিগারেট টানতে শুরু করলো। ছেলেটা কাশতে থাকলো আর অবিরত ধোয়া বের হচ্ছে নাক মুখ দিয়ে। চোখ একদমই লাল হয়ে গেছে, আবার লাঠি আর স্ট্যাম্পের আওয়াজ শোনা গেল। সবাই ভয়ে শিটকা লেগে গেছে, এরপর সিগারেট পানিতে গুলিয়ে তাকে খেতে বলা হলো। জোর করে ওর মুখে বেশ কিছুটা সিগারেট মিশ্রিত পানি ঢুকিয়ে দেয়া হলো। ছেলেটা অনেকটা বোমি করার মতো পানি ছেড়ে দিয়েছে। কিরে আর সিগারেট খাবি? আবার খাস, সামনের মিটিংয়ে তোকে সিগারেটের পায়েস খাওয়ানো হবে।

এভাবেই প্রায় আড়াই ঘন্টা চললো এই নির্যাতন। যারা রেগিং করছিলো তারা বেশ ক্লান্ত হলো বোঝা যাচ্ছে, শেষের দিকে আমরা যারা ছিলাম তাদের সাধারণ কিছু নিয়ম কানুন বলে দিয়ে ছেড়ে দিল। এভাবেই কাটলো প্রথম দিনের আড়াই ঘন্টার নির্মম রেগিং। আমি রুমে ঢুকে আর সারারাত ঘুমাতে পারলাম না, সারাক্ষণ সেই রেগিং চিত্রগুলো ভাসতে থাকলো সামনে। আর বারবার মনে হচ্ছিল কেন আসলাম এই অভিশপ্ত হোস্টেলে।

চলবে



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

https://steemitwallet.com/~witnesses



VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1ejFJCaMLR3zrx1iztXmdz4AFKcaXPfpHbadyDS7yzWTRRjc8kkRjGZNGVw27n8Q3Mi19jpMVHLYFyQ4NZ.gif

Posted using SteemPro Mobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.