সাইকেলটা মাটিতে পড়ে রয়েছে আর রুবিউক দূরে লাফ দিয়ে পড়ে ঘন ঝোপঝাড়ের মধ্যে গড়াগড়ি খেতে খেতে লুকিয়ে পড়ল। সে ধীরে ধীরে ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে চলে গেল। সুচাং দস্যুর মূল টার্গেট হচ্ছে সাইকেলটা রুবিউক নয়, তবে কোনো কারণে সে যদি বাঁধা দিতো তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। সুচাং দস্যুর দল খুব কাছাকাছি এসে সাইকেলটাকে মাটি থেকে উঠিয়ে নিল অদ্ভুতভাবে ভৌতিক সাইকেল খুব সাধারণ একটি সাইকেলের মতো আচরণ করতে থাকলো। সুচাং দস্যুর দল সবাই সাইকেলটা পেয়ে বেশ খুশি এবং তারা সবাই সাইকেলটা ছুঁয়ে দেখলো। কিন্তু এটা তারা মারাত্মক ভুল করেছে। যাইহোক সুচাং দস্যুর দল সাইকেলটি উদ্ধার করে সেই আইসক্রিম বিক্রেতার কাছে দিয়ে আসে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। তবে রুবিউক দূর থেকে সবকিছু তার নজরে রেখেছে।
আইসক্রিম বিক্রেতা এই অসাধারণ সাইকেলটি পেয়ে ভীষন খুশি হয় এবং সে একটি গোপন জায়গায় সাইকেলটিকে লুকিয়ে রাখে। তার পরিকল্পনা হলো একজন ভালো সাইকেল চালক দিয়ে সে সাইকেল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিবে এবং কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করবে। ঠিক পরদিন সকালেই আবারো আইসক্রিম বিক্রেতা ডব্লিং শহরের সেই সাইকেল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়। তবে এই ভৌতিক সাইকেলটি চালাচ্ছে তার একজন ভাড়া করা লোক। এবার এই সাইকেলটি দেখে সবাই তাদের সর্বোচ্চ জোয়া এই সাইকেলের উপরে লাগিয়ে দেয়। অদ্ভুতভাবে প্রথম দিন আইসক্রিম বিক্রেতা সাইকেলটি দিয়ে বিশাল অংকের টাকা উপার্জন করতে সমর্থ হয়। ধীরে ধীরে এটার প্রতি তার লোভ আরো বাড়তে থাকে। সে চোখে মুখে শুধু টাকা আর টাকা দেখতে থাকে।
তার ঠিক পরদিন আইসক্রিম বিক্রেতার ভীষণ ইচ্ছে হলো সে একবার সাইকেলটি চালিয়ে দেখবে। কি এমন জাদু রয়েছে এই সাইকেলের মাঝে যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেই দুর্বার গতিতে ছুটতে থাকে। সে যেই না সাইকেলের উপর চেপে বসেছে সাইকেল পুরোপুরি তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকে জঙ্গলের দিকে। ছুটতে ছুটতে সাইকেলটি গভীর জঙ্গলের মধ্যে চলে যায়। আইসক্রিম বিক্রেতা হঠাৎ বুঝতে পারে সে সাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং সে কোনোভাবেই এটিকে থামাতে পারছে না। তার চোখেমুখে ভয় ছেঁয়ে যায়। সে চিৎকার করতে থাকে সাহায্যের জন্য কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। সাইকেলটি আইসক্রিম বিক্রেতাকে ছুটিয়ে নিয়ে এসেছে ঘন জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে। যেখানে কেউ নেই শুধুমাত্র আইসক্রিম বিক্রেতা ভৌতিক সাইকেল আর লুকিয়ে থাকা রুবিউক।
হঠাৎ করেই ভৌতিক সাইকেলটি থেমে যায় এবং আইসক্রিম বিক্রেতাকে তার পিঠের উপর থেকে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। এবার উচ্চস্বরে সাইকেলটি হাসতে থাকে চারিদিকে একটি ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আইসক্রিম বিক্রেতা ভয়ে একদম জড়োসড়ো হতে থাকে, সে চিৎকার করতে চায় কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন স্বর বের হচ্ছে না। হাঁটু কাঁপছে তো কাঁপছে কিন্তু সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না আসলে তার সাথে কি হতে চলেছে।
সাইকেলটি অনেকটা সময় জোরে হাসার পর হঠাৎ করে অঝোরে কাঁদতে থাকে। এবার আইসক্রিম বিক্রেতা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে, হঠাৎ সাইকেলটি বলে ওঠে চোখ খোলো। তুমি কি আমায় চিনতে পারছো? আমি সেই মানুষটির আত্মা যাকে তুমি হত্যা করেছিলে তোমার লোভ এবং লালসার জন্য। আমি সেই মানুষের আত্মা যে কিনা তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সামান্য কিছু টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলে। তুমি সামান্য নীলকন্ঠ হীরার জন্য আমাদের দুজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলে। মনে কি পড়ে অত্যাচারী মানুষ? মনে কি পড়ে সেই দিনটা? যেদিন আমাদের শরীরের তাজা রক্তে ভিজে ছিল এই সাইকেল। আমার অতৃপ্ত আত্মা সাইকেলটার ভিতরে ঢুকে যায় এবং তোমাকে চরম থেকে চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য আমার অতৃপ্ত আত্মা ছটফট করতে থাকে। আজ সেই দিন যেদিন তুমি চরম থেকে চরম শাস্তি পাবে। তুমি রক্তাক্ত হবে, তুমি ছিন্ন ভিন্ন হবে, তোমার মাংস হায়েনার দল খাবে। তুমি কি প্রস্তুত তোমার শাস্তি পাওয়ার জন্য? তুমি ভেবোনা, যাদের দিয়ে তুমি আমাদের হত্যা করেছিলে, আমি তাদের ছেড়ে দেবো। ওরা আমাকে ছুঁয়েছে আর আমি তাদের জংখাইকো রোগের অভিশাপ দিয়েছি। ওরা অতিশীঘ্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমি কাউকে ছাড়বো না, কাউকে না, হা হা হা।
ভৌতিক সাইকেলের কথাগুলো শুনে আইসক্রিম বিক্রেতা ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু আজ তার শাস্তি পাওয়ার দিন হঠাৎ করেই ভৌতিক সাইকেলটা কেমন যেন রূপ বদলাতে থাকে একটা অদ্ভুত প্রাণীতে পরিণত হয়ে যায়। এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আইসক্রিম বিক্রেতার চোখ যেন গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে। সেই ভয়ংকর প্রাণীটা ধীরে ধীরে আইসক্রিম বিক্রেতার সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। যখন প্রাণীটা ঠিক আইসক্রিম বিক্রেতার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, ততক্ষণে লোকটা ভয়ে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। কিন্তু তবুও অদ্ভুত প্রাণীটা লোকটাকে ছাড়লো না এক কামড়ে তার শরীর দ্বিখন্ডিত করে ফেলল। রক্ত চতুর্দিকে বইতে শুরু করলো আর সেই রক্তের ধারা অদ্ভুত প্রাণীটার শরীরে এসে পরলো। সাথে সাথেই সে আবারও ভৌতিক সাইকেলে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তবে গোস্তাগিজের অতৃপ্ত আত্মা সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যায়।
এদিকে রুবিউক তার চোখের সামনে সবকিছু দেখছিলো। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দেখে সে কখন যে তার জ্ঞান হারিয়েছে সে নিজেও জানেনা। তার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে দেখল ভৌতিক সাইকেলটা পড়ে রয়েছে এবং রক্তাক্ত লাশ ঠিক তার পাশেই পড়ে রয়েছে।
রুবিউকের খুব ইচ্ছে ছিল সাইকেলটা সেখান থেকে নিয়ে আসার। কিন্তু তার বাবার বার বার বলেছিলো সে যেন সাইকেলটাতে হাত না দেয়। যাই হোক কোনভাবে সেখান থেকে ফিরে এসে আবার নতুনভাবে তার জীবন শুরু করেছে। প্রতিযোগিতায় জেতা অজস্র টাকা দিয়ে সে একটি সাইকেল কোম্পানি দেয় এবং সেই কোম্পানির একটি সাইকেলের নাম দেয় গোস্ট সাইকেল 👻।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/emranhasan1989/status/1767957000493887886?t=67cbWxvAxwTUnFVFSnW2Bg&s=09
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভৌতিক সাইকেলের শেষ পর্ব পরে বেশ ভয় লেগে গেলো। একদম গা ছমছমে গল্প ছিলো। তবে একটা বিষয় ভালো লেগেছে আসলে আইসক্রিম বিক্রেতা তার পাপের সাজা পেয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি এতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য । আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভৌতিক সাইকেল গল্পটি আমি প্রথম থেকেই পারতেছি। তবে যত পর্ব গুলো পারছিলাম তত বেশি ভালো লাগতেছিলো। তবে আজকে শেষ পরবো পরে তো ইতিমতো তো ভয় কাজ করছে। সাইকেল এর আত্মা বেশ কেঁপে গিয়েছিলো। অবশেষে আইসক্রিম বিক্রেতার পাপের শাস্তি হলো জেনে খুশি হলাম। এধরনের গল্প গুলো আরো বেশি বেশি চাই। এগুলো থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভৌতিক সাইকেল গল্পটি আমি প্রথম সব গুলো পর্ব ভালে করে পরেছি। আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। শেষ পর্ব পরে অনেক ভয় লেগেছে আমার। সাইকেল ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল। কিন্তু এই বিষয় অনেক ভাল লেগেছে আমার কাছে তা হলো আইসক্রিম বিক্রেতা তার পাপের শাস্তি পেয়েছে। এদিকে রুবিউক তার চোখের সামনে সবকিছু দেখে জ্ঞান হারিয়েছে। চমৎকার পোস্ট শেয়ার কারার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
গল্পের শেষটা বেশ ভয়ঙ্কর ছিল, সামান্য এক টুকরো হীরার জন্য তাদেরকে হত্যা করেছিল বলেই তার আত্বা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিয়েছে। সব শেষে রুবিউকের জীবনের চাকা বদলে যায় আর সে সব টাকা দিয়ে একটি সাইকেলের কোম্পানি দেয়। মজার বিষয় একটি সাইকেলের নাম দিয়েছিল গোস্ট সাইকেল।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit