ফুটবলের ইতিহাস যতদিন লেখা হবে ততদিন লিওনেল মেসির নাম অবশ্যই প্রথম সারির খেলোয়াড়দের মাঝেই স্মরণ করা হবে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গোল করেছেন, লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন, এবং ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার বারবার অর্জন করে নিয়েছেন এবং বর্তমান সময়ে যে কোন মানুষের কাছেই একজন সেরা ফুটবল খেলোয়াড়ের নাম মেসি। নিজের সর্বোচ্চ উজার করে দিয়ে সারাজীবন ফুটবল খেলেছেন এবং সেই স্বীকৃতি নানাভাবে পেয়েছেন কিন্তু দেশের জার্সিতে সেরকম সাফল্য দেখাতে পারেননি যেমনটি অন্যান্য কিংবদন্তীরা দেখিয়ে গিয়েছেন।
Source: Image by Abdullah Munzer from Pixabay
ইতিহাস রচিত হয় পরিসংখ্যান দিয়ে। ইতিহাসে সবসময় পরিসংখ্যান সবচেয়ে মুখ্য বিষয় হিসেবে কাজ করে থাকে কারণ আজকের খেলা, খেলার পরিবেশ প্রেক্ষাপট যেকোনো কিছুই একদিন হারিয়ে যাবে তবে থেকে যাবে হচ্ছে পরিসংখ্যানটা। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, People reward results, not effort. অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন আপনি হয়তো গোলপোস্টে ১৫ টি দূর্দান্ত ক্লিক করেছেন কিন্তু গোলকিপারের নিপুণ দক্ষতায় সবগুলোই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দিনশেষে আপনার এই ১৫ টি এটেম্পট মানুষ মনে রাখবে না, দিনশেষে পরিসংখ্যান ও ফলাফল নির্ধারিত হবে গোল দিয়ে। যদি একটি গোল হয়ে থাকে মানুষ সেই একটি গোল করে রাখবে কিন্তু ১৫ টি ব্যর্থ চেষ্টা কে মানুষ সহজেই ভুলে যাবে। এটাই হচ্ছে ইতিহাস।
বিষয়টি বুঝার জন্য একটা বাস্তব উদাহরন দেই। ২০০৬ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে স্পেন ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। আবার ইউক্রেন সৌদি আরবকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। স্পেন বনাম সৌদি আরবের খেলার ফলাফল কেমন হবে সেটা সহজেই সবার অনুমান করতে পারছিল। কিন্তু ফলাফল হয়েছিল কোন রকমে ১-০ গোলে স্পেনের জয়। স্পেনের খেলোয়াড়রা গোলপোস্টে কিক করতে করতে এক রকম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন সৌদি আরবের গোলকিপার। ইতিহাসে এই ম্যাচের ফলাফল ১-০ হিসেবে লেখা থাকবে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা এবং এরকম অসংখ্য অগণিত উদাহরণ আমরা আমাদের চারপাশে বিভিন্ন খেলাধুলায় খুজে পাব।
Source: Image by YaNiS2017 from Pixabay
মেসির সারাজীবন দুর্দান্ত ফেলেছেন কিন্তু যখন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলতে এসেছেন তখন তার আশেপাশের খেলোয়ারদের কাছ থেকে সেই পরিমাণ সাপোর্ট পান্নে যেমনটা স্প্যানিশ লিগে পেয়েছেন। আর্জেন্টিনা দল হিসেবে প্রথম সারির পাঁচটি দলের মত নয়। খেলোয়াড়দের আকৃতি এবং দক্ষতার রয়েছে অনেক ঘাটতি। তারপরও কিছু তারকা খেলোয়াড়ের জন্য, আর্জেন্টিনা একটি ভালো দল হিসেবে সবসময়ই টাইমলাইনে থাকে।
২০১৪ বিশ্বকাপ শিরোপা যদি মেসির হাতে উঠত তাহলে এটা হতো মেসির জন্য ইতিহাসের স্বীকৃতির অন্যতম একটি মাধ্যম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল এবং এই কোপা আমেরিকার শিরোপায-ই হচ্ছে মেসির জন্য ইতিহাসের খাতায় লিখে রাখা দেশের হয়ে ট্রফি। ইতিহাস রচিত হয় যেহেতু পরিসংখ্যান দিয়ে সেই পরিসংখ্যানে জাতীয় দলে মেসির সফলতা এভাবেই লেখা হবে যদিও অনেক ম্যাচেই দেখা গেছে একা দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন ত্রাণকর্তা হিসেবে। তুলে নিয়ে গিয়েছেন ফাইনালে ভঙ্গুর দলকে। এইরকম নৈপুণ্য ইতিহাসে লিখিত হয় না, ইতিহাস দেখতে চাই কেবল তার প্রাপ্তি।
Source: Image by Asif Bin Mohsin from Pixabay
আগামী বিশ্বকাপ হয়তোবা লিওনেল মেসি খেলবেন কিন্তু সেই বিশ্বকাপে দলকে কি টেনে ফাইনালে নিয়ে যেতে পারবেন বা শিরোপা জয় করতে পারবেন যদি না পারেন তাহলে ইতিহাস মেসির জন্য এতটুকুই লিখে রেখেছে। একজন কিংবদন্তি হিসেবে মেসির নাম অনেকদিন টিকে থাকবে অন্তত বর্তমান জেনারেশনের মানুষের মনে যারা মেসিকে খেলতে দেখেছেন এবং তার সাফল্যগুলো সমসাময়িক সময়ে দেখেছেন।
এই পোস্টের সম্পুর্ন লিখা আমার নিজস্ব ও কোথায় থেকে কপি করা হয়নি। কোথাও হতে কোন তথ্য বা ছবি নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কে
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |