অভিশাপ

in hive-129948 •  4 years ago  (edited)

স্বচ্ছল ঘরের সন্তান তাহমিদ।বাবার রয়েছে নিজস্ব একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী।ছাত্র হিসেবে তাহমিদ বেশ ভালোই।ছোট থেকে তার স্বপ্ন কানাডা সেটেল হয়ে বাবার মতো বড় কোনো ব্যবসা করার।বাবাও তাকে আশ্বাস দিয়েছে ।সবকিছু ভালোই যাচ্ছে।হঠাত করেই কোত্থেকে জানি করনা নামক এক আতঙ্ক আসায় বন্ধ হয়ে গেলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।প্রথম কিছুদিন স্বাভাবিকের মতোই মনে হচ্ছিল।ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে থাকে।সরকার ঘোষণা দিল অনলাইন ক্লাস করাবে।ব্যাস,তাহমিদ সেজন্য বাবাকে বলে একটা দামী ফোন কিনে নিল।বাসায় নেট বাফারিং এড়ানোর জন্য কিনে নিল ওয়াই-ফাই।তাহমিদ ভাবলো,বসেই তো আছি।কয়েকটা জিনিস শিখে ফেলি।বাবাকে বলে সেই সময় কিছু শখ পূরন করে।গিটার শিখবে জন্য দামী একটা গিটার কিনে নেয় । এমন আরো যতো শখ-ইচ্ছা ছিল সবই তার বাবা পূরণ করে দেয় এবং সে ছুটির দিন মনের মতো করেই পার করতেছে।

তাহমিদের বাবার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রাশেদের বাবা।রাশেদের বাবা মাসে যা ইনকাম করে তাতে পরিবারের পাঁচজন সদস্যের দুবেলা ভালো-মন্দ খেয়ে সামান্য কিছু ভবিষ্যতের জন্য জমাতে পারে।রাশেদের স্বপ্ন দেশের একজন নামকরা ডাক্তার হওয়ার।ছাত্র হিসেবে ভালো হওয়ায় বাবাও বলে দিয়েছে,"তুমি তোমার কাজ করে যাও রাশেদ,শরীরের রক্ত বিক্রি হলেও তোমার ইচ্ছা পূরনের চেষ্টা করবো ।"লক্ষ্যকে মাথায় নিয়ে রাশেদের পড়া-শুনা চলছে।করনার জন্য দেশে তখন প্রথম লক-ডাউন চলছে।অনলাইন ক্লাস করার জন্য বাবা রাশেদকে একটা ফোন কিনে দেয়।টাকা খরচ করে নিয়মিত এমবি তুলে ওর ক্লাস করতেছে।বেশ কিছুদিন ভালোই চলছিল।কিন্তু পরে কুলে উটতে না পেরে সঞ্চয় ভেঙ্গেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় রাশেদের পরিবারকে।পরিবারের অদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাশেদ ঘরে বসে থাকেনি।এলাকার একটা ঔষধের দোকানে কাজ নেয়।দুর্দিনে পরিবারের পাশে দাড়াতে পেরে সে নিজের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে।রাশেদের জীবনের চাকা সেখানেই ঘুরে যায়।

ঐ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর নাইট গার্ড হিসেবে ছিল ইসতিয়াকের বাবা।চাকরিটির সুবাদে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতেই থাকে।নিজের চলার জন্য খুব সামান্য কিছু টাকা রেখে বেতনের বাকি সবটুকু গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।যা দিয়ে ইসতিয়াকের পড়াশুনার খরচ,পারিবারিক খরচ,দাদির ঔষধ এসব খরচ চলে।লকডাউনের জন্য চাকরি হারিয়ে ইসতিয়াকের বাবা চলে আসে গ্রামের বাড়িতে।কর্মক্ষম একজনই ছিল,সেও এখন বেকার।একেকটা দিন যায় যেন একেকটা বছর।এরই মাঝে অনলাইন ক্লাসের খবর আসে।পরিবারের এই অবস্থা দেখে বাবাকে আর ফোনের কথা বলেনি ইসতিয়াক।তবে বাবা বুঝতে পেরেছিল।বুঝেও কি কাজ হবে?কাছে তো সংসার চালানোর মতোই পয়সা নেই।এদিকে দোকানেও বেশ ভালোই বাকি হয়ে গেছে।সেগুলো শোধ না করলে আর কিছুই কিনতে পারবেনা দোকান থেকে।এসব নানানমূখী চিন্তা সহ্য করতে না পেরে ইসতিয়াকের বাবা একদিন হার্ট এটাক করে মারা যায়।পরিবারের হাল ধরে ইসতিয়াক।
1583952355.1997 (1).jpg
SOURCE

উপরের তিনটি ঘটনা যে তিন শ্রেনীর মানুষকে নিয়ে লেখা তা নিশ্চই বুঝেছেন।আমাদের এই দেশে তাহমিদদের পরিবারের মতো পরিবারের সংখ্যা খুব কম।বলতে গেলে রাশেদদের পরিবারের থেকেও একটু হলেও বেশি ইসতিয়াকদের মতোও পরিবারের।প্রথম,দ্বিতীয় লকডাউন কাটিয়ে কোনো রকমে আবার সবাই চাঁড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে,তাতেই আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় পুরো দেশ শাট ডাউন দেয়ার ঘোষনা আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।আমরা যারা এই প্লাটফর্মে আছি তারা নিশ্চই তাহমিদের মতো না।আসছে সময়গুলো বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে পার করার চেষ্টা করবেন।নিজেদের শখগুলো আপাতত আলমারিতে বন্ধ করে রাখুন।ইনশাল্লাহ সূর্য একদিন উঠবে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

করোনা এসে সবার জীবনটা এমন হয়ে গিয়েছে ভাই। তবে আপনি যা লিখেছেন ভালই লিখেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ।