ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা||পর্ব-৩

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছো আশাকরি প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সাথে সবাই ভালো আছে, আমার বাংলা ব্লগ সব সময় ভালোর পক্ষে। সবাইকে হেমন্তের শুভেচ্ছা, আজ আমি আপনাদের সামনে আমার নতুন লেখা ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার তৃতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার জীবনে দেখা প্রতিটি বিশ্বকাপের মুহূর্তগুলো কেমন কেটেছে সে সম্পর্কে এবং ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমার ভালোলাগা মন্দলাগা গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা পড়ে আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
crown-1065918_960_720.jpg
Source
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সামনে শেয়ার করব ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা। ২০০৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে উন্মাদনার পাশাপাশি কিছু খারাপ লাগার ঘটনা ঘটেছে যা আমি আমার পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ফিফার অনুষ্ঠিত ১৮তম আসর, এই আসরটি ৯ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩২টি দলের অংশগ্রহণে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ছিল নানান ঘটনা বহুল আসর যেখানে ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনার থেকেও গুরুত্ব পেয়েছে ফাইনাল খেলায় জিদান মাতেরাজ্জির ঘটনা। যেখানে জিদান মাতেরাজ্জিকে ষাঁড়ের মত বুকে গুঁতো দিয়ে ফেলে লাল কার্ড হজম করেছিল। যদি জিদান এইভাবে বিদায় না নিয়ে চলে যেতেন তাহলে খেলার ফলাফল হয়তো অন্যরকম হতে পারত যা আসলে জিদান ভক্তদের হৃদয় ভাঙ্গার কারণ।

ওই বিশ্বকাপে অনেকের মতো আমিও জিদানের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, যদিও আমি ফ্রান্সের সঁপোটার ছিলাম না। একজন ফুটবলার বিভিন্ন দলের সাপোর্টদের মন কিভাবে জয় করে নেয় জিদান তার বড় উদাহরণ। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিদান পরের বিশ্বকাপে অবসরে চলে যান। নাটকীয় ভাবে ২০০৬ বিশ্বকাপে আবার ফ্রান্স দলে ফিরে আসেন। জিদান যে কত বড় মাপের ফুটবলার ছিলেন তারা প্রমাণ তিনি ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে দিয়েছেন, ৯৮এর বিশ্বকাপ তার হাত ধরেই ফ্রান্স জয় করে এবং ২০০৬ সালে তিনি ফ্রান্স দলকে ফাইনাল খেলা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। হয়তো তার সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটলে তার হাত ধরে ফ্রান্স আবারো বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করতে পারত। সেবার পুরো বিশ্বকাপে ফেভারিট দল হিসেবে ফ্রান্স চমৎকার খেলেছে জিদানের নেতৃত্বে এমনকি ফাইনাল খেলাতেও ফরাসিরা দুর্দান্ত খেলেছে কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিলনা।
france-362275_960_720.jpg
Soucre
ফাইনালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাদ দিলে জার্মানির বিশ্বকাপটা ছিল পরিচ্ছন্ন একটি আসর। ওই আসরটি জার্মানির নিজেদের ঘরে হবার পরেও তারা খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। সেবার জার্মানি দলে ছিল বেশ কিছু তারকা ফুটবলার যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাইকেল বালাক, ক্লোসা, পোডলস্কির মত ফুটবলাররা। দারুণ ফর্মে থাকা জার্মানি দল নিজেদের ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল, সেমিফাইনালে আন্ডার ডগ ইতালির কাছে হেরে গিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে।তবে জার্মানি দল সেমিফাইনালে বিদায় হওয়ার আগে কোয়ার্টার ফাইনালে আমার প্রিয় আর্জেন্টিনা কে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।
football-362105_960_720.jpg
Source
আমার পছন্দের ফুটবল দল আর্জেন্টিনা এ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। দুর্দান্ত এই দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে চমৎকার খেলা দেখিয়েছে সম্পূর্ণ খেলায় দুর্দান্ত খেলেও জার্মানির কাছে ট্রাইবেকারে হেরে যায়। প্রথম দিকে রবার্তো আয়লার হেডে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও শেষ দিকে খেলার ৮৪ মিনিটের মাথায় জার্মানি গোল দিলে ১-১ সমতায় আসে। অতিরিক্ত মিনিটে কোন গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় ট্রাইবেকারে। সেখানে আর্জেন্টিনা দুটি গোল মিস করে এবং জার্মানির সবগুলো গোল আর্জেন্টিনার জালে জড়ায়, খেলার ফলাফল দাঁড়ায় জার্মানি ৫ আর্জেন্টিনা ৩।

আর্জেন্টিনার মতো এই বিশ্বকাপে শেষ আট থেকে বিদায় হয় ব্রাজিল, দুর্দান্ত ফ্রান্স দলের কাছে তাঁরা ০-১ গোলে হেরে যায়। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত জার্মানি বিশ্বকাপে কিছু তারকা প্লেয়ার এর আবির্ভাব ঘটে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যাদের অভিষেক হয়েছিল এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে এবং তারা বর্তমান সময়ের মহা তারকা। সে বিশ্বকাপে পর্তুগাল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল দুইজন নায়ক এর কারণে একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো অন্যজন লুইস ফিগো, তারা দুর্দান্ত খেলেছিল এই বিশ্বকাপে।
football-362102_960_720.jpg
Source
বিশ্বকাপের শুরুর দিকে ইতালি দল খুব বেশি চোখে লাগার মতো পারফর্মেন্স করে করেনি। গ্রুপ পর্বের খেলাগুলোতে ঘানার বিপক্ষে ২-০ গোলে, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ ড্র এবং চেক রিপাবলিক দলের সাথে ২-০ গোলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিশ্চিত করে। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে এক গোল পেয়ে ১-০ গোলে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে। অনেকেই তখন বলতে শুরু করেছিল ইতালির ভাগ্য খুব ভালো তারা কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছিল, কোয়ার্টার-ফাইনালে তুলনামূলক দুর্বল ইউক্রেনকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছিল। সেমিফাইনালের তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ খেলায় জার্মানির বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে কোন গোল না হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে ইতালি প্রথম গোল করে, প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হতে গিয়ে কাউন্টার এটাকে দ্বিতীয় খেল গোল খেয়ে বসে জার্মানি। ফলে নিজেদের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে থেকে ছিটকে পড়ে কোটি দর্শকের মন ভেঙে।

২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সবার মাঝে, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বকাপের অন্যতম মহা তারকা জিদানের মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে আঘাত এবং লাল কাড পাওয়া। যে খেলায় ফ্রান্স দল দুর্দান্ত খেলার পরেও বিশ্বকাপটা হাতছাড়া হয়ে যায় সামান্য কিছু ভুলের কারণে। প্রথমদিকে ফ্রান্স দল পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলে খেলায় এগিয়ে যায়। এরপর ইতালির দেওয়া গোলে খেলায় সমতা আসে, নির্ধারিত ৯০ মিনিটে আর কোন দল গোল না দেওয়ায় অতিরিক্ত মিনিটে খেলা গড়ায়। অতিরিক্ত মিনিটে জিদানের লাল কার্ড খাওয়ার পর ফ্রান্স দল কিছুটা মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং ট্রাইবেকারে ইতালির কাছে ৫-৩ গোলে হেরে যায়। বিশ্বকাপ জয় করে ইতালি নিজেদের নাম স্বর্ণ অক্ষরে লিখে নেয় চতুর্থবারের মতো।
football-1678992_960_720.jpg
Source
বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, আবার আপনাদের সাথে দেখা হবে আমার নতুন লেখা ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা চতুর্থ পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।

amarbanglablog.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!