- ১৯ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ৪ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ৭ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
- মঙ্গলবার
- শরৎকাল
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আশা করছি সবাই ভাল সময় অতিবাহিত করছেন। আমি আপনাদের ভালোবাসায় খুব ভালো আছি, কিছুদিন যাবত মায়ের অসুস্থতার কারণে নিয়মিত লেখালেখি করতে পারছিনা। বেশ কিছুদিন পর আবার আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার অপরাধী জীবন গল্পের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। আশা করছি আপনাদের বেশ ভালো লাগবে।
সূত্র
আসাদ শেখ ও তার দলের লোকেরা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের বাড়ির দিকে গিয়ে উঠলো, ওই সময় আকাশ ঘরে বসে পড়াশোনা করছিল, হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখল সাথীদের বাড়ির দিকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। আকাশ দৌড়িয়ে সাথীদের বাড়ি গিয়ে দেখল সাথীর ছোট চাচা আসাদ শেখ এবং দুইজন রক্তাক্ত অবস্থায় উঠানে বসে কাতরাচ্ছে। শেখ বাড়ির অন্যরা ছোটাছুটি করে ফজল শেখের উঠানে জড়ো হতে লাগলো। আকাশ কিছু বুঝে উঠতে পারল না কি হয়েছে শুধু এটাই বুঝতে পারলো যে মিয়া বাড়ির লোকজন ফজল শেখের ছোট ভাইয়ের উপর আক্রমণ করেছে। শেখ বাড়ির কিছু মানুষ তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেবে বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করল। সাথীর বাবা তখন বাজারে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিল খবর পেয়ে দ্রুত বাড়ি এসে দেখল তার ছোট ভাই ও শেখ বংশের দুইজন আক্রান্ত হয়েছে। কালক্ষেপণ না করে তাদেরকে দ্রুত উপজেলা সদর হাসপাতাল নেয়া হল।
সূত্র
এখানে আকাশ এর ভূমিকা চোখে পড়ার মতো ছিল, সে নিজের পরিবারের মত সাথীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মনে মনে সে রাগান্বিতও হচ্ছিল মিয়া বাড়ির মানুষের প্রতি,তারা কিভাবে বিনা কারণে এই মানুষ গুলোর উপরে আক্রমণ করলো। সাথীর চাচার চিকিৎসার জন্য বাড়ির প্রায় সব পুরুষই সদর হাসপাতালে গিয়েছিল। এক দিকে শেখ বাড়ির মানুষের মিয়া বাড়ির প্রতি প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে অন্যদিকে সাথীর চাচার আক্রমণ কেন্দ্র করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইতোমধ্যে খবর আসলো মিয়া বাড়ির কয়েকজন আহত হয়েছে তার মধ্যে দবির মিয়া রয়েছে, খবরটা শুনে আকাশের কাছে কিছুটা স্বস্তি লেগেছিল কারণ মিয়া বাড়ির লোকজনও মার খেয়েছে এটা ভেবে। আকাশের অনেক ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সেদিন রাতে সে সাথীর চাচাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারেনি কারণ কয়েকদিন পর তার পরীক্ষা। শুধু একবার তার মার কাছে বলেছিল যাওয়ার জন্য কিন্তু মা তাতে সম্মতি দেয়নি। রাত বেশি হওয়ার কারণে আকাশের মা তাকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিল, সত্যি কথা বলতে আকাশের মন চাইছিল না সাথীদের বাড়ি থেকে ওই সময় আসতে। আসার আগে শুধু বলেছিল, সাথী কিছু চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
সূত্র
পরের দিন সকালে আকাশ ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে বোঝার চেষ্টা করছিল পরিস্থিতি , সে সোজা সাথীদের বাড়িতে চলে গেল এবং সাথীর চাচার খবর নিয়ে জানতে পারলো সাথীর বাবা বাদী হয়ে মিয়া বাড়ির লোকদের উপর মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিছু সময় পর আকাশ একজন পথচারী কাছ থেকে জানতে পারল মিয়া বাড়ির দুইজনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক, তারাও মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশঙ্কাজনক হওয়ায় উপজেলা সদর হাসপাতাল থেকে মিয়া বাড়ির দুজনকে জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। আকাশ এবং তার চাচাতো ভাই আলামিন দুইজনে উপজেলা হাসপাতালে গিয়েছিলাম সাথীর চাচাকে দেখার জন্য,যাওয়ার আগে সাথীকে বলে গিয়েছিল। উপজেলা সদর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পথে লোকজন বলাবলি করছিল মিয়া বাড়ির তিনজনের অবস্থা খুবই খারাপ,তাদের চিকিৎসা করা হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতালে। আকাশ তখনো হিসাব মিলাতে পারছে না পরিস্থিতি কি হচ্ছে, সে যতটুকু চোখে দেখেছে তাতে তার মনে হয়েছে শেখ বাড়ির মানুষেরা বেশি মার খেয়েছে, মিয়া বাড়ির তিনজন কেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকবে।
আকাশ ঐদিন আর বাড়ির বাইরে বের হল না এমনকি সে বিকালেও কোথাও বের হল না কারণ পরিস্থিতি খুবই থমথমে ছিল, যে কোন সময় মারামারি লেগে যেতে পারে দুই বাড়ির মধ্যে। সন্ধ্যার পর নামাজ পড়ে আকাশ বই নিয়ে পড়তে বসেছে এবং সে সময় সাথীর কথা তার খুব মনে পড়ছিল। এশার আযানের পর হঠাৎ সাথীর মায়ের গলা, সে আকাশের নাম ধরে ডাকছে। আকাশ তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বেরিয়ে জি আন্টি বলে ডাকে সাড়া দিলো। সাথীর মা আকাশকে বলছে আজকে রাতে তাদের বাড়িতে থাকার জন্য কারণ তাদের বাড়িতে সেদিন কোন পুরুষ মানুষ ছিল না। কথাটি শোনার সাথে সাথে আকাশের মন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো, সে মুখ থেকে বলার চেষ্টা করল ঠিক আছে কিন্তু কথাটি মুখ থেকে বের হল না শুধু তার মায়ের দিকে তাকাল। আকাশের মা কিছুটা সময় নিয়ে বলল ঠিক আছে আজ রাতে আকাশ আপনাদের বাড়িতে থাকবে, বিপদের সময় যদি আমরা না পাশে থাকি তাহলে কখন থাকবো। মায়ের একথা শুনে আকাশের মন আরও আনন্দিত হল, সে মনে মনে ভাবল আজকে সাথীর সাথে অনেক কথা বলা যাবে এবং তাকে কাছ থেকে দেখা যাবে।
সূত্র
পড়ার বই গুছিয়ে কিছুটা নাকে-মুখে খেয়ে সে সোজা সাথীদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হল । সাথীদের বাড়ির উঠানের একপাশে ছিল তাদের থাকার ঘর আর অন্যপাশে ছিল তার চাচা আসাদ শেখের থাকার ঘর, সে ঘরে সাথীর দাদি ঐদিন এক রুমে ছিল এবং অন্য রুমে আকাশকে থাকতে দিয়েছিল। সাথী তার দাদির সাথে ঘুমবে বলে ঠিক করলো, সাথীও মনে মনে খুব আনন্দিত হয়েছিল আকাশ তাদের বাড়িতে ঘুমবে বলে। আকাশ, সাথী এবং দাদি তিনজনে মিলে গল্প করছিল এই পরিস্থিতি নিয়ে এবং আশঙ্কা করছিল কি হতে পারে, গল্পের ফাঁকে ফাঁকে আকাশ সাথীর দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে বারবার তাকাচ্ছিল। সাথী এবং আকাশ দুজনে আগে থেকেই কথা বলে রেখেছে রাত বারোটার পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন তারা দুজনে বসে একসাথে গল্প করবে। আকাশ তখনও বুঝতে পারেনি তার এই সহজ আবেগের অপর পাশে রয়েছে কঠিন এক বাস্তবতা যা সে কখনোই আশা করেনি। রাত এগারোটার দিকে যখন সে পড়ার টেবিলে বসে বই পড়ছিল ঠিক তখনই সাথীদের উঠানে কিছু লোকের কথা বলার শব্দ। কেউ একজন বলছে সব ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখো যাকে পাবে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। আকাশের রুমের দরজা নক করা হচ্ছে, সৎ সাহস নিয়ে সে দরজা খুলে দিল এবং দেখল পুলিশের সাথে মিয়া বাড়ির কয়েকজন লোক, তাদের মধ্যে কেউ একজন বলছে মারামারির সময় এই শালাও ছিল ওকেও ধরে নিয়ে চলেন।
বন্ধুরা আকাশের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা জানতে হলে অপরাধী জীবনের তৃতীয় পর্বে চোখ রাখুন, সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR

অপরাধী জীবন গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এই গল্পের মাধ্যমে কয়েকটি বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। ধন্যবাদ ভাই এত দুর্দান্ত গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া ,পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার অনবরোধ রইল। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit