অসহায় আত্মসমর্পণ||

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো, আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছো, আশা করছি ভালো আছো আমিও তোমাদের ভালোবাসাতে ভালো আছি। তবে বেশ কিছুদিন যাবত আমার মায়ের অসুস্থতার কারণে আমার বাংলা ব্লগের সাথে সময় দিতে পারছি না, এখন চেষ্টা করছি তোমাদের সাথে নিয়মিত থাকার জন্য। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার নতুন লেখা অসহায় আত্মসমর্পণ নিয়ে। যেখানে ছেলেমেয়েদের নেতিবাচক আচার-আচরণে এক বাবার অসহায়ত্বের গল্প উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করছি এই শিক্ষণীয় গল্পটি পড়ে আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
homeless-55492_960_720.jpg
Source
গল্পটি বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা, আমার এক পরিচিত মানুষের কাছ থেকে শুনেছি। সন্তানদের নিষ্ঠুরতা একজন বাবাকে কতটা অসহায়ত্ব করে তুলে সেটি এই গল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবে আমাদের সমাজে এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে যা হয়তো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় অথবা হয়না। একজন বাবা তার সন্তানদের ছোটবেলা থেকে কোলে-পিঠে মানুষ করেন, তাদের কখনো কষ্ট হয় এমন কিছু তিনি করেন না প্রয়োজনে তার নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানের সুখের জন্য সব কিছুই করে থাকেন। এমনই এক বাবা যার দুটি সন্তান ছিল একজন ছেলে একজন মেয়ে, বাবা সরকারি চাকরি করার সুবাদে ছেলেমেয়েদেরকে এমনভাবে মানুষ করেছে তাদেরকে কষ্ট কি জিনিস সেটা বুঝতে দেয়নি। চাকরিটা ছিল রাতের ডিউটি কেন্দ্রিক তিনি বাড়ি থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে অফিস করছেন মাঝে মাঝে অনেক রাত হয়ে গেলে বা বৈরী আবহাওয়া হলেও তিনি বাড়িতে চলে আসতেন সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর জন্য।

অনেকদিন এমনও হয়েছে রাতে পরিবহন না পাওয়ায় অনেকটা পথ খেতে হেঁটে হেঁটে বাড়িতে এসেছেন ছেলে মেয়েদের পছন্দের খাবার নিয়ে। নিজে অনেক সময় পছন্দের খাবার বাহিরে খেতে চেয়েও খাওয়া হয়নি ছেলে মেয়েদের ছাড়া। নিজের জামা কাপড়ের প্রতি কখনো খেয়াল রাখেনি, এমন হয়েছে অনেকদিন ধরে একই জামাকাপড় ব্যবহার করতে করতে ছিঁড়ে গেছে যা সেলাই করে আবার ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আদরের ছেলে মেয়েরা যখনই জামাকাপড়ের আবদার করেছে তখন তাদের নতুন কিনে দেয়া হয়েছে।
baby-539969_960_720.jpg
Source
বাবা কষ্ট করে বাড়ি তৈরি করেছেন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, বাবা কখনো অযথা টাকা নষ্ট করেনি ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, বাবা ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা কর। এভাবে বাবার দিন যেতে লাগল এবং ছেলেমেয়েরাও বড় হয়ে উঠল অর্থাৎ ইস্কুলে পড়ার বয়সে চলে আসলো। স্কুলে ভর্তি করে দেয়া হল, বাসায় গৃহশিক্ষক রাখা হল পড়াশোনা করানোর জন্য। মেয়েটি স্কুলে পড়াশোনা করে আর ছেলে মাদ্রাসায় কিন্তু বাবা কাজের কারণে বেশিরভাগ সময় বাহিরে থাকার জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি খুব বেশি খেয়াল করতে পারিনি, মা তাদেরকে অনেক আদরে আদরে রাখত। সন্তানদের মধ্যে মেয়ে ছিল দুই বছরের বড় ছেলের তুলনায়, সে পড়াশোনায় খুব বেশি ভালো ছিল না এবং পড়াশোনায় মনোযোগী করানোর জন্য তাকে কেউ বোঝানোর মতও ছিল না। মা সংসারের কাজে ব্যস্ত আর বাবা বাহিরে থাকেন কাজের জন্য বাড়িতে আসে গভীর রাতে।

এভাবে পরিবারটির দিন অতিবাহিত হতে লাগলো কিন্তু সময় তো আর একই রকমের যায় না সময় পরিবর্তনশীল। মেয়ে প্রাইমারি শেষ করে উচ্চমাধ্যমিকে পদার্পণ করেছে, সে তখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী আর ছেলেটি মাদ্রাসায় জামাত খানায় পড়াশোনা করছে। এরই মধ্যে তাদের মা খুব অসুস্থ হয়ে গেল। আগে থেকেই ভদ্রমহিলার ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল কিন্তু বাবা কাজের চাপে বাহিরে থাকার কারণে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না অনেকদিন। সে সময় তাদের মা একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ল, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তার জানালেন তার দুটো কিডনিতেই সমস্যা ধরা পড়েছে। একথা শুনে বাবার মাথায় প্রচন্ড টেনশন ঢুকে গেল কিভাবে কি করবে সে বুঝে উঠতে পারছিল না, কাজের চাপে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকা হয় সন্তানরা এখনো ছোট ছোট, ওয়াইফের এই সমস্যায় সে অনেকটা ভেঙে পড়ল পড়ল। কিন্তু সন্তান দুটো তাদের বাবা-মায়ের কষ্ট একেবারেই অনুভব করছে না অথচ তারা কিন্তু একেবারে অবুঝ নয়।
rascals-211556_960_720.jpg
Source
আদরের সন্তান হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে তাদের হাতে স্মার্টফোনে উঠে গেছে, সারাদিন দুই ভাইবোন মিলে গেমস খেলা, স্কুলে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম। মায়ের অসুস্থতার কারণে তাদের প্রতি আগের মত খেয়াল দিতে পারছে না এ সুযোগে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে প্রচুর পরিমাণে গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে। স্মার্টফোন হাতে থাকার কারণে ইতিমধ্যে মেয়ে অন্য ছেলের প্রতি প্রণয়ে জড়িয়ে গেছে যা এখন অত্যন্ত গভীর। বাবা-মা জানতে পেরে অনেকবার শাসন করেছে বারণ করেছে কিন্তু কাজ হয়নি, শেষ পর্যন্ত প্রহর পর্যন্ত করেছে যার ফলাফল মেয়ের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে। এ ঘটনার জন্য বাবা-মা দুজনেই মানসিকভাবে প্রচন্ড রকম ভেঙে পড়েছিল। ছেলে তখনও মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। কয়েক বছরের মাথায় মেয়ের সংসার ভেঙে যায় সে আবার বাবার বাড়ি ফিরে আসে এবং আগের মতই দুই ভাইবোন মোবাইলের গেমস নিয়ে ব্যস্ত।

অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি ঘটনার কারণে বাবা এবং মায়ের মধ্যে ঝগড়া হতো, বাবা মনের রাগে মাঝে মাঝে বাড়িতে ফিরত না অথচ একটা সময় সন্তানদের না দেখে তিনি থাকতেই পারতেন না। মা অসুস্থ শরীর নিয়ে মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন আবার অনেক সময় দুর্বল শরীর নিয়ে যেতে পারেন না। এভাবে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মায়ের অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগল। তখনো দুটো সন্তান মায়ের প্রতি যত্নশীল নয়, মা অসুস্থ শরীর নিয়ে তাদেরকে রান্না করে খাওয়াতো। এমত অবস্থায় হঠাৎ একদিন মা মাথা ঘুরে পড়ে যান তারপর তাড়াহুড়া করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু চিকিত্সা আর করানো হয় না কারণ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
arlington-national-cemetery-354846_960_720.jpg
Source
মা মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েরা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় বিশেষ করে বাবা খুব ভেঙে পড়েন, কিছুদিন বাদেই তারা উপলব্ধি করতে পারে মা না থাকার কষ্ট কি। ইতোমধ্যে বাবার চাকরি থেকে অবসরের সময় হয়ে যায়, সে নিজেও তখন মানসিক এবং শারীরিক ভাবে অসুস্থ। বাসায় বসে থাকে কোন কাজ করতে পারে না। আত্মীয়-স্বজন যারা আছেন তারা বাবাকে বুঝিয়ে টাকা-পয়সা এবং সম্পত্তি ছেলে মেয়ের নামে করিয়ে দেন। সম্পত্তি এবং টাকাপয়সা হস্তান্তর করার পর বাবার উপর চলে আসে অমানবিক নির্যাতন। যেটা হয় প্রচণ্ড রকমের মানসিক এবং শারীরিক ও বটে। বাবার খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব ধরনের খরচের টাকা সন্তানদের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে নিতে হয়, অনেক সময় সেটা পাওয়া যায় আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না। কারণ সন্তানরা আগে থেকেই বাবা-মায়ের প্রতি বেখেয়ালি ছিল। অথচ তারা তাদের নিজেদের মত বাবার কষ্ট উপার্জিত সম্পত্তি এবং টাকা ভোগ করছে কোন জবাবদিহিতা নাই, বাবা কিছু বলতে গেলে তাকে শুনতে হয় বাড়িতে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি। ঘটনা এখনো চলমান জানিনা এর শেষ পরিণতি কি হবে তবে মন থেকে দোয়া করি বাবা যেন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শান্তিতে থাকেন এবং ছেলেমেয়েরা বাবার প্রতি যত্নশীল হয়।

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, আবার দেখা হবে আমার পরবর্তী লেখা নিয়ে আপনাদের সাথে। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।

amarbanglablog.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

যে বাবা সন্তানদের দেখার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে আসত তারাই বাবা মায়ের প্রতি অযত্নশীল হয়ে পড়েছে। সত্যি ছেলে মেয়েকে এত বেশি আদর করে মাথায় উঠানো ও ঠিক না। আবার বেশি শাসন করাও ঠিক না। তাদেরকে নিয়ম অনুসারে রাখতে হবে তাহলে তারা সব দিক দিয়ে ঠিক হবে। তারা যদি মায়ের প্রতি যত্নশীল হতো তাহলে তার মা শান্তিতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করতে পারতেন। এখন তো বাবার প্রতিও তারা অযত্নশীল। দোয়া করি যেন তাদের বাবা খুবই শান্তিতে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করতে পারেন। তিনি যেন ভালো থাকে সুস্থ থাকে সেই কামনা করি।

আসলে বাবা মায়েরা আমাদের জন্য যা করে,আমরা বাবা-মায়েদেরর জন্য তা করতে পারিনা। যে বাবা শতব্যস্ততার মাঝে শত কাজের ফাঁকে সন্তানকে একবার দেখার জন্য ছুটে আসে। একটা সময় সে সন্তান অবহেলায় অযত্নে রেখে দেয়। খুব খারাপ লাগলো গল্পটি পড়ে। তবে এটি আমাদের সমাজের বাস্তবতা।