খাদ্য বিষক্রিয়ার কিছু বাজে অভিজ্ঞতা||

in hive-129948 •  2 years ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, নানান ব্যস্ততা কাটিয়ে আবার আপনাদের সামনে আমার নতুন লেখা নিয়ে হাজির হয়েছি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার খাদ্য বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিং হওয়ার সময় যে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটি নিয়ে। আশা করি আমার পোস্ট পড়ে অনেকেই কিছুটা হলেও ফুড পয়জনিং এর ব্যাপারে সতর্ক হতে পারবে।
boy-6961335_960_720.jpg
Source
বাইরের খাবার বিশেষ করে ফুটপাতের খাবার আমি খুব বেশি পছন্দ করি না। কিন্তু বাইরের খাবার খেয়ে ওই দিন যে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে যা আমাকে এখনো ভাবিয়ে তোলে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা না দিলে আপনারা হয়তো বুঝতে পারবেন না কি হয়েছিল আমার সাথে। সন্ধ্যার পর আমার বাসার অদূরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমার শাশুড়ির জন্য নিউরোলজি ডাক্তার এর একটি অ্যাপয়নমেন্ট ছিল। আমি অফিস থেকে আসার পর সবাইকে নিয়ে শাশুড়ির জন্য ডাক্তার দেখাতে ওই হাসপাতালে যাই। আমরা কিছুটা দেরি করে বাসা থেকে বের হই কারণ আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল রাত আটটার দিকে সিরিয়াল নাম্বার ছিল ২২।

অফিস থেকে আসার পর খুব বেশি ক্ষুধা ছিল না তাই বাসা থেকেও কিছু খাওয়া হয়নি, যদিও আমার ওয়াইফ খাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করেছিল। বাসা থেকে বের হয়ে হসপিটালে যাওয়ার পর দেখলাম অনেক লম্বা সিরিয়াল। মাত্র পাঁচ নাম্বার সিরিয়ালে রোগী দেখছেন ডাক্তার আর আমাদের সিরিয়াল ছিল ২২ নাম্বার তারমানে অনেক দেরি। সবাই মিলে বসে গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলাম, রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমার বেশ খিদে লাগছিল। আমার ওয়াইফ বলেছিল বাইরে থেকে কিছু খেতে অর্থাৎ হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে কিছু খাওয়ার জন্য। কিন্তু ওখানকার খাবার আমার পছন্দ ছিল না, ওয়াইফের সাথে শশুর শাশুড়িও অনুরোধ করলো কিছু খাওয়ার জন্য, একদিকে প্রচণ্ড খিদে লেগেছে অন্যদিকে তাদের অনুরোধ একটা পর্যায়ে খাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।
eating-1006009_960_720.jpg
Source
ওখানকার ক্যান্টিন থেকে আমার ওয়াইফ অর্ডার করেছিল একটি চিকেন বার্গার ও পিৎজা। সত্যি কথা বলতে এই ধরনের স্থানীয় বার্গার বা পিৎজা আমার খুব পছন্দনীয় না এবং খাবারের স্বাদ ওই মুহূর্তে খুব বেশি ভালো লাগেনি। যাইহোক খিদে থাকার কারণে খাবারগুলো খেতে হয়েছিল পছন্দ না থাকা সত্যেও। ডাক্তারের সাক্ষাত শেষ করে আমাদের বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় ১১টা বেজে যায়। বাসায় এসে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরের দিন অফিসে যাওয়ার পর তেমন কিছু মনে হয়নি। যথারীতি অফিসে গিয়ে নাস্তা সেরে নেওয়ার পর পেটের মধ্যে ব্যথা অনুভব করলাম এবং টয়লেটে যাওয়ার ইচ্ছা হল। অফিসে যতটুকু সময় ছিলাম সে সময়ের মধ্যে দুই থেকে তিনবার পাতলা পায়খানা হল।

পেটের পীড়া, মাথা ব্যথা এবং বমি বমি ভাব বেশ বাজে অবস্থা তৈরি হল সেখানে। অফিসে বলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, সময় বাড়ার সাথে সাথে খারাপ লাগাটাও বাজে ভাবে অনুভব হল। অফিস থেকে বাসায় রিকশায় আসতে আসতে জ্বর অনুভব হতে লাগলো, আগের দিন রাতে অথবা অফিসে আসার সময় আমার কোন জ্বর ছিল না। যাইহোক বাসার কাছে আসার আগেই শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে লাগলো আমি যেন ভয়ঙ্কর এক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেলাম, জ্বরটা এত পরিমাণ এসেছিল যে আমার রিক্সা থেকে নেমে বাসায় যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। আমার ওয়াইফ আমার অবস্থা দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় এবং সে অনুরোধ করে ইমারজেন্সি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে। কিন্তু আমি কোন ভাবে কথা বলতে পারছি না, হাঁটতে পারছি না এমনকি কিছু অনুভব করতে পারছি না এতটাই জ্বর।
woman-2696408_960_720.jpg
Source
কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাসার কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে জরুরী বিভাগ ডাক্তার দেখালাম। ইমারজেন্সি ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন আমার শরীরে ১০২ বা ১০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর আপডাউন করছে। তিনি আমার উপসর্গগুলো জানার পর ধারণা করলেন হয়তো আমার ডেঙ্গু হয়েছে অথবা খাদ্যে বিষক্রিয়া। আমাকে দেখার পর কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন তিনদিনের মধ্যে যদি না কমে সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে। আমি রাতে ওষুধগুলো সেবন করতে শুরু করলাম, কিন্তু কিছুতেই আমার জ্বর কমছে না মনে হচ্ছে আরও বাড়ছে। সাথে কিছুক্ষণ পরপর পাতলা পায়খানা হচ্ছে, কিছু খেতে পারছি না এবং বমিও ছিল। শরীর প্রচণ্ড পরিমাণে দুর্বল হয়ে হয়ে গেছে, ঐ রাতটা যে কি বিভীষিকাময় ভাবে কেটেছে তা একমাত্র আমি বলতে পারব।

ওষুধগুলো নিয়মিত খাওয়ার কারণে পরের দিন দুপুরের পর থেকে কিছুটা ভালো লাগতে শুরু করলো, পাতলা পায়খানা তখনো হচ্ছিল। এরিমধ্য আমার ওয়াইফ আমার জন্য অনলাইন থেকে ডাব, মালটা, চিঁড়া সহ আরও কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের অর্ডার করেছিল। আমারর পরিকল্পনা ছিল বিকেল নাগাদ শরীরের কোনও পরিবর্তন না হলে সন্ধ্যার পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করাবো। আল্লাহর অশেষ রহমতে বিকেলের আগেই আমার শরীর উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। জ্বর আস্তে আস্তে কমছে এবং পাতলা পায়খানা রাত পর্যন্ত ছিল, রাতের পরে আর হয়নি। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল ছিল যে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ধাক্কা আমি সুস্থ হওয়ার পরবর্তী তিন দিন যাবত উপলব্ধি করতে পেরেছি।
thermometer-1539191_960_720.jpg
Source
আসলে আমার এই বাজে অভিজ্ঞতা থেকে এটাই শিক্ষনীয় যে বাহিরে খাওয়ার আগে খাবারের মেয়াদ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কিনা অথবা যে পানি পান করছি সেটা জীবাণুমুক্ত কিনা, খাওয়ার আগে নিজের হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা আছে কিনা সেটা দেখে নেয়া। শুধুমাত্র খিদে বা কারো অনুরোধের কারণে সব দোকানের খাবার খাওয়া ঠিক নয়।

বন্ধুরা, সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী সময়ে আমার নতুন লেখা নিয়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হব, সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

amarbanglablog.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে, আমাদের দেশে এখন, প্রায় সব কিছুতেই ফরমালিন দেওয়া থাকে।যে দিকে তাকাবেন, সে দিকে একই অবস্থা। যাই হোক আপনার পিজ্জা কিংবা বার্গার থেকে ফুড পয়জনিং হয়েছে।হাসপাতালের ক্যান্টিং গুলো ও অস্বাস্থ্যকর। যাই হোক আপনি যে অবশেষে সুস্থ হয়েছেন, সেটা জেনেই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ

সত্যিই আপু ক্যান্টিনের খাবার গুলো আসলেই অস্বাস্থ্যকর, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

বাইরের খাবার মানেই বিষ।এরা খাবার এর মত সেন্সিটিভ বিষয়ে কখনোই সিরিয়াস নয়।বিশেষ করে ক্যান্টিন গুলো তো নয়ই।তাও ভাল বড় কিছু হয়নি। ফুড পয়জনিং থেকে কিডনি ড্যামেজ পর্যন্ত হয়।এরপর থেকে মন না চাইলে কোথাও খাবেন না ভাই।

আসলে ওরা নিজেরা খাওয়ার জন্য তৈরি করে না, ওদের মেন্টালিটি থাকে ব্যবসা করা যার কারণে এই খাবারগুলো অস্বাস্থ্যকর হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য

বাইরের খাবার না খেতে চাইলেও পরিস্থিতির কারণে কিছু কিছু সময় খেতে হয়। আপনি তো খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পোস্টটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো যে আপনি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া ।

জি আপু পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমিও খেয়েছিলাম কিন্তু এমনটা হবে জানলে না খেয়ে থাকতাম, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

যাক অনেক স্বস্তি পেলাম আপনি সুস্থ হয়েছেন এটা জেনে। তবে এটা ঠিক আমাদের দেশে বর্তমানে সব খাবারে বিষক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে ফলের মধ্যে ফরমালিন ভরপুর। যাইহোক এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বাস্তব একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য

অনেক সময় দেখা যায় যে একই খাবার দুই তিন জন খেয়েছে কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে খাবারের দোষ দেওয়া যাবে কি? কখন কোন অবস্থায় কে অসুস্থ হয়ে যায় বলা যায় না। যাই হোক এই খাবার খেয়ে আপনার খুবই ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল বোঝাই যাচ্ছে। ফুট পয়জনিং হলে যে জ্বর হয় তাও আজকে জানলাম। যাক অবশেষে সুস্থ হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। এরপর থেকে বাইরে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতার অবলম্বন করবেন।

আপু ফুড পয়জনিং এর কারণে শুধু জ্বর নয় ডাক্তার আমাকে বলেছে এর জন্য অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে শরীরের ।

আমাদের দেশের হাসপাতাল গুলোর খাদ‍্য অবস্থা থাকে খুবই অরক্ষিত এবং দূষিত। ফুড পড়জনিং এর জন্য মৃত্যু পযর্ন্ত হতে পারে। আপনার অবস্থাটা কেমন হয়ে গেছিল সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে আমার। এটা আরও মারাত্মক হতে পারত। যাইহোক শেষ পযর্ন্ত যে আপনি সুস্থ হয়েছেন এটা জেনে ভালো লাগছে। আপনার জন্য শুভকামনা।।

আপনি সত্যি বলেছেন ফুড পয়জনিং যে কতটা ভয়ঙ্কর সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ,অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা জানানোর জন্য।

আসলে ভাইয়া আমি মনে করি বাইরের খাবার মানেই বিষক্রিয়া। আর আমাদের দেশে প্রত্যেকটা খাবারেই তো এখন দুই নাম্বার চলছে। মানুষ কি করবে প্রয়োজনের তাগিতে খেতে হয়। যেমনটা আপনি খিদে এবং আপনার স্ত্রী এবং শাশুড়ির অনুরোধে খেয়েছিলেন। আপনার অবস্থার কথা শুনে সত্যি খারাপ লাগলো। আমি নিজেও যে কোন খাবার বাড়িতে প্রস্তুত করতে পছন্দ করি। আসলে আমাদের একটু দেখেশুনে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত।

আপনি শতভাগ সত্যি কথা বলেছেন আপু ,যারা খাবারের ব্যবসা করে বেশিরভাগ মুনাফার আশায় মানুষের স্বাস্থের কথা তারা চিন্তা করে না বললেই চলে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।