- ২৪ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ০৯ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ১২ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
- রবিবার
- শরৎকাল
ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগের সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করছি সবাই ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব অপরাধী জীবন গল্পের চতুর্থ পর্ব। আমাদের মনের অজান্তে সামাজিক জীবনে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে যায়, যার সাথে জড়িত না থাকা সত্বেও সেটা যার জীবনে ঘটে তার ব্যক্তি, সামাজিক এবং পারিবারিক জীবন যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে যায় তারই অবলম্বনে বাস্তবতার আলোকে গল্পটি আপনাদের জন্য লেখা, আশা করি অপরাধী জীবন গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।
Source
আকাশ কোনমতে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিল,পরের দিন সকালে আকাশের বড় ভাই বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে তাকে দেখতে এসেছে, দুজন দুজনাকে দূর থেকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। আকাশ বড় ভাইকে দূর থেকেই দেখল তেমন কোন কথা তারা বলতে পারল না। সকাল দশটার পর আকাশ সহ মামলায় মোট দশ জন আসামিকে এজলাসে তোলা হল। আকাশের পক্ষে আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে তাকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আকাশের মন ভীষণ খারাপ কারণ সে প্রকৃত ঘটনা আজকে কিছুটা জানতে পেরেছে। সে জেল-হাজতে যাওয়ার পথে বড় ভাইয়ের সাথে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু পুলিশি বাধার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠল না। শুধু চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল, মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তার জীবন সম্পূর্ণভাবে এলোমেলো হয়ে গেল। তাকে ওই মুহূর্তে জেলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হল কয়েদি হিসাবে, যতদিন পর্যন্ত তার মামলার নিষ্পত্তি অথবা জামিন না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত জেলে থাকা লাগবে।
Source
জেলখানার জীবন এক বিচিত্র জীবন, এখানে যে যত বড় মামলার আসামি এবং বেশিদিন জেল খাটছে তার ক্ষমতা ততবেশি, সেখানে বাকি কয়েদিদের উপর সে ক্ষমতার দাপট দেখায় অর্থাৎ তার কথামতো বাকি কয়েদিদের চলতে হবে। আকাশ তার জীবনে কখনো এই পরিবেশ দেখেনি, প্রথমদিকে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল সেগুলো মেনে নিতে। মাঝেমধ্যে সে চিৎকার দিয়ে ভীষণ কান্নাকাটি করত। বাড়ির কথা মনে হলে, মায়ের কথা মনে হলে ভীষণ রকমের মন খারাপ হয়ে যেত। মাঝেমধ্যে অন্য কয়েদিরা এসে তাকে জিজ্ঞেস করত কোন মামলায় সে জেলে এসেছে, চুরি , মারামারি নাকি মার্ডার। যখন সে বলতো মার্ডার মামলা, তখন তার পিঠে হালকা থাপ্পড় মেরে বলতো বাঘের বাচ্চা , বাঘের মত কাজ করে এসেছ। তারমানে মার্ডার মামলার আসামিদের এখানে বেশি বাহবা দেয়া হয়। এভাবে কয়েকদিন যাবার পর কয়েকজন বন্দীর সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের দুঃখ কষ্ট গুলো শেয়ার করত নিজেদের মধ্যে।
Source
কয়েকদিন পর আকাশের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে, সে খুব ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু এই ঘটনাগুলো তার জীবনকে চরমভাবে বিষন্ন করে তুলেছে এখন আর পরীক্ষা দেয়ার কোন ইচ্ছা তার মধ্যে নেই। মাঝেমধ্যে আকাশের মা এবং বড় ভাই তাকে এসে দেখে যায়। আকাশের মা খুব করে চাচ্ছিল তার ছেলে যাতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে যে আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে সে ব্যাপারে তার বড় ভাই উকিলের সাথে পরামর্শ করল। কারণ আকাশের বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাইয়ের পড়াশোনা হয়নি সংসারের হাল ধরার জন্য, তাই মা এবং বড় ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল আকাশকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে বলে। কিন্তু হঠাৎ এক অজানা ঝড়ে তাদের প্রত্যেকের জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে যা তারা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। যাইহোক মা এবং বড় ভাইয়ের পীড়াপীড়িতে এক পর্যায়ে আকাশ এসএসসি পরীক্ষা দিতে রাজি হল। অন্যদিকে আদালত থেকে তাকে জেল গেটে বসে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হল।
সাথীর বাবা এবং চাচা এই মামলার এক নম্বর এবং দুই নম্বর আসামি হওয়ার কারণে তারাও জেলে ছিল। এরই মধ্যে একদিন সাথী চাচা এবং বাবাকে দেখার উদ্দেশ্যে জেলে এসেছিল সেই সুবাদে সে আকাশের সাথে দেখা করার সুযোগ পেল। সাথীর চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছিল, আকাশ দূর থেকে তার দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না , সাথীর কান্না দেখে সেও আবেগাপ্লুত হয়ে গেল। আসলে দুজন দুজনাকে প্রচন্ডভাবে তারা ভালোবাসে, আকাশের এই পরিণতির জন্য সাথী তার নিজেকে অপরাধীর জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। কারণ ঐদিন রাতে আকাশ সাথীদের বাসায় আসার কারণে সে আজ এই ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে গেছে। সাথীর মনের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই কারণ একদিকে বাবা এবং চাচা জেলখানায় বন্দি অন্যদিকে ভালোবাসার মানুষ বিনা দোষে তাদেরই কারণে মামলার আসামি। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় সে অনেক রাত ঘুমাতে পারে না, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। আকাশের মধ্যেও একই ধরনের চিন্তা বয়ে যাচ্ছিল, যেখানে ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাসের বলি হয়েছে আকাশ এবং সাথীর ভালবাসা।
Source
কয়েকদিন পর আকাশ এবং সাথীর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হল আকাশে জেলগেটে বসেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এবং সাথী তার বাড়ি থেকে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে তাদের দুজনের কারো পরীক্ষায় যে ভালো হয়নি সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরীক্ষার রেজাল্ট এর সময় দেখা গেল আকাশ দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে এবং সাথী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার পর সাথী আকাশের সাথে দেখা করার জন্য একবার জেলখানায় গিয়েছিল তার মার সাথে, সেখান থেকে কিছুটা কথা হয় দুজনের মধ্যে। আকাশ সাথীকে পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিল এবং সাথীর ভীষণভাবে মন খারাপ হয় পরীক্ষায় আকাশ ফল খারাপ হওয়ার জন্য। ছোটবেলা থেকেই একই সাথে একই ক্লাসে দুজনে পড়ে আসছে এই প্রথম তাদের মধ্যে পড়াশোনা গ্যাপ তৈরি হল।
বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই অপরাধী জীবন গল্পের বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে আপনাদের সাথে আবার শেয়ার করব সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR