ভ্রাতৃত্বের বন্ধন!

in hive-129948 •  2 years ago 

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছো আশা করি আমার বাংলা ব্লগের সাথে ভালো সময় অতিবাহিত করছ। আমিও তোমাদের ভালোবাসাতে বেশ ভালো আছি, চলে এলাম তোমাদের সামনে আমার নতুন লেখা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নিয়ে। লেখাটি আমি দুই ভাইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং সম্পর্কের অবনতি সম্পর্কে লিখেছি বাস্তবতার আলোকে, আশা করি তোমাদের কাছে আমার লেখা পড়ে ভালো লাগবে।
pirate-1135874_960_720.jpg
Source
ছয় ভাই বোন বাবা মার সাথে গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছে, তিন ভাই এবং তিন বোন বাবা-মা সহ ৮ জনের অভাবের সংসার। বাবা কৃষি কাজ করতেন মা গৃহিণী, বাবা নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করতেন যা দিয়ে মোটামুটি ভাবে এক প্রকার সংসার চলে যেত। সংসারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে বছরের কিছু সময় টানাটানি থাকতো। বাবা বড় ছেলেকে কিছুটা লেখাপড়া শেখাতে পারলে ও বাকিদেরকে অর্থের অভাবে পড়াশোনা করাতে পারেনি। কিন্তু বড় ছেলে কিছু দূর পড়াশোনা করার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একপ্রকার নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। বাকিদের খোঁজখবর নেয় না বললেই চলে।

মেজো ছেলে বাবার কৃষি কাজে সহায়তা করত, আর ছোট ছেলে পড়াশোনায় ভালো হওয়াতে স্কুলে পড়াশোনা করত। তিন বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সংসারে খরচের চাপ কিছুটা কমে যায়, যার কারণে ছোট ছেলের পড়াশোনা করতে কিছুটা সুবিধা হয়। পড়াশোনা করতে করতে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে চলে যায় ইতোমধ্যে হঠাৎ করে তার বাবা মারা যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর মেজো ছেলে পুরোপুরি ভাবে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করে এবং চাষবাস করে সংসার চালায়, আর ছোট ছেলে পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য টিউশনি করে। ছোট ছেলে স্থানীয় কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করে ঢাকায় পাড়ি জমায় চাকরির খোঁজে। নিজ গ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জনাব সিরাজুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গেলে চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যায়। ছোট ছেলে চাকরি পাওয়ার পর তাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, চাকরিতে বেতনের পাশাপাশি কিছু বাড়তি ইনকাম থাকার কারণে মাস গেলে খুব ভালো টাকা ইনকাম করতে পারে। বাড়িতে মায়ের খরচ চালানোর পাশাপাশি মেজ ভাইয়ের সংসার চালাতে সহায়তা করত।
boys-1283786_960_720.jpg
Source
দুই ভাইয়ের মধ্যে চমৎকার একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে যা অন্যদের চোখে ঈর্ষণীয়। যাইহোক কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ছোট ভাই বাড়িতে ঘর তুলে এবং টাকাওয়ালা উচ্চ বংশের মেয়ে বিয়ে করে। এদিকে ছোট ভাই টাকা পয়সা ইনকাম করার পাশাপাশি নিজে ব্যবসাও প্রতিষ্ঠা করে। যা থেকে ইনকাম করে বিশ্বস্ত মেজ ভাইয়ের হাতে তুলে দেয় গ্রামে জমি কেনার জন্য, মেজ ভাই তার কথামতো জমি ক্রয় করে এবং সেই জমিতে চাষ বাস করে ফসলের কিছু অংশ ছোট ভাইকে দেয় বাকিটা সে রেখে দেয়। দুই থেকে তিন বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পর খবর আসে ছোট ভাই হঠাৎ করে জাপানে চলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে সিরাজুল হকের কিছু লোকজন তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হামলা করে কারণ হিসেবে জানা যায় ছোট ছেলে সিরাজুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার এক ফাঁকে অনেক টাকা মেরে নিয়ে জাপানে চলে গেছে গিয়েছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে সালিশ বিচার হলেও সেরাজুল হক তার টাকা ফেরত পায়নি, কারণ যাকে নিয়ে সমস্যা সে দেশে নাই। জাপানে ছোট ছেলে দুই বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসে এবং দেশে ফিরে আসার পর সিরাজুল হকের লোকদের কাছে সে আবার হেনস্তার শিকার হয় কিন্তু কোন টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। সে চালাকি করে জাপানে থাকা অবস্থায় মেজ ভাইয়ের কাছে সব টাকা পাঠিয়ে নিজ নামে জমি ক্রয় করতে বলে গ্রামে। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসলে সে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজেকে মনোনিবেশ করে ঢাকা শহরে। মেজ ভাই গ্রামের বাড়িতে তার ক্রয় করা জমিগুলো দেখাশোনা করে এবং ফসল ফলিয়ে যে অর্থ উপার্জন হয় তার অর্ধেক ছোটভাইকে দেয় অর্ধেক সে নিজে রাখে।
men-1835901_960_720.jpg
Source
অনেক বছর পর ছোট ভাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মেজ ভাইকে ডাকে এবং বলে জাপানে থাকা অবস্থায় যে টাকা সে পাঠিয়েছিল জমি ক্রয় করার জন্য সেই জমিগুলো এখন সে ফেরত নিবে। মেজ ভাই তখন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে এতদিন পর কেন জমি গুলো ফেরত নিবে। ছোট ভাই বলে দেখো তোমার ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে, আমার ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে সুতরাং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হলেও আমার পাওনাগুলো এখন তোমার কাছ থেকে বুঝে নিতে হবে। ছোট ভাইয়ের কথা শুনে মেজো ভাই কিছুদিন সময় নিলো তার জমি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।

হঠাৎ একদিন মেজো ভাই ছোট ভাইকে গ্রামের বাড়ীতে ডাকল জমিজমার কাগজপত্রগুলো বুঝে নেয়ার জন্য। ছোট ভাই তার কাগজপত্র দেখার পর তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, সে এতদিন যাবত যে জমির হিসাব করে আসছে তার সাথে কাগজপত্রের আকাশ-পাতাল ফারাক। সে জাপানে থাকা অবস্থায় যে টাকাগুলো পাঠিয়েছে মেজ ভাইয়ের কাছে জমি ক্রয়ের জন্য, সে টাকা দিয়ে মেজ ভাই অর্ধেক জমি তার নিজ নামে করে নিয়েছে বাকিটা ছোট ভাই কে দিয়েছে। এ ঘটনা ঘটার পর দুই ভাইয়ের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং দ্বন্দ্ব একটা পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসা করার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। মেজ ভাই চালাকি করে তার নিজের নামের জমিগুলো ছেলেমেয়েদের নামে হস্তান্তর করে দিয়েছে যাতে ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে কেউ দাবী না করতে পারে।

বন্ধুরা গল্প আজ এখানেই শেষ করছি, গল্প পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই আপনাদের মতামত প্রকাশ করবেন। পরবর্তী সময়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হব আমার নতুন লেখা নিয়ে সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। অসংখ্য ধন্যবাদ সবাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!