প্রতিদান||

in hive-129948 •  2 years ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছো, আশাকরি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছো, আমিও তোমাদের ভালোবাসায় খুব ভালো আছি। শত ব্যস্ততার মধ্যে আজ আমি আবার আপনাদের সামনে চলে এসেছি আমার নতুন লেখা নিয়ে, আজকে আমি আপনাদের সামনে শেয়ার করতে যাচ্ছি আমার নতুন লেখা প্রতিদান নিয়ে। প্রতিদান ঘটনাটি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ঘটনা, যেখানে আমি এক পরিচিত জনকে উপকার করতে গিয়ে নিজেই নিজের ক্ষতি করে বসে আছি, চলুন বন্ধুরা কথা না বাড়িয়ে শুরু করি ঘটনাটি।
photomontage-482628_960_720.jpg
Source
এখন থেকে পাঁচ বছর আগের ঘটনা, আমার এক পরিচিত বড় ভাই আমার নিজের এলাকায় বাড়ি, ঢাকা আসার পর তার সাথে পরিচয় হয় এবং ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লোকটার কথাবার্তা শুনে বোঝার উপায় নাই তিনি কেমন প্রকৃতির। দেখে মনে হয় সৎ প্রকৃতির মানুষ কারো সাথে ঝগড়া গ্যাঞ্জাম বা অন্য কোন সমস্যা নাই। দীর্ঘদিন বিদেশ করেছে, দেশে এসে কিছু করার চেষ্টা করছে কিন্তু ঢাকা শহরে পছন্দ মত কিছু পারছিল না। মাঝখানে কিছুদিন শেয়ার ব্যবসা করেছিল, শেয়ার ব্যবসায় বেশকিছু টাকা নষ্ট করেছে। তারপর লোক বিদেশ পাঠানোর কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বেশ কিছু টাকা দেনা হয়ে গেছে।

ঢাকা শহরে বিয়ে করার কারণে গ্রামের বাড়িতে কম যাওয়া হয় তার, শহরে থাকতে গেলে ফ্যামিলি নিয়ে চলতে গেলে বেশ ভালো টাকা ইনকাম করা লাগে। যেহেতু তিনি আগে বিদেশ ছিলেন সে কারণে তার টাকা ভাঙ্গার হাতটা একটু বেশি ছিল কিন্তু ইনকামের সাথে সামঞ্জস্য করে করতে হয় সেটি তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। ফ্যামিলির লোকজনও বিষয়টা বুঝতে চাইত না, তারা আগের মতোই খরচ করত। ওই লোকটা কষ্টের কোন কাজ করতে চাইত না অর্থাৎ কম টাকা ইনকাম হয় এরকম কাজ করতে চাইত না। তিনি চাইতেন মোটা অংকের ইনকাম হবে এমন কাজ, কিন্তু এমন কাজ তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না সেটার জন্য কষ্ট করতে হয়। শুরু থেকে কখনোই মোটা অংকের ইনকাম আসেনা।
vulture-4212214_960_720.jpg
Source
অল্প দিনে টাকা ইনকাম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শর্টকাট ইনকামের রাস্তা খুঁজতে লাগলেন, যেমন চাকরি দিয়ে ইনকাম করা, লোক বিদেশে পাঠানো, সুদের ব্যবসা ইত্যাদি। সবাই জানতো তার কাছে অনেক টাকা আছে, তার চলাফেরা পোশাক-আশাক এগুলো দেখে বোঝার উপায় নাই ভিতরে ভিতরে অনেক সমস্যা চলছে। আমিও বুঝতে পারিনি, আমার কাছ থেকে মাঝে মাঝে ২০০০ বা ৩০০০ টাকা ধার নিতো দুএকদিনের কথা বলে, তবে সময়মতো না পারলেও এক সপ্তাহের মধ্যে সেটি ফেরত দিয়ে দিত।

এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর আমার কাজের দূরত্বের কারণে তার সাথে চলাফেরা বা কথা খুব কম হত। প্রায় দুই বছর পর আবার আগের মতোই কথাবার্তা বা দেখা সাক্ষাৎ শুরু হয়। হঠাৎ একদিন বললেন আমার বেশ কিছু টাকা লাগবে এক সপ্তাহ পর ব্যাংক থেকে লোন পাবো এবং টাকা পেলে দিয়ে দেব। আমি প্রথমে টাকা দিতে চাইনি, তিনি আমাকে খুব অনুনয়-বিনয় করে টাকাটা দেয়ার অনুরোধ করলেন। টাকা না দিলে তার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে, পরে চিন্তা করলাম উনি তো আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার ফেরত দিয়েছে, কখনো আটকে রাখে নি। এ কথা চিন্তা করে টাকা দিলাম, টাকা পাওয়ার পর সে বেশ খুশি হয়েছিল এবং আমাকে বলল তুমি আমাকে অনেক বড় উপকার করলে তোমার এই উপকার আমি কোনদিন ভুলবো না।
hands-1319602_960_720.jpg
Source
আমি তাকে বললাম সমস্যা নাই আপনি আপনার সমস্যার সমাধান হলে পরে টাকা দিয়ে দিয়েন। এই কথাই হল আমার ক্ষতির কারণ, এক সপ্তাহ নয়, ১৫ দিন নয় এক মাস পর আমি তাকে টাকার কথা বললাম। টাকা চাওয়ার পর সে নানা ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করলো এবং তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার ব্যাপারে। আমি বললাম কতদিন পরে দিতে পারবেন, তিনি বললেন আরও এক মাস সময় লাগবে। এভাবে চলতে চলতে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেল কিন্তু তার এক মাস আর শেষ হল না।

আমিও আমার টাকা এখন পর্যন্ত পাইনি, মাঝখানে অনেকবার এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক বাক বিতণ্ডা হয়েছে কিন্তু সমাধান হয়নি। টাকা চাইলেই তার একটাই কথা তার কাছে টাকা নাই। তার সাথে আমার সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভাবেই নষ্ট হয়ে গেছে, এমনকি টাকা চাইলে সে উল্টা আমাকে থ্রেট দেয়। আমার নামে বদনাম রটায় আত্মীয়স্বজনের কাছে বিশেষ করে তার ওয়াইফ টাকা চাইতে গেলে মনে হয় আমি যেন টাকা তাদের কাছে থেকে ধার নিয়েছি। আমার কাছে মনে হয় বিরাট এক অন্যায় করে ফেলেছি তাদের উপকার করে, তাইতো উপকার করার পর প্রতিদান হিসেবে সম্পর্ক নষ্ট হল, টাকা পেলাম না, নিজের বদনাম হল।

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, দেখা হবে পরবর্তী সময়ে আমার নতুন লেখা নিয়ে সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিদায় নিচ্ছি, ধন্যবাদ সবাইকে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

মাঝে মাঝে এরকম পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশি পড়ে থাকে। মানুষকে কখনো তার আচরণ পোশাকআশাক দেখে চেনা যায় না দীর্ঘদিন তার সাথে মেলামেশার পর বোঝা যায় যে লোকটি কেমন। বিদেশে যারা দীর্ঘদিন যাবত থাকে তারা দেশে এসে তেমন কোন কঠিন কাজ করতে পারেনা। উনি যেমন টা চায় খুব সহজেই অনেক টাকা ইনকাম করবে কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয়। ওনাকে বিশ্বাস করে আপনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এতদিন যখন টাকা গুলো দেয়নি,আর দেবেও না বলে মনে হয় তাই ঐ টাকার আশা করে ওনার সাথে ঝগড়াবিবাদে জড়াবেন না তাহলে আরও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখুন।

আসলে যারা প্রথম জীবনে অনেক টাকার মুখ দেখে তাদের পরবর্তী জীবনে বেশ ঝামেলার মধ্যে পরেতে হয়। এই লোকটি তার আগের চাল চলন পরিবর্তন করতে পারেনি তাই ধার দেনা বেড়ে গেছে। আর আমার মনে হয় পরবর্তীতে সে খারাপ রাস্তায় চলে গেছে। তবে টাকা পয়সা লেনদেন ভীষণ সাবধানে করতে হবে। এই লেনদেনের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। আপনার জীবনের গল্পটা ভালো ছিল, কিছু জিনিস বোঝার আছে।

এরকম অনেক দেখেছি টাকা ধার নেয়ার পর যখন টাকা দেয়ার সময় হয় তখন দেওয়ার নাম তো দূরের কথা চাইতে গেলেই অন্যরকম ব্যবহার করে। আর তখন মনে হয় যেন তার কাছ থেকে টাকা ধার নিতে যাওয়া হয়েছে। আপনার পুরো লেখাটা পড়ে খুবই খারাপ লেগেছে। এইরকম মানুষ গুলোকে তো উপর থেকে চেনা যায় না কিন্তু পরে বোঝা যায় পরিস্থিতিটা কি রকম হয়।মানুষকে হেনস্তা করতে পারে এরা বিভিন্নভাবে। নিজেদের প্রতি অন্যদের খারাপ মনোভাব তৈরি করে ফেলে।এসব মানুষ সমাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর।