ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা||পর্ব-১||@shy-fox 10% beneficiary

in hive-129948 •  2 years ago 

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। চলে এলাম আবার আপনাদের সামনে আমার নতুন একটি লেখা নিয়ে, আজকে আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি আমার পছন্দের খেলা ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু কথা। আমার জীবনে দেখা প্রতিটি ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে যে উন্মাদনা এবং ফুটবল বিশ্বকাপের প্রতি যে ভালোবাসা সে সম্পর্কে আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।
soccer-186839_960_720 (1).jpg
Source
টেলিভিশনে দেখা আমার প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ সালে,যে সময় ফুটবল দেখা হত ব্যাটারি চালিত সাদাকালো টেলিভিশনে। গ্রামে তখন বিদ্যুতের সচরাচর ব্যবস্থা ছিল না, তখনকার দিনের ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার আনন্দ ছিল অন্যরকম। আমি তখন বেশ ছোট, ছোটবেলায় ফুটবল খেলাটা বেশ উপভোগ করতাম। বিশ্বকাপ কি জিনিস তখন ভালোভাবে বুঝি না, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের মাতামাতি আমাকে বেশ প্রভাবিত করে খেলা দেখার জন্য। ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সকল দলকে তখন চিনতাম না। শুধুমাত্র আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের নাম খুব ভালোভাবে জানতাম লোকমুখে কথা বলার কারণে। পরিচিতজনদের মুখে তখন ম্যারাডোনার নাম শুনতাম,ম্যারাডোনার খেলা সম্পর্কে সবাই কথা বলাবলি করত। এমনভাবে কথা বলত মনে হতো ম্যারাডোনা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র খেলোয়াড় তার মত আর কেউ খেলতে পারে না, সে দলে থাকলে একাই জিতিয়ে দিতে। আমি লোকমুখে শুনতে শুনতে ম্যারাডোনার অনেক বড় ভক্ত হয়ে গেলাম সেই সাথে আর্জেন্টিনা দলেরও।

আমার জীবনে প্রথম টেলিভিশনে দেখা ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ সালে। যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফ্রান্সে যেখানে ফাইনাল খেলা হয়েছিল স্বাগতিক ফ্রান্স এবং ব্রাজিল এর মধ্যে। আমি এই বিশ্বকাপে শুধুমাত্র একটি খেলা টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করেছি আর সেটা হচ্ছে ফাইনাল খেলা। আমার বেশ মনে পড়ে আমার বাবা আমাকে দূর সম্পর্কের এক চাচার বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলেন গভীর রাতে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখার জন্য। চাচাদের বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে পাড়ার সবাই মিলে ব্যাটারিচালিত সাদাকালো টেলিভিশনে খেলা দেখেছিলাম। এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দল বাদ পড়ার পর আর্জেন্টিনার সমর্থকরা ফ্রান্স কে সমর্থন করেছিল। উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনাল খেলায় ব্রাজিল ফ্রান্সের কাছে তিন শূন্য গোলে হেরে যায়। আমি ওই খেলার মাধ্যমে ফ্রান্সের খেলোয়াড় জিনেদিন জিদান এবং ব্রাজিলের খেলোয়াড় রোনালদোকে খুব ভালোভাবে চিনেছিলাম। জিদানের দুর্দান্ত খেলার মাধ্যমে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছিল, খেলার প্রথমার্ধেই কর্নার থেকে জিদানের হেডের মাধ্যমে দুটি গোল হয়ে যায়।
team-807300_960_720.jpg
Source
প্রথমার্ধে ফ্রান্স এর পক্ষে জিদানের দুই গোলে ব্রাজিল টিমের অনেকটা মনোবল হারিয়ে খেলার ছন্দ পতন ঘটে,খেলার ৯৩ মিনিটের মাথায় ফ্রান্স এর পক্ষে তৃতীয় গোল করেন পেটিট। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার পর খেলার ফলাফল দাঁড়ায় ফ্রান্স ফ্রান্স ৩ এবং ব্রাজিল ০ অর্থাৎ প্রথমবারের মতো ফ্রান্স ৩-০ গোলে ব্রাজিলকে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ জয় করে। এ খেলায় জয়ের নায়ক জিদানকে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ ঘোষণা করা হয় এবং ৯৮ বিশ্বকাপের চমৎকার নৈপুণ্যের জন্য গোল্ডেন বল জয় করে ব্রাজিলের খেলোয়াড় রোনালদো।

অনেক পরে এসে জানতে পেরেছি ফিফার প্রতিষ্ঠাতা হল ফ্রান্স, যাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত ফিফা তাদেরই শিরোপা অধরা ছিল প্রায় ৬৮ বছর। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে অধরা বিশ্বকাপে সেই কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নেয়। বিশ্বকাপ জিতে সেবার ফ্রান্সের নায়ক হয়ে যান জিদান। আরও একটা মজার তথ্য হল ২০১৮ সালে ফ্রান্স দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে আর এ দলের কোচ দিদিয়ের ডেসচ্যাম্পস ছিলেন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক।
still-items_KTQZYM7YXM.jpg
Source
বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা শেষে ব্রাজিলের সমর্থকরা মন খারাপ করে পরাজয়ের কারণ হিসেবে নানান ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করতে থাকে। কেউ বলে ফ্রান্স স্বাগতিক দেশ হওয়ার কারণে বেশি সুবিধা পেয়েছে, অনেকেই বলেছে জোর করে বিশ্বকাপ রেখে দিয়েছে আবার অনেকে বলেছে ফ্রান্স ষড়যন্ত্র করে বিশ্বকাপ জিতেছে। ওদিকে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা বেজায় খুশি, ব্রাজিল হারার কারণে তারা বিজয় মিছিল পর্যন্ত বের করে, দেখে মনে হয়েছিল আর্জেন্টিনা দল বিশ্বকাপ জিতে গেছে।

বিশ্বকাপের সময় অনেক সমর্থক তাদের নিজ নিজ দলের নাম রং দিয়ে বিভিন্ন স্থানে লেখে সমর্থন প্রকাশ করতো এবং খেলা নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ দলের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক লক্ষ্য করা যেত। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থকদের মধ্যে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত যা শুধুমাত্র বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে লক্ষ্য করা যেত। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় পাড়া-মহল্লায়, হাট-বাজরে, মাঠে- ঘাট সবখানেই বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনা ছড়াতো।
football-1331838_960_720.jpg
Source

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি,ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার দ্বিতীয় পর্বে নিয়ে আবার আপনাদের সামনে আমার নতুন লেখা নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য।

amarbanglablog.gif


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
১৯৯৮সালের খেলার কথা আমার এখনো মনে আছে। আমাদের বাড়িতে একটি সাদা কালার টেলিভিশন ছিল। সবাই মিলে খেলাটি উপভোগ করব বলে, ওই টেলিভিশনটি আমাদের একটা জায়গা ছিল বড়, সেখানে নিয়ে গেছিলাম এবং সবাই মিলে খেলা উপভোগ করেছিলাম। ফ্রান্সের কাছে ব্রাজিল হেরে যায় আমরা অনেক খুশি ছিলাম। আজ যুক্তির কথা বলতে গেলে, ব্রাজিলের সমর্থক রা বরাবরই অনেক যুক্তি দেখায়, এটা তাদের এক এক রকম চুলকানি বলা যায়। যেহেতু চার বছর পর বিশ্বকাপ খেলা হয় সেহেতু এই মঞ্চের খেলাগুলোর সবাই উপভোগ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে।

ভাইয়া দারুন মন্তব্য করেছেন ব্রাজিলের সাপোর্টার দের নিয়ে, আমিও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আহা ভাই সেই সোনালী দিন গুলো মনে করিয়ে দিলেন।সবাই মিলে খেলা দেখার যে কি মজা তা প্রায় ভুলতেই বসেছি,প্রত্যেকটি গোল হলে সবাই চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ,ফাউল ধরলে রেফারি কে গালি দেওয়া। মজাই আলাদা ছিল।আজ ঘরে ঘরে টিভি হয়েছে,সাদা কালোর পরিবর্তে এসেছে রঙিন টিভি।কিন্তু খেলা দেখার সেই মজা টি হারিয়ে গেছে।ধন্যবাদ ভাই সুন্দর নস্টালজিক একটি পোস্টের জন্য।

আসলে ভাইয়া সেই সোনালী দিনগুলো আমিও দারুণভাবে মিস করি, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

টেলিভিশনে দেখা আমার প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৯৮ সালে

আপনি যখন ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দেখেন তখন আমার জন্মই হয়নি ভাই। আমি ফুটবল খেলা ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেছিলাম ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ দেখে। আমিও ২০১৪ সালে যখন ফুটবল বিশ্বকাপ দেখি তখন সাদাকালো টিভিতে দেখেছিলাম। তারপরের বছর ২০১৮ সালে আমরা আমাদের এক বড় ভাইয়ের উদ্যোগে প্রজেক্টরে খেলা দেখার সুযোগ পাই। আর মাত্র বিশ্বকাপের খেলার ৩৪ দিন বাকি। আবারো অনেক আনন্দে মেতে উঠবো সবাই।

পঞ্চম বারের মত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ আমি দেখেছি, ফুটবল অন্য রকমের এক উন্মাদনা। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

যদিও ১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপটা আমি দেখিনি কারন তখন আমার জন্মই হয়নি হাহাহা। তবে আপনার এই সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম সেই বিশ্বকাপটা অনেক বেশি রোমাঞ্চকর হয়েছিল। ফুটবল খেলা আমার ছোটকাল থেকে অনেক বেশি ভালো লাগে তবে আমি ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থন করি। খুব ছোটবেলা থেকেই একটা নামই শুনে আসছি সেটা হচ্ছে লিওনেল মেসি। মেসির কথা লোকে মুখে শুনতে শুনতে অনেক বড় ফ্যান হয়ে গিয়েছে বর্তমান সময় তো আর্জেন্টিনা ছাড়া কিছুই বুঝিনা। তবে বেশ কয়েক বছর আগেও ফুটবল খেলা দেখার জন্য কত রকম ব্যবস্থা করে রাখতাম আগে থেকেই । যদিও তখন এরকম লোকের হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না সাদাকালো টিভি ছিল। সবাই মিলে উঠানে বসে একত্রে খেলা দেখার মজাই আলাদা। প্রথম পর্বটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো খুব শীঘ্রই দ্বিতীয় পর্ব আমাদের মাঝে নিয়ে আসবেন আশা করি।

আপনি আর্জেন্টিনা সমর্থন করেন জেনে খুব ভালো লাগলো কারণ আমি নিজেও আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। লিওনেল মেসির খেলা ২০০৬ সাল থেকে দেখে আসছি। সত্যি ভাইয়া সোনালী দিনের কথাগুলো মনে পড়লে এখনো ভালো লাগা কাজ করে।

আমি এইযুগের একজন ফুটবল ফ‍্যান। আমার দেখা প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ যেটাতে চ‍্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। ১৯৯৮ সালের ফাইনাল ম‍্যাচের কথা আপনার থেকে শুনে ভালো লাগত। এখনকার মতো তখন এতো ফ‍্যাসিলিটি ছিল না। কারণ সব জায়গাই টিভি ছিল না। আর ১৯৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল নিয়ে বেশ কিছু মতভেদ আছে যাতে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেওয়া আছে। যাক ওসব না বলি।। ভালো লাগল ভাই।।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোষ্টটি পড়ে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।