- ৯ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ২৪সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ২৭ সফর, ১৪৪৪ হিজরি
- শনিবার
- শরৎকাল
সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি, আশা করছি সৃষ্টিকর্তার রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ব্যস্ত জীবনের নানান প্রতিকূলতা একপাশে রেখে আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ এ আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আমার নতুন লেখা নিয়ে। আমাদের জীবনে এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে যা থাকে দূরে সরে থাকতে চাইলেও পারিনা। বন্ধুরা আমি আপনাদের সামনে এমন একটি ঘটনা শেয়ার করব যা হতে পারে অন্যদের জন্য শিক্ষণীয়।
সূত্র
দবির মিয়া ও ফজল শেখ একই গ্রামে বসবাস করে কিন্তু দুইজনের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব রয়েছে । অনেক আগে থেকেই শেখ এবং মিয়া বাড়ির মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলা আছে। মাঝে মধ্যেই জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। ছোটখাটো বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রায় সেই ঝামেলা বড় আকার ধারণ করে, এমনকি মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়ায় । গ্রামের মধ্যে মিয়া এবং শেখ দুটো গোষ্ঠী যেন দা-কুমড়া সম্পর্ক । এমন অবস্থা যে, কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত ছুঁতে চায় না । যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে এক গোষ্ঠীর লোক অন্য গোষ্ঠীকে দাওয়াত করে না।
ফজল শেখের দুই মেয়ে এক ছেলে, বড় মেয়ের দুই বছর আগে বিবাহ হয়েছে এবং ছেলে সৌদি থাকে। ফজল শেখের পরিবার মধ্যবিত্ত, নিজস্ব জমিজমা আছে এবং নিজের জমি নিজেই চাষ করে । ছেলে সৌদি থেকে যে টাকা পাঠায় সেটা দিয়ে প্রতিবছর কিছু জমি জমা কেনার চেষ্টা করে। শেখ গোষ্ঠীর অপর পরিবারের ছেলে আকাশ। দু'বছর গত হয়েছে যার বাবা মারা গিয়েছে, বড় ভাই নিজের কিছু জমি পাশাপাশি অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে। মা বেঁচে আছে কিন্তু খুব কষ্টের মানুষ, স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজে এবং বড় ছেলে মিলে ছোট ছেলে আকাশকে মানুষ করার চেষ্টা করছে লেখাপড়া শিখিয়ে।
সূত্র
ফজল শেখের ছোট মেয়ে সাথী এবং শেখ গোষ্ঠীর ছেলে আকাশ তারা দুজনেই সমবয়সী একসাথে ছোট থেকে বড় হয়েছে। দুজন দুজনার ছোট বেলার খেলার সাথী, এখন দুজনেই দশম শ্রেণীতে একই স্কুলে পড়াশোনা করে। এরই মাঝে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দুজনের ভিতর কিছুটা ভাবের আদান-প্রদানও শুরু হয়েছে। এই আদান-প্রদানের এক পর্যায়ে তারা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছে । ভাবের আদান-প্রদান হত বেশিরভাগ সময় স্কুলে যাওয়া আসার মাঝে। আকাশ ছিল খুব নম্র-ভদ্র ধরনের মানুষ, কারো সাথে জোরে কথা বলত না, বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলত, এক কথায় পাড়ার সবাই জানত ভদ্র ছেলে হিসাবে।
সাথীদের বাড়ির পাশে যে ছোট্ট খেলার মাঠ ছিল তার এক প্রান্ত থেকে আকাশ বিকাল বেলা তাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতো প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য। সাথী সকল কাজ সেরে বিকালের আগে বাড়ির কোণে এসে আকাশের জন্য অপেক্ষা করতো, দূর থেকেই দুজন দুজন কে দেখত । আকাশদের পরিবারের সাথে সাথীদের পরিবারের একটা ভালো সম্পর্ক ছিল, প্রথমত তারা একই গোষ্ঠীর আর সাথীদের কিছু জমি আকাশের ভাই চাষাবাদ করত বাৎসরিক চুক্তির মাধ্যমে। সেই সুবাদে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে দুজন দুজনকে একটু দেখার জন্য হলেও একজন অন্যজনের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করত। এই সম্পর্ক কিছুদিন চলমান থাকার পর দুজন স্কুল থেকে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যায় । পরীক্ষার বাকি মাত্র তিন মাস, স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনার চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। দুজন দুজনের সাথে দেখা ওইভাবে আর হয় না, মাঝেমধ্যে ফোনে আলাপ হয় তাও খুব অল্প সময়ের জন্য কারণ, সাথীর কাছে নিজস্ব কোন মোবাইল ফোন ছিল না।
সময়টা ছিল শীতকাল মাঠাভরা চৈতালি ফসল, শীতকালে কৃষকেরা মটরশুঁটির চাষ করে। সাথীদের জমিতেও তার বাবা মটরশুঁটির চাষ করেছে। ফজল শেখের কিছু জমি ছিল হালট এর পাশে যেখানে মটরশুঁটি ছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার ফজল শেখ যথারীতি প্রতিদিনের ন্যায় তার জমি দেখার উদ্দেশ্যে চাদর গায়ে বিকালবেলা মাঠের দিকে রওনা হল, হঠাৎ তিনি দূর থেকে দেখতে পেলেন একটি গরু তার জমিতে ফসল খাচ্ছে । তাড়াহুড়া করে কাছে গিয়ে দেখল সেটা দবির মিয়ার গরু, তা দেখে তার চক্ষু চড়ক গাছে উঠে গেল, শরীরটা রেগে গদগদ করছে । মনে মনে ভাবল আজ কঠিন এক শিক্ষা দেব মিয়া বাড়ির লোকজনকে, যেই কথা সেই কাজ গরুর রশি ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসলো । বাড়িতে আসার সময় চিৎকার করে বলছিল, এভাবে চলতে দেয়া যায় না একের পর এক শেখ গোষ্ঠীর উপরে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছে মিয়া বাড়ির মানুষ।
সূত্র
অপরদিকে খবর ছড়িয়ে গেছে মিয়া গোষ্ঠীর গরু ফজল শেখ বিনা কারণে ধরে নিয়ে গেছে। মিয়া বাড়ির লোকজনও তেলেবেগুনে আগুন শেখ গোষ্ঠীকে এইবার শিক্ষা দিতেই হবে। মিয়া গুষ্টির কিছু রক্ত গরম ছেলে মাঠ থেকে শেখ গোষ্ঠীর কিছু গরু বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনার এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরি হয়, যাতে ফজল শেখ এর ছোট ভাই অর্থাৎ সাথীর ছোট চাচা আসাদ শেখ আঘাতপ্রাপ্ত হয় দবির মিয়ার লোক দ্বারা। ওই দিন রাতেই গ্রামের মাতবর হুমায়ুন মোল্লা দুই পক্ষকে ডেকে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয় এবং উভয় পক্ষ তাদের গরু গুলোকে ফিরিয়ে দেয়। উক্ত ঘটনা যদিও গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে মীমাংসিত হয়ে যায় কিন্তু সাথীর ছোট চাচা আসাদ শেখ দবির মিয়ার লোক দ্বারা গায় যে আঘাত পেয়েছে তা আর ভুলতে পারে না । তার ভিতরে প্রতিশোধ নেয়ার রাগ এবং ক্ষোভ চরমভাবে জন্ম নেয়, সে সুযোগ খুঁজতে থাকে। ওদিকে সাথী এবং আকাশের প্রেম আস্তে আস্তে গভীর হচ্ছে। যখন তাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি তখন তাদের জীবনে ঘটে যায় অন্যরকম এক ঘটনা যা তারা কোনোদিনই প্রত্যাশা করেনি।
জানুয়ারির শেষের দিকে প্রচণ্ড শীত এবং কুয়াশা আচ্ছন্ন পরিবেশ। তেমনি একদিন দবির মিয়া ও তার ছোট ভাই দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে রাত দশটার দিকে বাড়িতে ফিরছিল । রাত একটু বেশি হওয়ার কারণে স্বল্প দূরত্বের রাস্তা ফজল শেখ এর বাড়ির পাশ দিয়ে মেঠোপথ হয়ে বাড়ির দিকে রওনা হল। এর আগে ফজল শেখ এর ছোট ভাই আসাদ শেখ খবর পেয়েছিল, দবির মিয়া তাদের সাথে বড় ধরনের বিবাদে জড়াবে এবং মামলায় ফাঁসাবে সে উদ্দেশ্যে দুঃসম্পর্কের আত্মীয়র সাথে পরামর্শ করে রাতের বেলায় বাড়িতে ফিরবে । যেহেতু দবির মিয়ার উপর আসাদ শেখের আগে থেকেই রাগ ছিল এবং বর্তমান ঘটনার জন্য সে উচিত শিক্ষা দেবে বলে শেখ বাড়ির আরও কয়েকজনকে একত্রিত করে প্রস্তুত ছিল। উদ্দেশ্য ছিল দবির মিয়ারা যখন মেঠো পথ দিয়ে যাবে তাদেরকে ফসল চোর সম্বন্ধ করে পিছন থেকে আঘাত করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসাদ শেখ দবির মিয়া এবং তার ছোট ভাইকে লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করল । দবির মিয়া ও তার ভাইয়ের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে মিয়া বাড়ি থেকে লোকজন ছুটে আসলো লাঠিসোটা নিয়ে এবং আসাদ শেখ ও তার দলবলকে পিছন থেকে ধাওয়া করলো।
ঘটনা মারামারির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিল না কিন্তু ঘটনা ঘটেছিল অন্যটি যা পরবর্তী পর্বে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
