- ২২ আশ্বিন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- ৭ অক্টোবর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
- ১০ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি
- শুক্রবার
- শরৎকাল
আমার বাংলা ব্লগের সকলের প্রতি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের লেখা, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব অপরাধী জীবন গল্পের তৃতীয় পর্ব। আমাদের বাস্তব জীবনে এমন অনেক অপরাধমূলক ঘটনা আছে যা থেকে মানুষ দূরে সরে থাকতে চাইলেও ভাগ্য তাকে অপরাধী সাজিয়ে দেয়, তেমনই বাস্তব জীবনের ঘটনা নিয়ে লেখা অপরাধী জীবন আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
Source
আকাশ তখনো বুঝতে পারেনি কি ঘটতে যাচ্ছে তার জীবনে, সে চাইলেই তখন সব ঘটনা খুলে বলতে পারতো, যে মারামারি সংঘটিত হয়েছে তার সাথে সে জড়িত ছিল না, সে শুধুমাত্র এখানে থাকার জন্য এসেছে তার বাড়িও এটা না। কিন্তু সে সেটি বলেনি। এখানে কয়েকটি বিষয় তার চিন্তায় ছিল। প্রথমত সে অপরাধী না, দ্বিতীয়ত সে দেখেছে শেখ বংশের লোকেরা মার খেয়েছে এবং তাদের মাথা ফেটেছে, তৃতীয়ত তার ভালোবাসার মানুষ সাথীকে দেখাতে চেয়েছিল তার জন্য সে সবকিছু করতে পারে।
পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে থানা হাজতে রাখা হল ওই রাতের জন্য। এবং পুলিশ বারবার বলার চেষ্টা করছিল যে এখন মজা টের পাবি কত ধানে কত চাল। কিন্তু আকাশ পুলিশের কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিল কারণ আসল ঘটনা কি সে তখনো জানতো না। থানা হাজতে থাকার অভিজ্ঞতা তার জীবনে এই প্রথম, নোংরা পরিবেশে সে নিরুপায় হয়ে মশার কামড় খেয়ে রাত কাটিয়ে দিল,আর মনে মনে পুলিশের উপরে রাগ হচ্ছিল কারণ তাকে বিনা কারণে ধরে আনা হয়েছে। সকালবেলা হাজতে দেখা হল আকাশের পরিচিত এক চাচীর সাথে এখানে তার ছেলেকেও ধরে আনা হয়েছে রাতের বেলায়। তার মুখ থেকে এই প্রথম সে জানতে পারল মিয়া বংশের একজন মারা গেছে মারামারির কারণে, তখন আকাশের মাথায় নানান চিন্তা ভর করতে লাগলো, তার সব চিন্তা যেন মুহূর্তের মধ্যে উলটপালট হয়ে গেল।
Source
তার কিছুক্ষণ পর আকাশ শুনতে পারল একজন পুলিশ অপরজন পুলিশের সাথে বলাবলি করছে মোট দুইজন মার্ডার হয়েছে। সেই মুহূর্তে আকাশের মনে নানান চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেল, তাহলে কি আমি মার্ডার কেস এর জন্য হাজতে এসেছি, তাহলে কি আমাকে কোর্টে চালান করে দেবে, তাহলে কি আমার জেল খাটতে হবে, তাহলে কি আমার ফাঁসি হবে। আকাশকে হাজত থেকে কিছু খাবার দেয়া হল কিন্তু তার গলা দিয়ে তা নামছে না। কিছুক্ষণ পর আকাশের মা আসলো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তার সাথে দেখা করার জন্য, মা ছেলে দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। কি হতে কি হয়ে যাচ্ছে তারা কিছুই বুঝতে পারছে না, মা বলছে আমার উচিত হয়নি তোকে রাত্রে ওই বাড়ি থাকতে বলার জন্য সব ভুল আমি করেছি। আকাশ তার মাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলো, দেখো মা আমার কিচ্ছু হবে না, আমি তো কারো সাথে মারামারি করিনি বা ওই সময় ছিলাম না। আকাশের মা বিদায় হয়ে যাওয়ার পর সে পুলিশদের বলাবলি করতে শুনেছে, মার্ডার দুটো নয় তিনটে হয়েছে। এই কথাগুলো শোনার পর তার মন আরও ভয় পেয়ে উঠলো।
বিকালের দিকে পুলিশের ভ্যানে আকাশ এবং আরও কয়েকজন আসামি সহ কোর্টে চালান করে দেয়া হল। যখন পুলিশের ভ্যান তাদেরকে নিয়ে যাচ্ছিল অনেক পরিচিত মুখ আকাশের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখছিল, আকাশ প্রচণ্ড লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। কেউ কেউ এটাও বলছে এত অল্প বয়সে মানুষ খুন করো এইবার বুঝবা জেলের ভাতের স্বাদ কেমন। আকাশ এই কথাগুলো আর সইতে পারছিলো না তার দু চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে সে ভাবছে কি করলাম আমি অপরাধ না করেও আজ অপরাধী।
Source
সেসময় আকাশের অনেক সহপাঠীরাও তাকে দেখছে কিন্তু কারো চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যে সে হারিয়ে ফেলেছে, সে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল না। থানা-হাজত থেকে তাকে নেয়া হল জেলা হাজতে, রাতের বেলায় ওখানে থাকতে দেয়া হল। যেখানে তাকে থাকতে দেয়া হল সেখানে পাঁচজনের থাকার রুমে প্রায় বিশ জনকে রাখা হল। যেখানে প্রচণ্ড পরিমাণ দুর্গন্ধ আকাশের নাকে আসছিল মনে হচ্ছে যে কোন সময় সে বমি করে দেবে। রাতের খাবার হিসাবে তাকে দেয়া হল দুটো রুটি আর ডাল, এ রুটি সে জীবনে কোনদিন দেখনি খাওয়া তো দূরের কথা, মনে হচ্ছিল কাঁচা আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে নিয়ে এসেছে এবং পচা ডাল, প্রচণ্ড ক্ষুধায় সেগুলো তার কাছে অমৃতের মত লাগছে।
শোবার সময় আরও বাজে অভিজ্ঞতা, শরীরের একটা অংশ একদিকে শোবার ব্যবস্থা আছে কোনভাবে আরেকদিকে শোয়া যাবেনা কারণ একজনের সাথে আরেকজনের শরীর লাগিয়ে গাদাগাদি করে শুতে হবে। সাথে তাকে একটা চটের মতো কম্বল দেয়া হয়েছিল যেটা গায়ে লাগানোর সাথে সাথে প্রচণ্ড চুলকানি শুরু হয়ে গেল। সে মুহূর্তে ঘুমানো তো দূরের কথা সে উঠে বসে সময় কাটানোর চেষ্টা করছিল। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পাশে থাকা একজন আসামির সাথে তার পরিচয় হল, আকাশ লোকটির সাথে পরিচিত হয়ে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বর্ণনা দিয়ে হালকা হওয়ার চেষ্টা করছিল। লোকটির নাম ছিল মানিক, মানিক আকাশকে পরামর্শ দিল কম্বলটি তার গায়ে না লাগানোর জন্য কারণ সেটাতে প্রচুর পরিমাণ ছারপোকা রয়েছে। হাজতের পরিস্থিতি দেখে আকাশের বারবার মন চাচ্ছিল চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে কিন্তু চোখ দিয়ে শুধু নীরবে পানি ঝরছে।
Source
কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে মানিক বলেন তার কাছে মোবাইল ফোন আছে আকাশ চাইলে পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে। আকাশ সে তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চায়, আকাশ যখন তার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে তখন কথা বলার থেকে কান্নার শব্দ বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আকাশের ভাই ফোনের ওপাশ থেকে ছোট ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছে, তুমি চিন্তা করো না তোমার জন্য আমরা ভালো উকিলের ব্যবস্থা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে মুক্ত করে আনবো ইনশাল্লাহ, মায়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বেশি সময় সে কথা বলতে পারল না শুধু বড় ভাই কে বলেছিল মাকে দেখে রেখো।
বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, অপরাধী জীবন গল্পের বাকি অংশ চতুর্থ পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
