প্রিয় বন্ধুরা, আমার বাংলা-ব্লগের সাথে আশা করি ভালো সময় অতিবাহিত করছ, আমিও তোমাদের ভালোবাসাতে অনেক অনেক ভালো আছি। আজ আবার আপনাদের সামনে এসেছি আমার নতুন লেখা নিয়ে। আজ আমি শেয়ার করতে যাচ্ছি ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা শেষ পর্ব নিয়ে। যে লেখায় আমার জীবনে দেখা প্রতিটি বিশ্বকাপের মুহূর্তগুলো সম্পর্কে এবং ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমার আবেগ এবং অনুভূতি গুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আমার লেখা পড়ে আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
Source
গত পর্বে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে আমার আবেগ অনুভূতির কথা। এই পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ২০১৮ সালে আমার দেখা ফুটবল বিশ্বকাপের বিস্তারিত বর্ণনা। কর্মজীবনের প্রবেশের পর প্রথম বিশ্বকাপ হল ২০১৮ সালে আমার দেখা ফুটবল বিশ্বকাপ। যে ইভেন্টগুলো আমি উপভোগ করেছি কাজের ফাঁকে ফাঁকে। সবগুলো ম্যাচ আমি দেখতে পারিনি কিন্তু আমার প্রিয় দলের খেলা গুলো আমি কখনোই মিস করিনি। ২০১৮ বিশ্বকাপ ছিল ফিফার আয়োজিত ২১ তম আসর যা পূর্ব ইউরোপের দেশ রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বরাবরের মতো ৩২ দলের অংশগ্রহণে ১৪ই জুন হতে ১৫ই জুলাই ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যস্ততার জন্য এই বিশ্বকাপের প্রায় সকল খেলা বাসায় বসে উপভোগ করতে হয়েছে আমাকে।
৩২টি দল আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রুপ পর্বের খেলা শুরু করে, এই বিশ্বকাপে আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা গ্রুপ ডি তে অবস্থান করে। গ্রুপ ডি তে আর্জেন্টিনা ছাড়াও অন্য দলগুলো হল ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও আইসল্যান্ড। ২০১৪ সালের আর্জেন্টিনা দল যেভাবে দাপটের সাথে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পেরেছিল সে তুলনায় ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ এর শুরুটা আর্জেন্টিনাকে ভালো হয়নি। আমার প্রিয় এই দল গ্রুপ পর্বের তিনটি খেলার মধ্যে একটিতে জিতেছিল, একটিতে হেরেছিল এবং অপরটিতে ড্র করেছিল। মেসির নেতৃত্বে এই দলটি ৯ পয়েন্ট এর মধ্যে মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব পার হয়ে নক আউট পর্বে উন্নীত হয়।
Source
গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় নক আউট পর্ব, যেখানে আটটি গ্রুপ থেকে প্রতি গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল সুযোগ পায় এই পর্ব খেলার। নকআউট পর্বটি মূলত ১৬ দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যেখানে খেলায় হারলে বিশ্বকাপ থেকে সে দল ছিটকে পড়ে আর বিজয়ী দল কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য উন্নত হয়। নকআউট পর্বে আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনার সাথে খেলা হয় ফ্রান্সের, সে বারের ফ্রান্স দলটি ছিল এক ঝাঁক তরুণ এবং মেধাবী খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল। যে দলটি শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সকে এনে দেয় ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের শিরোপা। ফ্রান্সের আর্জেন্টিনার মধ্যকার খেলায় আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা হেরে যায় এবং বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে। ফ্রান্সের কাছে তারা ৪-২ গোলের ব্যবধানে হেরে যায়। নক আউট পর্ব থেকে আর্জেন্টিনার এমন বিদায় আমি সহ এ দেশের লাখো সমর্থক মেনে নিতে পারিনি। নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর এদেশের প্রায় অর্ধেক ফুটবল-প্রেমীর ফুটবল উন্মাদনায় ভাটা পড়ে। আমি কষ্টে এবং দুঃখে বাকি খেলাগুলো সে ভাবে দেখিনি মনোযোগ দিয়ে।
নকআউট পর্বের বিজয়ী ৮ দল নির্বাচিত হয় কোয়াটার ফাইনাল খেলার জন্য। এই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব ছিল জার্মানির জন্য বিভীষিকাময় ২০১৪ বিশ্বকাপের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল ২০১৮ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায় যা সবাইকে অবাক করে দেয়। জার্মানির বাদ পড়ার জন্য আমি একটু বেশি খুশি হয়েছিলাম কারণ তারা গত বিশ্বকাপে আমার প্রিয় দলকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। নকআউট পর্বে উরুগুয়ে বনাম ফ্রান্স, বেলজিয়াম বনাম ব্রাজিল, রাশিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া এবং সুইডেন বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। নকআউট পর্ব শেষে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং ইংল্যান্ড বিজয়ী হিসেবে সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। কোয়াটার ফাইনালের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল ব্রাজিলের বাদপড়া। আর্জেন্টিনা সেকেন্ড রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার পর ব্রাজিলের সমর্থকরা আর্জেন্টিনার সমর্থকদের দারুণভাবে সমালোচনা করেছিল এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল বাদ পরার পর আর্জেন্টিনার দর্শক সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল। ব্রাজিলের বাদ পড়ার পর আমাদের দেশের ফুটবলের উন্মাদনা একদম শান্ত হয়ে গিয়েছিল।
Source
সেমিফাইনাল পর্ব ১০ই জুলাই ফ্রান্স বেলজিয়াম এর মুখোমুখি হয় এবং ১১ই জুলাই ক্রোয়েশিয়া ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়। ফ্রান্স বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে পরাজিত করে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং ক্রোয়েশিয়া ইংল্যান্ডকে পরাজিত ২-১ গোলে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ক্রোশিয়া ছিল ১৮ বিশ্বকাপের একটি চমক, কেউ আগে থেকে ভাবতে পারেনি দলটি ফাইনালে খেলবে। আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের বিদায়ের পর আমাদের দেশে এবারের বিশ্বকাপে উন্মাদনা অনেকটাই ভাটা পড়ে যায়। তাই ফাইনাল নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি দেখা যায়নি সমর্থকদের মধ্যে।
Source
২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ ১৫ই জুলাই তারিখে রাশিয়ার মস্কো শহরের লুঝনিকি স্টেডিয়াম এ অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া পরস্পরের মুখোমুখি হয়। এ খেলায় ফ্রান্স ক্রোয়েশিয়া কে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করে। ফ্রান্স এর আগে ১৯৯৮ সালে জিদানের নৈপুণ্যে প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। যদিও ২০০৬ সালে আবার জিদানের নেতৃত্বে ফ্রান্স ফাইনালে উঠে কিন্তু সেবার তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। আর ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে রানার্স আপ হয়। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচটি আমি উপভোগ করেছি এ খেলায় এমবাপে, গ্রিজম্যান এবং পল পগবার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ফ্রান্স দলের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কারিগর আরেকজনের কথা না বললেই নয় তিনি হলেন ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের ডেসচ্যাম্পস। যিনি ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স দলের অধিনায়ক হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। আবার ২০১৮ সালে ২০ বছর পর ফ্রান্স দলের কোচ হিসেবে ফ্রান্সকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করালেন, ফ্রান্স তার অবদান কখনো ভুলবে না।
বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি, পরবর্তী সময় আমার নতুন কোন লেখা নিয়ে তোমাদের সামনে হাজির হব। সে পর্যন্ত সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি, অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে ধৈর্য নিয়ে আমার পোস্ট পড়ার জন্য।
আপনি তো দেখি ফুটবলের অনেক বিষয় সম্পর্কে খুবই অবগত রয়েছেন। আসলে আমি সময় পেলে ফুটবল খেলা দেখি তবে এতগুলো বিষয় অবগত নয়। আপনার পোস্ট টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা শেষ পর্ব চমৎকারভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। পোস্টটির মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit