শহুরে বৈশাখী মেলার গল্প || ফটোগ্রাফি|| @fazlyrabbi

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার অতুল প্রসাদ সেনের অমুল্য কবিতাংশের দুটি লাইন দিয়ে শুরু করতে চাই।

মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।

এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় অবস্থানরত আমার বাংলা ব্লগের সকল ভাই বোনদের প্রতি ভালোবাসা এবং বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি আমার একটি নতুন অভিজ্ঞতার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

আজ ২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ রোজ সোমবার।আমার বাংলা ব্লগের নতুন সদস্য হবার কারনে সঠিক সময়মতো এই বঙ্গাব্দে বৈশাখীর গল্প শেয়ার করা হয়ে উঠে নি।যাইহোক, একটু ভিন্নতার স্বাদ পেতে গিয়েছিলাম আমার শহরের একটি বৈশাখী মেলাতে। গ্রামের আনন্দমুখর বৈশাখী মেলার কথা অনেক শুনেছেন।আসুন কর্মব্যস্ত নগরীর আনন্দমুখর বৈশাখী মেলা ১৪২৯ এরগল্প আজ আপনাদের শোনায়।

বৈশাখের ইতিহাস

মূলত পনের শতকের শুরুর দিকে বাংলা সনের শুরু হয় এবং পরবর্তীতে সেটা বঙ্গাব্দ হিসেবে নামকরণ হয়। কৃষিভিত্তিক বাঙালী জাতির সাথেই শুধু নববর্ষের সম্পর্ক নয় বরং এটার সাথে মিশে আছে রাজনৈতিক সুসম্পর্কের বিস্তর এক ইতিহাস। প্রায় ১৯৬০ সালের দিকে রমনার বটমূলে ছায়ানটের মাধ্যমে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান কার্যকর করা হয় যেটার ধারাবাহিকতার বহিঃপ্রকাশ আমাদের বর্তমানের পহেলা বৈশাখ।

আমার যাত্রা

পহেলা বৈশাখ, ১৪২৯ রোজ বৃহস্পতিবার বিকেলবেলা।মনের কোণে উঁকি দিলো বৈশাখের আনন্দকে রঙ দেয়ার জন্য।যেই ভাবা সেই কাজ।চলে গেলাম আমার বাড়ির নিকটবর্তী শহর ঢাকার অদূরে অবস্থিত কদমতলী থানার অন্তর্গত শ্যামপুরে।
IMG_20220414_172401.jpg
করনো মহামারির কারনে গত দুই বছর কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার কোভিড পরিস্থিতি একটু শিথিল হবার কারনে ছিলো উপচে পরা মানুষের ভীর।তবে যাইহোক, ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখার সাধ্য কার আছে।আমিও পৌছে গেলাম মেলাতে যথাসময়ে।বাঙালি বলে কথা!

মেলার অবস্থান

এলাকা থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে নয় কিংবা কোনো বিরাট ফাকা ময়দানে নয় বরং এলাকার প্রাণকেন্দ্রে জাকজমক ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখের মেলা
IMG_20220414_172634.jpg
রাস্তার দুপাশে উঁচু দালানের সারি আর মাঝখানের রাস্তায় বসেছিলো বৈশাখী মেলা।

রকমারি খাবার

বাঙালি সভ্যতার সকল রুচিশীল খাবারের দোকান বসেছিলো মেলায়।
IMG_20220414_172746.jpg
রকমারি বিভিন্ন প্রকারের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন মুড়ি-মুড়কি, বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু চানাচুর,টোস্ট, কটকটি,গুড়ের জিলাপি, চিনির জিলাপি নানাবিধ। সবগুলো না হলেও কিছু কিছু খাবার কিনেছিলাম নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য যাতে কিছুটা হলেও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

অন্যান্য

গ্রামীণ জনপদের শিশুদের এবং শহুরে শিশুদের শিশুসুলভ মিলবন্ধন গড়ে দিয়েছিল মেলায় আসা বিভিন্ন রকমের খেলনার দোকানগুলো।বাহারি ডিজাইনের খেলনা স্থান পেয়েছিলো মেলা প্রাঙ্গনে যেখানে শিশুদের বিচরন ছিলো লক্ষনীয়।
IMG_20220414_172600.jpg
প্লাস্টিকের এবং মাটির সমন্বয়ে তৈরী টমটম,হরেক রকম গাড়ি, কাগজের ফুল,বেলুন ইত্যাদির সমারহ ছিলো দোকানগুলোতে।

Screenshot_20220516_130257.png
এছাড়াও মাটির সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন প্রকারের ঐতিহ্যবাহী খেলনা জায়গা পেয়েছিলো মেলায়।বিভিন্ন ধরনের মাটির তৈরী জন্তু যেমন হাতি,ঘোরা,বাঘ,সিংহ জিরাফ,হরিণ ইত্যাদি মুল আকর্ষণ ছিলো।এছাড়াও ছিলো প্লাস্টিকের হরেক রকম বন্দুক,কাঁসার খেলনা, থালা-বাসন, রং-বেরঙের পুঁথির মালা এবং বিভিন্ন ধরনের পুতল।
IMG_20220414_172835.jpg
রঙ-বেরঙের হাতপাখা এবং নিত্যদিনের ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীর দোকানের ভীড় সবচেয়ে বেশি।
IMG_20220414_172810.jpg
স্বাদের ভিন্নতা পেয়েছিলাম শিশুদের পাগড়ীর দোকানে।যেখানে রঙিন পাগড়ীগুলো শিশুরা মাথায় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাশির আওয়াজ তুলে শব্দ করতো আর আনন্দ করতো।

সর্বোপরি দিনটি ছিলো উপভোগ্য এবং আনন্দের।শহর গ্রাম বিষয় নয় বিষয় হলো ঐতিহ্যের যেটা সবজায়গায় সবখানে সমানভাবে বিচরণ করে। পহেলা বৈশাখের শহুরে মেলার দিনটা ছিলো আনন্দের এবং চমকপ্রদ যেটা ভাষা এবং লেখনীতে প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য।শত ব্যস্ততা,শত ঝঞ্জাট যেন বাধা হয়ে না দাড়াতে পারে এই পহেলা বৈশাখের মিলনমেলায়। সবাই আমার জন্য দোয়া রাখবেন যেন আরো বেশি করে বাঙালি ঐতিহ্যকে বুকে লালন করতে পারি এবং আমরা বাংলা ব্লগের প্রিয় ভাই-বোনদের মাঝে শেয়ার করতে পারি।

লোকেশনঃ শ্যামপুর,বালুর মাঠ
ডিভাইসঃ vivo1609

ধন্যবাদ সবাইকে
@fazlyrabbi

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

বৈশাখী মেলার মুহূর্ত গুলো খুবই চমৎকার ছিল ভাই ।মেলায় গেলে সব সময় অনেক ভালো লাগে আপনার মুহূর্তগুলো অনেক সুন্দর কাটিয়েছেন এবং তার ভিতর থেকে আপনার অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য আপনার প্রতি রইল শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

হ্যা ভাইয়্যা আসলেই মেলায় ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা অনেক বেশি আনন্দের ছিলো।সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো ভালো বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আশা রাখি।দোয়া রাখবেন।

আপনি খুবই চমৎকার ভাবে শহরের বৈশাখী মেলার অনেক চমৎকার একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যদিও বৈশাখী মেলায় এবার তেমন যাওয়া হয়নি। তবে আপনার এই বৈশাখী মেলার গল্প পড়ে বুঝতে পারলাম শহরে আরো জাঁকজমকভাবে বৈশাখী মেলা পালন করা হয়। কখনো সময় হলে অবশ্যই দেখবো ।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

আসলেই শহর কিংবা গ্রাম যেখানেই হোক বৈশাখের আমেজ সবখানে সমান।সময় করে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসবেন। ভালো লাগবে আশা রাখি।সবসময় ভালো থাকবেন দোয়া করি।

শহরে বৈশাখী মেলা খুব সুন্দর ভাইয়া তা দেখে বোঝা যাচ্ছে। খুব চমৎকার একটি মেলার আয়োজন ছিল। আপনি খুব ভালো করে মেলাটি উদযাপন করেছেন ভাইয়া। মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র উঠেছে ।বাচ্চাদের খেলার বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিল। মাটির তৈরি খেলনা গুলো আমার বেশ ভালো লেগেছিল। হাতপাখার গুলো কারু কাজ খুব সুন্দর ছিল ভাইয়া। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া শহরের মেলার উৎসবের সুন্দর মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল

মেলার আয়োজন ছিলো ব্যাপক এবং বিস্তৃত আপু।ভেবেছিলাম অল্প সময় মেলাতে ঘুরবো।কিন্তু যতই দেখছিলাম শুধু ভালোই লাগছিলো।মেলা প্রাঙ্গণ সহ মেলার পরিবেশ ছিলো বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। অনেক খেলনা এবং ব্যাবহারের জিনিসপত্র উঠেছিলো মেলায়।এরপর সপরিবারে আমার এলাকায় আসবেন মেলা উৎযাপন করতে।দাওয়াত রইলো।দোয়া করি সবসময় সুস্থ এবং ভালো থাকুন।

আপনার শেয়ার করা বৈশাখী মেলার গল্প আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো।। বিশেষ করে খুবই সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে ।।শুভকামনা রইল আপনার জন্য।।

হ্যা ভাইয়্যা আমারো ভীষণ ভালো লেগেছিলো মেলায় ঘুরতে। ছবি তুলতে বরাবরই আমার ভালো লাগে।অনেক ছবি তুলেছিলাম যার কিছুটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। এভাবে অনুপ্রেরণা পেলে সামনের দিনগুলো আরো সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফ আপনাদের উপহার দিবো ইনশাআল্লাহ।

আপনি অনেক সুন্দর ভাবে শহরের বৈশাখী মেলার ফটোগ্রাফি করেছেন ভাইয়া। এছাড়াও আপনি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমাদের এদিকে কিছুদিন আগে বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে তবে এখনো যাওয়া হয়নি চেষ্টা করছি অতি শীঘ্রই যাওয়ার জন্য। অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার বৈশাখী মেলার পুরো ফটোগ্রাফি দেখে।

জ্বী আপু শহুরে বৈশাখী মেলার আমেজ টা একটু অন্যরকম মজার।যতটুকু সময় মেলাতে উপস্থিত ছিলাম চেষ্টা করেছি উপভোগ করেছি।আপনার এলাকায় যেহেতু মেলা শুরু হয়েছে সেহেতু মিস করবেন না।আপনার সময় উপভোগ্য এবং আনন্দদায়ক হবেই হবে।ভালো থাকবেন সবসময়।

বৈশাখী মেলার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। আপনি খুবই সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। সত্যিই দেখে খুবই ভাল লেগেছে, শুভকামনা রইল।

মেলা প্রাঙ্গন ছিলো বিশাল।হাতে আরো বেশি সময় নিয়ে গেলে আরো বেশি এবং চমকপ্রদ ফটোগ্রাফ উপহার দিতে পারতাম আপনাদের।পরবর্তীতে আরো ভালো কাজ করতে চাই।দোয়া করবেন আমার জন্য।

ওয়াও! আপনি তো চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সাধারণত মেলা আমরা গ্রামে দেখতে পাই কিন্তু আপনি শহরের বৈশাখী মেলা এত চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন দেখে তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তবে আপনার আজকের এই বৈশাখী মেলা পোস্টে অনেক কিছু জানতে পারলাম এটা আমার কাছে বেশী চমৎকার লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এত সুন্দর ভাবে বৈশাখী মেলার ফটোগ্রাফি এবং সেই সাথে আপনার আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

জ্বী আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি যাতে মেলার সমস্তটা আমার বাংলা ব্লগের ভাই বোন দের সাথে শেয়ার করতে পারি।গ্রামের মেলাগুলো বিস্তর পরিসরে হয় মূলত। কিন্তু এই ব্যস্ত নগরীর মানুষগুলোও যে বৈশাখ কে বরণ করে নিতে এতো উৎসুক সেটা মেলাতে না গেলে বুঝতাম না।আনন্দ, উৎসব,গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পণ্য কোনো কিছুর-ই কমতি ছিলোনা।শিশু কিশোরদের বিচরনে মুখর ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ। রঙ বেরঙের বেলুন আর হরেক রকম বাঁশির শব্দ আপনাকে পুলকিত করবে।আপনাদের দোয়া এবং অনুপ্রেরণা পাইলে সামনের দিনগুলোতে আরো সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ভালো থাকবেন।আপনার সুস্থতা কামনা করি।

আপনার লেখার ধরনটা আমার কাছে ভালো লেগেছে । বর্ণনা ছিল শ্রুতিমধুর । বেশ সুন্দর করে মেলার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন । এই ধরনের মেলায় ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগে । ধন্যবাদ আপনাকে ।

আপনার মন্তব্য সত্যিই অভিভূত করলো আমাকে।যাদের কাছে থেকে শিখতে পেরেছি তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্য সামনে চলার পথের অনুঘটক।দোয়া রাখবেন যেন সামনের দিনগুলোতে আর ভালো ভালো অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে নিয়ে আসতে পারি।আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

ভাই আপনার ফটোগ্রাফিগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো আমিও যেনো মেলার মধ্যে ঢুকে গেছি। প্রতিটি ফটোগ্রাফ ছিলো খুবই সুন্দর। আশা করি সামনে আরো এমন ইন্টারেস্টিং পোস্ট আমাদের উপহার দিবেন।

ফটোগ্রাফি আমার নেশার মতো।সেই নেশার মায়াজালে আপনাকে আবদ্ধ করতে পেরেছি ভেবে ভালো লাগছে।মেলাতে কাটানো সময়গুলো ছবির চেয়েও আনন্দের এবং মনোমুগ্ধকর। দাওয়াত রইলো পরবর্তী মেলার জন্য।ভালো থাকবেন সবসময়।