বাংলাদেশের মৎস্য পরিচিতি (দ্বিতীয় পর্ব)। 10% shy-fox.

in hive-129948 •  2 years ago 
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। বাংলাদেশের মৎস্য পরিচিতির দ্বিতীয় পর্ব নিয়ম হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সামনে। মৎস সম্পদে ভরপুর এই দেশ এখন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে প্রজাতির মাছই বিলুপ্ত হয়ে গেছে আবার কিছু বিলুপ্তির পথে। আমরা অনেকেই বিভিন্ন মাছ খেয়ে থাকলেও মাছ চিনি না। যাই হোক যাদের পক্ষে বাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না বা মাছের প্রজাতি সম্পর্কেও ধারণা কম তাদের জন্যই আমার আজকের এই প্রয়াস। চেষ্টা করব ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের কমন কিছু মাছের উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরার।

৮। কৈ

20230216_105058.jpg

কই মাছের প্রাণ, যার অর্থ সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। উদাহরণ দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় এই কথাটি ব্যবহার করি। এটা এমন একটা মাছ যা সহজে মরে না। বাংলাদেশের আদি মাছ গুলোর মধ্যে কৈ একটি। তবে বর্তমানে ভিয়েতনামিজ কৈ নামে এক ধরনের কই চাষ হয়। এগুলো আকৃতিতে দেশি কৈ এর চাইতে অনেকটা বড়। কই মূলত খাল, বিল, পুকুর, ডোবার মাছ। জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেলেও মাটির তলদেশে কাদার মধ্যে দীর্ঘদিন এই মাছটি বেঁচে থাকতে পারে।

৯। তেলাপিয়া

20230216_105038.jpg

তেলাপিয়া আমাদের দেশের মাছ না হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এ মাছ প্রচুর পরিমাণে চাষ হচ্ছে। মনোসেক্স তেলাপিয়া নামের একটি জাত বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। এই মাছগুলো ওজনে পায় এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দ্রুত বর্ধনশীল ও বংশবৃদ্ধি করতে পারায় এই মাছগুলো চাষ বেশ লাভজনক। মূলত পুকুরে এবং হ্যাচারীতেই এগুলো চাষ করা হয়।

১০। ইলিশ

20230216_104957.jpg

এ মাছের পরিচয় দেয়া আসলে নিষ্প্রয়োজন। কারণ ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। রূপালী বর্ণের খুবই সুস্বাদু এই মাছ মূলত সামুদ্রিক। তবে ডিম পাড়ার সময় হলে এরা ঝাক বেঁধে নদীতে প্রবেশ করে। গভীর জলের এই মাছগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। দুঃখের বিষয় জাতীয় মাছ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে এ মাছের দাম অনেক বেশি। গরিব মানুষের পক্ষে এ মাছ কিনে খাওয়া অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এই মাছগুলো ওজনে প্রায় আড়াই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

১১। পাঙাশ

20230216_105019.jpg

একসময় বাংলাদেশের বড় বড় নদীগুলোতে বিশাল আকৃতির সব পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যেত। এগুলো আকৃতিতে ৬-৭ ফুট আর ওজনে প্রায় ৭০-৮০ কেজি পর্যন্ত হত। তবে এ ধরনের মাছের দেখা এখন কালে ভদ্রে পাওয়া যায়। এই স্থানটি পূরণ করেছে চাষের পাঙ্গাস। পুকুরে চাষ করা এই পাঙ্গাস মাছ আকৃতিতে খারাপ না। দামে সস্তা হওয়ায় গরিব মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করছে এই মাছ।

১২। পাবদা

20230216_104950.jpg

পাবদা নদীর মাছ। নদীতে ঝাকে ঝাকে এই মাছগুলো বিচরণ করে। অত্যন্ত সুস্বাদু এবং কাটা কম হওয়ায় বাজারে এ মাছের চাহিদা ব্যাপক। তবে নদীর পাবদা এখন আর পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে এবং হ্যাচারিগুলোতে ব্যাপকভাবে এই পাবদা মাছের চাষ হচ্ছে।

১৩। মিরর কার্প

20230216_105027.jpg

এই মাছের উৎপত্তি কোথায় তা আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এ মাছের চাষ হয়। খেতে খুব একটা সুস্বাদু না হলেও দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এই মাছের ডিম ভুনা মাছের চাইতেও বেশি সুস্বাদু। বিভিন্ন এলাকায় এই মাছ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত।

১৪। বাটা

20230216_104916.jpg

বাটা মাছ নদী এবং পুকুর উভয় জায়গাতেই পাওয়া যায়। ছোট রুপালি বর্ণের এই মাছগুলো দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এই মাছগুলো আকৃতিতে ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ভেজে রান্না করলে এই মাছগুলো খেতে অনেক সুস্বাদ।
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationTepakhola, Faridpur
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ভাই আপনি তো দেখছি মাছের বসিয়ে দিয়েছেন ৷ অনেক ভালো লাগছে ভাই বিভিন্ন প্রজাতির মাছ গুলো দেখে ৷ এটা ঠিক বলেছেন যে বর্তমান সময়ে অনেক মাছ অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৷ আবার হয়েও যাচ্ছে ৷ যা হোক অনেক ভালো লাগলো ভাই ৷
ধন্যবাদ

এত প্রজাতির মাছ কই গেল মাঝে মাাঝে ভাবতে অবাক লাগে। দেখি শেষ পর্যন্ত কতগুলো প্রজাতির দেখা পাই। ধন্যবাদ ভাই।

আমি মাছ তেমন চিনিও না এমনকি খাই না।তবে আপনার দেওয়া প্রতিটি মাছের ছবি দেখেই আমি চিনতে পেরেছি।একমাএ ইলিশ মাছ ছাড়া কোন মাছ খাওয়া হয় না আমার।আসলেই আমরা মাছে ভাতে বাঙালি ঠিক কিন্তু আস্তে আস্তে অনেক মাছ বিলুপ্ত এর পথে।যাই হোক মাছগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।শুভেচ্ছা নিবেন।

বাঙালির প্রধান খাবারইতো মাছ। মাছ না খেয়ে আপনি থাকেন কিভাবে। অনেকেই দেখি একটা বা দুটা প্রজাতির মাছ খায়না আর আপনি শুধু খানই মাত্র ১ ধরনের মাছ!!! যাইহোক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মচ্ছের উপরে বাংলাদেশের সরকার খুব গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ মৎস্য বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক সম্পদ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে এখন। আজকে অনেকগুলো মাছের ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এইসব মাছের মধ্যে ইলিশ পাবদা এই মাছগুলো অর্থনৈতিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কই মাছটা খালি বিলে প্রচুর পরিমাণ দেখা যেত কিন্তু এটা এখন খুব কম পাওয়া যায়। আর যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো পুকুরে চাষ করা হয়ে থাকে।

সরকার কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে তা জানিনা তবে ব্যক্তি উদ্যোগে এইসব মাছ যদি চাষ না হতো তাহলে হয়তো সাধারন মানুষের জন্য মাছ ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যেত। ধন্যবাদ ভাই আপনার মতামত শেয়ার করার জন্য।

আপনার এই পোস্টটা অনেকের জন্যই বেশ উপকারী হবে। কারণ আমরা অনেকেই মাছ ঠিকঠাক মতো চিনি না। যারা আসলে মাছ ঠিকঠাকমতো চেনেনা তাদের জন্য এই পোস্টটা খুবই দরকারী ছিল। আশা করব বাকি যে মাছগুলো আছে সেগুলো এক এক করে আপনি উপস্থাপন করবেন। আমার কাছে তো আপনার আজকের পোস্টটা খুবই ভালো লাগলো। তবে পাঙ্গাস মাছ যে ৭০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এটা আমার জানা ছিল না। আমি জানতাম পাঁচ থেকে দশ কিলো পর্যন্ত হয়।

৮০ কেজির নদীর পাঙাস আমি নিজে দেখেছি তবে এখন এগুলো বিলুপ্ত বললেই চলে। সাধ্যমত চেষ্টা করব যাতে সবগুলো মাছের প্রজাতি কভার করতে পারি। ধন্যবাদ।

এ পর্বে মাছের যে নামগুলো শেয়ার করেছেন আসলে সবটাই খুবই পরিচিত মাছ। পরিচিত বলতে বুঝাচ্ছি প্রতিনিয়ত আমরা কিনে খাই। তবে আবার দেশি মাছের মধ্যে ও কিছু মাছ রয়েছে যেগুলো আমরা সচরাচর কিনতে পাই না।ধন্যবাদ খুব চমৎকার ব্যাখ্যার মাধ্যমে আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

কিছু কিছু মাছ আছে যে গুলো হয়ত অঞ্চলভেদে নাম ভিন্ন। হয়তো আপনাদের এলাকায় এক নাম আবার আমাদের এলাকাতে অন্য নাম। আশাকরি এবার আঞ্চলিক নামগুলো জানতে পারব। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

এখানে অনেকগুলো মাছই আমার পরিচিত। তবে যে মাছটার কথা বললেন ডিম ভুনা করে খেতে ভালো লাগে, সেই মাছটার নাম আমরা ইন্দোনেশিয়া বা কারফু এ দুটো নামে ডাকি। সত্যিই এই মাছের ডিম খেতে খুব ভালো লাগে আমার কাছে। আর বাটা মাছগুলোকে দেখতে অনেকটা রুই মাছের মত লাগছে। যাইহোক খুবই সুন্দর আলোচনা করেছেন ভাইয়া।

বোঝাযাচ্ছে আপনি শুধু ছবি দেখেননি লেখাটুকুও পড়েছেন। ভালো লাগে আপনার মত পাঠক পেলে। ধন্যবাদ আপু।

হাহাহা কি যে বলেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আমার মন্তব্যের ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য।

ঠিকই বলেছেন । বর্তমান সময়ে অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে আমাদের দেশীয় মাছ গুলো এখন বেশি পাওয়া যায় না। এখানের প্রায় সবগুলো মাছ আমার পরিচিত। এখানকার প্রায় সবগুলো মাছ আমাদের বাসায় আনা হয়। তার মধ্যে ইলিশ মাছ এবং পাবদা মাছ আমার খুবই পছন্দের। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

অপরিচিত বা বিলুপ্ত হতে চলেছে এমন গুলোও সামনের পর্বে থাকবে ইনশাল্লাহ। আপনার অভিমত প্রকাশ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।

আপনি ঠিক বলেছেন কিছু মাছ হয়তো আর কিনে খাওয়া মধ্যবিত্তের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে সামনের দিনগুলোতে। বড় ইলিশ মাছ কেনা বাদ দিয়েছি অনেক আগেই, তবে ছোট জাতের একটা ইলিশ পাওয়া যায় যা খেতে বেশ ভালোই লাগে। পাঙাশ মাছ আমার ভালো লাগলেও হোম ম্যানেজারের পছন্দ নয় তাই আনতে পারিনা বাসায়। তবে তেলাপিয়া মাছ খাওয়া হয় প্রচুর। মাছগুলো দেখে ভালো লাগলো ভাই। চমৎকার বর্ননা দিয়েছেন ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে।

কিছু করার নেই ভাই হোম ম্যানেজারের বিরুদ্ধে না যাওয়াই ভালো হাহাহা। মাঝে মাঝে এতটুকু কমপ্রোমাইজ করতেই হয়। আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।

জি ভাইয়া একদম ঠিক বলেছেন আমরা অনেক ধরনের মাছ খেয়ে থাকলেও সব চিনিনা কোনটার কি নাম।আর কিছু মাছ তো এখন বিলুপ্তির পথে।আপনার পোস্টের মাধ্যমে একবারে অনেক মাছ দেখে নিতে পারলাম এবং নামও জেনে নিতে পারলাম।মাছ গুলো যদিও কমন ছিল।তবে মিরর কার্প মাছ টি চিনতাম না।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য ভাইয়া।

মিরর কার্প মাছটির নাম অঞ্চলভেদে ভিন্ন। অনেকে এটাকে আমেরিকান রুইও বলে থাকে। ধন্যবাদ আপু সাথে থাকার জন্য।

পাবদা আর কৈ মাছ বাদে আমি এখানকার সমস্ত মাছগুলো চাষ করে থাকি। আর মাছ চাষে আমাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনি এ মাছ নিয়ে খুবই সুন্দর বর্ণনা সহ উপস্থাপন করেছেন দেখি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।