জসিম পল্লী মেলা ভ্রমণ। ১০% লাজুক শিয়ালের জন্য।

in hive-129948 •  2 years ago 
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। বছর ঘুরে আবারো ফিরে এলো জসিম পল্লী মেলা। বাংলাদেশের সুবিখ্যাত কবি জসীমউদ্দীন, যিনি পল্লী কবি নামেই বেশি পরিচিত। তার জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর গ্রামে তার বাড়ির পাশেই প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে আয়োজিত হয় মাসব্যাপী এ মেলার। করনা কালীন সময় ও রাজনৈতিক কারণে বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর থেকে শুরু হয়েছে ফরিদপুরবাসীর প্রাণের মেলা এই জসিম পল্লী মেলা। প্রতিবছর বেশ কয়েকবার মেলায় যাওয়া হলেও এ বছর গিয়েছিলাম শুধুমাত্র একবার। তাও আবার পরিবারের সবাইকে নিয়ে। দিনটি ছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়াতে মেলা প্রাঙ্গণে ছিল বেশ ভিড়। বিকেল তিনটায় বের হয়ে যখন মেলায় পৌছালাম তখন সবেমাত্র লোকজন আসতে শুরু করেছে। মেলায় সাধারণত সার্কাস, পুতুল নাচ, মৃত্যুকুপ খেলা, নাগরদোলা, টয় ট্রেন সহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ও রাইড এর ব্যবস্থা থাকে। তবে এবারের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ভূতের বাড়ি। মাত্র ৩০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে ভয় দেখানোর জন্য সুন্দর একটা ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছে। ভিড় এবং সঙ্গে ছোট বাচ্চা থাকার কারণে ইচ্ছা থাকলেও ভূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়নি।

20230127_160425.jpg

20230127_160527.jpg

এবার মেলায় বাচ্চাদের জন্য বেশ কয়েকটি রাইড এর আয়োজন করা হয়েছে। যার প্রতিটির টিকিটের মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। কারু শিল্পের পণ্য, গৃহস্থালী পণ্য সামগ্রী, পোশাক আশাক, কসমেটিকস, ঘর সাজাবার সৌখিন জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা, বিভিন্ন খাবারের রেস্তোরা ও মেয়েদের রকমারি সাজগোজের বিভিন্ন স্টোরই মূলত বেশি। বলতে গেলে মেলার আশি ভাগ জায়গা জুড়েই শিশু এবং নারীদের ব্যবহার্য জিনিস। ফরিদপুর বাসীদের কাছে যদিও এই মেলা গতানুগতিক কিন্তু বহুকাল ধরে চলে আসা এই মেলা ফরিদপুরের ঐতিহ্য বহন করছে। তবে বাইরের জেলার মানুষের কাছে এ মেলার আকর্ষণ অনেক বেশি। মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, রুচির পরিবর্তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়তই মেলার লোক সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যারা একটু নিরিবিলি ঘোরাফেরা পছন্দ করেন তাদেরকে অবশ্যই সরকারি ছুটির দিন এড়িয়ে মেলায় আসতে হবে। শুক্র ও শনিবার ভিড়ের পরিমাণ এত বেশি হয় যে মেলায় প্রবেশ করতে এবং বের হতেই বেশ কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়।

20230127_160609.jpg

20230127_160506.jpg

মেলার ঠিক গেটের সামনেই কবীর পারিবারিক কবরস্থান। যা নিয়ে কবি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত "কবর" কবিতা -"ওইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, ৩০ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।" কবি জসীমউদ্দীন ছিলেন মূলত গ্রাম বাংলার কবি। তার লেখনীতে বাংলার আদি ও আকৃতির বর্ণনা ফুটে উঠেছে। আপনাদের সকলের আমন্ত্রণ রইল কবীর জন্মস্থান এবং এই পল্লী মেলা দেখে যাওয়ার। আশা করি ফরিদপুর শহরে এলে ঘুরে যেতে ভুলবেন না। বাংলাদেশের যেখান থেকেই আসুন না কেন এখানে আসতে হলে আপনাকে ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিক্সা বা অটোরিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে অম্বিকাপুর। সেখানে যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি।

20230127_160445.jpg

20230127_155952.jpg

20230127_155936.jpg

আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer@ferdous3486
DeviceSamsung M21
LocationAmbikapur, Faridpur
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এই মেলা দেখলেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। প্রতিবছর মেলায় একই রকম জিনিস উঠতো, কিন্তু কোন বার যাওয়া মিস দিতাম না। তেমন কিছু না কিনলেও প্রতিবারই ২-৩ বার করে যাওয়া হতো। আপনার মেলার ছবিগুলো দেখে আবারও যেতে খুব মন চাইছিল। কিন্তু এবারও হলো না। বাচ্চার জন্য ভূতের বাড়ি দেখা হলো না। আপনি দেখলে হয়তো আমরাও ছবির মাধ্যমে দেখতে পারতাম। যাইহোক এ বিষয়টি নতুন মনে হল মেলায়। পরিবার নিয়ে বেশ ভালই সময় কাটিয়েছেন বোঝা যাচ্ছে। ফুচকা খেয়েছেন নিশ্চয়ই মেলায়😜।

আমিও আপনার ব্যতিক্রম নয়, যদিও বাড়ি মেলা প্রাঙ্গন থেকে বেশ দুরে কিন্তু প্রতিবছরই দু-তিন বার কমপক্ষে যেতাম কিন্তু ব্যস্ততার কারনে এবার আর মনে হয় যাওয়া হবেনা। আর ফুচকার কথা কি বলব, সীদ্ধান্ত নিয়েছি একজন মানুষকে ফুচকা না খাওয়ানো পর্যন্ত আমি আর ফুচকাই খাবনা।

জসিম পল্লী মেলায় গিয়ে বেশ ভালই ভ্রমণ করেছেন তাহলে পরিবারের সবাই মিলে।আসলে যে কোন জায়গায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে গেলে একটু বেশি ভালো সময় অতিবাহিত করা যায়। আমরা সবাই যখন একসাথে যাই তখন বেশ ভালই মুহূর্ত কাটে। অনেক আয়োজন করা হয়েছে দেখছি মেলাটিতে। ৩০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে ভয় দেখানোর জন্য সুন্দর ব্যবস্থাটি আমার কাছে একটু বেশি ভালো লেগেছে। কিন্তু আপনি যেতে পারেননি ছোট ছোট বাচ্চারা থাকার কারণে। তারা তো ভয় পাবে এটা স্বাভাবিক। যাই হোক আপনার ঘোরাঘুরির পুরো পর্বটা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো।

ঠিক বলেছেন আপু। একেক গ্রুপের সাথে যাবার এক এক রকম মজা। বন্ধুদের সাথে এক রকম আবার পরিবারের সাথে অন্য রকম। তবে সবারই উচিত পরিবারের সদস্যদের জন্য মাঝে মাঝে সময় বের করা। ধন্যবাদ আপনার মতামত শেয়ার করার জন্য।

আমি অনেকদিন আগে ভেবেছিলাম এই জায়গাটিতে যাব পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে। ভেবেছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে যাব কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। আপনার আজকের পোস্ট দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনি তো দেখছি জসিম পল্লী মেলায় ঘুরাঘুরি করে ফেলেছেন তাও দেখছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আমাকে যদি বলতেন তাহলে আমিও একটু যেতে পারতাম। এরকম মেলায় যেতে আমি একটু বেশি পছন্দ করি। ভালোই মুহূর্ত কাটালেন তাহলে।

আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত মেলা চলবে। পরে হয়তো সময় আরো বাড়ানো হতে পারে। সময় করে চলে আসুন একদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। আমরা তো আছিই। দুই ভাই একসাথে বেশ ঘোরাঘুরি করা যাবে।