শেয়ার করো তোমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি || আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২০ |

in hive-129948 •  3 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আমি @firozgazi বাংলাদেশের নাগরিক
২৫,জুলাই ,২০২২
সোমবার

সবাই কেমন আছেন আশা আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের করছি সবাই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন । সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমিও অনেক ভাল আছি। আজ আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সবসময় ভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই বারের প্রতিযোগিতাটা হলো :- শেয়ার করো তোমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি

সবার মতো আমার জীবনে ও প্রেম নিয়ে ছোট একটি কাহিনী আছে, সেটি আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে ।

আমার প্রথম প্রেমের অনুভুতি

image.png
source

আমার গ্রামে বাড়ি । ছোট থেকে গ্রামে বড় হয়েছে । গ্রামের অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী যারা পড়ালেখা করে তারা গ্রামে টিউশনি করে । আমিও ছোট বেলা থেকে গ্রামে করে আসছি । আমি যখন নবম শ্রেণীতে ওঠে তখন গ্রামের এক দাদার কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় । এইখানে আমরা ১০ থেকে ১২ জনের মতো পড়তাম । সে দাদা পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ায়তো । আস্তে আস্তে এভাবে চলতে থাকে ।

বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে হঠাৎ করে একদিন একটি মেয়ে আমাদের এখানে নতুন ভর্তি হয় । সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়তো । তার বাসা ছিল আমাদের পাশের গ্রামে । কিন্তু সে আমাদের গ্রামে তার নানার বাড়ি থেকে পড়ালেখা করতো । তার নাম ছিল ফাতেমা । সে আসার পরেরদিন সে উপস্থিত না থাকায় আমাদের দাদা আমাদেরকে বলল তার থেকে দূরে থাকতে কোন খারাপ ব্যবহার না করতে কারণ তার নানি ছিল খুবই ডেঞ্জারেস । কিন্তু আমাদের এখানে দাদা অনুপস্থিতে ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে শুধু ঝগড়াই না মারামারিও হতো ।

এভাবে নবম শ্রেণী ঝগড়ার ওপর দিয়ে যায় । আমি দশম শ্রেণীতে ওঠার পর ধীরে ধীরে তার ওপর অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে । তার এক বান্ধবী ও আমাদের এখানে পড়তো । তার নাম ছিল জবা । জবা , ফাতেমার থেকে দেখতে ভালো ছিল । তবুও আমার ওকে অনেক ভালো লাগতো । একদিন আমি তার ফোন নাম্বার চাই । কিন্তু সে দিতে রাজি হয় না । এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পরে একদিন দিয়েই দিল । এরপর এখান থেকে শুরু আমাদের ফোনের মাধ্যমে কথা বলা ।

image.png
source

প্রথম প্রথম আমরা এসএমএস এর মাধ্যমে কথা বলতাম । কারণ আমাদের দুজনেরই কোনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল না । আমার একটি বাটন ফোন ছিল আর ওর তো কোন ফোন ছিল না ও ওর নানা ও নানির ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলতো । একেক সময় একেক নাম্বার দিয়ে আমার সাথে কথা বলতো । এভাবেই চলতে থেকে আমাদের মধ্যে কথা বলা ।

তারপর কিছুদিন পর তার বাসা থেকে তাকে একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেয় । আর আমি সেই বাটন ফোনে পড়ে থাকি কারন আমার বাসা থেকে আমার পড়ালেখা নিয়ে অনেক কড়া করছিল তাই আমাকে এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেয় নাই । তারপর সে একটি ফেসবুক আইডি খোলে । আমি তার কাছে তার ফেসবুক আইডি নেয় । এখন আপনারা ভাবতে পারেন যে আমি ওর ফেসবুক আইডি নিয়ে আমি কি করব কারণ আমার যে বাটন ফোনটি ছিল সেটিতে সবকিছু ব্যবহার করা যেত । তারপর আমাদের মধ্যে অফলাইনে কম কথা হতো । মেসেঞ্জারে বেশি কথা হতো ‌। আমাদের পড়ার ওখানে আমি আর ও সবসময় আগে পড়তে যেতাম । গিয়ে দুজন একে অপরের সামনাসামনি বসতাম । আমাদের দুজনের ভালোবাসার সম্পর্কটা সেও জানতো এবং আমিও জানতাম । কিন্তু কখনো কেউ কাউকে ভালবাসার কথাটা বলি নাই ।

এরপর আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে সেই প্রাইভেট থেকে বাহির হয়ে যায় । বাহির হওয়ার পর আমাদের দুইজনের মধ্যে আগের মত আর কথা হতো না আর দেখা তো একপ্রকার হতোই না । কিন্তু প্রতিদিনই আমাদের মধ্যে একটু হলেও কথা হতো । কিন্তু দুঃখের কথা সব সময় প্রায় আমাকেই আগে তাকে এসএমএস করতে হতো । এরপর একদিন হঠাৎ করে আমাদের মাঝে বিনা কারণে একটু ঝগড়া হয় তারপর কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় । এভাবে আমাদের মাঝে অনেকদিন কোন কথা হয়না । আমি তাকে এসএমএস করি না সেও আমাকে এসএমএস দেয় না ।

এর ২ থেকে ৩ মাস পর আমার এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেয় । তারপর আমি তার ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয় । কারণ সে কিছুদিন পর পর তার ফেসবুক আইডি পরিবর্তন করে ।আমার ফেসবুক আইডিতে তার আইডি ছাড়া আর কোন মেয়ের আইডি ছিল না । শুধু তার আইডির ছিল 10 থেকে 12 টার মতো । রিকুয়েস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর এক্সেপ্ট করে । তারপর আমি তাকে এসএমএস করি । এবং এরপর আমাদের মাঝে অনেক কথা হয় । সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যায় । আবার আমাদের মধ্যে আগের মতো সবকিছু চলতে থাকে ।

আম এইচএসসি এর উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে খুলনা চলে আসি । আমার খুলনায় চলে আসাতে দুজনের অনেক খারাপ লাগে কিন্তু কিছু করার নেই । পড়ালেখা করতে হলে তো গ্রাম ছাড়তে হবে ।

কিন্তু আমাদের মাঝে ঠিক আগের মতোই সবকিছু চলতে থাকে । কিন্তু খুলনা আসার পর আমাদের মাঝে একটু ঝগড়া বেশি হতো । ঝগড়া করে আমরা একে অপরের সাথে ২ থেকে ৩ দিন কথা বলতাম না । কিন্তু দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে দুজনের মধ্যে কেউ নাই কেউ আগে কথা বলতাম । একজন কথা বললে আরেকজন সবকিছু ভুলে যেতাম । আমি যখন ছুটিতে বাসায় যেতাম তখন শুধু তার সাথে দেখা হতো ।

এখনো আমাদের মাঝে কথা হয় । এখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি এবং ও ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে । আমরা একবারই বাইরে কোথাও দেখা করেছিলাম । আমি একবার ছুটিতে বাড়ি গেছিলাম । সেই সময় একদিন ওর কলেজে দরকারী একটা কাজ ছিল কিন্তু ওর সাথে যাবার কেউ ছিল না তাই আমাকে ওর সাথে যেতে বলেছিল । তাই আমি ওর সাথে গেছিলাম তারপরও কলেজে কাজ মিটিয়ে আমরা একটু ঘোরাফেরা করে বাসায় চলে আইছিলাম । আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ছিল ৩ থেকে ৪ বছরের মতো । কিন্তু দুঃখের কথা কেউ কখনো কাউকে ভালোবাসার কথা টি বলতে সাহস পায় না ।

এই ঈদের ছুটিতে আমি বাসায় গিয়ে তার সাথে অনেক মজার সময় কাটাইছি । এতটাই মজার সময় কাটছে যে ঈদে তার সাথে দেখা করতে পারি না । আমি ঈদের ছুটি কাটিয়ে আবার গত সপ্তাহে খুলনায় চলে আসি । আসার দুদিন পর আবার আমাদের মাঝে ছোট্ট একটু ঝগড়া হয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায় ।

হঠাৎ সে আমাকে এই শনিবারে এসএমএস করে । এসএমএসে সে লিখছিল যে ফিরোজ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । একটি দেখার পর আমি প্রথম মনে করছিলাম সে আমার সাথে মজা করছে । কিন্তু সে পরে কসম দিয়ে বলে যে সত্যি বলছি আমি । তারপর আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । মনে হয়েছিল যেন আকাশ ভেঙ্গে আমার মাথার উপর পড়ছে । তারপর আরো বলে যে পরশুদিন আমার নাকফুল দিতে আসবে এবং এই শুক্রবারে আমার বিয়ে । একটি শোনার পরে তো সত্যি আমার চোখে পানি চলে আসে । আমি শুধু তাকে বললাম তাহলে আমার কি হবে । সে বলে কিছু করার নেই । এরপর শনিবার আমাদের মাঝে অনেক কথা হয় । আমি তাকে কিছু বললে সে শুধু বলে কিছু করার নেই কপালে যা লেখা ছিল তাই হচ্ছে ।

সে বলল আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আমি নিজেই জানিনা আমি সকালে কলেজ থেকে এসে শুনি যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । আমি এটা শুনে আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না যে কি করব । হঠাৎ করেই যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল ।

image.png
source

গ্রাম অঞ্চলের একটাই সমস্যা যে কোন মেয়ে এসএসসি শেষ করে কলেজে উঠলে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায় । আমি তাকে অনেকবার বলেছি যে তুই আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে । সে শুধু বলে কিছু করার নেই আম্মুর জন্য , নানুর জন্য এবং সবার মুখের দিকে তাকিয়ে করতে হচ্ছে । আজ তার নাকফুল দিতে আইছিল । এ নিয়ে সে আমার সাথে অনেক কথা বলছিল । সে শুধু একটাই কথা বলছিল যে কিছু করার নেই আমার ।

জীবনে অনেক শুনেছি যে জীবনের প্রথম প্রেম খুব কম মানুষেরই সফল হয় তাই আমিও সেটা উপলব্ধি করতে পারলাম । জীবনে প্রথম প্রেম ভেঙে গেলে সেটা কত যন্ত্রণা এবং কষ্টের হয় সেটাও আমি বুঝতে পারলাম । আমি দোয়া করি সবার জন্য প্রথম প্রেম যেন সফল হয় ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjdf1DqCg1JFmEM5rEUGj71XE1G1s2zdaLrPmqMiGfAQnnyJs6RnCcTBgQMtvnidXKm8wAaRHQHRe7SxwsFhc934yXi52HAPAtv9G1QJPM9qMGWq4dNJy95PMJvrFKjgJPLXTJssozBAEbZT1JoE57gH8t2Ehe7Ki.png

প্রিয় বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই ৷ সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনাই করি ৷ আমার প্রথম প্রেমের অনুভুতি আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিলাম , আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে ৷ প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর আমি এটি শেয়ার করার জন্য অনেক ব্যাকুল ছিলাম কিন্তু শনিবারে ঘটে যাওয়া ঘটনা পড়ে আর শেয়ার করতে ভালো লাগছিল না । কিন্তু আজ শেয়ার মন চাইলো তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!