আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদেরকে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকের ব্লগ এ আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন এবার শুরু করা যাক।
সালটি ছিল ২০২২। তখন কাতার বিশ্বকাপ খেলা
চলছিল সেই সময়ের কথা। আমাদের গ্রামের শেষে একটা টং/খাট ছিল। বেশিরভাগ সময় ছোট ভাই বড় ভাইয়েরা মিলে এই খাটে বসে আড্ডা দিতাম। বিকেলবেলা হলেই আমরা ফুটবল নিয়ে মাঠে খেলতে যেতাম। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সমর্থক ফ্যানরা মিলে ফুটবল খেলতাম প্রতিনিয়ত।
একদিকে বিশ্বকাপ আর অন্যদিকে আমাদের গ্রামের ফুটবল খেলা জমজমাট হয়ে উঠেছিল। আসলেই সুখের দিনগুলো মনে হয় মানুষের কাছে বেশিদিন থাকে না। হঠাৎ একদিন বিকেলবেলা আমরা ফুটবল খেলতে যাব সেই মুহূর্তে গ্রামের এক ছোট ভাই নতুন বাইক নিয়ে আমাদের খাটে এসে হাজির হয় ।এসে আমাকে ও আমার এক বড় ভাইকে বলে তার সঙ্গে বাইকে করে শুকুরেরহাট যাওয়ার জন্য। আমি বললাম কি জন্য যাবা বলল ফ্রী ফায়ার এর প্লেয়ারের জার্সি কেনার জন্য টপ আপ করতে। আমি বললাম আমি যেতে পারব না তুমি নতুন বাইক চালক যদি আমাকে বাইক চালাতে দাও তাহলে যাব। এই বলে আমি খাট থেকে নেমে ফুটবল খেলার জন্য মাঠের দিকে রওনা হলাম।
ফুটবল খেলার সময় শুনলাম ছোট ভাইটি বড় ভাইটিকে জোরপূর্বক করে তার সঙ্গে করে নিয়া গেছে। ফুটবল খেলা শুরু হওয়ার ২০ মিনিট পর আরেক বড় ভাইয়ের ফোনে ঐ বড় ভাইটির ফোন থেকে ফোন আসলো। ফোন ধরেই শুনতে পায় যে ওই বড় ভাইটি ও ছোট ভাইটি একটি ভ্যানের সঙ্গে এক্সিডেন্ট হয়। এক্সিডেন্ট হওয়ার পর বড় ভাইটির অবস্থা সবথেকে খারাপ বলে জানান ঐখানকার স্থানীয় একজন লোক।পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এক্সিডেন্ট এর খবর পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন মিলে তাদেরকে দেখার জন্য হাসপাতালে যাই। আমরা যাওয়ার ১৫ মিনিট আগেই বড় ভাইটি মারা যান। শেষ দেখাটাও আর হলো না ওনার সঙ্গে। ছোট ভাইটি নতুন বাইক চালক হওয়ায় ট্রাফিক আইন কানুন না জানার কারনে আবার বাইক ভালোভাবে কন্ট্রোল করতে না পারায় ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়াতে বড় ভাইটি ছিটকে গিয়ে গাছের মাঝে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। ছোট ভাইটি বাইকের মাঝে থাকায় ওর তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। এই এক্সিডেন্ট হওয়াতেই আমাদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। বড় ভাইটি মারা যাওয়ার পর থেকেই আমাদের খেলাধুলাও উঠে যায়। এখনো যদি মাঝেমধ্যে মাঠে যাই তাহলে বড় ভাইটির কথা মনে পড়ে যায়।
বর্তমান সময়ে ফ্রীফায়ার , পাবজি আর বাইক ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বাইক পাওয়ার পর আকাশ দিয়া উড়তে চায়। রাস্তার মাঝে বা সাইটে যদি কোন ছেলে মেয়ে থাকে তখন তাদের বাইকের পাওয়ার আরো বেড়ে যায়। এ থেকে তারা বুঝাতে চায় যে আমি দ্রুত বাইক চালাতে পারি। বেশিরভাগ এক্সিডেন্ট গুলোতে দেখবেন ছোট তরুণরাই। বর্তমানে আমাদের পরিবারগুলোকে অনেক সচেতন হতে হবে। ছোট বাচ্চারা যাতে করে স্মার্টফোন এবং বাইক হাতে না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখনই যদি তাদেরকে শাসন না করা যায় তাহলে তাদের থেকে ভালো কিছু আশা করা অসম্ভব বলে আমি মনে করি।
একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। সাথে পরিবারকেও ভোগান্তি পেতে হয়। তাই নিজে সচেতন হোন এবং সমাজকে সচেতন করুন। সমাজ ভালো থাকলেই আপনি ভালো থাকবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
আসলে দুর্ঘটনা কখনো বলে আসে না, দুর্ঘটনা আপনাআপনি ভালো চলে আসে। বিশেষ করে যুবক ছেলে মেয়েরা বাইক চালানোর সময় তারা সাবধানতা অবলম্বন করে না।যার ফলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। তবে, ভাইয়ের জন্য দোয়া রইল, সে যেন পরপারে অনেক ভালো থাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit