আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদেরকে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আজকের ব্লগ এ আমি আপনাদের সাথে ফুলচৌকির মুঘল আমলের মসজিদ প্রাঙ্গণ সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। চলুন তাহলে এবার শুরু করা যাক।
আমার বাসা থেকে এই মসজিদ প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই মসজিদটি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার ময়েনপুর ইউনিয়নের ফুলচৌকি নামক গ্রামে অবস্থিত। ময়েনপুর ইউনিয়নের বাতাসনে আমার নানুর বাসা। কয়েকদিন আগে আমি আমার নানুর বাসায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এই মসজিদটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুপুরবেলা আমি আর আমার মামা সহ সেখানে গিয়েছিলাম ঘোরার জন্য। এই মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদটির সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
মসজিদের সামনে একটি পুকুর এবং মাঠ রয়েছে। মুঘল আমলে এই পুকুরের পানি দিয়ে মানুষ অজু করত। বর্তমানে এই পুকুরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং মাঠে চাষাবাদ করা হচ্ছে। মুঘল আমলের মসজিদটি শুধু অক্ষত রয়েছে। তবে জমিদারের বাড়ি ধ্বংসাত্মক অবশিষ্ট রয়েছে। এখানে এসে আমি এক বিরল ইতিহাস জানতে পেরে ছিলাম।
এই মসজিদের ইতিহাস এক বিরল ইতিহাস। মসজিদের সামনে একটি কবরস্থান রয়েছে। এখানে অনেক রাজা এবং জমিদারের সমাধি স্থল। এইখানে শায়িত আছেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম প্রাণপুরুষ শহীদ নবাব নুরুদ্দিন মোঃ বাকের জং। তিনি ছিলেন দিল্লির সম্রাট শাহ আলম (দ্বিতীয়) এর আপন চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি। ইংরেজ শাসন উৎখাতে তিনি ১৭৬০ থেকে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অবশেষে জমিদারির লোভে দিবা ও নিশি নামক দুইজন বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্রে বর্তমান লালমনিরহাটের আদিতমারির মোগল হাটে ব্রিটিশ সৈন্যদের অতর্কিত আক্রমণে আহত হন।
আহত অবস্থায় তাকে তার রাজধানী (নির্মাণাধীন) ফুলচৌকিতে আনা হয়। ১৭৮৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আহত হন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৩ সালে তিনি ফুলচৌকিত নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। প্রতিশোধ পরায়ন ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাকে ফুলচৌকি জামে মসজিদ এর মুল গেট বরাবর কবরস্থানে দাফন করেন। এখানে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া রয়েছে। মূলত এই বিজ্ঞপ্তিটি সরকার কর্তৃক দিয়েছেন যাতে করে এই জায়গাটি ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে না যায়। কেউ যদি এই মসজিদ অথবা কবরস্থানের ক্ষতিসাধন করতে চায় তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
উপরে যে ইটের স্তূপটি দেখতে পাচ্ছেন এটি মূলত একসময় জমিদার বাড়ি ছিল। বর্তমানে এখানে বন জঙ্গলে ভরে গেছে। জমিদার বাড়িটি আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। এখানে একটি সাইনবোর্ড দেয়া রয়েছে সাইনবোর্ডে নবাবদের বংশের তালিকা রয়েছে। কালের পরিবর্তে এই নবাবদের ইতিহাস আজ বিলুপ্তের পথে। তবে আমাদের উচিত ইতিহাস চর্চা করার। তাহলে ভালো কিছু জানতে পারবো।
বর্তমানে এই জমিদার বাড়ির আশপাশ বিশাল বিশাল বটগাছ ,পাকুড় গাছ ,আম গাছ ,খেজুর গাছ দিয়ে ভরে রয়েছে। শুধুমাত্র মসজিদটিই টিকে রয়েছে যুগের পর যুগ। এই মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদটি দেখলেই পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিবে। বর্তমানে এই মসজিদটি পুরনো ইতিহাস বহন করতেছে বলে আমি মনে করি।
মসজিদটি সৌন্দর্যে ভরা। মসজিদের সামনে বিশাল বিশাল মুঘল আমলের কাঠগোলাপ ফুলের গাছ রয়েছে। কাঠগোলাপ ফুলের গাছের সামনে থেকে মসজিদের ফটোগ্রাফি করলে অনেক সুন্দর ফটোগ্রাফি হয়ে থাকে। আমি মূলত দুপুরবেলায় গিয়েছিলাম সেখানে। বিকেলবেলা গেলে অবশ্য ফটোগ্রাফি ভালো আসতো। যদি আবার পরবর্তীতে চাই তাহলে এবার বিকেল বেলায় যাব এবং ভালো ফটোগ্রাফি করার চেষ্টা করব।
মসজিদের সামনে আমি কয়েকটি সেলফি নিয়েছিলাম। তবে পিছন ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠালে অনেক সুন্দর হয়। এখানে ঘুরতে এসে আমার ভালো একটি সময় কেটেছিল। একটি বিরল ইতিহাস জানতে পেরেছিলাম। কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত করার পর আমি বাসায় চলে এসেছিলাম। তবে এখানে আবারো আসার ইচ্ছা রয়েছে আমার।
আপনারাও চাইলে আসতে পারেন এখানে ভ্রমণ করার জন্য। আশা করি আপনাদেরও অনেক ভালো লাগবে এই জায়গাটি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Device | Tecno spark 20c |
---|---|
Camera | 50 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
পুরনো জমিদার বাড়িগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে। এরকম জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করতে ভালো লাগে। আপনি ভ্রমণ করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। ভ্রমণের মুহূর্তগুলো সুন্দর করে শেয়ার করেছেন আপনি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপু 😍
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit