নমস্কার
বাস্তবধর্মী শৈশবগল্প: "ওড়াফুলের মধু"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।তবে আজকের বলা শৈশবের অনুভূতিগুলি খুবই স্মৃতিমধুর।যদিও সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার ইচ্ছে করে ছুটে যেতে শৈশবে।তাই সেই শৈশবের সুন্দর স্মৃতিটি শেয়ার করবো আজ আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের ছোট অনুভূতিখানি।তো চলুন শুরু করা যাক--
সময়টা শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাস।এই দুই মাসকে ঘিরেই রয়েছে মজার অনুভূতি।আসলে আমাদের ছোট্ট গ্রামটির একপাশে রয়েছে বড় নদী।নদীর নাম না হয় আপনাদের কাছে অজানায় থাক।তবে এই নদী সুন্দরবনের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে।তাই দিনে দুইবার জোয়ার -ভাটা হয়ে থাকে নদীতে।নদীতে চর জাগে আর সেই ঠেসমূল আর শ্বাসমূলের মতো রয়েছে অসংখ্য গাছ।যে গাছ বিনা যত্নেই বেড়ে ওঠে প্রকৃতির লালনে।সুন্দরী,গেওয়া, কেওড়া,ওড়া,কাউফল ও গোলপাতাসহ নানা ধরনের গাছ জন্মে আমাদের নদীর পাড়ের কিনারায়।যার নামও জানিনা হয়তো, গাছটিই অজানা ও অচেনা হয়ে বেড়ে উঠছে প্রকৃতির কোলে।
শ্রাবণ মাসটা বেশি মজা হয়ে থাকে।কারণ এই সময়ে পাকা কেওড়া পাওয়া যায়।আর এটা খেতে টক হলেও অসম্ভব টেস্টি ও স্বাদের।যারা সুন্দরবন এলাকায় বাস করে থাকেন তারা ভালোভাবেই চিনে থাকবেন এইসমস্ত ফলগুলো।যাইহোক কাদা পায়ে তরতর করে গাছে উঠেই ডাল ভেঙে নামিয়ে ফেলতাম কেওড়া।আবার গাছে দাঁড়িয়েই খেয়ে নিতাম কিছু।আমি কেওড়ার দুই একটি রেসিপিও শেয়ার করেছিলাম আপনাদের সঙ্গে।যাইহোক কেওড়ার সিজন শেষ হতে না হতেই শুরু হতো ওড়ার সিজন।যদিও আমি এটার ফটোগ্রাফি পোষ্ট একদিন শেয়ার করেছিলাম।সেই জন্মভূমির গ্রাম ছেড়ে যখন শহরে চলে এসেছিলাম তখন থেকেই মিস করি এই স্মৃতিগুলো।
আজ হঠাৎ করেই মনে পড়ছিলো ওড়া ফুলের কথা।অনেকেই ওড়া ফুলের মধুর কথা শুনে থাকবেন, কারন বন থেকে মধু সংগ্রহকারীরা ওড়া ফুল গাছের মৌচাক কেটে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।এছাড়া বাজারে ভালো দামেও বিক্রি করে থাকেন ,ওড়া ফুলের মধুর চাহিদা খুবই।যাইহোক ওড়া গাছের সুন্দর ফুলের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি উড়ে এসে জড়ো হয় গাছে মৌচাক বাঁধতে।আমিও সেই মৌমাছিদের মধ্যে একজন ধরুন, যে কিনা মানুষরূপী।
শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাসের সময়টিতে যখন দেখতাম গাছে অনেক ওড়া ফুল অর্ধফোঁটা অবস্থায় রয়েছে।তখনই বাড়ি গিয়ে মায়ের কাছ থেকে কিংবা বাবার কাছ থেকে একটি বাঁশের কঞ্চির লগা তৈরি করে নিতাম।তারপর কখনো বাবার হাত ধরে, কখনো দাদার সঙ্গে আবার কখনো একাই চলে যেতাম ওড়া ফুল সংগ্রহ করতে।একেবারে ফুটন্ত ওড়া ফুলে মধু হয় না কারন পাপড়িগুলো ঝরে পড়ে যায়।তাই অর্ধফোটা ফুলের প্রয়োজন হয়।তারপর যে গাছে বেশি অর্ধফোটা ফুল থাকতো সেই গাছ থেকেই লগা দিয়ে নামিয়ে ফেলতাম ফুলগুলো।আবার কখনো কাঁদা পায়ে তরতর করে গাছে চড়ে ওড়া ফুল পেড়ে নিয়ে ব্যাগ ভর্তি করতাম নদী পাড়ের কিনারা থেকে।অনেক খুশি হয়ে যেতাম যখন বাবা এবং দাদার সঙ্গে ওড়া ফুল পাড়তে যেতাম।বাবা ও দাদা লগা দিয়ে নামিয়ে দিতো আর আমি নদীর চর থেকে কুড়িয়ে নিতাম।এখানেই কাজ শেষ হয়ে যেত না।
বাড়িতে এসে প্রথমে নিজে ফ্রেস হয়ে ওড়া ফুলগুলো ভালোভাবে ধুয়ে কাদা পরিষ্কার করে নিতাম।এরপর একটি পরিষ্কার থালায় অল্প জল নিয়ে নিতাম।তারপর আসল কাজ করা হতো,ওড়া ফুলের বোঁটার দিকের অংশ কিছুটা করে কেটে ফেলে দেওয়া হতো সমান করে।তারপর একটি একটি করে সাজিয়ে বসানো হতো ওই জলের মধ্যে।সবশেষে একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে খাটের নিচে সাবধানে রেখে দেওয়া হতো এক রাতের জন্য।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে চলে যেতাম খাটের নিচের থালাগুলি বের করতে।এক রাতের ব্যবধানে ওড়া ফুলগুলো ফুটে যেত সুন্দরভাবে।আর বোঁটার দিকে কাটার ফলে মধু জমতো তার মুকুটের মধ্যে।তারপর ওড়া ফুলের ঝড়ে পড়া পাপড়িগুলো পরিষ্কার করে মুকুটে জমা মধুতে চুমুক দিয়ে তা খেতে হতো।সুগন্ধের সঙ্গে সঙ্গে মুখে এক অদ্ভুত মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হতো।কি যে আনন্দ কাজ করতো সেই সময়টা হয়তো সেই দিনগুলো কখনোই আর ফিরে পাবো না।সেটা সম্ভবও না ,তবে স্মৃতির পাতায় লিখে রাখলাম।তো এটাই ছিল আমার সুন্দর শৈশবের অনুভূতি।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং:"শৈশবের গল্প" |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thanks.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশবের স্মৃতি আসলেই মানুষের মাঝে এক রাশ ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। বেশির ভাগ মানুষ ই সুযোগ পেলে তার শৈশব কেই ফিরে পেতে চায়! আপনার শৈশব এর দারুণ স্মৃতির কিছু অংশ জানতে পেরে ভালো লাগলো। যদিও বা কেওড়া বা ওড়া কোন ফুলই আমার পরিচিত না। শহরে বড় হবার কারণে এমন অভিজ্ঞতা থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়েছি। তবে আপনার পোষ্ট টি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার অনুভূতি পড়ে একটু খারাপ লাগলো,কিন্তু আপনি সুন্দরবনে এই সময়ে গেলে এসব দেখার অভিজ্ঞতা হবে।ধন্যবাদ দিদি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ওড়া ফুলের মধু ও ওড়া ফুল সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরে ভালো লাগলো।শুনেছি শ্রাবন মাসে হরিণ কেওড়া পাতা খায় জন্য হরিনের মাংস টক লাগে।আপনি কেওড়া ফলের রেসিপি করেছিলেন জেনে ভালো লাগলো।আসলে শৈশবের স্মৃতিগুলো ভীষণ ভালো লাগে এবং বার বার শৈশবে ফিরতে মন চায় কিন্তুু কোনভাবেই সম্ভব হয় না।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই শৈশব ফিরে পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।ধন্যবাদ দিদি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তুমি তো দেখছি ছোটবেলায় একটা ছোটখাটো মৌমাছি ছিলে বোন! হা হা হা... আসলে সুন্দরবন এলাকায় যারা থাকে তাদের জীবন বৈচিত্র অনেকটা অন্যরকম হয়। ওড়াফুল সম্পর্কে আমার কোন আইডিয়া ছিল না, তোমার পোস্ট পড়ে আজ ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো। আসলে শৈশবের স্মৃতিগুলো অনেক বেশি মধুর হয়। খুব ভালো লাগলো বোন তোমার পোস্ট টি পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ দাদা,মৌমাছি ছিলাম।তবে একেবারে সুন্দরবন এলাকায় আমাদের বাড়ি ছিল না।আমাদের বাড়ি থেকে সুন্দরবন অনেকটা দূরে।তবে আমাদের নদী সুন্দরবনের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে তাই ওখানের মতো অনেক গাছ ও ফুল ফলের দেখা মিলতো নদীর চড়ে।ধন্যবাদ তোমাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit