"ফেলু চেয়ারম্যান"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা?
আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন।
আজ আমি হাজির হলাম একটি মর্মাহত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আপনাদের মাঝে।এটি আমাদেরই গ্রামে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা যা আমার স্বচক্ষে দেখা ।যা মনে পড়লে এখনো ব্যথিত করে আমার মনকে। সেটি হলো -"ফেলু চেয়ারম্যান"।

pexels-photo-10160283.jpeg
সোর্স

"ফেলু চেয়ারম্যান"

সরলা তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এক বুড়োর আশ্রয়ে থাকে।আমাদের বাড়ির পিছন দিকে ছোট্ট ক্যানেল পার হয়েই সরলার আশ্রিত আমাদের জেঠুর বাড়ি।জেঠুই সরলাকে আশ্রয় দিয়েছিল।বাড়ির সামনেই স্কুল এবং বড়ো খেলার মাঠ।তাই সরলার ছোট বোন তার ছেলেকে পড়ানোর জন্য সরলার কাছে রেখে যায়।ছেলেটির নাম ছিল রিপন।রিপন প্রাইমারি স্কুলে যায়,রোজ বিকেলে মাঠে আমাদের সঙ্গে ঘুরনচন্ডী,কিৎ কিৎ, লুকোচুরি, রুমাল চুরি,গাদন ইত্যাদি খেলা খেলতো।তখন আমরা গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা একসঙ্গেই খেলতাম সঙ্গে কয়েকজন বড়ো দিদিরাও খেলায় যোগ দিত।যাইহোক রিপন আমার কয়েক বছরের ছোট তবে ও ওর মাসির কাছে আসার পর প্রতিদিন বিকেলে আমাদের সঙ্গেই খেলাধুলা করতো।শুধু খেলা এবং পড়ার মধ্যেই তার সময় কাটতো না।

রিপনের মধ্যে অনেক মেয়েলি গুন ছিল।যেমন-স্কুলবাড়ির পুকুর থেকে রিপন কলসি কাঁখে করে জল বয়ে তার মাসিকে সাহায্য করতো,কখনো সরলার সঙ্গে বসে কাঁথা সেলাই করতো ,কখনো বা বাসনপত্র মাজতো, আবার কখনো নদীতে নেট জাল টেনে বাগদা-রেনুর পোনা ধরে বিক্রি করতো।আবার কখনো বা চাউল থেকে ধান বেছে নানাভাবে তার মাসিকে সাহায্য করতো।কারন রিপন ছিল ভীষণ দুরন্ত ও কাজের ছেলে।সরলাকে এত কাজে সাহায্য করার জন্য এবং একদিন সকলের সামনে থেকে জ্যান্ত একটি সাপ ধরার জন্য গ্রামের কিছু দাদারা রিপনকে "চেয়ারম্যান" বলে তামাশা করতো।কিন্তু রিপন কিছুই মনে করতো না।ধীরে ধীরে ছোট-বড়ো সবাই রিপনকে চেয়ারম্যান বলে ডাকা শুরু করলো।

দেখতে দেখতে দুই বছর পার হয়ে গেল।লেখাপড়ায় তেমন ভালো ছিল না রিপন কোনোরকম টেনেটুনে পাশ করে ক্লাস ফোরে উঠেছে।এরই মধ্যে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে রিপনের রেজাল্ট প্রকাশ হলো ছয়টি সাবজেক্টের মধ্যে চারটিতে ফেল ।

এইসময় স্কুলের একজন শিক্ষক রিপনকে বললেন-----"কি রে.. রিপন তুই নাকি গ্রামের চেয়ারম্যান!তাহলে চেয়ারম্যান হয়ে চারটি বিষয়ে ফেল কিভাবে করলি"?

লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল রিপনের ।বাড়ি ফিরে কিন্তু রিপন তার মাসির ছেলেকে রেজাল্টের কথা জানায় না।কয়েক দিন পরেই তার দাদা ফেল করার ব্যাপারে জেনে যায় এবং রিপনকে খুবই বকাবকি করে।

এরপর রিপনের পাগলামি শুরু হয় কখনো দুপুর বেলা একগাছি দড়ি নিয়ে ঘরের সামনে পেয়ারা গাছে ঝুলে পড়া ,কখনো বা ঘরের কোনায় আমলকি গাছের ডালে দড়ি বেঁধে আনমনে চিন্তা করে কখনো সখনো আবার গলায় দড়িখানি দিয়ে দেখে ।

একদিন তার মাসি সরলা বিষয়টি খেয়াল করলো ,সে রিপনকে বললো------- রিপন তুই দড়ি গাছের ডালে বেঁধে কি করছিস?

রিপন ঝটপট দড়ি নামিয়ে বললো----- কিছু না মাসি, এমনিই খেলা করছি।

তার দুই থেকে তিনদিন পর সকালের দিকে সরলাকে রিপন বললো----মাসি আমি মুরগির মাংস খাবো ,আমাকে মাংস রান্না করে দিবি?

সরলাও নিজেদের পোষা মুরগির মাংস কেটে পরিষ্কার করে রেখে পাশের বাড়ি গেল।যাওয়ার আগে রিপনকে বলে গেল----চাউল বেছে রাখতে এবং মাংসের জন্য পেঁয়াজ রসুনের খোসা ছাড়িয়ে রাখতে।

এরপর রিপন একে একে সব কাজ করলো।তখন দুপুর টাইম 1.30 টা কি 2 দটো বাজে।আমার দুপুরের ভাত খাওয়া তখন প্রায় শেষের দিকে,এরই মাঝে সরলার হাউমাউ করে কান্নার শব্দ সঙ্গে আবোল-তাবোল চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল।আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে এলো, আমিও তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে বাড়ি থেকে দেখলাম অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে।গিয়ে দেখলাম উঠানের মাঝে মাদুরের উপর রিপন চিরনিদ্রায় শায়িত।সবাই তাকে ঘিরে রয়েছে, কিছুক্ষনের জন্য আমার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।যে দুরন্ত ছেলে আমাদের সঙ্গে প্রতিদিন খেলে বেড়াতো সে আর নেই ভাবতেই পারছিলাম না ,আমার মতো অনেকের চোখ থেকে তখন নীরবে অশ্রু ঝরছে।ঘরের মধ্যে ছোট্ট জানালার পাশে রিপন গলায় গামছা দিয়ে হাটু গেড়ে বসে আত্মহত্যা করেছে।

পুলিশ আসলো,রিপনের মা-বাবা ,ছোট্ট বোন আসলো ।অনেক তদারকি, কান্নাকাটির পর রিপনের মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো তার নিজের গ্রামে এবং পড়ে থাকা জামাকাপড়গুলি পুড়িয়ে দেওয়া হলো আমাদের গ্রামে নদীর পাশে,সন্ধ্যা হয়ে এলো।জামাকাপড়ের ধোঁয়া মিশে গেল বাতাসের সঙ্গে।।

(অবাক করার বিষয় হলো---মৃত্যুর আগে ডান হাতের একটি আঙুলের উপর তিন কড়ে রিপন বুড়ো আঙুল দিয়ে চেপে রেখেছে।কিন্তু তার মৃত্যুর পর অনেক মানুষ চেষ্টা করে ওই কড় থেকে আঙুলটিকে সরাতে পারিনি।অনেকের ধারণা রিপন এই নিয়ে তিনবার গলায় দড়ি দিয়েছে৷৷
আর ওই একই দিনে একই নামের আরো দুইজন রিপন মারা গিয়েছিল।তবে একজন বিষ খেয়ে এবং অপরজন পিকনিক সফরে যেতে গিয়ে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে প্রাণ হারায়।আমার মাঝে মাঝেই এখনো মনে পড়ে সেদিনের সেই ছোট রিপনের কথা।।
)

আশা করি আমার আজকের লেখা গল্পটি/ঘটনাটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

এই ধরনের গল্প সাধারণত আমি পড়ি না। আমি যথেষ্ট ইমোশনাল হওয়ার কারণে এই গল্পগুলো আমার ব্রেনের উপর দারুন ভাবে ইফেক্ট ফেলে। আপনার গল্পের টাইটেল দেখে বুঝতে পারিনি ভেতরটা এতটা মর্মান্তিক হবে। খুব খারাপ লাগলো রিপন এর জন্য। তবে তার প্রতি আরেকটু বেশি যত্নশীল হলে হয়তো এই সমস্যাটা হতো না। তবে একটা বিষয় অজানা রয়ে গেল রিপন কি শেষ অব্দি মুরগির মাংস খেয়েছিল। নাকি না খেয়েই মারা গেছিল।

না দাদা মুরগির মাংস তার খাওয়া জোটে নি,কারণ তার মাসি বাড়ি এসে সব জায়গায় রিপনকে খুঁজতে থাকে।ভাত না খেয়েই মারা যায়। বাস্তব গল্পটি পড়ে আপনার মন খারাপ হয়ে গেল এইজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।ধন্যবাদ আপনাকে।

ছোট্ট শিশু রিপনের হৃদয়বিদারক কাহিনী ব্যথিত করলো। মৃত্যুর পরও তার আঙুলের বন্ধন অটুট, এটা খুবই বেদনা তোলে হৃদয়ে। প্রথম থেকে শেষ অব্দি খুবই বর্ণনা করলেন।

ভাইয়া, ছোট্ট শিশু নয় রিপন,শিশু কিভাবে গলায় দড়ি দিতে পারে!রিপন ক্লাস ফোরে পড়তো, ধন্যবাদ আপনাকে।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

Thank you.

আসলে দিদি আমরা বড়রা এর জন্যই মূলত দায়ী। এত দূরন্তপনা একটা ছেলে এভাবেই প্রাণ ঝরে গেল সেটা আসলে কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এক্ষেত্রে রিপনের মাসি সরলা যদি আগে থেকে কিছুটা ভালোভাবে টেক কেয়ার করতো তাহলে হয়তো এরকম দুর্ঘটনা ঘটতো না যাই হোক খুবই মর্মান্তিক একটা ঘটনা ছিল আমি খুবই আপসেট হয়ে গেলাম পড়ে।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, আমি আপনার সঙ্গে সহমত।আসলেই তার মাসির ভালোভাবে নজর রাখা উচিত ছিল রিপনের উপর।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ছয়টির মধ্যে চারটিতে ফেল করছে। তাই বলে কি মজা করতে হবে। সবাই রিপনকে নিয়ে মজা করার কারনেই লজ্জায় সে আত্ন হত্যা করেছে। কাউকে নিয়ে মজা করাটাই অনেক বড় অপরাধ।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া, মজা করা অপরাধ।কিন্তু জানা যায় রিপনের দাদা খুব বকেছিল তাকে এবং এর আগেও সে দুইবার গলায় দড়ি দিয়েছিল, আঙুল তার প্রমাণ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।