বাস্তবধর্মী গল্প:"প্রতিভা"(10% বেনিফেসিয়ারী লাজুক খ্যাককে)

in hive-129948 •  2 years ago 

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা?
আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আজ আমি আবারো হাজির হলাম নতুন একটি ভিন্ন ধরনের সত্যিকারের বাস্তব জীবনের গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে।গল্পের নাম হলো -"প্রতিভা"।

IMG_20221011_061234.jpg
সোর্স

গ্রামের ছোট-খাটো ,গোলগাল চেহারার মেয়ে প্রতিভা।ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো না হলে ও পারিপার্শ্বিক দিক দিয়ে বেশ পটু।যেমন- পরিবারের অবস্থা ভালো না থাকায় নেট জাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া নদীতে বাগদা-রেনুর পোনা ধরার উদ্দেশ্যে, প্রায় জল নিয়ে আসা মেটে কলসি করে স্কুলের পুকুর থেকে,আবার কখনো সখনো লাফিয়ে মাছ ধরা ক্যানেল থেকে ,আবার মাঝে মাঝেই রান্না করা।আর প্রতিভার এইসব করার পেছনে তার মা দায়ী ছিল, কারন তার মা ছিল খুবই অলস মানুষ।এটা গেল বাড়ির বর্ননা, স্কুলে প্রতিভা বেশ পরিচিত।

স্কুলে প্রতিভা পিটিতে মনিটরিং এর দায়িত্ব পালন করত,খুব ভালো অভিনয় করতে পারতো এবং ভালো ফুটবল ও খেলতে পারতো।মজার বিষয় হচ্ছে বিকেল হলেই প্রতিভা বড়ো দাদাদের সঙ্গে স্কুল খেলার মাঠে নেমে পড়তো ফুটবল খেলার জন্য।দাদারা ও তাকে সুযোগ দিত খেলায়,দেখতে দেখতে প্রতিভা ক্লাস এইটে ওঠে।কিন্তু সে দুটি বিষয়ে ফেল করে তখন প্রতিভার মা তাকে পড়াতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে এবং বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু প্রতিভা লেখাপড়ায় ভালো না হলেও তার পড়ার ইচ্ছা ছিল।এছাড়া অনেকেই তাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানাভাবে হেল্প ও করত।

প্রতিভাকে এলাকায় কোনো উৎসবের বড়ো অনুষ্ঠানেও নাটকের অভিনয় করতে নিয়ে যেতেন দাদারা।খুব ভালো নাটকে কান্নার অভিনয় করত সে।পরের বছর কোনরকমে এইটে পাশ করে গেল প্রতিভা।কিন্তু আগের মতো সেই ইচ্ছেবোধ তার মধ্যে থেকে যেন ঝিমিয়ে গেল।কয়েকদিন পরেই প্রতিভা একটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।ছেলেটি ও একই স্কুলে পড়তো তবে সে তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে।ছেলেটির নাম অনুপম,অনুপম বিকাল হলেই স্কুলের মাঠে চলে আসে প্রতিভার সঙ্গে দেখা করতে ।এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়।অনুপমের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়।প্রতিভার বাবা যেহেতু ভাস্কর,তাই অনুপম তাদের বাড়ির জন্য একটি স্বরস্বতী ঠাকুরের প্রতিমা বানানোর জন্য তাদের বাড়িতে গেল এবং ঠাকুর বানানোর জন্য আগে থেকেই কিছু বানি দিয়ে আসলো প্রতিভার বাবার হাতে।তারপর একদিন প্রতিভা জলের কলসি নিয়ে বিকেলে জল আনতে পা বাড়িয়েছে,তখনই অনুপম তার পিছু নেয়।কিন্তু কথা বলতে বলতেই তাদের দুইজনের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়,দূর থেকে এইসব প্রতিভার মা দেখে নেয়।

এরপর প্রতিভার মা তাদের কাছে গিয়ে প্রতিভার মুখে একটি ঠাসিয়ে চড় মেরে সেখান থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে আসে।তারপর ঘর বন্দি করে রেখে দিল এবং স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিল।প্রতিভা গ্রামের দাদাদের থেকে আগের বার সাপোর্ট পেয়েছিল কারন তার মা শুনেছিল তাদের কথা।কিন্তু এইবার কারো কথা না শুনে তার বিয়ের জন্য একটি ছেলে ঠিক করলো,দেখতে দেখতে প্রতিভার বিয়ে হয়ে গেল।প্রতিভা ও অনুপম দুইজনেরই মন কষ্টে ভেঙে পড়লো।কিন্তু অনুপম জানতে পারলো প্রতিভাকে তার মামাবাড়ি গ্রামে বিয়ে হয়েছে।যিনি বিয়ে করেছেন তিনি গ্রাম সম্পর্কে অনুপমের মামা হয়, সেই থেকে প্রতিভা অনুপমের মামী হয়ে গেল।এরই মধ্যে পরিবারে ঝামেলা করে প্রতিভা কয়েকবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রতিভা 18 বছরের কম বয়সে একজন ছেলে সন্তানের মা।

(বর্তমান সমাজেও অনেকেই ভুল বা হুট করেই কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তার সন্তানের জীবনের জন্য, যেটা একপ্রকার খুবই অন্যায় ও ভবিষ্যতের জন্য খারাপ প্রভাব ফেলে।তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে বাবা-মায়েরও সন্তানের মনের অবস্থা জানা আবশ্যক।)

আশা করি আমার আজকের লেখা গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

🌸🌸🌸ধন্যবাদ সকলকে🌸🌸🌸

অভিবাদন্তে: @green015

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি বলেছেন দিদি বর্তমান সমাজেও অনেকেই ভুল বা হুট করেই কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এটা সন্তানের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আসলে প্রতিভা তো মাএ অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিভা পড়াশোনা না হোক সবদিকে ভালো ছিল। বাবা মার উচিত ছিল তাকে ভালো করে বুঝানো।হয়তো বা বয়স অল্পের কারণে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়।

ঠিক বলেছেন আপু,বাবা মায়ের তাকে বোঝানো উচিত ছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে আপু বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে এমন। সন্তান প্রথমে আস্তে আস্তে বড় হয়, স্কুল জীবনে পদার্পণ করে। একসময় কোনো না কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সেই সম্পর্ক যখন একটা ভিত তৈরি করে, ঠিক তখনই বাবা-মা যেকোনো ভাবে সেটাকে মেনে নিতে পারে না। তখনই বাবা-মা হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তটা ওই সন্তানের জন্য কতটা ভালো না খারাপ হবে, সেটা তারা ভাবে না। পরিশেষে দেখা যায় সবকিছু হিতি বিপরীত হয়েছে।ঠিক তেমনি প্রতিভা এবং অনুপম এর জীবন দশা এই সমাজের নিয়মের বাইরে নয়।

একদম ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আসলে এই টিনেজার বয়সটা অনেক কিছু হয় ৷ যেহেতু এটা বয়স পার করে এসেছি তাই বুঝি ৷ কিন্তু আমাদের অভিভাবকের এটা বোঝা উচিত৷ আসলে হয়তো ভালো করে বুঝিয়ে বললে হতো ৷
যা হোক শুনে খারাপ লাগলো যে প্রতিভার এতো কম বয়সে বিয়ে দিয়েছে৷

হ্যাঁ ,বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবক দায়ী।ধন্যবাদ আপনাকে।

প্রতিভার জন্য আসলেই খারাপ লাগছে। আসলে দিদি আমাদের এইদিকেও গ্রামের দিকে এসব বেশি ঘটে। স্কুলে পড়া মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়। অথচ মা বাবার উচিত সন্তানের মতামত নেওয়া। মা বাবা রা ভাবে তারা যা করে সব তো সন্তানের ভালোর জন্য কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে সব ভালো হয়না এটা মা বাবারা বুঝতে চায়না। অনুপম ও প্রতিভার জন্য সত্যি খারাপ লাগছে খুব।

একদম ঠিক কথা ভাইয়া, বাবা-মায়ের নেওয়া সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয়।ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলেই ঠিক বলেছেন আপু বর্তমানে এরকম হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেটা যে মানুষের জীবনে কতটা ক্ষতি বয়ে আনে তা আসলে বুঝতে পারে না। প্রতিভার মায়ের উচিত ছিল তাকে বোঝানো। অন্তত আরো কিছু সময় সুযোগ দিতে পারতো। কিন্তু তারা না করে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েটার জীবনটা শেষ করে দিল।। সমাজে এরকম ঘটনাগুলো প্রায় অনেক বেশি ঘটছে। আপনার আজকের গল্পের মধ্যে শিক্ষনীয় বিষয় ছিল।

ঠিক বলেছেন আপু,বর্তমান সমাজে এখনও ঘটছে এই ধরনের ঘটনা।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।