নমস্কার
বাস্তবধর্মী শৈশবগল্প: "কাঠবাদাম কুড়ানোর গল্প"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।তবে আজকের বলা শৈশবের অনুভূতিগুলি খুবই স্মৃতিমধুর।যদিও সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার ইচ্ছে করে ছুটে যেতে শৈশবে।তাই সেই শৈশবের সুন্দর স্মৃতিটি শেয়ার করবো আজ আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের ছোট অনুভূতিখানি।তো চলুন শুরু করা যাক--
আজ আমি বলবো কাঠবাদামের গল্প।যে কাঠ বাদামগুলির পাতাগুলো আকারে বেশ বড়ো চওড়া, ডিম্বাকার, এবং সবুজ বর্ণের হয়। শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরে যায়। ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায় ।ঠিক তেমনি কাঁচা অবস্থায় বাদামগুলির খোসা সবুজ রঙের থাকলেও পাকার সঙ্গে সঙ্গে বাদামের খোসা হলুদ, লাল -খয়েরি রঙের হয়ে থাকে।
ছোটবেলায় বলা চলে বাদামের টানেই মামাবাড়ি যাওয়ার বাহানা ধরতাম।আমার মামাবাড়ি দুটি কাঠবাদাম গাছ ছিল ইয়া বড় বড়।সারাদিন তাই ওই বাদাম গাছের নীচে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আনাগোনা লেগেই থাকতো।যারা ওই গ্রামের ছিল,এছাড়া ভোর হতে না হতেই হাজির হয়ে যেত গাছতলায় বাচ্চারা।সারাদিন বাদামও যেন পড়তে থাকতো গাছতলায় খসখসে পাতার মধ্যে।মাঝে মাঝেই ছোট্ট প্লাস্টিকের ব্যাগভর্তি বাদামের মধ্যে দিদিমার একরাশ ভালোবাসা জরানো স্মৃতি হাট-বাজার মারফত বাবার হাত হয়ে আমার হাতে পৌঁছাতো।তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই পরদিন সকালে সেই বাদাম মা কিংবা বাবা একটি কাঠের গুড়ি ও একটি দা নিয়ে বসে পড়তো বাদামগুলির শাঁস আমাদের কেটে খেতে দেবে বলে।তারপর বাদাম কেটে শাঁস বের করতেই হাত বাড়িয়ে দিতাম আমি।তারাও আমার হাতে শাঁস দিতেই টপাটপ মুখের মধ্যে পুরে দিতাম।আর শাসগুলি গোটা বের করলে বেশিই আনন্দ হতো।
এই কাঠ বাদামগুলির খোসা বাদুরের খুবই প্রিয়।তাইতো অনেকগুলো বাদুর সারারাত ধরে বাদাম গাছে ঝুলে থাকতো।আর সেই বাদাম ফেলতো নিচে কখনো আবার মুখে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় রাস্তা-ঘাটে বাড়ির এখানে-সেখানে ফেলে দিতো।সকালে যখন দাঁত ব্রাশ করার সময় বাইরে বের হতাম তখন দুই একটি বাদাম কুড়িয়ে পেতাম,কি যে আনন্দ হতো বলে বোঝানো যাবে না। আবার যখন মামাবাড়ি যেতাম তখন বড় দুটি বাদাম গাছের নিচে সকালবেলা বড় বাঁশের তৈরি ঝুরি নিয়ে বাদাম কুড়াতে যেতাম।কখনো কখনো আমার দিদিমাও ঝুড়ি ভর্তি করে বাদাম কুড়াতেন আমাদের সঙ্গে,অনেক ভালো লাগতো তখন।
ভোরবেলা বাদাম কুড়িয়ে দেড় থেকে দুই ঝুরি করে বাদাম পেতাম আমরা।তারপর সেই বাদাম রোদে শুকানো হতো,মামাবাড়ি লোকেরা ভরপুর খেলেও দিদিমার ভালোবাসায় প্যাকিং করে মাঝে মাঝেই চলে যেত কিছু কাঠবাদাম নাতি-নাত্নীদের বাড়ি।দাঁত ব্রাশ করতে করতে বাদাম কুড়ানোর মজাই কিন্তু অন্যরকম ছিল আমার কাছে।তারপর মাসির ছেলে না হয় দিদিমা আমাদের বাদাম কেটে দিতেন,মুখ ধুয়ে সকালে বাদাম কাটার সামনে বসে আমরা বাদামের শাঁস খেতাম।মামাবাড়ির বাদামগুলি ছিল খুবই বড় সাইজের এবং ভিতরের শাঁসগুলিও বড় লম্বাটে ছিল।আবার একবার তো আমার মা অনেকগুলো বাদাম কেটে শাঁস জড়ো করেছিলেন।এক থালা শাঁস জড়ো করে বেঁটে নিয়ে রান্না করেছিলেন চিংড়ি সংযোগে।রেসিপিটি খেতে খুবই মিষ্টি ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত হয়েছিল।কারন বাদামের শাসগুলি এমনিতেই তেলযুক্ত হয়ে থাকে।বাদাম শরীরের জন্য খুবই উপকারী।কিন্তু বর্তমানে মানুষের বাড়িতে কাঠবাদাম গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।
এরপর ধীরে ধীরে আমি বেড়ে উঠি,আমার বাবার হাতে লাগানো আমাদের বাড়িতেও একটি বাদাম গাছ বেড়ে ওঠে।মামাবাড়ি যাওয়াও কম হয়ে যায়, আমাদের বাদাম গাছে একসময় ফুল ফোটে বাদাম ধরে।কাঠবাদাম গাছের নিচে পড়ে থাকে বাদাম আমি শুকনো খসখসে পাতার মাঝ থেকে বাদাম কুড়িয়ে নিই একা একাই।আমাদের গাছের বাদামগুলি ছোট ছোট, তারপরও ভিতরে ডাবল শাঁস থাকতো।কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, দিদিমাদের সেই বড় বড় বাদাম গাছ দুটি ঝড়ে উপড়ে ফেলে দিয়েছে।তখন থেকেই বাদাম খাওয়া কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছিলো।যাইহোক এখন মামাবাড়ি এবং আমাদের বাড়ির সেই বাদাম গাছ থেকে কাঠবাদাম কুড়ানোর মুহূর্তগুলি সবই স্মৃতি হয়ে আছে আমার কাছে।।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং:"শৈশবের গল্প" |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thanks.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় এই কাঠ বাদাম গুলো আমরা সবাই কুড়াতাম। আর এর মাঝে একটা আনন্দ ছিল। বাচ্চারা নিজেরা আগে কে যাবে এটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। আবার এটাও দেখতাম আমাদের বাড়ির বড়রাও বাদামগুলো কুড়িয়ে রাখতো তাদের নাতি নাতনিদের জন্য। এগুলো একটু শুকিয়ে যদি শাঁস বের করা হয় তখন গোটা গোটা শ্বাস বের হয়ে যায়। এটাই সবচেয়ে মজার হয়ে থাকে। তবে শাঁস রান্না করা হয়েছিল এটা শুনে অবাক লাগল। এভাবে কখনো খাওয়া হয়নি বা শুনিনি। যাই হোক আপু আপনার এই অনুভূতি পড়ে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একেবারেই ঠিক বলেছেন, বাদাম শুকিয়ে রাখলে যেমন সংরক্ষণ করা যায় তেমনি গোটা শাঁস বের হয়।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলায় এরকম ভাবে কোনো কিছু কুড়িয়ে খাওয়ার মধ্যেই ছিল আলাদা একটা আনন্দ। ছোটবেলায় কত কিছু যে কুড়িয়ে খেয়েছি হিসাব নেই। তার মধ্যে অন্যতম ছিল আম। আবার বাদামও আমরা কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেতাম আপনাদের মতই। আমাদের বাড়িতেও একটা কাঠ বাদামের গাছ ছিল। সব সময় আমাদের গাছটার নিচেও ছোট বাচ্চারা বাদাম কুড়িয়ে নিয়ে খাওয়ার জন্য বসে থাকতো। অনেক ভালো লাগলো দিদি আপনার বাদাম কুড়িয়ে খাওয়ার গল্পটা পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার অনুভূতি জেনেও ভালো লাগলো আপু,ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু ছোটবেলা আমি নিজে ও কাঠবাদাম কুড়িয়ে নিতাম। আর এই স্মৃতিগুলো সত্যি মনে পড়ে। আপনি আপনার নানার বাড়িতে গিয়ে কাঠবাদাম কুড়াতেন। আসলে কিছু কুড়ানো বড় কথা নয় আনন্দটাই বড় কথা। যদিও ঝড়ের কারণে গাছ দুটো এখন নষ্ট হয়ে গেছে কাঠ বাদামের। তারপর আপনার স্মৃতিগুলো মনের মধ্যে আছে। ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই ভাইয়া, যেকোনো কিছুতে ছোটবেলায় আনন্দ খুঁজে পাওয়াটাই বড় বিষয়।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটকালে সবার কিছু না কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। যেমনটি আপনার ছোটকালে কাঠবাদাম কুড়ানো স্মৃতি মনে পড়ল। কাঠবাদাম গুলো খেতে বেশ মজা লাগে। তবে আমাদের এদিকে কাঠ বাদাম গাছ খুব কমই চোখে পড়ে। তবে ছোট কালে কাঠ বাদাম গাছের নিচে থেকে কাঠবাদাম নিয়ে আমরা কুড়িয়ে খেতাম। তবে কাঠবাদাম কুড়ি নেওয়ার জন্য নানাবাড়িতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতেন আপনি। তবে ছোটকালের স্মৃতিগুলো সব সময় মনের মধ্যে আলাদা একটা দোলা দেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বর্তমানে কাঠ বাদাম গাছ চোখেই পড়ে না বলা চলে, ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মতামত তুলে ধরার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনেক ভালো লাগলো আপনার মামা বাড়িতে কাঠবাদাম কুড়ানোর গল্প।কাঠবাদাম খেতে ভীষণ পছন্দ করি আমি।দিদিমা কাঠবাদাম কুড়িয়ে দিতো এবং আপনিও ঝুড়ি ভর্তি করে কুড়াতেন জেনে ভালো লাগলো।দুঃখজনক ঝড়ে কাঠবাদাম গাছে উপড়ে ফেলেছে। আপনার বাড়িতে কাঠবাদাম গাছ হয়েছে এবং সুন্দর ফল হয় জেনে খুব ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ দিদি, সুন্দর স্মৃতি ছিল কিন্তু আমাদের সেই বাড়িতেও এখন আমরা থাকিনা।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit