শৈশবের গল্প:"আঙুল কাঁটার গল্প"

in hive-129948 •  7 months ago  (edited)

নমস্কার

কেমন আছেন বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন ঈশ্বরের কৃপায়।আমিও মোটামুটি ভালোই আছি।যদিও অনেক ক্লান্তবোধ করছিলাম গতদিন এক্সাম দিয়ে আসার পর।তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পোষ্ট করা হয়ে ওঠেনি।এইজন্য আজ চলে আসলাম আমি @green015 যথা নিয়মে আপনাদের মাঝে নতুন একটি শৈশবের বাস্তব গল্প শেয়ার করতে।

শৈশবের গল্প:"আঙুল কাঁটার গল্প"

IMG_20240721_025046.jpg
সোর্স

আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার দ্বিতীয়বার একফালি খারাপ লাগার ধারণা সৃষ্টি হয়।তাই আমার শৈশবে ঘটা সেই খন্ডচিত্র শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের গল্পখানি।তো চলুন শুরু করা যাক এই গল্পের মূল কাহিনীতে--



সেদিন ছিল ফুরফুরে হাওয়ার দিন।প্রকৃতিতে হালকা স্নিগ্ধ হাওয়া বইয়ে চলেছে।ছোটবেলায় আমরা বিকেল হলেই খেলা করতাম কাকার ছেলেমেয়ে ও জেঠুর ছেলেমেয়ে মিলে।কাকার মেয়ে আমার এক বছরের বড় তাই আমরা যখন মালাখোলা খেলতাম তখন সে আমাদের মা সাজতো।যেটাকে অনেকে আবার হাড়িপাতিল খেলাও বলে থাকে।এই খেলা করা হতো নারিকেলের মালা দিয়ে।

নারিকেলের মালা ছিল কড়াই আর মায়েরা রান্না করে যে সবজির খোসা ফেলে দিতো সেই সবজির খোসা আমাদের সবজি।আলুর খোসা ,লাউয়ের খোসা ইত্যাদি দিয়ে আমাদের খেলা জমে উঠতো।আর কাঠের ঘরে আগে এক ধরনের পোকা ঘূণি ধরতো।সেই ঘূণি জড়ো করে ইটের উপর বেঁটে নেওয়া হতো ছোট্ট পাথরের টুকরো দিয়ে সেটা ছিল হলুদ গুঁড়ো আর ইটের গুঁড়া ছিল লাল মরিচ গুঁড়া।সবশেষে আমরা সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল দিয়ে মাংস তৈরি করতাম আর সুন্দরী গাছের ফল কাজে লাগতো ফল হিসেবে।ছোট্ট বেলায় কত সময় কেটেছে এই সুন্দর মুহূর্তগুলি করে, যেটা এখন গ্রামের ছেলেমেয়েদের থেকেও চোখে পড়ে না বিকেলের পড়ন্ত বেলাতে।

এই খেলা বেশিরভাগ সময় করা হতো কাকাদের বাড়িতে।কারণ আমাদের বাড়ি ছিল ইয়া বড়,বাবারা ছয় ভাই হলেও ঠাকুরদাদা প্রত্যেক ছেলের জন্য দুই বিঘা করে ভিটের জমি বরাদ্দ করে রেখেছিলেন।আর সেই ভিটের জমিতে প্রত্যেকের ভাগে 24টি করে নারিকেল গাছ আর 10-12 টি করে সুপারি গাছ ঠাকুরদাদা নিজ হাতে লাগিয়ে রেখেছিলেন।আমার বাবার ভাগেও তাই 24 টি নারিকেল গাছ আর 10 টি সুপারি গাছ পড়েছিল। তাই প্রত্যেকেই নিজ নিজ জমি সুন্দর করে ঘেরাবেড়া দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে যার যার ইচ্ছেমতো।আমাদের ভিটে তার মধ্যে ছিল সবথেকে সুন্দরও চারকোণা। কারন আমার বাবার কাজকর্ম অনেকটা নিখুঁত।কোনো কাজ এলোমেলো করা তার পছন্দ নয় তাই ফলমূলের গাছ লাগিয়ে ও পুকুর খনন করে আর ক্ষেতের জায়গা রেখে আরো সুন্দর করে সাজিয়েছিলো ভিটেখানি বাবা মা দুজনে।আর আমাদের ঘরের পিছনে ছিল একটি ক্যানেল।যেটা নদীর সঙ্গে যুক্ত হওয়াতে জোয়ারের জল ভরে যেত আবার সরে যেত।তাই ঘরের পিছনে খালের পাশে বাবা কিছু গোলপাতা গাছ ও সুন্দরী গাছও লাগিয়ে রেখেছিলেন।

কখনো কখনো আমরা জেঠুদের বাড়ি,আমাদের বাড়ি আবার কাকাদের বাড়ি খেলা করতাম।তো একদিন আমার মন চাইলো আজ খেলতে যাবো না,একা একাই বাড়িতে খেলা করবো।তারপর আর কি?মালাই করে মাংস রান্না করার খেলা হবে বলে ঘরের পিছনে চলে গেলাম ধারওয়ালা দা নিয়ে।সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল হয়েছে বড় বড় সেটাই কেটে কেটে নিয়ে আসতে হবে।আগেই বলে রাখি ছোটবেলায় দা তে হাত দেওয়া নিষিদ্ধ ছিল আমাদের।তাই অতি সাবধানে চুপি চুপি করে নিয়ে গেলাম দা তারপর কোনোরকমে শ্বাসমূল কাটলাম।কিন্তু এখন ছোট ছোট পিচ করে কাটতে বসেছি।

মা তখন অন্য কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ করেই চিন করে আমার আঙুলের মাথা কেটে গেল দা তে, তারপর শুরু হলো দর দর করে রক্ত ঝরা।আমি তখন বুঝতে পারছি না কি করবো, তারপর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।তীব্র জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রক্ত বন্ধ করতে চলে গেলাম পুকুর ঘাটে।তারপর কিছু নরম কাদা আঙুলে লাগিয়ে পুকুরের জলে ডুবিয়ে বসে আছি, দেখছি রক্তগুলি মিলিয়ে যাচ্ছে জলের সঙ্গে।কিছুতেই থামছে না,আরো লক্ষ্য করলাম বড় এক চকলা কেটে ঝুলছে আঙুলে।আর সামান্য লেগে আছে তাই আমি ওটা ছিড়ে ফেলে দিলাম।অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে, ঠান্ডা পেয়ে আঙুলের যন্ত্রনা বেশ খানিক কমেছে।মনে মনে তখন একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।কেন যে মা-বাবার চোখের আড়ালে দা তে হাত লাগাতে গেলাম!এখন আমার এই আঙুলের মাথার ছাল নতুন করে গজাবে তো!আর এ জনমে দা তে হাত দেবো না বাবা!আমার শরীরের অনেকখানি রক্ত মিশে গেল মাটিতে আর জলের কিনারায়---।


আশা করি আমার আজকের গল্পটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লাগবে।পরের দিন আবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে, ততক্ষণ সকলেই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

পোষ্ট বিবরণ:

6nSeSEzKEwjJN68tMqgZXvpyk1cf2ihqXgmWESDgXSh21PkpkXyXwzmWEkSA7U2PjRr7VoGxjyzQFnZHCkVBWn57JTVUvY7omc512mhJJX...vDZX3Fcaov38Zxjxq21rAE9wN1b8HnrBKZamZjaRXZMJVUcaVKGLWFRFVNG6MXCo9ptvvGTefY61oasZ4TrQFVwMiYWBFUH8ivxFm1LbtvBRqtkowye4ZCeEyk.png

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং: শৈশবের গল্প
ডিভাইসpoco m2
অভিবাদন্তে@green015
লোকেশনবর্ধমান

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

আমার পরিচয়
আমি রিপা রায়।আমার স্টিমিট ইউজার আইডি @green015.আমি একজন ভারতীয়।আমি একজন বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি।আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।বাংলা ভাষায় মন খুলে লেখালেখি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।

IMG_20240429_201646.jpg
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Thanks.

ছোটবেলায় ঘটা এরকম ঘটনা কম বেশি সবারই থাকে বোন । ছোটবেলায় আমাদেরও "দা" ধরা নিষেধ ছিল। তবে তারপরও "দা" নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে গিয়ে হাত পা কেটে যেত।

তারপর কিছু নরম কাদা আঙুলে লাগিয়ে পুকুরের জলে ডুবিয়ে বসে আছি, দেখছি রক্তগুলি মিলিয়ে যাচ্ছে জলের সঙ্গে।

আমার কোথাও কেটে গেলে যদিও আমি এই কাজ করতাম না বোন। আমাদের গ্রামে একপ্রকার গাছ পাওয়া যায়, সেই গাছের পাতার রস লাগিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেত আর আমার কোথাও কেটে গেলে সেই পাতার রস লাগিয়ে দিতাম।

আমরাও দিতাম দাদা,গাঁদা ফুলের পাতার রস, জার্মানি লতা-পাতার রস আর ঝাউ গাছের আঠা।তখন তো ছোট ছিলাম আর ভয়ে ওসবের কথা মাথায়-ই ছিল না।

জার্মানি লতা-পাতার রস

আমরা এটাই বেশি ব্যবহার করতাম বোন, কোথাও কেটে গেল সেই জায়গার রক্ত বন্ধ করার জন্য।

হুম দাদা,আমরাও এটাই বেশি ব্যবহার করতাম।।