নমস্কার
শৈশবের গল্প: "কলাপাতার ঘর"
আমরা সবাই ফিরে পেতে চাই আমাদের শৈশবের কিছু সুন্দর মুহূর্তগুলিকে।কিন্তু কিছু মুহূর্ত এমন স্মৃতি হয়ে যায় যেটির সম্মুখীন আমরা দ্বিতীয়বার হতে চাই না।তেমনি একটি শৈশবের বাস্তবধর্মী গল্প বলবো আজ আপনাদের সঙ্গে।তবে আজকের বলা শৈশবের অনুভূতিগুলি খুবই স্মৃতিমধুর।যদিও সেই স্মৃতি মনে পড়লে আজো আমার ইচ্ছে করে ছুটে যেতে শৈশবে।তাই সেই শৈশবের সুন্দর স্মৃতিটি শেয়ার করবো আজ আপনাদের সঙ্গে। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে আমার আজকের লেখা শৈশবের ছোট অনুভূতিখানি।তো চলুন শুরু করা যাক--
আজকের ছেলেমেয়েদের শৈশব আর আমাদের শৈশব ছিল আকাশ-পাতাল তফাৎ।শুধুমাত্র অল্প কিছু বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সবকিছু, দিকে দিকে পরিবর্তনের ছোয়া নেমেছে।তার প্রভাব এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে ঢেউ আছড়ে পড়েছে গ্রামের দিকেও।তেমনি আমিও এক গ্রামের মেয়ে।খুব বেশি বছর আগের কথা নয় যখন আমরা কাটিয়েছি খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির মাঝে আমাদের আনন্দঘন শৈশব।কখনো একলা তো কখনো গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে, বাড়ির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে।তখন আমাদের আনন্দ ছিল অনাবিল ও স্বতঃস্ফূর্ততায় ভরা।আজকের ছেলেমেয়েদের মতো ঘরবন্দি বা বাক্সবন্দী ফোনের কার্টুন ভিডিও এর মধ্যে নয়।
বিকেল হলেই অর্থাৎ 4 টা বাজলেই স্কুলের মাঠে জড়ো হয়ে হরেক রকমের খেলাধুলা করে গা ঘামাতাম আমরা।কখনো খেলতে খেলতে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরতাম যেন সমস্ত কাজ আমরাই করেছি।এতে আমাদের শরীরে রোগ বাসা না বেঁধে বরং উপকার-ই হতো।ব্যায়াম হতো শরীরে প্রচুর, কিন্তু এখন বাচ্চাদের মধ্যে অসুস্থতার পরিমাণ বেশি।খুবই অলস ও অল্পতেই হাঁফিয়ে ওঠে বাচ্চারা।আমাদের মতো ছুটোছুটি, দৌড়াদৌড়ি, লুটোপুটি খেলা যেন বিছানার চাদরের মতো গুটিয়ে কোথায় ফেলে দিয়েছে যেন এখনকার গ্রামের বাচ্চারাও।মনে হয় জঞ্জাল বা ডাস্টবিনের এককোণে স্থান হয়েছে আমাদের প্রিয় খেলাগুলো ও অনুভূতিগুলির।
গ্রামের বাবা-মায়েরাও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাচ্চাদের কাঁদা মাখতে দেয়না।যেটা জানা-অজানায় অনেকটা ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার মতো অবস্থা, ভাবলেই কেমন কষ্ট লাগে।এখনকার বাচ্চাদের যেমন ফোন দেখার বা কার্টুন নিয়ে পড়ে থাকার নির্দিষ্ট কোনো সময় থাকে না তেমনি আমরা ডুবে থাকতাম প্রকৃতির মধ্যে খেলাধুলায়।যখন সঙ্গীহীন একা খেলা করতাম তখন নারিকেল মালা ও গাছেরা হতো আমাদের সঙ্গী।প্রত্যেকটি গাছের সঙ্গে চলতো নানা-আলাপন।কখনো বাড়ির কোণে বাদাম গাছ,কখনো চাম্বল গাছ,কখনো নারিকেল কিংবা তেঁতুল গাছের সঙ্গে।মাঝে মাঝেই সিরিস গাছের ফুল ও ফল কুড়ানোর আনন্দে মেতে উঠতাম।আমাদের বাড়িতে কোনো গাছ-গাছালির অভাব ছিল না, তেমনি কলাগাছও প্রচুর পরিমাণে ছিল।তাই মাঝে মাঝেই কলাগাছ ও বাঁশের কঞ্চি কেটে ভেলা তৈরি করতাম।সেটা কখনো আমাদের বড় পুকুরে নামাতাম আবার কখনো ঘরের পিছনের ক্যানেলে।জোয়ারের জলের সময় বেশি মজা হতো ভেলায় চড়ে।
কলাপাতা ও আমাদের বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি কেটে বেঁধে ফেলতাম খেলাঘর পুকুরের পাড়ে।তারপর যতবার কলাপাতা সাজিয়ে রাখতাম ততবারই ঝড়ো হাওয়ায় ফেলে দিতো আমার কলাপাতার ছাউনিগুলি।ফেটে চৌচির হয়ে যেত পাতাগুলো ফুরফুরে হাওয়ায় আমি আবার নতুন পাতা সাজাতাম নয়তো ওগুলো কুড়িয়ে আনতাম।তারপর নিজের হাতে বানানো কলাপাতার ঘরের মধ্যে আরাম করে বসে মুখে বিড়বিড় শব্দে একাই মালাখোলা সাজিয়ে রাখতাম খেলবো বলে।কিন্তু সারাদিন খেলে রাতে ঘুমিয়ে ভোরবেলা উঠে যখন দেখতাম আমার হাতের তৈরি করা কলাপাতার ঘরখানি গতরাতের বৃষ্টি কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে মাটিতে পড়েছে লুটিয়ে।বড্ড বেশি কষ্ট হতো তখন ছোট্ট মনখানি ভেঙে চৌচির হয়ে যেত আর কান্নায় ফেটে পড়তো আমার দুই চোখ।কখনো সখনো মায়ের কাছে বায়না করে কলাপাতার ঘর বানিয়ে নিতাম।এই অনুভূতিগুলি কোথায় যেন তলিয়ে গেছে ,মাঝে মাঝেই মনে হয় আমাদের স্মৃতির পাতা থেকে আবার মুছে না যায়।।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং: শৈশবের গল্প |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।।
টুইটার লিংক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thanks.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কথাগুলো ঠিকই বলেছেন আপু আমাদের শৈশব টা কেটেছে একেবারে অন্যরকম ভাবে আমরা কখনোই ঐ টিভি বা ফোনের সামনে বসে থাকতাম না। আবার এখন গ্রামের বাচ্চারা কাঁদা নিয়ে কীভাবে খেলতে হয় সেটাও জানে না। আমাদের সময় টা যেন এখনকার বাচ্চাদের জন্য স্বপ্ন। চমৎকার লিখেছেন আপনি। ধন্যবাদ আপনাকে।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হুম ভাইয়া, তবে আমি কিন্তু মাঝে মাঝেই টিভির সামনে বসতাম।আলিফ লায়লা আর সপ্তাহের দেওয়া মুভিগুলি দেখতে।😊ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন আপনি। আমরা বেশ কয়েকজন ছোট বন্ধু বান্ধবীরা মিলে এমন ঘর তৈরি করতাম। এছাড়াও সেই ঘরের পাশে পিকনিক করতাম। কতই না আনন্দের দিন ছিল তখন। কথাগুলো যেন প্রাণ শুয়ে গেল। একদম ছোটবেলার সেই ভালোলাগার দিনগুলো এক মুহূর্তের মধ্যে খুঁজে পেলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার অনুভূতি পড়ে আমারও ভালো লাগলো আপু,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একদম ঠিক বলেছ বোন। এখনকার শিশুদের শৈশব আর আগেকার শৈশবের মধ্যে অনেক তফাৎ। আগে এসব মোবাইল বা এইসব সব ডিভাইস ছিল না। তখন খেলার মধ্যে প্রাণ ছিল। এখন সব ডিজিটাল হয়ে শিশুদের শৈশব নষ্ট হচ্ছে। সুন্দর একটি বিষয়ের অবতারণা করলে এই পোস্টে। তবে ভেলায় চড়ে ভেসে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। শিশু বেলার এই খেলা গুলো আমরা সকলেই মিস করি। আমরা ক্রিকেট খেলতে খেলতে ড্রেনে হাত দিয়ে বল তুলতাম। কোনদিন হাইজেনিক নিয়ে ভাবি নি। গায়ে কাদা মেখে বাড়ি ফিরতাম। মা কঞ্চির বাড়ি মারলেও চুপ করে মার খেতাম। এখন এসব ইতিহাস।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই এই ইতিহাসের আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না দাদা,আমাদের পরে মাত্র কয়েকটি জেনারেশন অব্দির পরেই এর ইতি টেনেছে।ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশবের কথা আজও মনে আনন্দ চলে আসে কিন্তু কী করার বয়স তো আর থেমে থাকে না বয়স যদি থেমে থাকতো তাহলে আমাদের শৈশব জীবন অনেকটা সুন্দর করে নিতে পারতাম। দিন যাই সাপ্তাহ যাই মাস যাই বছর যাই এদের সাথে সাথে আমাদের জীবনের মোর ঘুরে যাই আর আমাদের জীবন পরিবর্তন চলে আসে আর এভাবে আমাদের জীবন পার হয়।ধন্যবাদ এমন পোস্ট করার জন্য আমি নতুন আইডি খুলছি যদি ভালো লাগে আমার কমেন্ট পড়ে তাহলে আমাকে সাপোর্ট করিবেন খোদাহাফেজ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলেই দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মন পরিবর্তন হয় এবং আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলি।ধন্যবাদ ও স্বাগতম আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোস্টি পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল আপু। এখনকার সময় আর শৈশবের সময়ের মধ্যে অনেক তফাৎ। সেই সময় খেলাধুলায় কত আনন্দ ছিল। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল যুগে এসে শিশুরা খেলাধুলা করতে ভুলে গেছে। আমাদের সময় কত না আনন্দ হতো কলা পাতার ঘর করে অনেক আনন্দ করতাম।সত্যিই আপু আপনার পোষ্টটি পড়ে সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। অনেক ধন্যবাদ আপু পোস্টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একেবারেই আপু,বাচ্চারা খেলাধুলা করতেই ভুলে গিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।যদি ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়তো হয়তো এগুলোও মুছে যেত।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোটবেলার কথা মনে পড়লেই কেমন যেন অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। শৈশবে কত কিনা করেছি। সেই দিনগুলো ফেলে আসার পর এখন মনে হয় শৈশবে জীবন সবথেকে সুন্দর ছিল। আপনি দারুন লিখেছেন আপনার পোস্টে পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সবার জীবনে শৈশব সুন্দর হয় না তারপরও শৈশব বড্ড বেশি সুন্দর ও স্মৃতিময়।ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শুকরিয়া আপু ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুব সুন্দর আলোচনা করেছ৷ তবে পরিস্থিতি তো বদলেইছে। আমি তুলনা করলে প্রথমেই বাবামায়েদের সাথে আজকের বাবা মায়েদের তুলনা করা ভাল৷ কারণ সন্তান তো কাদার তাল। যেভাবে বাড়ির বড়রা তাকে শেপ দিয়েছে সেভাবেই তারা আচরণ করবে৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
একেবারেই ঠিক দিদি,তবে বাচ্চাদের মধ্যেও খেলার প্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছে বাবা মায়েরা অনেক সময় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে যায়।ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছেলেবেলার স্মৃতি নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট করলে বোন। সত্যিই এই কয়েক বছরে শৈশবের চেহারা বড্ড বদলে গেছে। আসলে এখন ডিজিটাল জীবন। তাই কেউ আর পুরনো খেলার উপর নির্ভর করে না।। সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। তোমার এই কলা পাতার ঘর বানানোর গল্প শুনে আমার ছেলেবেলার অনেক কিছু মনে পড়ে গেল। ভীষণ সুন্দর একটি নস্টালজিক পোস্ট শেয়ার করলে বোন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শৈশব স্মৃতিগুলো এখন বড্ড বেশি ধূসর হয়ে গেছে দাদা,ধন্যবাদ আপনার সুন্দর অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit