হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভাল আছেন। আমার আরেকটা লেখায় আপনাকে স্বাগতম। অন্য লেখাগুলোর মতই আজকের লেখাতেও থাকছে আমার চেম্বারে আগত একজন বাংলাদেশী রুগীর গল্প। তার প্রবাস জীবনের একটা ক্ষুদ্র চিত্র।
তিরিশ বছরের একজন ওয়ার্কার। এখানে একটা গ্যারেজে কাজ করেন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় যে উনি গ্যারেজের গাড়ি ওয়াশ ডিপার্টমেন্ট-এ কাজ করেন। সুতরাং কাজের পুরো সময়ই উনাকে পানি এবং কার ওয়াশের বিভিন্ন ওয়াশিং মেটারিয়ালস এর সংস্পর্শে থাকতে হয়। উনার পা এবং হাত সব সময়ই ভেজা থাকে। প্রথম দিকে সমস্যা হয় নাই। এখন নতুন সমস্যার শুরু হয়েছে।
উনার দুই পায়ের চামড়াই (গোড়ালী থেকে হাটু পর্যন্ত) ফেটে ফেটে গেছে। চুলকায়! মাঝে মাঝে পা ফুলে যায়। দিনের শেষে পায়ের ফোলা বেড়ে যায়। সকালে কিছুটা কম থাকে। এ সমস্যগুলো বেশ পুরাতন। উপরন্ত আমার চেম্বারে আসার ১ দিন আগে পায়ের তলার চামড়া একটু কেটে গেছে, উনি টেরও পান নাই!
উনি দেশে যাওয়ার জন্য উনার মালিকের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু মালিক এখন ছুটি দিচ্ছেন না কাজের লোকের অভাবে। নতুন লোক না আসলে কার ওয়াশ বন্ধ রেখে উনাকে ছুটি দিবেন না। বরং এখানেই ডাক্তার দেখাতে বলেছেন। যেহেতু পা কেটে গেছে টের পায় নাই, তাই মুলত ডায়াবেটিস চেক করার জন্যে উনাকে পাঠিয়েছেন। ভাল মালিক (অন্য অনেকের তুলনায়)!
প্রাথমিক পরীক্ষায় উনার চামড়ার সমস্যা এলার্জিগত বলে মনে হলো। সার্বক্ষনিক ভিজে থাকা প্লাস ওয়াশিং মেটারিয়ালসের জন্যে অনেকেরই এলার্জি হয়। উনার রক্তচাপ বেশী পাওয়া গেল। পায়ের তলার কেটে যাওয়াটা সিরিয়াস কিছু মনে হলো না। কোন ইনফেকশান এর লক্ষণ পাওয়া গেল না কাটা যায়গায়। এবং উনার ডায়াবেটিসও পাওয়া গেল না।
গল্পে গল্পে উনি আরও কিছু তথ্য শেয়ার করেন আমার সাথে। সম্ভবত বছরখানের আগে উনার বাবা মারা যান। সে সময় তার কিছু ঋণ করা লাগে। এখন প্রতি মাসে তাকে ঋন পরিশোধ বাবদ ২৭ হাজার টাকা করে দেয়া লাগে ঋণদাতাকে। উনি বেতন পান ১০০ রিয়াল একটু বেশী, মানে ৩০ হাজার
টাকার একটু বেশী। উনার ইনকামের সিংহভাগই চলে যায় ঋণ পরিশোধে। কিছুই থাকে না মাস শেষে!
বিদেশ মানেই সোনার হরিণ নয়! কিছু মানুষ ভাল থাকে। খারাপ থাকা লোকের সংখ্যায় অনেক বেশী। অনেকেই বাধ্য হয়ে পড়ে আছে এখানে!! খাচায় বন্দী পশুর মত। চাইলেও বের হতে পারেন না (দেশে যেতে পারেন না)!
আশা করি এই গল্পটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ভাল থাকুন!
ধন্যবাদ।
ডা হাফিজ
ওমান
১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪
প্রবাসীদের জীবনের গল্পটা সত্যি অন্য রকমের। দূর থেকে সবকিছুই সুন্দর মনে হয়। কিন্তু তারা বন্দী জীবন যাপন করে। মালিকপক্ষ যদি তাদেরকে ছাড়তে না চায় তাহলে কোন ভাবেই দেশে আসতে পারে না। ভাইয়া আপনি একজন প্রবাসীর কষ্টের আর্তনাদ লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এটা একটা কঠিন বাস্তবতা, এটা যারা বিদেশে আসে নাই, তাদেরকে বোঝানোই যায় না!
ধন্যবাদ আপনাকে!
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit