অন্ডকোষের সমস্যাতে আক্রান্ত এক রুগীর গল্প যিনি তার সমস্যা নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না!

in hive-129948 •  27 days ago 

হ্যালো! কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমার পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। চেম্বার কথন সিরিজের পরবর্তী পোস্ট নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম। আজকে শুনব এক রুগীর গল্প যাকে তার রোগ নিয়ে চিন্তিত মনে হলো না আমার কাছে। চলুন শুনে ফেলি ছোট গল্পটা!

উনার বয়স হবে ৪০ এর আশেপাশে। বিগত ৪-৫ দিন ধরে উনার গোপনাংগের বাম পাশ (বাম বিচি) এবং বাম কুচকির নিচে ব্যথা। প্রশ্রাব করতে গেলেও ব্যথা অনুভব করেন। ব্যথার জন্য ভাল করে হাটতে পারছিলেন না। সাম্প্রতিক কোন সেক্সুয়াল এক্সপোসার এর হিস্ট্রি নাই।

পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে প্রথমে কিছু অনীহা দেখাচ্ছিলেন, যেটা অস্বাভাবিক কিছু না। অনেকেই কমফোর্ট ফিল করেন না। তবে না দেখে সঠিক ডায়াগনোসিস করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। উনি রাজি হলেন। হাত দিয়ে ধরতেই তিনি বেশ ব্যথা অনুভব করলেন বাম পাশে। এবং দেখা গেল বাম পাশের বিচিটা অনেক বড় ডান পাশের তুলনায় এবং বেশ শক্ত। ইনফেকশন এ সাধারণত এমন শক্ত হতে দেখা যায় না।

এ রকম বড়, শক্ত, এবং পেইনফুল অন্ডকোষের জন্যে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাটি খুবই জরুরি। উনাকে বললাম যে উনাকে প্রশ্রাব পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা লাগবে। উনি আল্ট্রাসাউন্ড করতে রাজি হচ্ছিলেন না। উপরন্তু
আমার ক্লিনিক এ আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাটি নাই। ওটা করার জন্য অন্য একটা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হবে। উনি এসেছিলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তখন গিয়ে আল্ট্রাসাউন্ড করতে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল। কিন্তু আল্ট্রাসাউন্ড করাটাও জরুরি ছিল। কারণ, একটা কারণ হতে পারে যে বাম পাশের বিচিটা পেচিয়ে গেছে (মেডিকেল এ বলে টরশান)। আল্ট্রাসাউন্ড এ এটা বলতে পারে। জরুরি চিকিৎসা না করলে বিচি মারা (অচল) যেতে পারে। শক্ত অণ্ডকোষের আরেকটা কারণ হতে পারে টিউমার। সেটার জন্যও আল্ট্রাসাউন্ড জরুরি। বেশ খানিকক্ষণ লেকচার দেয়ার পর উনি ঐ হাসপাতালে আল্ট্রাসাউন্ড করার জন্যে যেতে রাজি হলেন। যেহেতু হাতে সময় কম, তাই তাড়াতাড়ি যেতে বললাম।

উনি যখন আমার চেম্বারেই ছিলেন তখন ঐ হাসপাতালের পরিচিত একজনকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলাম জানার জন্যে যে তখন গেলে আল্ট্রাসাউন্ড করা যাবে কিনা। রুগী আমার চেম্বার ত্যাগ করার মিনিট খানেকের মধ্যেই ফিরতি মেসেজ আসলো যে ঐ দিন আল্ট্রাসাউন্ড হবে না। রুগীর তো ওখানে গিয়ে কোন লাভ নাই!! আমি তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম রুগীকে আটকানোর জন্যে। খোজাখুজি করে পেলেন অন্ধকার এক কোনায়। সিগারেট ফুকছে অন্ধকারে দাড়িয়ে!! কেমনটা লাগে!!

যাহোক! উনাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম। যেহেতু আল্ট্রাসাউন্ড করা ঐ দিন সুযোগ ছিল না, তাই শুধু প্রশ্রাব পরীক্ষা দিলাম। রিপোর্টে ইনফেকশন আসলো। এন্টিবায়োটিক সহ অন্যান্য কিছু ওষুধ দিয়ে বিদায় দিলাম।

ওকে। আজকে এ পর্যন্তই। কেমন লাগানো গল্পটা জানাবেন অবশ্যই!

শুভেচ্ছা নিরন্তর
ডা হাফিজ
ওমান
২৭ই অক্টোবর, ২০২৪

Posted using SteemMobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলো সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। অনেকে আবার লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেনা। তবে আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত এবং ট্রিটমেন্ট করা উচিত।

জী। ঠিকই বলেছেন। লজ্জা করে রোগ লুকিয়ে রেখে আরও জটিল করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সেটা অনেক সময় আর ঠিক করার অবস্থায় থাকে না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

এই সমস্যাগুলো খুবই মারাত্মক। অনেক সময় অনেকে প্রকাশ করতে চায় না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে সবকিছুই ঠিক হওয়া সম্ভব। আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আশা করছি এই বিষয়গুলোতে সবাই সচেতন হবে। ধন্যবাদ ভাই।

হুম। বিশেষ করে টরশান তো একটা ইমারজেন্সি কেস।

ধন্যবাদ আপনাকে

এই ধরনের গুপ্ত রোগগুলি মানুষের শরীরে বাসা বাঁধতে তা খুব খোলামেলাভাবে সারিয়ে ফেলা উচিত বলেই মনে হয়। আসলে আমরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে পড়া সমাজে বাস করি। তাই সেখানে স্পষ্ট করে বলবার আগে মানুষ লজ্জিত হয় বেশি। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে এগুলো নির্মূল হয়ে যেতে পারে।

জী ভাই। চক্ষু লজ্জার ভয়ে দেরী করে অনেকে সহজ বিষয়টি জটিল করে ফেলে।

ধন্যবাদ আপনাকে।