আবোল তাবোল জীবনের গল্প [ দামের বাস্তবতা ]

in hive-129948 •  4 months ago 

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি এবং ঈদের আনন্দ বেশ সুন্দরভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। যদিও অফিস বন্ধ কিন্তু তবুও দারুণ একটা চাপের মাঝে আছি। আসলে পুরুষ মানুষের জীবনে ছুটি বলতে কোন শব্দ নেই, আপনি যখন বাস্তব জীবনে প্রবেশ করবেন তখন জীবনের বাঁকে বাঁকে এই সত্যটা দারুণভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। চাপ শব্দটা আপনার জীবনের সাথে দারুণভাবে সংযুক্ত হয়ে যাবে, চাই সেটা কর্ম দিবসে হোক কিংবা ছুটির দিনে হোক। বাস্তবতা হলো আমাদের প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ে নানা চাপ সহ্য করে এগিয়ে যেতে হয় এবং জীবনকে গতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হয়।

এই যেমন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আছি কিন্তু বিশ্রাম নেয়ার কোন সুযোগ নেই, কারন মেহমান আসতেছে, তাদেরকে সময় দেয়া, আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা। না না রান্না বান্নার কাজ যদিও আপনাদের ভাবি করছে কিন্তু সার্বিক সহযোগিতায় তো আমাকে থাকতেই হচ্ছে, তাহলে অবসর এর বিষয়টি আর থাকলো কই? জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত এই প্রেসার বা চাপটা থেকেই যায় পুরুষ মানুষের। যাইহোক, আজকে আবোল তালোব জীবনের গল্পে কিছু অনুভূতি শেয়ার করে নেয়ার চেষ্টা করবো, বিশেষ করে কোরবানীর ঈদ পশু নিয়ে। আমরা হয়তো এবার অনেকেই আফসোস করেছি, কোরবানীর পশুর দাম নিয়ে। তুলনামূলকভাবে এবার বাজার দর অনেক বেশী চড়া ছিলো, আবার কৃষকও বলছেন তারা খুব বেশী ভালো দাম পান নাই।

boy-6559419_1280.jpg

এই যে দুই পক্ষের একটা অসন্তোষ সেটা কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলছে, আমরা যেমন নিজের অবস্থান হতে বলছি লস হয়েছে ঠিক তেমনি কৃষকও তার অবস্থান হতে বলছে তারও লাভ হয় নাই। তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়ালো, লাভটা কে করলো? এই রকম পরিস্থিতিতে নিজের কিছু অনুভূতি আজকে তোলে ধরার চেষ্টা করবো। কারন এবার গরু কিনে আমারও মনে হয়েছে দামটা একটু বেশী পড়ে গেছে। তবে তার আগে আরো একটা বিষয় উপস্থান করতে চাই সেটা হলো নতুন বাড়ি করে প্রথমেই দুটো বড় সাইজের মুরগির ঘর তৈরী করেছিলাম যাতে বেশ সংখ্যক মুরগি একত্রে পালতে পারি। পরিকল্পনা অনুযায়ী লেয়ার এর ১২টি বাচ্চা এনেছিলাম, কিন্তু খাবারের খরচের মাত্রা দেখে সেবারই সেটা ক্ষান্ত দিলাম।

কারন তার জন্য সম্পূর্ণরূপে ফিডের উপর নির্ভর থাকতে হয়েছিলো এবং ফলশ্রুতিতে আমার খরচের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো, তাতে একটা হিসাব করে দেখলাম মুরগি পালনের চেয়ে কিনে খাওয়াটা বেশী সস্তা। এই করনে পরবর্তীতে মুরগি পালন প্রজেক্ট বাদ দিলাম। দেখুন যদি আমার বাড়িতে মুরগির খাবারের কোন ব্যবস্থা থাকতো, যদি সেগুলোকে খোলা পরিবেশে পালন করতে পারতাম তাহলে কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণরূপে ফিডের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো না। আর ফিডের উপর নির্ভরশীল থাকতে না হলে আমার খরচের মাত্রা এতোটা বেড়ে যেতো না। তখন কিন্তু আমার লাভের পাল্টাটা একটু বেশীই থাকতো খরচের তুলনায়। এটা একটা সহজ হিসেব এবং সেটা আমি বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম।

alpaca-7169208_1280.jpg

গরুর বিষয়টি অনেকটাই তেমন, আগে যারা মানে যে সকল কৃষক পরিবার গরু পালন করতো তারা প্রকৃতির খাবারের উপর নির্ভরশীল থাকতো, ফিডের বিষয়টি তারা জানতোই না। যেমন দেখুন তারা কৃষি কাজের সাথে যুক্ত থাকতো তার ফলে জমির আগাছা পরিস্কার করে বাড়িতে নিয়ে আসতো যেখানে ঘাসের পরিমানটা বেশী থাকতো। তারপর পুকুর এবং নদী হতে কচুরিপানা নিয়ে আসতো, এরপর বাড়িতে যে ভাত রান্না করা হতো সেগুলোর ফেন খাওয়াতো, তারপর ধানের খড় খাওয়াতো, চালের ভুসি খাওয়াতো, মানে যা কিছু গরুকে খাওয়াতো তার প্রায় সবটাই তার কৃষি কাজ হতে চলে আসতো এবং এর জন্য তাকে খুব একটা বাড়তি খরচা করতে হতো না। এই কারণেই তখন কৃষকদের জন্য গবাদি পশু পালন ছিলো লাভজনক আর আমাদের জন্য এখন এটা অলাভজনক। কারন আমরা এখনো সব কিছুই কিনে আনি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন পার্থক্যটা কোথায় তৈরী হয়েছে এবং কেন কৃষক সমাজ এখন লাভের মুখ দেখেন না। অবশ্য এর মাঝে মাঝে কিছু অনাকাংখিত বিষয়ও আছে। যেমন কৃষি জমি কমে যাওয়া, খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, পুকুর কমে পাওয়া, সর্বোপরি নানা পন্যের সিন্ডিকেট এর প্রভাব। আর এসব কারনে এখন যেমন কৃষক সমাজ লসের মুখে রয়েছে ঠিক তেমনি আমরা আম জনতাও লসের মুখে রয়েছি।

Image taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ঠিকই বললেন ভাইয়া, পুরুষদের জীবনটাই চাপ এর।বাড়িতে গিয়েও বিশ্রাম নিতে পারছেন না।আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ভাবি করলেও কিছু দায়িত্ব রয়েই যায়।তবে কুরবানীর পশুর দাম বলছেন চড়া কিন্তু আমাদের এদিকে নাকি তুলনামুলক ভালো ছিল দাম গতবারের তুলনায়।ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

বিগত বছর গুলোর তুলনায় এবছর আসলেই দাম অনেক যতটুকু যা দেখলাম। প্রায় ৩০-৪০ হাজার এর একটা পার্থক্য গত বছর এর তুলনায়। এতে দুই পক্ষই অসন্তোষ! আপনি বেশ ভালো ভাবেই বিষয় টি উপস্থাপন করেছেন। আমার শ্বাশুড়ি নিজে গরু পালেন সারাবছর। এছাড়াও ছোট বেলায় আমার মামার বাড়ি তে সারিবদ্ধ গরু পালা হতো দেখতাম। তাই কিছু কিছু জিনিস আমিও খুব সহজেই বুঝতে পারলাম। আসলেই আগে গরু পালার খরচ ছিলো না ই বলা যায়, কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই।

সত্যিই দিন দিন কৃষক সমাজ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।আসলে কেনা খাবার দিয়ে চাহিদা মেটানো খুবই কষ্টকর।আর দেশি মুরগি বাড়িতে পুষলে বেশি খরচ হয় না কিন্তু লেয়ার জাতীয় মুরগির খাবার তালিকা আলাদা হওয়ার জন্য খরচের পরিমাণও বেড়ে যায়।সবদিক থেকে বিবেচনা করলে- খাবার, সময় ও পরিশ্রম দিয়ে কৃষকরা বেশী ঠকে আম জনতার থেকে।সুন্দর বিষয় উপস্থাপন করেছেন, ধন্যবাদ ভাইয়া।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

আসলেই ভাই পুরুষ মানুষের কাজ মৃত্যুর আগে শেষ হবে না। ঘরে এবং বাহিরে সবসময় কাজ লেগেই থাকে। যাইহোক বিগত ৩/৪ বছর ধরে গরুর বেপারিদের মুখে শুনতে পাচ্ছি লস আর লস। আসলে গরুর ফিডের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত কয়েক বছরে। ঘাস তো তেমন পাওয়া ই যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ফিডের উপর নির্ভর করতে হয়। এখন তো লাখ টাকার গরু পাওয়া যায়, সামনে হয়তোবা সেটা আর সম্ভব হবে না। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।