বাবুনির ঈদ!

in hive-129948 •  3 years ago 

03-08-2022

১৯ শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি। তো আজকে ইন্টারেস্টিং একটা গল্প শেয়ার করবো। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

girl-2529907_1280.jpg

copyright free image from pixabey

২০১৪ কি ২০১৫ সাল হবে। আমি তখন ক্লাস ৬ বা ৭ম শ্রেণীতে পড়ি সঠিক খেয়াল নেই। ঘটনাটা ঈদের সময়। আমাদের পাশের বাড়ির এক মেয়ে নাম তার বাবুনি। সবাই তাকে আদর করে বাবুনি নামেই ডাকে। বয়স ৯ কি ১০ তখন। ছোট থেকেই বেশ দূরন্ত ছিল মেয়েটি। বাবুনি বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান হলেও তাকে সবাই আদর করতো। আমার মা যখন কোনো কাজের কথা বলতো তখনই সে চলে আসতো। এইটুকু মেয়ে এই বয়সে অনেক কিছুই করতে পারে। বেশ অবাক হতো তার কান্ড দেখে। পান খাওয়ার জন্য চলে আসতো আমাদের বাড়িতে। এই পান খাওয়ার অভ্যাস আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছে তা বলা যাবে না। একবার মিষ্টি জর্দা দিয়ে পান খাওয়ার পরই এর স্বাদ বুঝতে পেরে যায়। আমাদের বাড়িতে এসেও দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে পান খেত। এজন্য অবশ্য আমার নিষেধ করতো। কিন্তু কথা তো শুনে না।

বাবুনির বাবা রিকশা চালাতো। রিকশা চালিয়ে যা ইনকাম হতো তা দিয়েই সংসার চলে যেত। ছোট একজন ভাই ছিল। নাম তার মাহিন। যায়হোক, ঘটনার দিকে আগানো যাক। সেবার রোযা ঈদের সময়কার ঘটনা। গ্রামে জানেনই তো চাদঁ দেখার জন্য বাচ্চারা কতো কি করে। এই সময়টা আমিও পার করে এসেছি। সন্ধ্যার ইফতার খাওয়া শেষ। কাল ঈদুল ফিতর। ইফতার শেষে পশ্চিম আকাশে কাচি আকৃতির চাদঁ উঠেছে। দেখেই তো সবাই মহাখুশী । আমি বাড়ির উঠোন থেকে স্পষ্ট চাদঁ দেখতে পাচ্ছিলাম। কাল ঈদ নরমালি সবাই অনেক খুশি থাকে। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই চলাচলের জন্য রাস্তা। তখন ইটের তৈরি রাস্তা ছিল। ব্যাটারিচালিত রিকশা পাওয়া যেত না। পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালানো হতো। বাবুনি আর মাহিন ঈদের চাদঁ দেখার জন্য বাড়ির পাশের সেই রাস্তায় চলে গেল। মহল্লার আরও কিছু বাচ্চারা সবাই মিলে রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় করা শুরু করে দেয়। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। চারিদিকে অন্ধকার। চাদেঁর আলোয় রাস্তা কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। ছেলে মেয়েরা চাদঁ দেখে বলা শুরু করলো আইলের তলে চাদঁ উঠছে। এটা ময়মনসিংহ এর আঞ্চলিক ভাষায় বলা হাহাহা। যখনই ঈদের চাদঁ উঠতো তখনই এই কথাটা বলতই। বাচ্চারা এদিকে রাস্তার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। ঠিক কিছুক্ষণ পর বাবুনি রিকশার নিচে পড়ে যায়! একরকম লঙ্কাকাণ্ড লেগে গেল। বাবুনীকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। একি! গিয়ে দেখে মুখ থেকে গড়গড়িয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সামনের দুটি দাতঁ ভেঙ্গে গেছে। কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা অনেক হাসিখুশি ছিল। তাড়াতাড়ি বললাম হসপিটালে নিয়ে যেতে। হাসপিটালে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো হলো। ব্লাড পড়া থেমেছে। হসপিটালে ভর্তি করেনি অবশ্য। বাড়িতে নিয়ে এসে পড়ে। মুখ অনেক ফুলে ছিল। বুঝার উপায় ছিল না যে এই মেয়েটি আমাদের বাবুনি। আমরা সবাই যখন দেখতে যায় গিয়ে দেখি বাবুনি শুয়ে আছে। যে মেয়েটার কাল ঈদ উদযাপন করার কথা ছিল সে আজকে রোড এক্সিডেন্ট এ বিছানাই শুয়ে আছে। ঈদের আগে বলে রেখেছিল আমি যেন ঈদের দিন সালামি দেয় তাকে। আমার আপুর কাছেও সালামি চেয়েছিল। কিন্তু এখন সে কথায় বলতে পারছে না। বাবুনির ঈদ উদযাপন মাটি হয়ে গেল!

এই ঘটনার জন্য অবশ্য রিকশাওয়ালাকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ বাচ্চাদের একটা স্বভাব হলো যানবাহন দূর থেকে দেখতে আসলেই দৌড় দিয়ে দেয়। এজন্য বাচ্চাদেরকে এই রাস্তা পারাপারের ব্যাপারটা শেখাতে হয়। রিকশচালক যখন রিকশা চালাচ্ছিল তখনই সামনে দিয়ে বাবানী দৌড় দিয়েছিল। যার জন্য এমন অবস্থা হয়েছিল। আসলে কখনো বিপদ চলে আসে বলা যায় না। তবে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আপনার সতর্কতাই পারে আপনাকে খারাপ কোনো অবস্থা থেকে রক্ষা করতে। এই ঘটনাটি আজ হঠাৎ মনে পরে গেল। সকালে বাবুনীর মা ফোন দিয়েছিল। বাবুনী এখন বড় হয়ে গেছে। সামনের যে দাতঁগুলো ভেঙ্গে গিয়েছিল সেগুলো উঠেছে। তারা এখন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে থাকে। কেন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে থাকে এর পিছনে অবশ্য অনেক লম্বা ইতিহাস। আপনাদের সাথে পরের কোনো পোস্টে শেয়ার করবো। যায়হোক, বাবুনী এখন ৭ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। হঠাৎ করেই গল্পটি মনে হলো আর আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। সময়ের সাথে সবকিছুই যেন পরিবর্তন হয়ে যায়।

যায়হোক, আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। এমন কিছু ঘটনা থাকে আসলে ভুলে যাওয়ার মতো না। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিলাম। আশা করি আপনারা সবাই পড়বেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ।


10% beneficiary for @shyfox❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png